চরম এক বাস্তবতার নাম মৃত্যু। প্রাণীমাত্রই মৃত্যুবরণ করতে হবে তাকে। যেতে হবে রবের কাছে। পৃথিবীতে এমন কোনো সুস্থ মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না,যে মৃত্যুকে অস্বীকার করে। প্রতিটি প্রাণীর নির্ধারিত একটি হায়াত রয়েছে, যখন তার সেই হায়াত শেষ হয়ে যাবে এক মুহূর্তের জন্যও সে এই পৃথিবীতে থাকতে পারবে না।পবিত্র কোরআরে ইরশাদ হয়েছে,›জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।› (সূরা আম্বিয়া: ৩৫) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে,›আর প্রত্যেক জাতির জন্য রয়েছে একটি নির্দিষ্ট সময়, যখন তাদের সেই সময় আসবে, তখন তারা মুহূর্ত কাল ও বিলম্ব বা ত্বরা করতে পারবে না।› (সূরা ইউনুস :৪৯)ঈমান মুমিনের অমূল্য সম্পদ। ঈমানি জীবন-যাপন এবং ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারা অনেক বড় সৌভাগ্যের বিষয়। সুন্দর ও ঈমানি মৃত্যু লাভের জন্য ইসলামে রয়েছে,কার্যকরী কিছু আমল।
আল্লাহর ওপর দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন:
ঈমানের উপর অবিচল মুমিনের জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই যারা বলে, আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ অতঃপর অবিচল থাকে, (মৃত্যুর সময়) তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিত হবে না। তারাই জান্নাতের অধিকারী। তারা তথায় চিরকাল থাকবে। তারা যে কর্ম করতো, এটা তারই প্রতিফল।’ (সূরা আহকাফ : ১৩-১৪)
কোরআন-সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা:
কেউ যদি পরিপূর্ণভাবে কোরআন-সুন্নাহ আঁকড়ে ধরতে পারে, তবে সে ঈমানি জীবন-যাপন করতে পারবে এবং লাভ করতে পারবে ঈমানি মৃত্যু। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আমি তোমাদের মাঝে দু’টি বস্তু রেখে গেলাম। তোমরা কখনই পথভ্রষ্ট হবে না, যতদিন তোমরা সে দু’টি বস্তকে আকঁড়ে ধরে রাখবে। সে দু’টি বস্তু হলো, ১.আল্লাহর কিতাব। ২. তাঁর রাসূলের সুন্নাত। (মিশকাতুল মাসাবিহ:১৮৬)
নেককাজে আত্মনিয়োগ:
কারো শেষ পরিণাম ভালো হওয়ার লক্ষণ হলো, মৃত্যুর আগেই বেশি বেশি নেককাজের সুযোগ লাভ। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা যদি তাঁর কোনো বান্দার কল্যাণ করার ইচ্ছা করেন, তাহলে তাকে কাজ করার তাওফিক প্রদান করেন। প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি কীভাবে তাকে কাজ করার তাওফিক দেন? তিনি বলেন, তিনি সেই বান্দাকে মৃত্যুবরণের আগে সৎ কাজের সুযোগ দান করেন।› (তিরমিজি : ২১৪২)
আল্লাহর প্রতি সুধারণা রাখা:
আল্লাহর প্রতি এই সুধারণা পোষণ করবে, যে তিনি অবশ্যই মৃত্যুর সময় আমার মৃত্যু কষ্ট লাঘব করবেন; কারণ আল্লাহর প্রতি যে যেমন ধারণা করবে আল্লাহ তার সঙ্গে তেমন আচরণ করবেন। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‹আমার সম্পর্কে আমার বান্দার ধারণা মোতাবেক আমি (আচরণ করি)। আমি তার সঙ্গে থাকি।› ( সহিহ বুখারি : ৭৪০৫)। অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‹তোমাদের সবাই যেন আল্লাহর প্রতি উত্তম ধারণা পোষণরত অবস্থায় মারা যায়। (মুসলিম : ৭১২১)
পুণ্যের কাজে ধারাবাহিক প্রচেষ্টা:
প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্য হলো,পুণ্যের কাজ পছন্দ করা। ভালো কাজের চেষ্টা করা। আর পুণ্যের কাজে প্রচেষ্টা মুমিনের মৃত্যুযন্ত্রণা সহজ করে। হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‹ভালো ও পুণ্যের কাজ খারাপ মৃত্যু থেকে বাঁচিয়ে রাখে, গোপনে দান আল্লাহর ক্রোধ ঠাণ্ডা করে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা আয়ূ বৃদ্ধি করে।› (আল-মুজামুল কাবির : ৮০১৪)
বেশি বেশি মৃত্যুর স্মরণ:
অধিক পরিমাণে মৃত্যুর কথা স্মরণ করার বড় একটি উপকার হচ্ছে, অন্তর থেকে দুনিয়ার আসক্তি দূর হয় এবং পরকালের চিন্তা সৃষ্টি হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সব ভোগ-উপভোগ বিনাশকারী মৃত্যুকে তোমরা বেশি বেশি স্মরণ করো। (তিরমিজি: ২৩০৭)
কবর জিয়ারত:
কবর জিয়ারত মৃত্যু ও আখিরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়। সৃষ্টি করে অন্তরে পরকালের ভয়। ফলে এর দ্বারা অন্যায় থেকে তওবা এবং মৃত্যুর প্রস্তুতি গ্রহণে সাহায্য করে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি তোমাদের এর আগে কবর জিয়ারতে নিষেধ করেছিলাম, এখন থেকে কবর জিয়ারত করো। কেননা তা দুনিয়াবিমুখতা এনে দেয় এবং আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।’ (ইবনে মাজাহ : ১৫৭১)
একান্তে দোয়া করা:
শেষ জীবনে যেন ঈমানি মৃত্যু নসিব হয়, আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে যেন মৃত্যু লাভ করা যায়, সে জন্য বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে দোয়া করবে। বিশেষত কোরআন-সুন্নায় বর্ণিত দোয়াগুলো মনোযোগ সহকারে পাঠ করবে। এখানে তিনটি দোয়া উল্লেখ করা হলো-
১.উচ্চারণ : রাব্বানা লা তুযিগ কুলুবানা বা’দা ইজ হাদাইতানা ওয়া হাবলানা মিল্লাদুনকা রাহমাতান ইন্নাকা আংতাল ওয়াহহাব।
অর্থ : হে আমাদের প্রভু! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তর সত্য লঙ্ঘনে ধাবিত করো না এবং তোমার কাছ থেকে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান করো। নিশ্চয় তুমিই সবকিছুর দাতা।› (সূরা আলে ইমরান : ০৮)
২.উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আছলিহলি দ্বীনি আল্লাজি হুয়া ইছমাতু আমরি,ওয়া আছলিহলি দুনয়ায়া আল্লাতি ফিহা মাআশিয়া,ওয়াজ আলিল মাওতা রহমাতান লি মিন কুল্লি সুয়িন।
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি আমার দ্বীনের ব্যাপারে আমাকে সংশোধন করে দাও, যা আমার সকল কাজের রক্ষাকবচ। তুমি আমার পার্থিব জীবনকে সংশোধন করে দাও, যেখানে রয়েছে আমার জীবন-জীবিকা এবং প্রতিটি অনিষ্ট থেকে রক্ষার জন্য আমার মৃত্যুকে আমার জন্য রহমতের উৎস বানাও। (আদাবুল মুফরাদ:৬৭৩)
৩.উচ্চারণ:আল্লাহুম্মা মুছাররিফাল কুলুবি ছাররিফ কুলুবানা আলা ত্বাআতিকা।
অর্থ: হে (মানুষের) অন্তর পরিবর্তনকারী আল্লাহ! আপনি আমাদের অন্তরকে আপনার আনুগত্যের উপর স্থির রাখুন।’ (মুসলিম: ৬৬৪৩)
আল্লাহ আমাদের সবাইকে ঈমানি মৃত্যু দান করুন।
লেখক:মুহাদ্দিস,জামিয়া ইসলামিয়া হামিদিয়া বটগ্রাম, সুয়াগাজী, সদর দক্ষিণ, কুমিল্লা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন