ইসলামী শিক্ষা-সংস্কৃতি বিনষ্ট করতে ভিনদেশি আগ্রাসন চলছে। জাতির মেরুদণ্ড শিক্ষা ব্যবস্থায় এ দেশের মানুষের ঈমান-আক্বিদা, কৃষ্টি-কালচার, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও ধর্মীয় চেতনা জড়িত। জাতীয় শিক্ষা কমিশনের কতিপয় নাস্তিক্যবাদী দালালচক্র শিক্ষা-সাংস্কৃতিতে অপসাংস্কৃতি ঢুকিয়ে সুকৌশলে মুসলিম শিক্ষার্থীদেরকে নাস্তিক বানানোর পাঁয়তারা করছে। ইসলামবিদ্বেষী কোনো কারিকুলাম এদেশে চলতে দেয়া হবে না। দেশের তৌহিদী জনতা জীবন দিয়ে হলেও তা রুখে দেবে। অবিলম্বে বোর্ড পরীক্ষায় ইসলামি শিক্ষা বাধ্যতামূলক হবে। পাঠ্যপুস্তক থেকে বিজাতীয় সংস্কৃতি বাদ দিতে হবে। বিভিন্ন ইসলামী দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ পৃথক পৃথক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন। নেতৃবৃন্দ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের ঘোষিত ১৩ দফা দাবির প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়ে তা অবিলম্বে মেনে নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
পীর সাহেব চরমোনাই : ইসলামী শিক্ষা নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীনের সময়োপযোগী বক্তব্য ও কর্মসূচির প্রতি আন্তরিক সমর্থন ব্যক্ত করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, দেশে হিন্দুত্ববাদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠার চক্রান্ত চলছে। সরকারের এহেন কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং সিলেবাসে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নিয়মতান্ত্রিকভাবে কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় আগামী ১০ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় অভিমুখে বিশাল গণমিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। সেদিন সকাল ১০টায় বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে জমায়েত শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অভিমুখে মিছিল রওয়ানা দেবে।
গতকাল রোববার এক বিবৃতিতে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, ভারতের আদর্শে শিক্ষা সিলেবাসের মাধ্যমে বিরানব্বই ভাগ মুসলমানের দেশে হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠার যে চক্রান্ত শুরু হয়েছে ঈমানদার জনতা তা রুখে দেবে ইনশাআল্লাহ। দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতিতে ভারতীয় আগ্রাসন ভয়াবহভাবে চলছে। ইসলামবিদ্বেষী অপসংস্কৃতির চেতনাধারীরা এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় মানুষের ঈমান-আকিদা, কৃষ্টি-কালচার, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও ধর্মীয় চেতনা উঠিয়ে দিতে চায়। মোদি অনুসারী ওই নাস্তিক্যবাদীরা প্রশাসনে থেকে ইসলামী চিন্তা-চেতনার বদলে শিক্ষা-সংস্কৃতিতে সুকৌশলে অপসংস্কৃতি ঢুকিয়ে দিচ্ছে। জেনারেল শিক্ষা সিলেবাসের সাথে সাথে মাদরাসা সিলেবাসেও হিন্দুত্ববাদী শিক্ষা সংযোজন করেছে। হিন্দুত্ববাদী শিক্ষা চালুর ষড়যন্ত্র রুখে দেয়া হবে। ভারতে দারুল উলূম দেওবন্দসহ ৭০০ মাদরাসা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদি সরকার। কথাবার্তা পরিষ্কার, ভারতকে মাদরাসা বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসতে হবে। পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, শিক্ষা সিলেবাস সংশোধন করে বিরানব্বই ভাগ মুসলমানের চিন্তা চেতনা অনুযায়ী করতে হবে। শিক্ষার সকল স্তরে ইসলামী শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। অন্যথায় দেশময় তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠলে মোদি প্রেমিকদের আখের রক্ষা হবে না।
গণদল : দেশের কিছু সুবিধাবাদী বুদ্ধিজীবীর দিল্লিপ্রীতির কারণে বিরানব্বই ভাগ মুসলমানের বাংলাদেশ হিন্দুত্ববাদী সংস্কৃতির চারণভূমি হয়ে গেছে। প্রশাসনে কর্মরত ভারতপ্রেমী কিছু কর্মকর্তা দেশের স্বার্থের চেয়ে দিল্লির স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দেন। তারা দিল্লির ছাতার নিচে থেকে দেশের প্রশাসনযন্ত্র পরিচালনা করার চেষ্টা করছেন। যার কারণে দেশের স্কুল-কলেজ-মাদরাসার পাঠ্যপুস্তকে ঈমান-আক্বিদা শেখানোর বদলে নাস্তিক্যবাদী সংস্কৃতি ঢুকানো হচ্ছে। গতকাল এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন গণদলের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী ও মহাসচিব আবু সৈয়দ। তারা আরো বলেন, এই দিল্লির দাস আমলারা চীন থেকে করোনার টিকা নেয়া বন্ধ করে ভারত থেকে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। পরে সে মাসুল দেশবাসীকে দিতে হয়েছে।
‘মোদির সংস্কৃতি এদেশে চলবে না’ বক্তব্যের জন্য মোদার্রেছীনের সভাপতি ও ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীনকে ধন্যবাদ জানিয়ে গণদলের দুই নেতা বলেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় মুসলমানদের ঈমান-আকিদা, মনীষীগণের জীবনচিত্র, ইসলামী কৃষ্টি-কালচারের বদলে ভিনদেশি সংস্কৃতির চর্চার যে উলঙ্গ নৃত্য চলছে তা বাহাউদ্দীন সাহেব ধরতে পেরেছেন। ওনার বাবা মাওলানা এম এ মান্নান (রহ:) এর মতোই তিনি প্রতিবাদ করেছেন এবং দেশবাসীর সামনে চিত্রটি তুলে ধরেছেন। এখন দায়িত্ব আলেম সমাজের। ইসলামী ধারার দলগুলোতে এ ব্যাপারে সোচ্চার হওয়া উচিত।
গণদলের দুই নেতা বলেন, অনেক পাঠ্য বইয়ে ইসলাম ধর্মের ঐতিহ্য তুলে ধরার চেয়ে হিন্দুদের মূর্তি, দেবতা, পরকালের দেবতা আনুবিশ, সূর্য দেবতা, রথযাত্রা ইত্যাদিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যে দেশের শিক্ষা উপমন্ত্রী অহঙ্কার করে বলেন, ‘বাবা ভালোবেসেই আমাকে দুই বছর ইসকনের স্কুলে পড়িয়েছেন’। সে দেশের শিক্ষা অবস্থার চিত্র কী তা সহজেই অনুমেয়। বাহাউদ্দীন সাহেবের সুরের সঙ্গে সুর মিলিয়ে আমরাও বলছি, ওলি-আউলিয়ার এদেশে আর এস এসের ভাবশীর্ষ নরেন্দ্র মোদির হিন্দুয়ানি অপসংস্কৃতি চলবে না, চলতে দেয়া হবে না। এ ক্ষেত্রে দেশের আলেম-ওলামা-মাশায়েখদের প্রতিবাদ করতে হবে। হিন্দুয়ানি সংস্কৃতি চর্চার জন্য মুক্তযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করিনি।
আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী : বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন প্রধান আমীরে শরীয়ত আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী বলেছেন ৯২ শতাংশ মুসলমানদের বাংলাদেশে ইসলামী শিক্ষা সাংস্কৃতি বিনষ্ট করতে ভিনদেশি আগ্রাসন চলছে। জাতির মেরুদণ্ড শিক্ষা ব্যবস্থায় এ দেশের মানুষের ঈমান-আক্বিদা, কৃষ্টি-কালচার, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও ধর্মীয় চেতনা জড়িত। জাতীয় শিক্ষা কমিশনের কতিপয় নাস্তিক্যবাদী দালালচক্র শিক্ষা-সাংস্কৃতিতে অপসাংস্কৃতি ঢুকিয়ে সুকৌশলে মুসলিম শিক্ষার্থীদেরকে নাস্তিক বানানোর পাঁয়তারা করছে। ইসলামবিদ্বেষী কোনো কারিকুলাম এদেশে চলতে দেয়া হবে না। দেশের তৌহিদী জনতা জীবন দিয়ে হলেও তা রুখে দেবে। অবিলম্বে বোর্ড পরীক্ষায় ইসলামি শিক্ষা বাধ্যতামূলক হবে।
গতকাল রোববার রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর মাদরাসায় বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের এক বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, দলের মহাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি সুলতান মহিউদ্দিন, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা সানাউল্লাহ হাফেজ্জী, প্রচার সম্পাদক মাওলানা সাইফুল ইসলাম সুনামগঞ্জী, মাওলানা সাইফুল ইসলাম জামালী।
মাওলানা আতাউল্লাহ আরো বলেন, সরকার অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এক ও অভিন্ন একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর নামে পাঠ্য পুস্তকে হিন্দুয়ানি সাংস্কৃতি সংযোজন ঘটিয়ে ইসলামী শিক্ষাকে ধ্বংসের নীল নকশা তৈরি করেছে। তারই অংশ হিসেবে সরকার এসএসসি’র বোর্ড পরীক্ষা থেকে ইসলামী শিক্ষা বাদ দিয়ে এ দেশের মুসলমানদের অন্তরে মারাত্মকভাবে আঘাত দিয়েছে। তিনি বলেন, স্বাধীনভাবে শিক্ষা-সংস্কৃতি ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার জন্যই ১৯৪৭ সনে এই ভূখণ্ডটি আলাদা হয়েছিল। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় স্বাধীনতার ৫২ বছর পরেও আমরা পরাধীন। এদেশের ৯০ ভাগ মুসলমানের জন্য এটা অত্যন্ত হতাশাজনক। অথচ বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগেই ওয়াদা করেছিল ক্ষমতায় আসলে ইসলামবিরোধী কোনো আইন করবে না। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর একের পর এক ইসলামও আলেম ওলামাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। অবিলম্বে পাঠ্য পুস্তক থেকে ইসলামবিদ্বেষী লেখা বাদ দিয়ে স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা শিক্ষার সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি ।
ইসলামি ঐক্যজোটের সমর্থন : দেশ ও জাতির কল্যাণে জমিয়াতুল মোদার্রেছীন ঘোষিত ১৩ দফা দাবি নামার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছেন ইসলামি ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাওলানা আব্দুর রকীব অ্যাডভোকেট এবং মহাসচিব অধ্যাপক মাওলানা আব্দুর করিম খান। আজ রোববার এক বিবৃতিতে তারা এসব ন্যায্য দফা মেনে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। নেতৃদ্বয় জমিয়াতুল মোদার্রেছীন ঘোষিত ১৪ নভেম্বর সারা দেশে স্থানীয় প্রেসক্লাব এর সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি সফল করার জন্য মুসলিম জনতার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, মাদরাসার শিক্ষায় নির্ধারিত পুস্তকে কোনো প্রকার ইসলামবিদ্বেষী লেখা এ দেশের মুসলমান সহ্য করবে না। এসব ইসলামবিরোধী চক্রান্ত দেশের ৯২ ভাগ মুসলমান কোনো অবস্থায়ই মেনে নেবে না। মাদরাসার শিক্ষা নিয়ে সর্ব প্রকার ষড়যন্ত্র বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন। এ দেশের মুসলমানরা জীবন থাকতে যুগ যুগ ধরে প্রতিষ্ঠিত ইসলামি মাদরাসাসমূহ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংসের কোনো চক্রান্ত সফল হতে দেবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন