বাংলাদেশে নিযুক্ত কমনওয়েলথভূক্ত সাতটি দেশের কূটনীতিকগণ বলেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সামরিক ও বেসামরিক লাখো লাখো মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। বিশ্ব শান্তির জন্য ওই যুদ্ধে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের আত্মত্যাগকে আমরা স্মরণ করছি। আজকের এই দিনটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মাঝে মানবিক মূল্যবোধ গড়ে তোলার মধ্যদিয়ে বিশ্বব্যাপি শান্তি ও মানবতার পাশে দাঁড়াতে হবে। আমাদের মানবিক দিক যতো বেশি আলোকিত হবে, ততোই আমরা অন্ধকার অতিক্রম করতে পারবো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন আমাদের প্রজন্মের জন্য, যাতে আমরা শান্তিতে সমৃদ্ধিশীল একটি পৃথিবীতে বাস করতে পারি। আমরা তাদের কখনো ভুলবোনা।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ারসিমেট্রিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈনিকদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানানোর পর অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত কূটনীতিকগণ গণমাধ্যমের কাছে আজকের দিনটি ঘিরে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
এর আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সেনা সদস্যদের স্মরণে কুমিল্লার কমনওয়েলথ ময়নামতি যুদ্ধ সমাধিতে (ওয়ার সিমেট্রি) শ্রদ্ধা জানান সাতটি দেশের কূটনীতিকরা। শ্রদ্ধা নিবেদনের শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত এবং পবিত্র বাইবেল পাঠের পর ফাদার ক্যাট্টিক প্রার্থনা অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। ব্রিটিশ হাই কমিশনার রবার্ট চ্যাট্টারটন ডিক্সনের স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এসময় বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। নিবর নিস্তব্দ হয়ে ওঠে পুরো সমাধিক্ষেত্র। কিছুক্ষণ নিরবতা পালন শেষে শুরু হয় নিহত সৈনিকদের স্মরণে হলিক্রস পাদদেশে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো পর্ব। সমাধিক্ষেত্রের হলিক্রসে বাংলাদেশের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কুমিল্লা সেনানিবাসের ৩৩ আর্টিলারী বিগ্রেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. রাব্বী আহসান এনডিসি পিএসসি, কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শিউলি রহমান তিন্নী ও জেলা পুলিশের পক্ষে শ্রদ্ধা জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. আফজাল হোসেন।এরপর হলিক্রস পাদদেশে শ্রদ্ধা জানান, ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার জেরেমি ব্রুর, কানাডার হাইকমিশনার ড. লিলি নিকোলাস, জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি, পাকিস্তানের ডেপুটি হাইকমিশনার কামার আব্বাস খোখার, ভারতীয় হাই কমিশনারের প্রতিনিধি ডিফেন্স এট্যাসি বিগ্রেডিয়ার এম এস সাবারওয়াল এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন প্রতিনিধিসহ অন্যান্যরা। প্রার্থনা অনুষ্ঠান শেষে কূটনীতিকরা ও তাদের সঙ্গে আসা স্বজনরা ময়নামতি ওয়ারসিমেট্রিতে শায়িত যোদ্ধাদের সমাধি ঘুরে দেখেন।
উল্লেখ্য,কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় ৫কিলোমিটার পশ্চিম-উত্তরে এক নয়নাভিরাম জায়গা জুড়ে অবস্থিত ময়নামতি ওয়ারসিমেট্রি বা কমনওয়েলথ রণসমাধি ক্ষেত্র। এখানে ১৩ দেশের ৭৩৭জন যোদ্ধার মধ্যে ব্রিটেনের ৩৫০জন, কানাডার ১২জন, নিউজিল্যান্ডের ৪জন, দক্ষিণ আফ্রিকার ১জন, পূর্ব আফ্রিকার ৫৬জন, পশ্চিম আফ্রিকার ৮৬জন, ভারতের ১৭২জন, বার্মার ১জন, দক্ষিণ রোডেশিয়ার ৩জন, বেলজিয়ামের ১জন, পোল্যান্ডের ১জন, জাপানের ২৪জন এবং বেসামরিক ১জনকে সমাহিত করা হয়। ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রিতে চিরনিদ্রায় শায়িত সৈনিকদের মধ্যে মুসলিম ধর্মের ১৭২জন, বৌদ্ধ ধর্মের ২৪জন, হিন্দু ধর্মের ২জন এবং বাকিরা খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী। লন্ডন ভিত্তিক কমনওয়েলথ গ্রেভস কমিশন নামে একটি সংস্থা ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রির সার্বিক তদারকির দায়িত্বে রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন