শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

এলপিজির দামে নৈরাজ্য

বাড়তি দাম গুনছেন ক্রেতারা অতিরিক্ত দাম নেয়াটা আইনের দৃষ্টিতে লুণ্ঠনমূলক : ক্যাব সভাপতি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০১ এএম

রান্নার কাজে বহুল ব্যবহৃত তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম কমিয়েছে সরকার। কিন্তু এক মাস পেরিয়ে গেলেও সরকারের বেঁধে দেওয়া মূল্যে কোথাও বিক্রি হচ্ছে না নিত্যপ্রয়োজনীয় এই গ্যাস। অথচ দাম বৃদ্ধির খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোম্পানিগুলো দাম বাড়ালেও কমানোর পর তা আমলেই নেয় না। ফলে বাধ্য হয়ে বাড়তি দামে ক্রেতাদের নিতে হয় গ্যাস।

সবশেষ গত ২ অক্টোবর ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৩৫ টাকা কমিয়ে এক হাজার ২০০ টাকা নির্ধারণ করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। কমানোর এক মাস পেরিয়ে গেলেও গতকাল মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকার কোথাও বেঁধে দেওয়া দামে এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রি করতে দেখা যায়নি। এলাকা ও কোম্পানিভেদে বেসরকারি খাতের ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩৫০ টাকা থেকে সাড়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্তও। অথচ তা বিক্রি করার কথা ছিল ১২০০ টাকায়। মূল্য নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা না থাকায় এ খাতে ‘নৈরাজ্য’ চলছে বলে ক্রেতাদের অভিযোগ।

প্রতি মাসেই বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এলপিজির দাম নির্ধারণ করে দিলেও তাতে তোয়াক্কা করে না খুচরা বিক্রেতারা। তবে যে মাসে দাম বাড়ে তখন নির্ধারিত সময়ের আগেই দাম বাড়াতে এক মুহুর্তও দেরি করেন না ব্যবসায়ীরা। আবার যেই মাসে দাম কমানো হয় তাতে ভ্রুক্ষেপ না করে নিজেদের ইচ্ছেমতো দামে গ্যাস বিক্রি করে। গুটিকয়েক খুচরা বিক্রেতা ছাড়া অধিকাংশ বিক্রেতাই যে যার খুশি মতো দাম নিচ্ছেন এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রিতে। শুধু রাজধানীতেই নয়, রাজধানীর বাইরের জেলাগুলোতেও বেশি দামে এলপিজি বিক্রির খবর পাওয়া গেছে।

ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে ডলার ও জ্বালানির দামের সঙ্কট চলে আসছিল অনেকদিন ধরেই। এর মধ্যে গ্যাসের দাম কমার সুখবর আগে ২ অক্টোবর। সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় অক্টোবর মাসে প্রতি কেজিতে এলপিজির দাম কমে ১ টাকা ৮৭ পয়সা। একইভাবে দাম কমে অটোগ্যাসেরও। সেদিন বিইআরসির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে এলপিজির দাম কমানোর সুখবর দিয়ে বলা হয়, নির্ধারিত নতুন দাম সন্ধ্যা ৬টা থেকেই কার্যকর হবে। কিন্তু সেদিন সন্ধ্যা ৬টা তো দূরের কথা, এক মাস পরেও বাড়তি দামে সিলিন্ডার বিক্রি করেছে খুচরা বিক্রেতারা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকার বাসিন্দা শাহাবুদ্দিন বলেন, সরকার সিলিন্ডারের দাম কমালেই কী, আর না কমালেই কী? আমরা তো সরকারি দামে সিলিন্ডার পাই না। খবরে শুনলাম এই মাসে সিলিন্ডার ১ হাজার ২০০ টাকা করছে। কিন্তু আমাদের কাছে ১ হাজার ৩৫০ টাকা নিচ্ছে। আবার যখন দাম বাড়ে তখন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই তারা আরও দাম বাড়িয়ে দেয়। এখন আমরা তো কিনতে বাধ্য। বাধ্য হয়েই আমাদেরকে কিনতে হয়।
রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার বাসিন্দা ইমরানও বলেছেন একই কথা। তিনি বলেন, ৬ অক্টোবর আমি ১২ কেজি সিলিন্ডার কিনি। আমার কাছে ১ হাজার ৫০০ টাকা নিয়েছে। সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার ২০০ টাকার কথা বললে তারা জানায় ১ হাজার ৫০০ টাকার নিচে দিতে পারবে না।

জানা গেছে, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে সিলিন্ডার ডিলার পর্যন্ত বিক্রি হয় ১ হাজার ১৮০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। ডিলারদের থেকে খুচরা পর্যায়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে ১০৫ টাকা কেজি হিসেবে গ্যাস বিক্রি হয়। সে হিসেবে দোকানির ১২ কেজির সিলিন্ডার গ্যাস কিনতে দাম পড়ে ১ হাজার ২৬০ থেকে ১ হাজার ২৮০ টাকা পর্যন্ত। সবশেষ গ্রাহকদের এই সিলিন্ডার ১ হাজার ৩৫০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। অর্থাৎ সরকারি পর্যায়ে নির্ধারিত দামের ২০০ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলপিজির এক ডিলার জানান, কোম্পানি ভ্যাটসহ এলপিজি সিলিন্ডার গ্যাস সরবরাহ করে। ডিলারকে ১০৫ টাকা কেজিতে গ্যাস কিনতে হয়। এই হিসাবে দোকানির ১২ কেজির সিলিন্ডার গ্যাস কিনতে দাম পড়ে সর্বোচ্চ এক হাজার ২৮০ টাকা পর্যন্ত। ভ্যাট ধরার কারণে গ্যাসের দাম বেড়ে যায় বলেও জানান তিনি। আর সরকার দাম কমালে কোম্পানিগুলো পাত্তা দেয় না। কোম্পানিরা ডলারের রেট বেড়েছে বলে অজুহাত দেখায়।

প্রতিমাসেই এলপিজি দাম নির্ধারণী সংবাদ সম্মেলনে বিইআরসি চেয়ারম্যান আবদুল জলিল বলেন, সরকারি নির্ধারিত দামের চেয়ে কেউ বেশি দামে এলপিজি বিক্রি করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে বাস্তবে এর কোন প্রতিফলন দেখা যায় না।
গত ২ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনে বাজারে এলপিজি কমিশনের নির্ধারিত দাম বিক্রি হয় না বলে অভিযোগ করা হলে বিইআরসি সদস্য মকবুল-ই-ইলাহী বলেন, আমরা লিখিত অভিযোগ না পেলে এই বিষয়ে কোনও উদ্যোগ নিতে পারি না। কমিশনের আইনেও এটা করা যায় না। অন্য কোম্পানিগুলোর মতো স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আমরা অভিযান পরিচালনা করতে পারি না।

এ প্রসঙ্গে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, অতিরিক্ত দাম নেয়াটা আইনের দৃষ্টিতে লুণ্ঠনমূলক হয়ে গেল। যেখানে আয় করার সুযোগ তারা পাচ্ছে, বিইআরসি সেখানে বলছে অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব। ক্যাব বারবার অভিযোগ করলেও দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা আমরা দেখতে পারছি না। অবিলম্বে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন