দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক আ ফ ম কামাল। গত রোববার রাত ৯টার দিকে মহানগরের আম্বরখানা বড়বাজার এলাকায় ফিল্মি স্টাইলে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় তাকে। ব্যবসায়িক বিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। নিহত আ ফ ম কামাল জেলা ছাত্রদলের সাবেক প্রচার সম্পাদক ছিলেন। তার বাড়ি সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের আলীনগর গ্রামে। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠছে সিলেটের রাজনীতি।
অপরদিকে জেলা ও মহানগর আ. লীগের প্রতিনিধি সমাবেশের জন্য সিলেটে অবস্থান করছেন আ. লীগের কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দরা। ঠিক এই মুর্হুতে স্থানীয় বিএনপির এক শীর্ষ নেতার হত্যাকাণ্ডে সিলেটের রাজনীতিক অঙ্গনে বিরাজ করছে অগ্নিরূপ। হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রোববার রাত ১১টায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এসময় ব্যাপক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এসময় বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবিও ভঙচুর করা হয়। এর প্রতিবাদে পাল্টা মিছিল বের করেন আ. লীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এসময় দুপক্ষের মাঝে বেশ কয়েকবার ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এছাড়া একটি প্রাইভেট কার ভাঙচুর, একটি মোটরসাইকল আগুন দিয়ে পুড়ানো হয়।
এদিকে, মিছিল পরবর্তী সমাবেশে আ.লীগ নেতারা জানান, রাতের মধ্যে ছবি ভাঙচুরকারীদের গ্রেফতার করা না হলে আগামী ১৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য বিএনপির সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশ প্রতিহত করা হবে। যদিও হত্যাকাণ্ডের পরপরই স্থানীয় বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে সরকারি দল এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
গত রোববার রাতে কামাল হত্যার পর ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের সামনে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ সভায় কাইয়ুম চৌধুরী বলেছিলেন, আ ফ ম কামাল হত্যার সাথে সরকার দলের সন্ত্রাসীরা জড়িত। যুবলীগ, ছাত্রলীগের ক্যাডাররাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। খুনিরা গ্রেফতার না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। কিন্তু এ অবস্থায় আগের রাতের নিজের বক্তব্য থেকে সরে এসে গতকাল সোমবার দুপুরে সিলেট জেলা সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম বলেন, কামাল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আমরা সবাই মর্মাহত। এই হত্যাকাণ্ডকে রাজনৈতিক লেবাস দিতে চাই না। যে বা যারা জড়িত তাদের যেন দ্রুত গ্রেফতার করা হয়। তবে নিরীহ কাউকে যেন হয়রানি করা না হয়। তিনি আরো বলেন, কামাল হত্যার কারণে সিলেট বিএনপি গতকাল সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করেছে। আজ থেকে জেলা বিএনপি ৩ দিনের শোক পালন করবে। সবাই কালো ব্যাজ পরিধান করবে।
এদিকে, হত্যাকাণ্ডের পরই জড়িত সন্দেহে ছাত্রদলের এক নেতাকে আটক করে পুলিশ। হত্যা মিশনে ৫ জন অংশ নেয় বলে এখন পর্যন্ত জানা গেছে। এর মধ্য ৩ জন মোটরসাইকেলে এসে হামলা চালায়। বাকি ২ জন কামালের ব্যবহৃত প্রাইভেট কারের গতিরোধ করেছিল।
নগরীর আম্বরখানা বড় বাজার এলাকায় প্রাইভেট কারে যাচ্ছিলেন নিহত নেতা কামাল। প্রত্যক্ষদর্শীদের অনুমান ছিল, এলাকাটি অন্ধকারাচ্ছন্ন হওয়ায় তাদের মনে হয়েছিল প্রাইভেট কার ধাক্কা দিয়েছে মোটরসাইকেলকে। এ অবস্থায় প্রত্যক্ষদর্শীরা দ্রুত এসে মোটরসাইকেল উদ্ধার করেন। কিন্তু তারা বুঝতেই পারেননি কারের ভেতরে বসা বিএনপি নেতাকে কোপানো হচ্ছে। এরপর দেখেন কারটি স্থির এবং ভেতর থেকে ভেসে আসে গোঙ্গানীর আওয়াজ। এরপর রক্তাক্ত বিএনপি নেতাকে দেখে ধরাধরি করে হাসপাতালে পৌঁছার ব্যবস্থা করতে না করতেই মোটরসাইকেল নিয়ে উধাও হয়ে যায় ঘাতকরা। মাত্র ২ থেকে ৩ মিনিটের মধ্যে সম্পন্ন হয় এ হত্যাকাণ্ডের মিশন।
এদিকে, বিএনপি নেতা আ ফ ম কামালকে ব্যবসায়ীক দ্বন্ধ থেকে ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা হত্যা করেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে পুলিশ সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া যুবকদের গ্রেফতারে চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। তবে এখনও পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোন মামলা দায়ের হয়নি।
ফরেনসিক বিভাগরে প্রধান ডা. শামসুল ইসলাম জানান, নিহতের শরীরে পাওয়া গেছে ২৩টি আঘাত। আঘাতের সবকটি গুরুতর। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু ঘটে তার। তার শরীরে বাম পাশেই করা হয়েছে আঘাত। অপরদিকে, এ হত্যাকাণ্ডের ক্লু উদ্ঘাটনে মাঠে তৎপরতা চালাচ্ছে এসএমপি পুলিশ।
মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, নিহত কামালের ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা ছিল। ব্যবসা নিয়ে নগরীর কয়েকজনের সঙ্গে তার বিরোধ চলছিল। ব্যবসাসংক্রান্ত পূর্ববিরোধের জেরে এ ঘটনটি ঘটতে পারে।
এসএমপির বিমানবন্দর থানার ওসিমাইনুল জাকির বলেন, গত রোববার রাতে বড়বাজার এলাকায় নিজের প্রাইভেটকারে বসা ছিলেন কামাল। এ সময় মোটরসাইকেলে আসা দুই ব্যক্তি তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। এমএজি ওসমানী মেডিক্যালে নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর বিএনপি সহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা নেমে আসেন রাজপথে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন