বাংলা কলেজের এক ছাত্রী অনার্স ২য় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন সরকারি তিতুমীর কলেজ কেন্দ্রে। পরীক্ষা শেষে বান্ধবীকে নিয়ে কেন্দ্রের মাঠে বসে ছবি তুলছিলেন। এ সময় সেখানে এসে বিভিন্ন ধরনের ইভটিজিং করতে থাকে অভিযুক্ত সরকারি তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের উপ-মানব উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ইমাম হাসান শুভ। তার সঙ্গে ছিলেন আরও কয়েকজন। ইভটিজিংয়ের মাত্রা সহ্য করতে না পেরে ক্যাম্পাস থেকে বের হচ্ছিলেন। কিন্তু তাতেও বাধা দেয় ওই ছাত্রলীগ নেতা। তার মোটরসাইকেলের ক্ষতি হয়েছে অভিযোগে ছাত্রীকে জিম্মি করে কয়েক হাজার টাকা চাঁদাবাজি করে। ঘটনাটি গত বৃহস্পতিবার দুপুরের।
গত শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে বাংলা কলেজের অনার্স ২য় বর্ষের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অভিযোগের প্রতিকার চেয়ে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে সরকারি তিতুমীর কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শেষে কিছুক্ষণ আমি আর আমার এক বান্ধবী কলেজ মাঠে বসে ছবি তুলছিলাম। এ সময় তিতুমীর কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইমাম হাসান শুভ মাঠের মধ্যে অকারণেই আমাদের উত্যক্ত করেন। তিনি বাজে ভাষায় টিজ করতে থাকেন। তিনি একাধিকবার আমাকে প্রপোজ (প্রেম নিবেদন) করেন। বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়িয়ে যেতে তিতুমীর ক্যাম্পাস ছেড়ে আসছিলাম, সেসময় অভিযুক্ত শুভ আবারও প্রেম নিবেদন করেন। ধৈর্য্য ধরে রাখতে না পেরে প্রতিবাদ জানিয়ে একটা ছোট ইটের টুকরো তাদের বাইকের দিকে ছুঁড়ে মারি। এরপর তারা আমার বন্ধুদের বেধড়ক মারতে থাকে। বিনা কারণে কেন মারছেন জিজ্ঞেস করলে তারা বলে, আপনি অপরাধ করেছেন তাই আমরা আপনার বন্ধুকে মারছি। মাইর থামাবো যদি বাইক ভাঙ্গার ক্ষতিপূরণ দেন। আমাকে বিরক্ত করছেন কেন’ প্রশ্নে তারা বলেন, এটা বিরক্ত কোথায়? আপনাকে ভালো লেগেছে তাই প্রপোজ করেছি।
বাইকের কোনো ক্ষতি না হলেও তারা আমার কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করে। দিতে রাজি না হওয়ায় এক পর্যায়ে ২০-২৫ জন মিলেই আমাদের হেনস্তা করে। এসময় আমি অজ্ঞান হয়ে মাঠের মধ্যে পড়ে যাই। আমার বান্ধবীরা পানি দিয়ে জ্ঞান ফেরানোর পর তারা আবারো হেনস্তা করে। টাকা না দিলে আমার সহপাঠীদের আবার মারধর করবে বলে জানায় শুভ। এক পর্যায়ে তিন হাজার টাকা দিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে।
এ বিষয়ে তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক জুয়েল মোড়ল বলেন, বিষয়টি আমি ফেসবুকে দেখেছি। শুভ তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের নেতা হলেও তাকে পোস্ট দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতার সুপারিশে। কমিটি হওয়ার পরে আমরা তার নাম দেখতে পেয়েছি। শুনেছি সে রাজনীতি করে বনানী থানায়। ক্যাম্পাসে তার কোনো কার্যক্রম নাই। জুয়েল বলেন, প্রয়োজনে সভাপতিকে নিয়ে ভুক্তভোগী মেয়ের সঙ্গে কথা বলা হবে। অভিযোগ প্রমাণীত হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নাই।
তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ মো. মহিউদ্দিন বলেন, আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় গত বৃহস্পতিবার ছুটিতে ছিলাম। কাল রোববার ক্যাম্পাসে গিয়ে বিষয়টি দেখব। শুনেছি একটি মেয়ের সঙ্গে বাজে ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের ঘটনা কোনভাবেই কাম্য নয়। অভিযুক্ত ছাত্রের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে কলেজ প্রশাসন থেকে প্রাশাসনিক ব্যবস্থান নেওয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন