শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

প্রিয়নবীর আগমনে খুশির জোয়ার কুলজাহানে

মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাসুম | প্রকাশের সময় : ১৭ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
৩. সাহাবী কবি হযরত হাসসান বিন সাবিত রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামার উপস্থিতিতে তাঁর গৌরবগাঁথা পেশ করতেন এবং অন্যান্য সাহাবীগণ সমবেত হয়ে তা শ্রবণ করতেন। যা শুনে মুগ্ধ হয়ে নবীজি তাঁর জন্য দোয়া করেছিলেন।

মিলাদুন্নবী ও সিরাতুন্নবী: মিলাদুন্নবী ও সিরাতুন্নবী হল ব্যাপক আলোচিত শব্দ। শাব্দিক অর্থে মিলাদুন্নবী দ্বারা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামার শুভাগমন এবং সিরাতুন্নবী দ্বারা রাসূলে আরবি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামার চরিত্র বুঝালেও ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় উভয় শব্দ বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত। ইমাম নাসাফী রহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন, জিহাদ তথা যুদ্ধের কর্ম পদ্ধতির নাম হল সিরাত। তাই সিরাতুন্নবী নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামার ৮ বৎসরে যুদ্ধ জীবনের সাথে সম্পৃক্ত; নবীজির জিহাদী জিন্দেগীর অংশের নাম। (হিদায়া;কাওয়াঈদুল ফিকহ) পক্ষান্তরে মিলাদুন্নবী হল রাসূলুল্লাহর আদি বৃত্তান্তের নাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার নূরী জগতের সৃষ্টি হতে শুরু করে নূরানী জগতে লক্ষ লক্ষ বৎসর বিচরণ, তারপর দুনিয়ার বুকে শুভাগমন ও দুধপান করার অবস্থা থেকে ৬৩ বছর নূরানী জাহেরি হায়াতে তৈয়্যবার প্রতিটি বিষয় আলোচনায় স্থান পায় মিলাদুন্নবীর মাহফিলে বা অনুষ্ঠানে। কোন কোন কুচক্রী মহল মিলাদুন্নবীর বিশাল আয়োজনকে সহ্য করতে না পেরে ফিতনা ফ্যাসাদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বরকতময় ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামার নূরানী মাহফিল থেকে মুসলমানদের দূরে সরানোর অপচেষ্টা হিসেবে সিরাতুন্নবী মাহফিলের অবতারণা করেছে। তাদের উদ্দেশ্য হল নবী প্রেমিক মুমিনদের সাথে ঈদে মিলাদুন্নবীর সাথে সংঘর্ষ ও বিরোধিতা করা এবং মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামার প্রতি আঘাত ও কটূক্তি করা। এ প্রসঙ্গে মুফতী আমীমুল ইহসান বরকতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, শাব্দিক দৃষ্টিকোণ থেকে সীরাত বলতে ভাল-মন্দ উভয় চরিত্র বুঝায়। বস্তুত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামার অনুপম চরিত্রে মন্দের লেশ মাত্রও নেই। তাই সীরাতুন্নবী শব্দ ব্যবহার করা উচিৎ নয়। তদুপরি সীরাতুন্নবী মাহফিল নামে কোন অনুষ্ঠান অতীত যুগে ছিল না। তাই নব্য বিদআত। যুগ যুগ ধরে বিশ্বের মুসলমানগণ রবিউল আওয়াল মাসে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম নামে নবীজির শুভাগমনকে অতি ভক্তি-শ্রদ্ধার সাথে পালন করে আসছেন। ইসলামী শরীয়তের মুফতিগণ বিশেষত মক্কা-মদীনার ৯০ জন শীর্ষস্থানীয় আলেম ১২৮৬ হিজরীতে এটাকে বরকতময় ও মুস্তাহাব হিসেবে চুড়ান্ত ফায়সালা দিয়ে নিম্নোক্ত ফতোয়া বিভিন্ন রাষ্ট্রে প্রেরণ করেছেন। “হে মুসলমানগণ! আপনারা জেনে রাখুন যে, মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামার আলোচনা ও তাঁর সমস্ত শান-মান বর্ণনা করা এবং ঐ মাহফিলে উপস্থিত হওয়া সবই সুন্নাত। যা প্রকৃত ওলামায়ে কেরাম ও আউলিয়া কেরামের অনুসৃত তরিকা। তাছাড়া বাংলাদেশসহ বর্তমান বিশ্বের প্রতিটি মুসলিম দেশে এ দিনটিকে সরকারি ছুটি ঘোষণা দিয়ে ঈদে মিলাদুন্নবীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপন করছে। আর এর বিপরীত করা মিলাদুন্নবীকে অস্বীকার করার নামান্তর এবং নবী-বিদ্বেষী ও ফিতনাবাজ কুচক্রী মুনাফিকদের চরিত্র হিসেবে প্রতীয়মান। আল্লাহ হিদায়ত নসিব করুক।

লিখক: আরবী প্রভাষক, রাণীরহাট আল আমিন হামেদিয়া ফাযিল মাদ্রাসা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন