র্যাব সদস্যদের ওপর হামলা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের চনপাড়া বস্তির আলোচিত মেম্বার বজলুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে তাকে চনপাড়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সম্প্রতি বুয়েট ছাত্র ফারদিনকে চনপাড়ায় হত্যা করা হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যম তথ্য উঠে আসে। এ বিষয়ে অনুসন্ধানে গিয়ে বজলু মেম্বারের মাদক সাম্রাজ্যের নানা তথ্য উঠে। র্যাব-১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন জানিয়েছেন, গত ২৮ সেপ্টেম্বর চনপাড়া একালার কায়েতপাড়ায় অভিযানে গেলে র্যাবের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার ঘটনায় চনপাড়া বস্তির আলোচিত মেম্বার বজলুকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
এর আগে গত ১০ নভেম্বর রাতে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সিটি শাহীন নিহত হয়। সিটি শাহীনের সব অপকর্মের শেল্টারদাতা ছিলেন বজলু মেম্বার। এছাড়া র্যাবের ওপর হামলার নেতৃত্ব দেন বজলু।
এলাকাবাসির বরাত দিয়ে আমাদের স্থানীয় প্রতিনিধি জানান, বজলুর ভয়ে চনপাড়ায় কারো মুখ খোলার সাহস নেই। বজলুসহ তার চার ভাই নিয়ন্ত্রণ করে পুরো চনপাড়া বস্তি। সঙ্গে রয়েছে কিছু অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। এসব অপরাধীরা দিনে-দুপুরে মাদক কারবারি, মারধর ও খুনসহ নানা অপরাধে জড়িত। কথিত আছে-বজলুর কথা ছাড়া সেখানে পাতাও নড়ে না। তার নামে ভয় দেখিয়ে ঘুম পাড়ানো হয় বস্তির শিশুদের। বুয়েট ছাত্র ফারদিন নূর পরশ খুনের জেরে আলোচনায় এসেছে চনপাড়া বস্তির নাম।
বজলুর নামে শুধু রূপগঞ্জ থানাতেই হত্যা, অস্ত্র, মাদকের মামলা মিলিয়ে ১২টি মামলা রয়েছে। অস্ত্র ও খুনের মামলায় একসময়ের জেলখাটা বজলু এখন নাম লিখিয়েছিলেন সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তির খাতায়।
বস্তিবাসীরা জানান, বজলুর গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলার হিজলা থানার দুর্গম চরাঞ্চলের দুর্গাপুরে। নদীর ভাঙনে বসতভিটা হারিয়ে পিতা নাদের বক্সের হাত ধরে পরিবার-পরিজন নিয়ে ৫ বছর বয়সে চলে আসেন চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রে। নদী ভাঙা বস্তিবাসীদের পুনর্বাসনের জন্য রূপগঞ্জের শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর মোহনায় ওয়াসার জমির ওপর ১৯৭৪ সালের শেষের দিকে ঢাকার বস্তিবাসীর প্রায় ১৪০০ পরিবারকে চনপাড়ার ওয়াসার জমিতে পুনর্বাসিত করে তৎকালীন সরকার। সেই থেকে বজলু ও তার পরিবার চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রে বসবাস করছেন।
বজলু এখন কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। এর নেপথ্যে, মাদক ব্যবসা, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, হত্যা, চাঁদাবাজি, প্লট জবরদখল, সন্ত্রাসসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড।
বজলু এখন রূপগঞ্জের আলোচিত নাম। সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের ম্যানেজ করে পরপর দুইবার কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য নির্বাচিত হন। সামান্য একজন ইউপি সদস্য হলেও তার আছে তিনজন গানম্যান, পিএস, এপিএস। চলাচল করেন বিশেষ প্রটোকল নিয়ে। গুঞ্জন আছেÑ বজলু মানুষ খুনের কন্ট্রাক্টও করেন বস্তিতে বসে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চনপাড়ায় ১১৪টি মাদকস্পট রয়েছে। সকল মাদকের স্পটের নিয়ন্ত্রণ ছিল বজলুর হাতে।
আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ২০ বছরে চনপাড়া বস্তিতে খুন হয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্তত ১৫ জন। গত দেড় যুগে শুধু চনপাড়া এলাকার মাদক ব্যবসা সংক্রান্ত ঘটনায় রূপগঞ্জ থানায় দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যা ২ হাজারের ওপরে।
২৭ সেপ্টেম্বর রাতে এই আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের পর র্যাবের সঙ্গে সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দুপুরে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন, রাশেদুল ইসলাম ওরফে সিটি শাহীন নামে একজন। মাদক কারবারিদের অন্যতম হোতা শাহীন ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চনপাড়া মাদক নির্মূল কমিটির সদস্য ছিলেন। সেই শাহীনও বজলুর শেল্টারেই অপকর্ম চালিয়ে আসছিল বলে জানা যায়।
র্যাবের সন্দেহ, ফারদিনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স সন্দেহে রূপগঞ্জের চনপাড়া বস্তি এলাকায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গত ৪ নভেম্বর গভীর রাতে এ ঘটনার পর একটি প্রাইভেট কারে করে তার লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়া হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন