প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী মানব পাচারের ন্যাক্কারজনক ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছে। মোটা অঙ্কের আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই মানব পাচারকারী সিন্ডিকেট চক্রের হাতে তুলে দিচ্ছে দুবাইগামী কর্মীদের শত শত ছাড়পত্র (স্মাট কার্ড)।
দুবাইতে এসব কর্মীর কেউ কেউ কাজ-কর্ম না পেয়ে চরম হয়রানির শিকার হচ্ছে। আবার এদের অনেকেই দুবাই লিবিয়া হয়ে ইউরোপের মরণ ফাঁদে পা দিচ্ছে। এসব কর্মীদের কাছ থেকে সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী চক্র লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে রাতারাতি কালো টাকার মালিক বনে যাচ্ছে। বিএমইটির স্মাট কার্ড জালিয়াতির সাথে জড়িত চিহ্নিত রাঘব বোয়ালরা এখনো ধারাছোঁয়ার বাইরে। এতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এ প্রতিষ্ঠানটির ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে। সরকারি অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং কতিপয় রিক্রুটিং এজেন্সির যোগসাজসে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বিএমইটি অবৈধ ও দুর্নীতিপরায়ন সিন্ডিকেটে পরিণত হয়েছে। পরিস্থিতি এমন দিকে গড়াচ্ছে যে এসব দেখার কেউ নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানের বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশি কর্মী বিএমইটির মাধ্যমে বৈধ ছাড়পত্র নিয়েই বিদেশে কর্মরত। এসব কর্মীরা কঠোর পরিশ্রম করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠাচ্ছেন। বৈশ্বিক করোনা মহামারির পর ২০২১ সালে বিভিন্ন দেশে ৬ লাখ ১৭ হাজার ২০৯ জন নারী-পুরুষ কর্মী বিদেশে চাকরি লাভ করেছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গত ৬ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে ৮ লাখ ৯০ হাজার ৬৪৮জন কর্মী চাকরি লাভ করেছে।
কতিপয় চিহ্নিত রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে বিএমইটিতে অবৈধ কর্মকান্ড জাল-জালিয়াতির শক্তিশালী নেটওয়াক গড়ে উঠেছে। ইতিপূর্বে জাল-জালিয়াতির হোতা এক রিক্রুটিং এজেন্সির মালিককে বিএমইটিতে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে চিঠি ইস্যু করেছিল তৎকালিন মহাপরিচালক। এতে বিএমইটিতে অনেকটা শৃঙ্খলা ফিরে এসেছিল। কিন্ত পরবর্তীতে বিএমইটির ঢিলেঢালা নজরদারির সুবাদে জালিয়াতি চক্র পুনরায় মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। কয়েকটি এজেন্সির মালিক প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্যে বিএমইটি সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং নিরীহ এজেন্সির মালিকরা জিম্মি হয়ে পড়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা ও রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক এতথ্য জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ অনুমতি ছাড়াই, অর্থাৎ চাকরি না দিয়ে অভিযুক্ত রিক্রুটিং এজেন্সি ও দালালরা ভুয়া স্মার্ট কার্ডে কর্মীদের বিদেশ পাঠিয়েছে। বিএমইটির ৯ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ৬ রিক্রুটিং এজেন্সি জালিয়াতিতে জড়িত বলে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরে ১২ মে পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতে গমনেচ্ছু ২ হাজার ৯৬০ জন কর্মীর মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত নিয়োগানুমতির স্থলে বিএমইটি সর্বমোট ৬ হাজার ৯৩৮টি স্মাট কার্ড ইস্যু করেছে। জালজালিয়াতি, নথিতে ঘষা মাজার মাধ্যমে বিএমইটির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবৈধভাবে আরো অতিরিক্ত ৩ হাজার ৯৭৮টি স্মাট কার্ড ইস্যু করেছে। যা’ সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে দালিলিক প্রমাণ দ্বারা প্রমাণিত।
স্মাট কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে মানব পাচারের মূল হোতাদের সাথে বিএমইটির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজস থাকায় প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত অনুমোদনের চেয়ে অতিরিক্ত অবৈধ বর্হিগমন ছাড়পত্র ও স্মাট কার্ড দেদারসে ইস্যু করছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নেক নজরের কারণে এসব অপকর্মের সাথে জড়িত বিএমইটির অসাধু কর্মকর্তারা (রাঘব বোয়ালরা) অজ্ঞাত কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও তদন্ত কমিটির প্রধান মো.আব্দুল কাদেরের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য বেড়িয়ে এসেছে। এ নিয়ে প্রবাসী মন্ত্রণালয় ও বিএমইটিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বিএমইটিকে দুর্নীতিমুক্ত করতে স্মাট কার্ড জালিয়াতির সাথে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারী, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। বিগত জুলাই মাসে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পেশ করা হলেও অদ্যাবধি মানব পাচারের সাথে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় বা কোনো প্রকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ ব্যাপারে প্রবাসী মন্ত্রী ইমরান আহমদের সাথে তার দপ্তরে সাক্ষাত করতে গেলে তার এপিএস রাশেদুজ্জামান জানান, স্যার অনেক ব্যস্ত কথা বলতে পারবেন না। প্রবাসী সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন ইতালি সফরে থাকায় তাকে পাওয়া যায়নি। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুল কাদেরের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির তদন্তে প্রমাণ হয়েছে, অতিরিক্ত স্মার্ট কার্ড দেয়া হয়েছে ন্যাক্কারজনক ও অকল্পনীয় জাল-জালিয়াতি করে। অভিযোগ আছে, প্রতিটি ভুয়া কার্ডের জন্য মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়েছে অভিযুক্তরা।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের পর টানা পাঁচ বছর সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজার বন্ধ ছিল বাংলাদেশিদের জন্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দফা সফরে গিয়ে কর্মী নিতে অনুরোধ করেন। ২০২০ সালে বাংলাদেশিদের নিয়োগ শুরু করে আমিরাত। তবে এখনও চাকরির ভিসা দিচ্ছে না। দেশটিতে ভিজিট ভিসায় গিয়ে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করতে পারেন বাংলাদেশিরা। এ কারণেই চাকরি ভিসা না থাকলেও আমিরাতগামী কর্মীদের স্মার্ট কার্ড দেয় সরকার। কাজের ভিসা দেয়া অন্যান্য দেশের নিয়ম অনুসরণ করা হয় আমিরাতের ক্ষেত্রে। ২০২১ সালে ২৯ হাজার ২০২ জন এবং ২০২২ সালে আগস্ট পর্যন্ত ৭০ হাজার ২০৩ বাংলাদেশি কর্মী আমিরাতে গেছেন।
প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, স্মার্ট কার্ড জালিয়াতি সিন্ডিকেটে জড়িত বিএমইটির সিস্টেম অ্যানালিস্ট সাইদুল ইসলাম। তিনি ২০১৯ সালে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন ডাটাবেজের তথ্য মুছে ফেলার অপরাধে। বাকিরা হলেন, জনশক্তি জরিপ কর্মকর্তা ইমারত হোসেন মোল্লা, বহির্গমন শাখার প্রধান সহকারী শামীমা ফেরদৌসী, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর সাইফুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক শেলীনা আক্তার, লিটন কান্তি চৌধুরী, পরিচালক (যুগ্ম সচিব) হাসান মাহমুদ, উপপরিচালক আজাদ ও পরিচালক (উপসচিব) মিজানুর রহমান ভূঁইয়া। প্রতিবেদনে নাম এসেছে বিএমইটির মহাপরিচালক শহীদুল আলমেরও।
৮টি রিক্রুটিং এজেন্সির নিয়োগ অনুমতির বিপরীতে স্মার্ট কার্ড ইস্যুর জালিয়াতির তদন্তে ৬টির বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এগুলো হলো হচ্ছে, মাহবুব ইন্টারন্যাশনাল (লাইসেন্স নম্বর-২৮৬), হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (লাইসেন্স নম্বর-৪৫২), ডালাস ওভারসিজ (লাইসেন্স নম্বর-৫৩২), আল মোবাররক ইন্টারন্যাশনাল (লাইসেন্স নম্বর-৫৪২), এম আক্তার অ্যান্ড সন্স (লাইসেন্স নম্বর-১২৮৪) এবং আল ফাত্তাহ ইন্টারন্যাশনাল (লাইসেন্স নম্বর-১৫০১)।
রিক্রুটিং এজেন্সির জালিয়াতির বিষয়ে তদন্তে বলা হয়েছে, তাদের আবেদনের নথিতে অনুচ্ছেদ নম্বর ও পৃষ্ঠা নম্বরে অনেক কাটাকাটি রয়েছে। নথি থেকে অনেক নোটশিট সরানো হয়েছে। মাহবুব ইন্টারন্যাশনালের ৯৭১ জন কর্মীর নিয়োগ অনুমতির বিপরীতে ২ হাজার ১৯৪টি স্মার্ট কার্ড ইস্যু হয়েছে। অবৈধ নিয়োগ অনুমতিও বানানো হয়েছে স্মার্ট কার্ড দিতে। বিএমইটি অবৈধভাবে অতিরিক্ত ১ হাজার ২২৩ টি স্মাট কার্ড ইস্যু করেছে। এ জন্য বিএমইটির সিস্টেম এনালিস্ট সাইদুল ইসলাম ও তাৎকালীন কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দায়ী। রিক্রুটিং এজেন্সি হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টার মন্ত্রণালয় থেকে দুবাইগামী ৩৬৫ জন কর্মী নিয়োগানুমতি লাভ করেছে। কিন্ত বিএমইটি এ এজেন্সিকে ৪১৬ জনের স্মাট কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। অবৈধভাবে ৫১টি স্মাট কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। এতে পরিচালক (বহির্গমন) মিজানুর রহমান ভূঁইয়াসহ পাঁচজন জড়িত বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তবে মিজানুর বলেছেন, তদন্তের বিষয়ে তার কিছু বলার নেই। তিনি কর্মসংস্থান শাখার পরিচালক। বহির্গমনে কর্মকর্তা স্বল্পতা থাকায় সেখানে কিছুদিন কাজ করেছেন।
হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের স্বত্বাধিকারী ফখরুল ইসলাম গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের নামে ভুয়া ছাড়পত্রের অভিযোগ দেখে আমি হতবাক। আমরা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অতিরিক্ত ১টি স্মাট কার্ডও গ্রহণ করিনি। সম্পূর্ণ জালিয়াতির মাধ্যমে হিউম্যান রিসোর্স এর অতিরিক্ত স্মাটি কার্ড ইস্যু দেখানো হয়েছে। অনুমোদনের সব কোটার স্মাট কার্ড এখনো নেয়া বাকি রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এ নিয়ে কোনো বিভ্রান্তির সুযোগ নেই বলেও তিনি দাবি করেন।
২০২১ সালের ২৮ মার্চ আল মোবারক রিক্রুটিং এজেন্সিকে ১০০ জন কর্মীর নিয়োগ অনুমতি দেয়। ওই বছরের ১১ থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত তিন দফায় ১০০ স্মার্ট কার্ড দেয়া হয়। এর পর ইমিগ্রেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সফটওয়্যারের তথ্য এডিট করে ১৪ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ দফায় আরও ৩১০টি স্মার্ট কার্ড ইস্যু করা হয়। দেখা গেছে, এতে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছিল। তদন্ত প্রতিবেদনে দায়ী করা হয়েছে বিএমইটি মহাপরিচালককেও। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইডিয়া ইন্টারন্যাশনালের ৩২৫ জন কর্মীর নিয়োগ অনুমতির বিপরীতে গত বছরের ২০ ডিসেম্বর ৩১৫ জনকে স্মার্ট কার্ড দেওয়া হয়। ১০টি অবশিষ্ট থাকলেও পাঁচ দফায় ৪৯৩টি স্মার্ট কার্ড দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ৬ ফেব্রুয়ারি নোটশিটের ৭৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়, কোনো স্মার্ট কার্ড দেয়া হয়নি। কিন্তু ৮০ অনুচ্ছেদে সাইদুল ইসলাম মতামত দেন, গত বছরের ৮ ডিসেম্বরের ২৫০ কর্মীর নিয়োগ অনুমতির বিপরীতে ১৫০টি স্মার্ট কার্ড অবশিষ্ট রয়েছে। তিনি এই অসত্য মতামত দেয়ার দু’দিন পর মহাপরিচালক দুবাইগামী ১৫০ কর্মীকে বহির্গমন ছাড়পত্র দিতে অবৈধ অনুমতি দেন। পরের দিন স্মার্ট কার্ডগুলো ইস্যু করা হয়। এ ক্ষেত্রে বহুমুখী জালিয়াতি, অসততা ও অনিয়ম হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ডালাস ওভারসীজ বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রণালয় থেকে আমিরাতগামী ৫৩৬ জন কর্মী নিয়োগের অনুমতি লাভ করে। ২০২০ সালে ২৭ অক্টোবর থেকে গত ২ মার্চ পর্যন্ত ডালাস ওভারসীজের নামে ৯৮৫টি বর্হিগমন ছাড়পত্র ইস্যু করা হয়। নথিতে অনেক বিষয় উপস্থাপন না করে ৪৪৯ টি অতিরিক্ত অবৈধ স্মাট কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অবৈধ ও বিধিবর্হির্ভুত কাজের জড়িত থাকার অভিযোগে ৭ জন কর্মকর্তাকে দায়ী করা হয়েছে। মেসার্স এম আক্তার এন্ড সন্স এজেন্সি দুবাইগামী ৫০ জন কর্মীর নিয়োগানুমতি লাভ করে। কিন্ত অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীরা সর্বমোট ২৫৪ জনের বর্হিগমন ছাড়পত্র ইস্যু করে। এতে অবৈধভাবে ২০৪টি অতিরিক্ত স্মাট কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। আল ফাত্তাহ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ২০২১ সালের ১৫ জানুয়ারি ১৭৮ জন কর্মীর নিয়োগানুমতি লাভ করে। অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ও অকল্পনীয়ভাবে জালিয়াতির মাধ্যমে আল ফাত্তাহ ইন্টারন্যাশালের নামে ৮৫০ জনের স্মাট কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। এতে অবৈধভাবে অতিরিক্ত ৬৭২টি স্মাট কার্ড ইস্যু করা হয়েছে।
এদিকে, বিএমইটির অনেক নথিতে মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম মতামতসহ বর্হিগমন ছাড়পত্র ইস্যুর অনুমতি দিয়েছেন। এ বিষয়ে মহাপরিচালক তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছেন, তার নিকট ফাইল আসার আগে ৫টি টেবিলে দেকা হয়। তাই তিনি বর্হিগমন ছাড়পত্রের নথিতে স্বাক্ষর করে দেন। অবৈধভাবে বর্হিগমন ছাড়পত্র ইস্যুর বিষয়ে কিছু জানেন না বলে তিনি দাবি করেন ।
এদিকে, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বিএমইটির বহির্গমন বিভাগের পাঁচ জন কর্মকর্তা ২০২১ সালের ২৬ ও ২৭ অক্টোবর রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স আল এরফান ইন্টারন্যাশনালের আবেদনকৃত সংযুক্ত আরব আমিরাতগামী ২০ জন পুরুষ কর্মীকে অসত্যায়িত ভিজিট ভিসায় ছাড়পত্র প্রদানের সরকারি বিধিনিষেধ তুলে ধরে এক নোটশীটে বিএমইটির মহাপরিচালককে অবহিত করেন যে, সংযুক্ত আরব আমিরাতগামী কর্মীদের ভিসা দূতাবাসের সত্যায়নের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ভিজিট ভিসায় বহির্গমন ছাড়পত্র প্রদানের ক্ষেত্রে আমিরাতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের সত্যায়ন, কনস্যুলারের মতামত এবং প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পত্র থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্ত বিএমইটির মহাপরিচালক গত ১ নভেম্বর এসব কর্মকর্তাদের মতামতকে উপেক্ষা করে ২০ জন ভিজিট ভিসার কর্মীকে বহির্গমন ছাড়পত্র দেয়ার নিদের্শ দেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন