আতিকুর রহমান নগরী
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
উপকারের জবাব : উসামা বিন যায়েদ (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- ‘যে কেউ তার প্রতি কল্যাণকারী ব্যক্তিকে ‘জাযাকুমুল্লাহ্ খায়রান’ (আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দিন) বলবে, সে সর্বোত্তম পদ্ধতিতে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করবে’। (তিরমিজি : ২০৩৬)
তবে, কারো দ্বারা আমাদের কোনো উপকার সাধিত হলে আমরা ধন্যবাদ বলে আমাদের কৃতজ্ঞতার অনুভূতি প্রকাশ করি। সত্যি বলতে, কোনো উপকারের বিনিময় উপকার দেওয়া খুব জরুরি। তথাপি, প্রতিটি উপকারের বিনিময় একই ধরনের উপকার করা মানব জাতির জন্য প্রায় অসম্ভব। এক্ষেত্রে আমাদের মৌখিকভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে। কেউ কেউ বলেছেন, ‘কোনো পুরস্কার দিতে তোমার হাত যদি সংকীর্ণ হয় তাহলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য তোমার জিহ্বাকে যথেষ্ট লম্বা কর।’ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর বিবরণ অনুযায়ী একটি উপকারের বিনিময়ে একইভাবে কোনো উপকার করা অপরিহার্য। আসলে আমরা যে শব্দটির অনুবাদ ‘উপকার’ করছি তা হলো ‘আতা’, যার মানে প্রদান করা। আমাদের ভাষায় আমরা এটাকে ‘আতিয়া’ও বলে থাকি। যদি একটি উপকারের বিনিময়ে অন্য একটি উপকার করা সম্ভব না হয় তাহলে কমপক্ষে তার তারিফ করা উচিত। অর্থাৎ আমাদের এমন কিছু বলতে হবে যা থেকে আমাদের আনন্দ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশিত হয় এবং উপকারী ব্যক্তিটি খুশি হয়। এর জন্য ওই ব্যক্তিকে ধন্যবাদ বলতে হবে অথবা তার জন্য দোয়া করতে হবে। একটি হাদিসে উল্লেখ আছে- ‘যে প্রশংসা করল সে কৃতজ্ঞ হলো’। কৃতজ্ঞতা আল্লাহতায়ালার শাস্তি দূরীকরণে সাহায্য করে : আল্লাহতায়ালার অনুগ্রহ ও নেয়ামত সম্বন্ধে অজ্ঞতা আমাদের জন্য তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে অন্তরাল হয়ে দাঁড়ায়। আমরা জানি, আল্লাহতায়ালা যদি আমাদেরকে আমাদের অবহেলার জন্য শাস্তি দেন তাহলে সেই অধিকার তাঁর আছে। পবিত্র কোরআনে তিনি বলছেন : ‘যদি আল্লাহ মানুষকে তাদের কৃতকর্মের কারণে পাকড়াও করতেন, তবে ভূপৃষ্ঠে চলমান কাউকে ছেড়ে দিতেন না। কিন্তু তিনি এক নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দেন। অতঃপর যখন সে নির্দিষ্ট মেয়াদ এসে যাবে তখন আল্লাহর সব বান্দা তাঁর দৃষ্টিতে থাকবে’। (সূরা ফাতির-৩৫:৪৫)
একই সময় আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় বলে দিয়েছেন, আর তা হলো তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। তিনি বলছেনÑ ‘তোমাদের আযাব দিয়ে আল্লাহতায়ালা কী করবেন যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর এবং ঈমানের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকো। আর আল্লাহ হচ্ছেন সমুচিত মূল্যদানকারী সর্বজ্ঞ’। (সূরা নিসা ৪:১৪৭) সুতরাং, আমাদের ওপর আল্লাহতায়ালার প্রতিটি নেয়ামতের বিনিময়ে তাঁর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের জন্য আমাদের হৃদয় পরিষ্কার করব।
প্রিয়নবী (সা.) কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের প্রতি অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি হযরত মুআয ইবনে জাবাল (রা.)-এর হাত ধরে বলেন, ‘হে মুআয! আল্লাহর শপথ, আমি তোমাকে ভালোবাসি, আল্লাহর শপথ, আমি তোমাকে ভালোবাসি’।
মুআয! তোমাকে আমার উপদেশ : প্রত্যেক সালাতের পরে এই দোয়াটি পড়তে ভুলো না, ‘আল্লাহুম্মা আ’ইন্নি আলা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিকা অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! তোমার স্মরণ, তোমার কৃতজ্ঞতা ও উত্তমরূপে তোমার ইবাদত প্রতিষ্ঠায় আমাকে সাহায্য করো। (মুসনাদ আহমাদ : ৫/২৪৫; আবু দাউদ : ১৩০১ ও নাসায়ি : ১২৮৬)
যে শুকরিয়া আদায় তথা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন আল্লাহরতায়ালার রহমতের কাছাকাছি করে দেয়, যে কৃতজ্ঞতা দারিদ্র্যতা দূর করে, যে শুকরিয়া আদায় আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক প্রীতির বন্ধন তৈরি করে। সেই কৃতজ্ঞতার প্রতি আমরা যতœবান হব। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ভালো কাজে প্রতিযোগিতা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন