মানুষ আগ্নেয়গিরির মতো ফুঁসে উঠছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার কাপুরুষের মতো মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিয়ে বিএনপিকে রুখতে পারবে না। নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে বিএনপি কারও সঙ্গে আপস করবে না। এবার সরকারের পতন অবশ্যম্ভাবী। এর মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি গঠিত ‘মওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটি’র উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এরা কত কাপুরুষ, কাওয়ার্ড দেখেন। এই যে সমাবেশগুলো হচ্ছে, প্রত্যেকটা সমাবেশ কত শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কোথাও কোনো রকম সমস্যা হচ্ছে না। এর মধ্যেও তারা আমাদের ৫ শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে ফেলেছে, মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। আবার গায়েবি মামলা দেওয়া শুরু হয়েছে।
সরকারের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১৫ বছর ধরে তো এই মামলা বহু দিয়েছো, ১৫ বছর ধরে বহু মানুষ খুন করেছো, ৬শ মানুষকে গুম করে দিয়েছো। এতে করে রোখা যাবে না তো। রোখা কি গেছে? যায়নি। এখন আবার অত্যন্ত তীব্র আগ্নেয়গিরির মত সব ফুঁসে উঠছে মানুষ। এই ফুঁসে ওঠার মধ্য দিয়েই এ সরকারের পতন হবে। আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে, জনগণের বাংলাদেশ তৈরি হবে।
বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে ‘অভূতপূর্ব সাড়া’ মিলেছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা আশার কথা। আপনারা নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন, এই বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে যোগ দিচ্ছে কারা? দেখবেন, লুঙ্গি পরে আসছে, হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে আসছে এবং তিন দিনের প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে চিড়া-মুড়ি-গুড় নিয়ে, এসে তারা এসব সমাবেশগুলোকে সফল করছে তিনদিন খোলা আকাশের নিচে থেকে। আমরা যদি এটাকে ধারণ করে সঠিক লক্ষ্যে নিয়ে যেতে পারি, শুধুমাত্র আমাদের জন্য তা নয়, গোটা বাংলাদেশের মানুষের জন্য, গোটা বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির জন্য, মানুষের অধিকারগুলোকে ফিরিয়ে আনার জন্য, তাহলেই আমরা সফল হব।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের ‘খেলা হবে’ ঘোষণার প্রসঙ্গ ধরে বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, কে কোথায় কী বললো না বললো, সেদিকে বেশি কান দেওয়ার দরকার নেই। কে কি বলছে, খেলা বলছে না কি বলছে- বলতে দিন। আমরা আমাদের লক্ষ্যে অটুট থাকব। এবার আমাদেরকে এই বিজয় অর্জন করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
বিএনপিকর্মীরা এবার ‘কঠিন যুদ্ধ’ শুরু করেছে মন্তব্য করে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর কথা স্মরণ করেন ফখরুল। তার কথা প্রতিমুহূর্তে স্মরণ করতে হবে। কীভাবে উনি হেঁটে হেঁটে ফারাক্কা বাঁধে গেছেন, কীভাবে উনি মানুষকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামের পর গ্রাম ঘুরেছেন, কীভাবে উনি মানুষের দুঃখের সময়ে মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেনৃ তার পথে আমরা চলব। তাহলে আমরা মনে করি যে, আমরা সফল হতে সক্ষম হব।”
ভাসানীকে ‘বিরল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব’ হিসেবে বর্ণনা করে তার আদর্শ অনুসরণ করার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েবিএনপি মহাসচিব বলেন, এখন তো রাজনীতি বদলে গেছে। আমার প্রায় মনে হয় যে, এখন নষ্ট সময় চলছে। এই নষ্ট সময়ে মওলানা ভাসানীকে স্মরণ করা, তাকে অনুসরণ করার লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। তিনি নিজের জন্য কোনো কিছু চাননি। ১৯৫৪ সালে তার দল নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করেছে, মওলানা ভাসানী মন্ত্রিত্বও নেননি। এই হচ্ছে মওলানা ভাসানী।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য নজমুল হক নান্নু, আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, মৎস্যজীবী দলের আব্দুর রহিম, মওলানা ভাসানীর স্বজন মাহমুদুল হক সানু বক্তব্য দেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন