বাংলাদেশি নাবিকদের ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড ক্রয়ের অনুমতি পুনর্বহাল করার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স এসোসিয়েশন (বিএমএমওএ)-এর নেতৃবৃন্দ। একই সঙ্গে তাদের প্রাপ্য সুবিধাগুলো প্রদানের যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান। তারা বলেন, পুরোপুরি অযৌক্তিকভাবে রেমিটেন্স উপার্জনকারী "ওয়েজ আরনার্স" মেরিনারদের জন্য তাদের ন্যায্যভাবে প্রাপ্ত এ সুযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যা ১৮ হাজার নাবিক এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আর রাষ্ট্র হারাচ্ছে এক বিশাল রেমিটেন্স।
আজ শুক্রবার রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন রোডস্থ আলী ভবনে ‘বাংলাদেশি নাবিকদের ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগের সুবিধা পুনর্বহাল করলে বাড়বে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তারা এই দাবি জানান
লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সহ-সভাপতি চীফ ইঞ্জিনিয়ার মো. মাহবুবুর রহমান সমুদ্রগামী জাহাজের মেরিন অফিসারদের “ওয়েজ আরনার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড" ক্রয়ের অনুমতির পুনঃব্যবস্থাকরণ বিষয় তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, মেরিনারেরা শুরু থেকেই (১৯৮৮ সাল) এ বন্ড ক্রয় করতে পারতেন। সব রেমিটেন্স আর্নাররা এমনকি বাংলাদেশ সরকারের বেতনভুক্ত বিদেশী মিশনের কর্মকর্তারাও এ বন্ড ক্রয় করতে পারছেন কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, পুরোপুরি অযৌক্তিকভাবে রেমিটেন্স উপার্জনকারী "ওয়েজ আরনার্স" মেরিনারদের জন্য তাদের ন্যায্যভাবে প্রাপ্ত এ সুযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা মেরিনারদের "কী ওয়ার্কার" হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করছে। যদিও বাংলাদেশ মেরিনারদের "কী ওয়ার্কার” হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, তথাপি আমাদের দেশে সুযোগ সুবিধা দেবার বদলে প্রাপ্ত ন্যায্য সুবিধা কেড়ে নেয়া হচ্ছে যা অত্যন্ত দুঃখের, কষ্টের ও লজ্জার। আমরা বিনয়ের সঙ্গে সরকারের নিকট অনুরোধ করতে চাই ৯০ শতাংশ মেরিনারগণ চুক্তিভিত্তিক জাহাজে চাকরি করেন। তাদের কোন গ্র্যাচুরিটি বা পেনশন সুবিধা নেই। “ওয়েজ আরনার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড” তাদের অবসরকালীন চলার উপায় মাত্র। তাই বাংলাদেশি মেরিনারদের "ওয়েজ আরনার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড ক্রয়ের অনুমতির পুনঃব্যবস্থাকরণ করতঃ নন-রেসিডেন্ট হিসেবে প্রাপ্য সুবিধাগুলো উপভোগ করতে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। এর ব্যত্যয় হলে, এই বিপুল পরিমাণ অর্থ অনিয়ন্ত্রিত উপায়ে ও অব্যবস্থাপনায় দেশে আসার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে অথবা বেতনের বিশাল অংশ বিদেশী ব্যাংকে গচ্ছিত রাখার প্রবনতা বৃদ্ধি পাবে যা জাতীয় অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। ইতিমধ্যে অর্থমন্ত্রী বলেছেন যে, মেরিন অফিসারদের “ওয়েজ আরনার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড ক্রয়ের অনুমতি প্রদানে তিনি নীতিগতভাবে একমত। তথাপি এখনও পর্যন্ত এই ব্যাপারে দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি।
তিনি আরও জানান, আন্তর্জাতিক সমুদ্রগামী জাহাজে কর্মরত মেরিন অফিসারগণ “ওয়েজ আরনার্স” হয়েও" ওয়েজ আরনার্স ডেভলপমেন্ট বন্ড" ক্রয় করার জন্য বর্তমানে আর বিবেচিত হচ্ছেন না। কারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক বিগত ৭ই সেপ্টেম্বর ২০২০ সালে মেরিনারগণ এ বন্ড ক্রয় করতে পারবেন না মর্মে নির্দেশনা জারি করেছেন। যা বাস্তবতা বিবর্জিত, অত্যন্ত দুঃখজনক, অন্যায্য, হতাশাজনক এবং চরম ক্ষোভের সৃষ্টিকারী।
এখানে স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে যে, মেরিন অফিসারদের সমুদ্রগামী জাহাজে নিযুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়াটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট স্পষ্ট নয়। কর্তৃপক্ষের সদয় অবগতির জন্য এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, একজন মেরিন অফিসার যে সমুদ্রগামী মার্চেন্ট জাহাজে অবস্থান করেন, তা একটি নির্দিষ্ট দেশের (ঋষধম ঝঃধঃব) নিবন্ধীত (জবমরংঃবৎবফ) থাকে এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ওই মেরিন অফিসারও ওই দেশের আওতায় (ঔঁৎরংফরপঃরড়হ) থাকেন বলে বিবেচিত হন। একজন মেরিন অফিসারকে চাকরির মেয়াদকালে চাকুরির নিয়ম অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট জাহাজের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন বন্দরে মালামাল পরিবহনের নিমিত্তে বিভিন্ন দেশে অবস্থান করতে হয়। আবার কখনো জাহাজ একটি নির্দিষ্ট দেশে থাকলে তিনি ওই দেশেই অবস্থান করেন। এটি পুরোপুরি নির্ভর করে বাণিজ্য ব্যবস্থানা ও শিপিং কোম্পানীর উপরে। এখানে স্ব্যর্থহীনভাবে আমরা বলতে পারি, মেরিনারগণ চাকরির চুক্তির পুরো সময়টা তারা দেশের বাইরে অবস্থান করেন যা সরকারের ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টেও নথিভুক্ত থাকে।
চাকুরি চুক্তির নির্দিষ্ট সময়ে (সাধারনত চার থেকে নয় মাসের) মেরিন অফিসাররা বিদেশী ব্যাংক বা মানি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে তাদের এই কষ্টার্জিত মঞ্জুরি ও বেতন বৈধভাবে দেশে পাঠান।
সংগঠনের এই নেতা ওয়েজ আরনার্স ডেভলপমেন্ট বাংলাদেশ রুলস ১৯৮১ (সংশোধিত ২০১৫)-এর বিভিন্ন ধারা তুলে ধরে বলেন, দেশের বাইরে অবস্থান করে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী মেরিনারেরা “ওয়েজ আরনার্স ডেভলপমেন্ট বন্ড " ক্রয় করার যোগ্য দাবিদার। তিনি আরও জানান, নির্ভীক নাবিকেরা অবিরাম ত্যাগ এবং পরিশ্রমে পৃথিবীর ৯০ শতাংশের বেশী পণ্য (১১ বিলিয়ন টনস যার মূল্য ২০ ট্রিলিয়ন ডলার) পরিবাহিত হয় জলপথে। নাবিকরা দেশের জন্য বয়ে আনছেন বছরে ৫৮৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা।
গত কয়েক বছরে মাসিক ১৬ থেকে ২৬ শতাংশ হারে রেমিট্যান্স কম আসার কারণে বর্তমানে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাচ্ছে। তাই মেরিনারদের “ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড ক্রয়ের অনুমতির পুনর্বহাল করলে রেমিট্যান্স বাড়বে বলে তারা মনে করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি ক্যাপ্টেন মো. আনাম চৌধুরী, সহ-সভাপতি ক্যাপ্টেন গোলাম মহিউদ্দিন কাদরি, এসিস্ট্যান্ট জেনারেল সেক্রেটারি চীফ ইঞ্জিনিয়ার মো. গোলাম জিলানি, কোষাধ্যক্ষ মো. আলী হোসাইন, কার্যকরী পরিষদের সদস্য চীফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী আবু সাইদ ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন