খুব কম লোকই জানে যে, বর্তমান বিশ্ব সীমিত সংখ্যক ফাইবার-অপ্টিক তারের ওপর কত বেশি নির্ভরশীল, যা ইন্টারনেটের মেরুদণ্ড এবং ইউরোপ মহাদেশ ও সংলগ্ন দ্বীপগুলোকে বৈদ্যুতিকভাবে সংযুক্ত করেছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট সেবার ৯৫ শতাংশই সমুদ্রের তলদেশে তারের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়। সারা বিশ্বে এখনও প্রায় ২শ’টি কেবল রয়েছে, প্রতিটির আকার একটি বড় হোসপাইপের এবং প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ২শ’ টেরাবাইট ডেটা স্থানান্তর করতে সক্ষম। এসব তার প্রতিদিন আনুমানিক ১০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের আর্থিক লেনদেন বহন করে এবং ১০টি বা তার বেশি আন্তর্জাতিক চোকপয়েন্টে একত্রিত হয়, যা বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। যেহেতু, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ যেমন আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, সব যুদ্ধই অর্থনৈতিক, সমুদ্রের তলদেশের তারগুলিতে চুল পরিমাণ বিচ্যুতি পুরো অবকাঠামোটিকে ধ্বংস করে দিতে পারে। এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন দীর্ঘদিন ধরেই জানেন যে, সাবমেরিন কেবলে আক্রমণ যুদ্ধের মোড় ঘুিরয়ে দিতে পারে।
যদিও, সমুদ্রের তলদেশে তারের বিচ্যুতির জন্য কাউকে দায়ী করা অনেক কঠিন কারণ সেগুলি দুর্ঘটনাক্রমে ট্রলার বা ভূমিকম্প দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে, পশ্চিম বিশ^াস করে যে, রাশিয়ার নৌ-বাহিনীর কাছে পাইপ এবং তারগুলি কাটার ক্ষমতা রয়েছে। পশ্চিমের চোখে চরম শত্রু মহাদেশীয় পরাশক্তি রাশিয়া এবং চীন তাদের আঞ্চলিক ইন্টারনেটের উপর বেশি নিয়ন্ত্রণ রাখে এবং মহাসাগর জুড়ে সংযুক্ত তারগুলির উপর কম নির্ভরশীল, তাই দেশ দুইটি পশ্চিমা বিশে^র মতো ততটা দুর্বল নয়। তার জানে যে, এমনকি স্যাটেলাইট যুগেও ভূগোল গুরুত্বপূর্ণ। মস্কো গভীর সমুদ্রতলে কাজ করার জন্য তার নৌ-শক্তিকে উন্নত করেছে। রাশিয়ার অর্ধ-সামরিক জাহাজগুলির মধ্যে রয়েছে বিশেষ জরিপ ও গবেষণা জাহাজ, মনুষ্যবিহীন ডুবোজাহাজ এবং আরও কম গভীরতায় নামতে পারে এমন উন্নত জাহাজ। সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক হল রাশিয়ার পুরানো পারমাণবিক সাবমেরিন যা নতুন, ছোট সাবমেরিনগুলির মাদার শিপ হিসাবে কাজ করার জন্য পুনর্গঠন করা হয়েছে। এগুলি সনাক্ত করা কঠিন এবং সমুদ্রের তলায় কয়েক মাস বা বছর পর বিস্ফোরণের জন্য প্রস্তুত বিস্ফোরক স্থাপন করতে পারে। চীনও সমুদ্রের তলদেশের তারের বাজারে ঢোকার মাধ্যমে নেটওয়ার্কটির দুর্বলতাকে কাজে লাগাচ্ছে এবং অগ্রাধিকারমূলক হারে তারগুলি স্থাপনের প্রস্তাব দিচ্ছে। এটি দেশটির বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের সামুদ্রিক শক্তি হয়ে উঠছে। ফলে, রাশিয়ার মতো যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররাও জানে যে, সাবমেরিন কেবলে আক্রমণ তাদের সব থেকে বড় দুর্বলতায় আঘাত হিসেবে পরিগণিত হতে পারে এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মোড় ঘুিরয়ে দিতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন