পরিকল্পিতভাবে পরিবহন ধর্মঘট আহŸানসহ বিভিন্ন বাধা সত্বেও আগামীকাল শনিবার রংপুর মহানগরে বৃহত্তম গণসমাবেশ করতে বদ্ধপরিকর আয়োজক বিএনপি নেতৃত্ব । এই মহাসমাবেশের জন্য জিলা স্কুল মাঠ চেয়ে আবেদন করলেও মহানগর পুলিশ অনুমতি দিয়েছে কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠের। মাঠে মঞ্চ বানানোর কাজও শুরু করা হয়েছে। পথে পথে বাধা পেরিয়ে দলে দলে মানুষ আসতে শুরু করেছে। আগাম আসা এসব মানুষ রংপুর মহানগরীর আবাসিক হোটেল, ছাত্রবাস, আত্মীয় স্বজন, পরিজন ছাড়াও নগরীর বাইরে বিভিন্ন উপজেলার আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে অবস্থান নিচ্ছেন। গতকাল বৃহস্পতিবারই সমাবেশের ৩৫ ভাগ লোক রংপুরে প্রবেশ করেছেন বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
এদিকে প্রশাসনিক হয়রানী ও মহাসড়কে নছিমন করিমন বন্ধের দাবিতে পরিবহন মালিক সমিতি ৩৬ ঘন্টার পরিবহন ধর্মঘট ডাকলেও এটাকে গণসমাবেশ লোক আসতে বাধা তৈরির পুরনো কৌশল বলে দাবি বিএনপির। তাদের মতে এটা সরকারি পরিবহন ধর্মঘট।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরের পরে হঠাৎই রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফতাবুজ্জামান নিপ্পন জানান, প্রশাসনিক হয়রানি এবং মহাসড়কে নছিমন করিমন বন্ধের দাবিতে আজ শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত রংপুর বিভাগের সকল জেলা উপজেলা দুরপাল্লা এবং আন্তঃজেলা সকল ধরণের পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে পরিবহন মালিক সমিতি। তার দাবি, মোটর, ট্রাক মালিক, ট্রাক্টর, কার, মাইক্রোবাস মালিক সমিতি যৌথসভার মাধ্যমে এই ধর্মঘট আহবান করেছে। বিএনপির সমাবেশের কারণেই এই ধর্মঘট কিনা এর কোন উত্তর দেননি তিনি। ধর্মঘটের পক্ষে জেলা মটর মালিক সমিতির সভাপতি স্বাক্ষরিত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিও দেয়া হয়েছে।
গণসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব হারুন অর রশিদ এমপি বলেছেন, পরিবহন ধর্মঘট হবে, এটাতো জানাই ছিল। সরকারের নীতি নির্ধারকরা নিশ্চয়ই সা¤প্রতিক সময়ের তিনটি গণসমাবেশ দেখেছেন সেখানেও ধর্মঘট দেয়া হয়েছিল। তারপরও মানুষ এসেছে। আমরা মনে করি, এই পরিবহন ধর্মঘটের মাধ্যমে রাজপথ সরকার নিজেই বিএনপি এবং জনগণের দখলে দিয়ে দিল। এরফলে নির্বিঘেœ রাজপথ দিয়ে মিছিল নিয়ে আসতে পারবে। আজ সকাল থেকেই সেটা বোঝা যাবে। বাই সাইকেল, রিকশা, মোটরসাইকেল এবং হেটে এবং নদীয় সাঁতরিয়ে লোকজন যানজটবিহীনভাবে সমাবেশে যোগ দিবেন বলেও দাবি তার ।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সমাবেশ স্থল কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠ প্রস্তুতির কার্যক্রম সরেজমিনে মনিটরিং করেছেন গণসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন, সদস্য সচিব ও যুগ্ম মহাসচিব হারুন অর রশিদ এমপি , সমন্বয়ক ও বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু।
আহবায়ক ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের সকল প্রস্তুতি শেষ। মাঠ নিয়ে তামাশার কারণে মঞ্চ এবং মাঠ প্রস্তুতের কাজটি করতে দেরি হয়েছে। তবুও আমরা আশা করি, আজ শুক্রবার দুপুরের মধ্যেই মঞ্চসহ মাঠ তৈরি হয়ে যাবে। এরই মধ্যে যারা আসবেন তারা মাঠেই অবস্থান নেবেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকার পুলিশ দিয়ে বিভিন্নভাবে নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ করছে। মামলা, হামলা, গ্রেফতারের হুমকি দিচ্ছে। বাজারে বাজারে মোড়ে মোড়ে গিয়ে আতংক ছড়াচ্ছে। এই আতংকই সরকারের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। যত আতংক তৈরি করা হবে, তত লোকের উপস্থিতি বেশি হবে।
এদিকে সমাবেশ প্রস্তুত কমিটির সমন্বয়ক এবং বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক উপ মন্ত্রী প্রিন্সিপাল আসাদুল হাবিব দুলু জানান, আমরা সমাবেশের জন্য রংপুর জিলাস্কুল মাঠের জন্য আবেদন করেছিলাম প্রায় সোয়া মাস আগে। সে অনুযায়ী আমরা পোস্টারিংসহ প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছি। কিন্তু অন্তিম মূহুর্তে রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার আমাদের গণসমাবেশের জন্য কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে মৌখিক অনমুতি নিশ্চিত করেছে। আমরা প্রশাসনের প্রতি সম্মান জানিয়ে কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে মঞ্চ তৈরিসহ অন্যান্য প্রস্তুতির কাজ চালাচ্ছি। এখানে আটটি ভাগে ২০০ স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন। একটি পরিচ্ছন্ন সুশৃংখল জন-সমুদ্রের সমাবেশ নিশ্চিত করতে চাই আমরা। সেজন্য সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এর আগে আমরা একমাস ধরে রংপুর বিভাগের একটি সিটি করপোরেশন, আট জেলা, ৫৮ টি উপজেলা ৩৪ টি পৌরসভা এবং ৫৩২ টি ইউনিয়নে সম্মেলন সফল করতে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে বৈঠক করেছি।
সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির এই সমন্বয়ক আরও বলেন, একটি পরিচ্ছন্ন এবং রেকর্ডভাঙা উপস্থিতি নিশ্চিত করতে আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। সমাবেশে আমরা নিশ্চিত করেছি শুধু বিএনপি নেতাকর্মী নয়, তৃণমূল, নগর, শহর এবং বন্দরের সাধারণ মানুষরাও এই কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। সমাবেশ স্থল ছাপিয়ে মানুষের স্রোত রংপুর মহানগরীর প্রধান সড়ক, বিভিন্ন মাঠসহ অলিগলিতে ভরে যাবে বলে দবি করেছেন তিনি।
দুলু বলেন, জেলা স্কুল মাঠে অনুমতি না দেয়ার মাধ্যমে সরকার এবং প্রশাসন বার্তা দিয়েছে তারা আমাদের গণসমাবেশ বাধাগ্রস্ত করার পাঁয়তারা করছেন। হয়তো সেদিন পরিবহন বন্ধ করে দিয়ে সরকার ধর্মঘট পালন করবেন। কিন্তু মানুষের স্রোত ঠেকাতে পারবে না । সকল ধরণের বাধা অতিক্রম করে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ গণসমাবেশে উপস্থিত হবেন। আমরা শান্তিপূর্ন সমাবেশ করতে চাই, কিন্তু সরকার যদি বাধা দেয় তাহলে প্রতিহত করা হবে।
গণসমাবেশের সভাপতি রংপুর মহানগর বিএনপির আহবায়ক সামসুজ্জামান সামু নয়া জানান, প্রশাসন জিলা স্কুল মাঠের অনুমোদন দেয়নি ভয়ে। তবে সেটি দিলেই পরিস্থিতি ভালো থাকতো। পুলিশ চীনের প্রাচীর দিলেও মানুষের স্রোত আটকাতে পারবে না। ইতোমধ্যেই সমাবেশ স্থলের লোকজন বিভিন্ন জেলা থেকে আসতে শুরু করেছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। শুধু নেতাকর্মী নয়, সাধারণ মানুষই বেশি আসবেন বলে দাবি তারা। আজ শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যেই সমাবেশের প্রায় ৩০ ভাগ লোক নগরী এবং আশেপাশে বিভিন্নভাবে এসে পৌঁছবেন। তারা মাঠে অবস্থান নেবেন। আমরা আশা করছি রংপুর মহানগরীর মূল ১৬ কিলোমিটার এলাকার অলিগলি মানুষে মানুষে টইটম্বুর হবে।
রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার নুরে আলম মিনা বিপিএম (বার) পিপিএম জানান, বিএনপির আবেদনের প্রেক্ষিতে কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠের অনুমতি দেয়া হয়েছে। জিলা স্কুল মাঠ না দেয়ার ব্যাপারে তিনি কোন কথা বলতে চাননি। সম্মেলন উপলক্ষে বিএনপির বাধা দেয়ার অভিযোগটিও সঠিক নয় বলেও জানান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন