শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

বিনোদন প্রতিদিন

লাল শাড়ি’র শুটিং সপটে একদিন

রিয়েল তন্ময়: | প্রকাশের সময় : ১৬ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

 মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর থানার কৌরীচালা গ্রামে চলছে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৬৫ লাখ টাকা সরকারি অনুদান প্রাপ্ত সিনেমা ‘লাল শাড়ি’র শুটিং। সিনেমাটি চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসের অপু-জয় কথাচিত্র থেকে নির্মিত হচ্ছে। সিনেমাটির শুটিং দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন অপু বিশ্বাস। আমন্ত্রণ রক্ষা করতে সেখানে যেতে হয়েছে। ঢাকা থেকে শুটিং স্পটের দূরত্ব ৩ ঘন্টার। সকাল ৮টায় ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে ১১ টায় পৌঁছে গেলাম। শুটিং ¯পটে ঢুকতেই দেখা হয় সিনেমার প্রযোজক ও নায়িকা অপু বিশ্বাসের সাথে। তাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে, শুটিংয়ের জন্য প্রস্তুতি শেষ করেছেন। গ্রামীণ পরিবেশে শুটিং সেট নির্মাণ করা হয়েছে। পতিত জমির পাশে পুকুর। তার পাড়ে আকাশমণি গাছ। তার ছায়ার নিচে সেট। সিনেমার পরিচালক বন্ধন বিশ্বাস বসে আছেন মনিটরের সামনে। চিত্রগ্রাহক বিশ্বজিৎ দত্ত রানা প্রোডাকশন ইউনিটের উদ্দেশ্যে হাঁক ছাড়লেন, কুয়াশা বাড়বে, আরও দুইটা ধোঁয়া দাও। প্রোডাকশন ইউনিট ধোঁয়া জ্বালিয়ে মধ্য সকালকে ভোরে রূপ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আকাশমণি গাছের নিচে পায়চারি করছেন অপু বিশ্বাস। ক্যামেরার পেছন থেকে হাঁক এলোÑ ক্যামেরা রোলিং, অ্যাকশন। পুকুরের চালা দিয়ে দৌড়ে এলেন নায়ক সায়মন সাদিক। শঙ্কা আর ভয়মাখা চোখে তার দিকে তাকালেন অপু। এভাবেই চলছিল দৃশ্য ধারনের কাজ। শুটিং দেখতে শত শত গ্রামবাসী ভিড় করে। শুটিং সেটের সামনেই বসেছে দোকান পাট। দেখতে অনেকটা মেলার মতো। বয়স ৭৫-৮০ বয়সের এক বৃদ্ধ ঝালমুড়ি বিক্রি করছিলেন। কেমন বিক্রি হয়, জিজ্ঞেস করলে জানান, এখানে প্রায় ১৫ দিন ধরে শুটিং চলছে। শুটিংয়ের শুরু থেকেই এখানে বসছেন। প্রতিদিন প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা বেচাকেনা হয়। শুটিংয়ের শট চলছে। অপু বিশ্বাসকে সায়মন জিজ্ঞেস করেন, ‘এই সাত সকালে খবর দিলি?’ ভয় জড়ানো কণ্ঠে অপু বললেন, ‘আমার কেমন যেন লাগছে। খুব ভয় হয়।’ সায়মন কাঁধে হাত রেখে ভরসা দিয়ে বললেন, ‘আঁধার কেটে এই গ্রামে যেমন আলো ফুটছে, একদিন আমাদেরও সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে। আমি তোকেই বিয়ে করব।’ তখনই পরিচালক বললেন, ‘কাট’। শট ওকে। গ্রামবাসীও হাততালি দেয়। অপু এগিয়ে এলেন মনিটরের দিকে। শট কেমন হলো দেখে নেন। আবার শুরু হবে নতুন দৃশ্যের কাজ। এই ফাঁকে কথা হয় অপু বিশ্বাসের সাথে। তিনি বলেন, টানা কয়েকদিন ধরে লাল শাড়ি সিনেমার শুটিং করছি। ৮০ শতাংশ কাজ শেষ। আজকের পর একটা গানের দৃশ্যায়ন বাকি আছে। প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজকের দায়িত্ব পালন করছেন, তাতে কি অভিনয়ে প্রভাব পড়ছে কিনা জানতে চাইলে অপু বলেন, আমার কাছে কোন চাপ মনে হচ্ছে না। একটুও কষ্ট হচ্ছে না। তাছাড়া ইউনিটের সবাই অনেক সাহায্য করছে। আমার সহশিল্পীরাও খুব সহযোগিতা করছেন। ফলে কাজ করা সহজ হয়ে যাচ্ছে। লাল শাড়ি সিনেমার গল্পটা তাঁত শিল্পকে কেন্দ্র করে জানিয়ে অপু বলেন, লাল শাড়ি তাঁতী জনগোষ্ঠীর গল্প। বাংলাদেশের শাড়ি এক সময় দেশের বাইরেও সমাদৃত ছিল। আমরা জামদানীর হারানো ঐতিহ্য তুলে ধরব এই সিনেমায়। তিনি আরও বলেন, আমি মানিকগঞ্জের মানুষের ভালোবাসায় মুগ্ধ। এখানকার মানুষজন আমাদের আপন করে নিয়েছে। রোজ এটা সেটা রেঁধে নিয়ে আসে। একটু হলেও মুখে দিতে হয়, তাদের খাবার। তিনি হাসতে হাসতে বলেন, মানিকগঞ্জ এসে ওজন বেড়ে গেছে মনে হয়। কথার ফাঁকে পরিচালকের ডাক। অপু চলে গেলেন সেটে। তখন সূর্য প্রায় মাথার উপরে। রোদের তাপ একটু তীব্র হয়ে উঠেছে। মানুষের ভীড়ও পরিবেশ উষ্ণ করে তুলেছে।

শট শেষ করে মধ্যাহ্নভোজের বিরতী দেয়া হয়। অপু নিজে দাঁড়িয়ে থেকে আথিথেয়তা তদারকি করেন। বিরতীর মাঝে সিনেমার নায়ক সায়মন সাদিকের সাথে কথা হয়। তিনি জানান, সিনেমায় আমি একজন তাঁতশিল্পী। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প হারিয়ে যাচ্ছে। কী কারণে হারিয়ে যাচ্ছে, তার পেছনের গল্প আমরা সামনে নিয়ে আসব। তিনি বলেন, অপু বিশ্বাসের সঙ্গে এটাই আমার প্রথম সিনেমা। তার সাথে কাজের অভিজ্ঞতা দারুণ। তিনি খুবই সহযোগিতাপরায়ন। আমরা সিনেমাটির ৮০ শতাংশ কাজ শেষ করেছি। বাকি কাজও সপ্তাহ খানেকের মধ্যে শেষ হবে। আগামী পহেলা বৈশাখে মুক্তি দেয়ার পরিকল্পনা আছে। সিনেমাটি নিয়ে আমি ভীষণ আশাবাদী, যেহেতু গ্রামীণ ঐতিহ্য নিয়ে সিনেমাটা তৈরি। আমার বিশ্বাস, দেশের সর্বস্তরের মানুষ সিনেমাটি দেখবে।

মানিকগঞ্জের এই গ্রামে প্রায় ১৫ দিন ধরে চলছে লাল শাড়ি সিনেমার শুটিং। গ্রামে যেন একটা উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। স্থানীয় মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেল, তারা শুটিং ও অপু বিশ্বাসকে দেখে বেশ আনন্দিত। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই ট্রলার দিয়ে দলবেঁধে লোক আসতে শুরু করেছে। তারা শুধু অপু বিশ্বাসকে এক নজর দেখতে আসছে। প্রতিদিনই নাকি সন্ধ্যার পর দূর-দূরান্ত থেকে গ্রামের মানুষ ট্রলারে করে অপু দেখতে আসে। অপুও তাদের নিরাশ করেন না। সবার সাথেকথা বলেন, ছবি তোলেন। অনেকেই বিভিন্ন খাবার ও উপহার সামগ্রী অপুকে উপহার দেন। অপু নিজেও এটা উপভোগ করেন বলে জানান। বলেন, প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেই ভক্তদের দেখা দিতে হচ্ছে। লাল শাড়ির শুটিং সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবেই চলছে। পরিচালক বেশ গুছিয়ে কাজ করছেন। পরিচালক জানান, একটানা কাজ করে সিনেমার ৮০ শতাংশ কাজ শেষ করেছেন। সিনেমাটিতে অন্যান্যদের মধ্যে অভিনয় করছেন শহীদুজ্জামান সেলিম, সুমিত, দিলরুবা দোয়েল, রাশেদুজ্জামান আপু, শাহেদ আলীসহ অনেকে।

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন