ইনকিলাব ডেস্ক : তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান ইস্তাম্বুল হামলার পর রোববার বলেছেন, সন্ত্রাসীদের নিশ্চিহ্ন করতে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়া হবে। কুর্দি গেরিলারা ইস্তাম্বুলে দুটি হামলার দায় স্বীকার করেছে। হামলায় ৩৮ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই পুলিশ। গত শনিবার বেসিকতাস ফুটবল স্টেডিয়ামের বাইরে গাড়িবোমা হামলা চালানো হয় এবং এক মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে পাশর্^বর্তী একটি পার্কে পুলিশের একটি দলের মধ্যে ঢুকে হামলা চালায় এক আত্মঘাতী হামলাকারী। কুর্দি মিলিশিয়ারা এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে। নিহতদের ৩০ জনই পুলিশ কর্মকর্তা। বাকি সাতজন সাধারণ নাগরিক এবং একজন অজ্ঞাত ব্যক্তি, যার পরিচয় পাওয়া যায়নি। পুলিশ জানায় ওই হামলায় অন্তত দেড়শ লোক নিহত হয়েছে। এই ভয়াবহ হামলার পর এরদোগান বলেন, আঙ্কারা এসব সন্ত্রাসীর মূলোৎপাটন করতে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। তাদের জানা উচিত, এ ধরনের হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে তারা রেহাই পােেব না। এ জন্য তাদের চরম মূল্য দিতে হবে।
কুর্দিস্তান ফ্রিডম ফ্যালকনসÑটিএকে এ হামলার দায়দায়িত্ব স্বীকার করেছে। এটা কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির কট্টরপন্থী শাখা। রাত সাড়ে দশটায় এরা ইস্তাম্বুল ভোডাফোন এরেনা স্টেডিয়ামের বাইরে ও মক্কা পার্কে অভিযান চালায় বলে টিএকে’র ওয়েবসাইটে বলা হয়। ওয়েবসাইটের বিবৃতিতে বলা হয় তুরস্কের জনগণ তাদের সরাসরি আক্রমণের লক্ষবস্তু নয়। তারা সরকারকে ফ্যাসিবাদী বলে উল্লেখ করেছে। এএফপি।
অপর কয়েকটি সূত্রের খবরে বলা হয়, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের ক্ষমতাসীন একে পার্টি ও দেশটির বিরোধী দল সেক্যুলার ও জাতীয়তাবাদীরা সন্ত্রাসবাদ দমনে নিরাপত্তাবাহিনীকে সবধরনের সহযোগিতার অঙ্গীকার প্রকাশ করেছেন। গত রবিবার দেশটির সংসদে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ অঙ্গীকারের কথা জানানো হয়েছে। গত শনিবার ইস্তানবুলে একটি ফুটবল স্টেডিয়ামে জোড়া বোমা হামলায় ৩৮ জন নিহত ও দেড়শতাধিক মানুষ আহত হওয়ার পর অঙ্গীকারের কথা জানানো হলো। তবে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেনি। সরকার বোমা হামলার জন্য পিকেকে-কে দায়ী করে আসছে। ইস্তাম্বুলের বেসিকটাস স্টেডিয়ামের কাছে পুলিশ সদস্যদের বহনকারী গাড়ি লক্ষ্য এ জোড়া বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বিস্ফোরণের পর এরিনা মাঠ সংলগ্ন সব রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বেসিকটাস স্টেডিয়ামে একটি ফুটবল ম্যাচের দুই ঘণ্টার মাথায় এ হামলা চালানো হয়। জোড়া বিস্ফোরণে এ পর্যন্ত ৩৮ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৬৬ জন। এদের মধ্যে ২০ জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শী ও নিরাপত্তাসূত্রকে উদ্ধৃত করে খবরে বলা হয়েছে, হামলাকারীদের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল পুলিশ ও পুলিশের গাড়ি।
স্টেডিয়ামে বিস্ফোরণের সংহতি জানাতে সেখানে মানুষের ঢল নামে। উপস্থিত মানুষরা নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করে স্লোগান দেন। দিনের শুরুতেই প্রথম প্রতিবাদের আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন এনজিও এবং গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো মিছিল করে সেখানে জড়ো হয়। ঘটনাস্থলের নিরাপত্তায় পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। সেখানে জড়ো মানুষরা স্লোগানের পাশাপাশি প্রার্থনা করছেন। বেশ কিছু মানুষকে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়। জোড়া বিস্ফোরণে প্রাণহানির ঘটনায় একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করবে তুরস্ক। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম এই শোক ঘোষণা করেছেন। এদিন জনসাধারণকে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তিনি। শোক পালনের পাশাপাশি দেশটির প্রেসিডেন্ট এরদোগান সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অঙ্গীকারও পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, কেউ যেন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বিষয়ে কোনও সন্দেহ প্রকাশ না করে। আমরা এই দেশের মালিক। এ ধরনের হামলা চালিয়ে যারা আমাদের বিক্ষত করছে তাদের কাউকে ছেড়ে দেওয়া হবে না। তুরস্কের উপ-প্রধানমন্ত্রী নুমান কুরতুলমুস তুরস্কের বলেছেন, যে সব দেশ বার্তা পাঠিয়ে তুরস্কের বোমা হামলার নিন্দা জানিয়েছে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তুরস্কের লড়াইয়ের প্রতিও তাদের সংহতি জানানো উচিত। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে ধারাবাহিক সন্ত্রাসী হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে তুরস্ক। কেবল ২০১৬ সালেই তুরস্কে ৫টি বড় ধরনের হামলা সংঘটিত হয়। ফেব্রুয়ারিতে আঙ্কারায় এক সামরিক বহরের হামলায় ২৮ জন নিহত হয়, যেখানে পিকেকের দিকেই সন্দেহের তীর ছোঁড়া হয়। একই বছর ১৩ মার্চ আঙ্কারাতেই এক আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলায় নিহত হয় ৩৭ জন। ওই হামলার দায় স্বীকার করে কুর্দি বাহিনী। ২৮ জুন ইস্তানবুলের আতাতুর্ক বিমানবন্দরের হামলায় ৪১ জন নিহত হয়। দায়ী করা হয় আইএসকে। তবে কেউ সেই হামলার দায় স্বীকার করেনি। ৩০ জুলাই ৩৫ কুর্দি যোদ্ধাকে হত্যা করে তুর্কি বাহিনী। আগস্টের ২০ তারিখে গাজিয়ানটেপের এক বিয়ের অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়ে অন্তত ৩০ জনকে হত্যা করা হয়। এই ঘটনাতেও আইএসকে দায়ী করা হয়। এএফপি, বিবিসি, গার্ডিয়ান, ডেইলি সাবাহ, ডেইলি হুরিয়াত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন