কোনো বাধাই সমাবেশকে ঠেকাতে পারবে না : দুদু
অভিমান ভুলে মঞ্জু-মনা মাঠে নামাতে উজ্জীবিত নেতাকর্মীরা : বিএনপি
জ্বালানি তেল, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি ও নিহত ৫ নেতাকর্মী হত্যার প্রতিবাদে এবং চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির দাবিতে আগামীকাল খুলনায় বিভাগীয় গণসমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি। দলটির এই কর্মসূচিকে ঘিরে ইতোমধ্যে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে খুলনার রাজনৈতিক অঙ্গন। একই দাবিতে চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে সফল কর্মসূচির পর খুলনা জেলাতেও জনসমাগমের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চায় বিএনপি নেতারা। এদিকে কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে খুলনা জেলার সাথে অন্যান্য জেলার গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে খুলনা জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস মালিক সমিতি। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, বিএনপির গণসমাবেশ ঠেকাতে সরকার এর আগে ময়মনসিংহে এই কৌশল নিয়েছিল, এবার খুলনাতেও একই কৌশল নিয়েছে। এছাড়া প্রশাসন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি, হুমকী-ধামকী দিচ্ছে, খুলনা শহরের হোটেলগুলোতে আগামী দুই দিন অতিথি ভাড়া না দেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতারা। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগ এখন যেটি করছে আমরা জানি এরকম পরিবেশ তৈরি করবে। এসব বাধা মোকাবেলা করার কৌশল ও প্রস্তুতি আমাদের আছে। কোন বাধাই বিএনপির সমাবেশকে ঠেকাতে পারবে না। সরকারের প্রতি অনাস্থা জানাতে বাধভাঙা স্রোতের মতো মানুষ উপস্থিত হবে গণসমাবেশে।
তবে বিএনপির গণসমাবেশের আগে দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ১০ মাস পর নেতাকর্মীদের নিয়ে আবার মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন দলটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এবং খুলনা মহানগরের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও সাবেক খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং মহানগরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিজরুজ্জামান মনি। অভিমান ভুলে মঞ্জু-মনির এই ঘোষণাতে উজ্জীবিত খুলনার বিএনপি নেতাকর্মীরা।
আগামীকাল ২২ অক্টোবর খুলনার ডাকবাংলো এলাকায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। নগর আহবায়ক কমিটিতে স্থান না পেয়ে অভিমানে দল থেকে ১১ মাস দূরে থাকা সাবেক নগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও সাবেক নগর সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি এবং তাদের অনুসারীরা সমাবেশ সফলে মাঠে নামায় নেতা কর্মীদের মাঝে নতুন প্রেরণার সৃষ্টি হয়েছে। সমাবেশকে সামনে রেখে সরকার সমর্থক বাস মালিক সমিতির দু দিনের ধর্মঘটের প্রেক্ষিতে বৃহষ্পতিবার দুপুর থেকেই নেতা কর্মীরা দূর দূরান্ত থেকে খুলনায় আসতে শুরু করেছেন। উঠছেন আত্মীয় স্বজন ও শুভাকাঙ্খীদের বাসা বাড়িতে। নগরী ও আশেপাশের হোটেলগুলো ২১ ও ২২ অক্টোবর কার্যত খালি রাখতে প্রশাসন একপ্রকার অঘোষিত নির্দেশনা জারি করেছে। আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীরাও সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। সমাবেশের দিন তারা আন্দোলনের নামে বিএনপির যে কোনো অরাজকতা প্রতিহত করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
এদিকে, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বৃহষ্পতিবার খুলনায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে, অভিযোগ করেছেন, সমাবেশকে সামনে রেখে নেতা কর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালানো হচ্ছে। কর্মীদের উপর হামলা ও প্রচার মাইক ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে। তবে যত বাঁধাই আসুক, সমাবেশ সফল হবেই।
খুলনায় মহাসমাবেশের আগে নগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও সাবেক নগর সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি এবং তাদের অনুসারীরা মাঠে নামায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। নগর কমিটিতে স্থান না পাওয়াসহ নানা কারণে তারা প্রায় ১১ মাস দলের মূলধারা থেকে দূরে ছিলেন। গতকাল তারা প্রেসব্রিফিং করে আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠে প্রচারে নামেন। প্রেস ব্রিফিংয়ে নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সমাবেশে যোগ দেয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশনার আলোকে সাধারণ কর্মী হিসেবে তিনি ও মহানগর বিএনপি সাবেক নেতৃবৃন্দ সমাবেশে যোগ দিবেন। চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে বিএনপির সমাবেশ ভন্ডুল করতে সরকার বিভিন্ন কারসাজি করেছে। কিন্তু সরকারের বাধা উপেক্ষা করে বিপ্লবী জনতা বার বার কর্মসূচি সফল করেছে। খুলনার সমাবেশ ব্যর্থ করতে সরকার ইতিমধ্যে গাড়ি চলাচল বন্ধ করেছে। কিন্তু সরকার জানে না পরিবহন বন্ধ রেখে এবং নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশী করে আন্দোলন দমানো যায় না। প্রেস ব্রিফিং শেষে গণসমাবেশ সফল করতে লিফলেট বিতরণ করেন নজরুল ইসলাম মঞ্জুসহ সাবেক নেতৃবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সাবেক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুজ্জামান মনি, সাবেক সহ-সভাপতি সেকেন্দার জাফর উল্লাহ খান সাচ্চু, শেখ মোশারফ হোসেন, সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক তারিকুল ইসলাম, এড. বজলার রহমান, এড. ফজলে হালিম লিটন, আসাদুজ্জামান মুরাদ, আরিফুজ্জামান অপু, সিরাজুল হক নান্নুসহ অসংখ্য নেতাকর্মী। পরে গণসমাবেশ সফল করতে লিফলেট বিতরণ করেন নজরুল ইসলাম মঞ্জুসহ সাবেক নেতৃবৃন্দ।
এদিকে, বৃহষ্পতিবার দুপুর খুলনায় দলীয় কার্যালয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও বিভাগীয় গণ সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, যে কোন পরিস্থিতিতে ২২ অক্টোবরের গণ সমাবেশ অবশ্যই অনুষ্ঠিত হবে। নেতাকর্মীরা যতোই আঘাতপ্রাপ্ত হোক, জন উৎসাহ কোনক্রমেই ঠেকানো যাবেনা। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, প্রিয় নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা এবং পাঁচ সহকর্মী হত্যার বিচার আদায় করেই আমরা ঘরে ফিরবো।
তার অভিযোগ, বিএনপির কর্মসূচিকে বাঁধাগ্রস্থ করতেই দুই দিনের পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। নগরীর বিভিন্ন স্থানে প্রচার মাইকে হামলা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬টি মাইক ভাঙচুর করা হয়েছে। দুইটি মাইক লুটে নেয়া হয়েছে। প্রচারণার কাজে অংশ নেয়া কর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। নদী পথে ট্রলার বন্ধ করে জনসমাগম বাঁধাগ্রস্থ করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্ত কোন বাঁধাই বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ রুদ্ধ করতে পারবেনা।
প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, খুলনা-৩ আসনে বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুল, বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, মহানগর আহবায়ক শফিকুল আলম মনা, সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মোঃ তারিকুল ইসলাম জহীর উপস্থিত ছিলেন।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বিএনপির বিভাগীয় গণ সমাবেশ কর্মসূচি দুই মাসের। সরকারের ব্যর্থতায় নিত্য প্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যমূল্য অস্বাভাবিক বেড়েছে। দেশবাসী নিরাপত্তাহীন। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল, সেই স্বাধীনতা আজ নেই বললেই চলে। গণতন্ত্র নির্বাসিত। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে সমাবেশ ক্ষতিগ্রস্থ করা হয়েছে।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা দুদু বলেন, এই বাহিনী বাংলাদেশের। কোন দলের না। নিজের স্বার্থে, দলের স্বার্থে তাদেরকে ব্যবহার করা হচ্ছে। অতীতে কোন আইজিপি অবসরে যাওয়ার পর পুলিশ সাথে নিয়ে ঘুরতে হয়নি। আমেরিকা মানবাধিকার প্রশ্নে সাত জনকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। বিএনপি স্বৈরতন্ত্রকে বিদায় জানিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম করছে। যারা স্বৈরতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান করছেন তাদেরকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, এই দিনই শেষ দিননা। আরও দিন আছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির বিভাগীয় গণ সমাবেশ কর্মসূচি হবে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। কর্মসূচি সফল করতে আমরা সবার সহযোগিতা কামনা করছি। নেতাকর্মীরা কোন লাঠি বহন করবে না, তবে তারা প্লাকার্ড বহন করবে বলে জানান তিনি।
মহানগর বিএনপির আহবায়ক শফিকুল আলম মনা বলেন, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহের কর্মসূচির সফলতা দেখে শাসক দল ও প্রশাসন ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে বাড়িতে বাড়িতে হামলা ও গ্রেফতারের চেষ্টা করছে। তারা খুলনার কর্মসূচি বাঁধাগ্রস্থ করতে চায়। ইতিমধ্যে সমস্ত পরিবহন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। খেয়াঘাট বন্ধ করে দিয়ে জনদূর্ভোগ সৃষ্টি করছে।
সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন বলেন, বিভাগীয় কর্মসূচি বানচাল করতে পুলিশ সাড়াশি অভিযান শুরু করেছে। মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা চৌধুরী সাগর, জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক জাবির আলী, ৩০ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা বুলবুল মোল্লার বাড়িতে পুলিশ গত রাতে অভিযান চালিয়েছে। সদর ও সোনাডাঙ্গা থানার কয়েকজন দারোগা মটর সাইকেল বহর নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালিয়েছে। বিএনপি কোন ধরনের সহিংসতা চায় না। কিন্ত এসব অপতৎপরতা চালিয়ে গণ সুনামিকে রুদ্ধ করা যাবেনা।
এদিকে, ২০ অক্টোবর রাত ১২ টা থেকে দু দিন বাস ধর্মঘট ডাকায় বৃহষ্পতিবার দুপুর থেকেই বাসে, ট্রেনে ও লঞ্চে দলীয় নেতা কর্মীরা খুলনায় জড়ো হতে শুরু করেছেন। তারা আত্মীয় স্বজন ও শুভাকাক্সক্ষীদের বাসায় উঠছেন। নিরাপত্তার কারণে হোটেলগুলো এড়িয়ে চলছেন। দলীয় নির্দেশনা পেলে ২১ অক্টোবর রাতেই তারা ডাকবাংলো সোনালী ব্যাংক চত্বরে সমাবেশ স্থলে সমবেত হবেন।
অন্যদিকে পুলিশ প্রশাসনের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ২১ ও ২২ অক্টোবর হোটেলগুলোকে নজরদারীতে রাখা হবে। সন্দেহভাজন কাউকে হোটেলে কক্ষ না দিতে বলা হয়েছে।
খুলনা জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সুজিত অধিকারী জানিয়েছেন, বিএনপি সমাবেশ করতেই পারে। কিন্তু সমাবেশের নামে কোনো অরাজকতা আওয়ামীরীগ মেনে নেবে না। বাস ধর্মঘটের সাথে আওয়ামীলীগের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা চাই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বিএনপি সমাবেশ করুক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন