শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংবাদ

নেপথ্যে চীন ও ভারতের লড়াই : নেপালে জাতীয় নির্বাচন ২০ নভেম্বর

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ নভেম্বর, ২০২২, ১০:৫১ এএম

আগামী ২০ নভেম্বর জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নেপাল। জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচন এক সঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে। এবারের নির্বাচনে দেশটির নেপালি কংগ্রেস পার্টির নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন কোয়ালিশন জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।

দেশটির ১ কোটি ৮০ লাখ ভোটার ২৭৫ সদস্যের পার্লামেন্ট ও ৩৩০ সদস্যের ৭ টি প্রাদেশিক পরিষদের জন্য ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট (এফপিটিপি) এবং আনুপাতিক উপস্থাপনা (প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন)- এই দুই পদ্ধতির সংমিশ্রণে ভোট দেবে।

তবে দেশটির নাগরিকরা কাকে ভোট দেবে সেটি নির্ভর করছে বেশ কয়েকটি ইস্যুর ওপর।

অর্থনীতি ও মূল্যস্ফীতি: করোনা মহামারির কারণে অর্থনৈতিক গোলযোগের মধ্যে পড়ে নেপাল। এরপর থেকেই দেশটিতে জিনিসপত্রের দাম বাড়া শুরু হয়। দুই বছর পর আবারও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে অন্যান্য দেশের মতো নেপালেও বেড়েছে সব পণ্যের দাম। নেপালে ৬ বছরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চে ৮ শতাংশের বেশি। ফলে অনেক কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে দেশটির ৩ কোটি সাধারণ মানুষ। দেশটির প্রায় এক-পঞ্চমাংশ মানুষ ২ ডলারের চেয়ে কম আয়ের মধ্যে জীবনযাপন করছে। এই কঠিন সময়ে নেপালের মানুষ এমন নেতা বেছে নিতে পারে, যারা জিনিসের দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি দেবেন।

বিশ্ব ব্যাংক বলছে, নেপালের অর্থনীতি মধ্য-জুলাই থেকে শুরু হওয়া চলমান অর্থবছরে ৫ দশমিক ১ শতাংশ সম্প্রসারণের সম্ভাবনা আছে। গতবছর ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ সম্প্রসারণ হয়েছিল দেশটির অর্থনীতি।

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা: নেপালে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নেই বললেই চলে। বিশেষ করে চীন ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কযুক্ত, অনেক বিনিয়োগকারীকে নিরুৎসাহিত করেছে এই রাজনৈতিক অস্থিরতা। ২০০৮ সালে নেপালে ২৩৯ বছরের রাজতন্ত্র অবসান ঘটার পর ১০টি ভিন্ন সরকার এসেছে।

নেপালের তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দল হলো নেপালি কংগ্রেস, দ্য কমিউনিস্ট ইউনিফাইড মার্কসিস্ট-লেনিনিস্ট (ইউএমএল) পার্টি এবং মাওবাদী সেন্টার। প্রতিটি পার্টিই অতীতে ভিন্ন ভিন্ন কোয়ালিশনের নেতৃত্ব দিয়েছে। কিন্তু ক্ষমতার দ্বন্দ্ব এবং দলীয় কোন্দলের কারণে কোনও পার্টিই ৫ বছর মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি।

২০ নভেম্বর নেপালে জাতীয় নির্বাচন

মাওবাদী বিদ্রোহীরা ২০০৬ সালে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার আগ পর্যন্ত সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে এসেছে। পরে তারা মূলধারার রাজনীতিতে যোগ দেয়। অর্থমন্ত্রী জনার্দন শর্মা, যিনি একজন মাওবাদী গেরিলা কমান্ডার হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি বলেছেন নেপালের অর্থনৈতিক দুর্দশা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নির্বাচনে ভোটারদের জন্য অগ্রাধিকার হবে।

মূল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে লড়াই হবে এবার। মূলত নেপালি কংগ্রেস পার্টি ও দ্য কমিউনিস্ট ইউনিফাইড মার্কসিস্ট-লেনিনিস্ট (ইউএমএল) পার্টির মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের কথা শোনা যাচ্ছে। নেপালি কংগ্রেস বর্তমানে চার দলের কোয়ালিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং গত তিন দশকের বেশিরভাগ সময় ধরে ক্ষমতায় তারা। নেপালি কংগ্রেসের নেতা প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা জোট বেঁধেছেন মাওবাদী সেন্টার পার্টির সঙ্গে। এটি সাবেক মাওবাদী বিদ্রোহীদের প্রধান দল। ৭৬ বছর বয়সী দেউবা এবার ষষ্ঠবারের মতো ক্ষমতায় ফেরার চেষ্টা করছেন। তবে তার নেপালি কংগ্রেস পার্টি ভারত ঘনিষ্ঠ বলে জানা যায়।

ইউএমএল পার্টির নেতৃত্ব দিচ্ছেন ৭০ বছর বয়সী বর্ষীয়াণ নেতা কে. পি. শর্মা ওলি। রাজতন্ত্রবাদী একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে তার জোট রয়েছে। যদিও সে জোট ততটা মজবুত নয়। ওলি বেইজিং-পন্থি হিসাবেই পরিচিত। তার জোট জিতলে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য তিনিই হবেন পছন্দের প্রার্থী। ওলি আগেও দুবার নেপালের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

এছাড়া, মাওবাদী সেন্টার পার্টির নেতৃত্বে প্রচণ্ড। নির্বাচনে স্পষ্ট কোনও ফল না এলে এই প্রচণ্ডই হয়ে উঠতে পারেন কিং মেকার। তিনি নিজেও প্রধানমন্ত্রী হতে ইচ্ছুক।

চীন ও ভারতের লড়াই: অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক স্বার্থের কারণে নেপালের নির্বাচনের দিকে নজর আছে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও চীনের। বেল্ট রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এর আওতায় নেপালের সঙ্গে অবকাঠামো প্রকল্পের বিষয়ে চীনের চুক্তি আছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কাঠমান্ডু ও লাসার মধ্যকার ট্রান্স-হিমালয় রেলওয়ে নেটওয়ার্ক গড়তে চায় চীন। এ বছরের গোড়ার দিকে, নেপাল রাস্তাঘাটের উন্নয়ন ও বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণের জন্য ৫০ কোটি মার্কিন সহায়তার অনুমোদন দেয়। নেপালে আমেরিকার উপস্থিতি নিয়ে চীনের উদ্বেগ বাড়ে। ফলে সিদ্ধান্তটি বিতর্কিত বলে বিবেচিত হয় সে সময়। সূত্র: রয়টার্স, ফিন্যান্সিয়াল টাইমস

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন