শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

ইমাম আহমদ রেযা বেরলভী (রহ.): জীবন ও কর্ম

আউলিয়াদের জীবন

| প্রকাশের সময় : ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মাওলানা মুহাম্মদ রেজাউল করিম
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
তিনি সকল বাতিল অপশক্তির বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম করেছেন। সব শ্রেণীর বাতিল অপশক্তির অপতৎপরতার বিষয়ে তিনি কলম চালিয়ে পৃথিবীবাসীকে জাগিয়ে তোলেন। অল্পসময়ে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় দেড় হাজার প্রসিদ্ধ মৌলিক গ্রন্থাবলী রচনা করেন।
অর্থনৈতিক সংস্কার : আ’লা হযরত (রাহ.) তৎকালীন সময়ে বিরাজমান অর্থনৈতিক মন্দা ও বন্ধ্যাত্ব মুকাবিলা এবং হিন্দু মহাজনী চক্রের সুদভিত্তিক কারবার ও লেনদেন হতে বের হতে মুসলমানদেরকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ প্রদান করেছিলেন।
ব্রিটিশ পদ্ধতির ব্যয়বহুল বিচারব্যবস্থার অধীনে হাজার হাজার টাকা নষ্ট না করে নিজেদের বিবাদ নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসা করা, যাতে সময় ও টাকা দুই’ই সাশ্রয় হয়। বিত্তশালী মুসলমানরা যেন সুদবিহীন কমার্শিয়াল ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে; যাতে সম্পদ ব্যক্তিগত খাতে কুক্ষিগত হওয়ার পরিবর্তে ব্যাংকে জমা হতে পারে এবং ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের বিনিয়োগ সহায়তা দেয়া যায়। মুসলমানরা শুধু মুসলমান ব্যবসায়ী হতে পণ্য ক্রয় করবে, যাতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে। আ’লা হযরতের সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়িত হলে, আজ মুসলমানরা বিশ্ব বাজারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারত। তিনি মুসলমানদেরকে মামলা-মোকাদ্দমা ও বিলাসিতায় টাকা অপচয় না করে তা মুসলিম উম্মাহর প্রয়োজনে সঞ্চয় করে রাখার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান। আ’লা হযরতের সে আহ্বান অনুযায়ী সুদবিহীন ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হলে, আজ ডলারের নিকট মুসলমানদেরকে মাথা নত করতে হতো না।
খোদা প্রদত্ত জ্ঞান : তিনি জাহেরী ও বাতেনী জ্ঞানে জ্ঞানী ছিলেন। আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীনের অপরিসীম মেহেরবানীতে তিনি ইলমে লাদুন্নীর মাধ্যমে ইলম’র সকল শাখায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। কোরআনের অনুবাদ : কানযুল ঈমান’ বা ঈমানের খনি’ নামে পবিত্র কোরআন মাজিদের যে অনুবাদ তিনি পৃথিবীর মানুষকে উপহার দিয়েছেন, তা ইতিহাসে বিরল। রাসূলে কারীম (সা.)-এর অনন্য মর্যাদা ও শানে রিসালতের প্রতি গভীর আন্তরিকতা তার অনুবাদে ফুঠে উঠেছে। ইলমে হাদিসে অবদান : আ’লা হযরত শুধুমাত্র মুফাস্সির ছিলেন তা নয়, তিনি একজন সফল মুহাদ্দিসও। হাদিসে রাসূল-এর মধ্যে তিনি ইশকে রাসূলের যে প্রমাণ প্রতিষ্ঠা করেছেন, তা শেখ মুহাক্কিল আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভীর সরাসরি অনুসরণ। তিনি তার রচিত ফতেওয়ায়ে রজভীয়ায় ৩৫৯১ খানা হাদিস দ্বারা তাঁর ফতোয়ায় অভিমত ব্যক্ত করেছেন। আধুনিক বিজ্ঞান ও আ’লা হযরত : বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায়  ও তাঁর সমান বিচরণ ছিল। বিজ্ঞানের অনেক জটিল সমস্যার সমাধান তিনি অত্যন্ত সহজভাবে প্রদান করেছেন।
হজে বায়তুল্লাহ : তিনি ১২৯৫ হিজরীতে হজে বায়তুল্লাহ ও নবীজির রওজায়ে আতহার যিয়ারত লাভে ধন্য হন। ইন্তিকাল : ২৫ সফর ১৩৪০ হিজরী ২৮ অক্টোবর ১৯২১খ্রী. জুম্মার নামাজের সময় অসংখ্য ভক্ত-অনুরক্তকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে তিনি জান্নাতের পথে পাড়ি জমান।  
একথা দিবালোকের ন্যায় ভাস্বর যে, সপ্তম ও অষ্টম শতাব্দীতে যখন ইসলামের গৌরব ও ঐতিহ্য ¤্রয়িমাণ প্রায় এবং খৃষ্টজগত স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হয়েছিল; তখন ক্ষুরধার লিখনি ও সংস্কারকর্ম সম্পাদন করে ইসলামের মৌলিক আদর্শ ও দর্শনকে জীবিত করেন হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি। ঠিক তদ্রুপ চতুর্দশ শতাব্দীতে যখন ইসলামের মৌলিক আক্বীদা বিশ্বাসের মূলে বাতিল শক্তি আঘাত করে, তখনই আ’লা হযরত রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বজ্রকণ্ঠে জেগে ওঠে শানিত মসি ধারণ করেন। এদিক দিয়ে হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম আল গাজ্জালী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ও আ’লা হযরতের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। দু’জনই যুগের মুজাদ্দিদ এবং নবীপ্রেমে উজ্জীবিত মৌলিক চিন্তার অধিকারী ছিলেন। পরিশেষে বলা যায়, ইমাম আহমদ রেযা খাঁন রাহমাতুল্লাহি আলায়হি প্রকৃতপক্ষে সফল মুজাদ্দিদের ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি একাধারে লেখক, গবেষক উচ্চস্তরের আশেকে রাসূল, শায়ের, বিশ্ববরেণ্য আলেম, মুহাদ্দিস, মুফাসিসর, ফকীহ্ ও মুজাদ্দিদ ছিলেন। তৎকালীন সমাজের জন্য প্রদত্ত তাঁর অর্থনৈতিক সংস্কারধর্মী কার্যক্রম বর্তমান আধুনিক বিশ্বের ১৬০ কোটি মুসলমানের পথ চলার নির্দেশনা দিতে সক্ষম। আল্লাহ তাঁকে জান্নাতে উচ্চমর্যাদা দান করুন। আমীন।  

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন