ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের আগে দলটির সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের জাতীয় কাউন্সিল করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতোমধ্যেই কয়েকটি সংগঠনের কাউন্সিল হয়ে গেছে। আরো কয়েকটির কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ২৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মহিলা লীগের জাতীয় কাউন্সিল। কাউন্সিলের সময় যত ঘনিয়ে আসছে মহিলা নেত্রীদের দৌড়ঝাঁপ ততই বাড়ছে। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে কে আসছেন তা নিয়ে আলোচনাও জোরদার হচ্ছে। আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন মহিলা লীগ ১৯৬৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়।
সম্মেলন ঘিরে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের বাসা থেকে শুরু করে অফিসে প্রতিনিয়ত হাজিরা দিচ্ছেন পদপ্রত্যার্শীরা। দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ বাগিয়ে নিতে মরিয়া তারা। এর মধ্যে বর্তমান সাধারণ সম্পাদকও রয়েছেন। তবে দলের নেত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার বিতর্কিত নতুন মুখকে সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বসানো হতে পারে।
জানা যায়, সর্বশেষ ২০১৭ সালের ৪ মার্চ সম্মেলনের মাধ্যমে মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন সাফিয়া খাতুন, সাধারণ সম্পাদক হন মাহমুদা বেগম। কমিটির মেয়াদ ২০২০ সালে শেষ হলেও করোনো মহামারির কারণে নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন হয়নি। এখন এ সম্মেলনের মাধ্যমে যারা নেতৃত্বে আসবেন তাদের নির্বাচনকালীন পরিস্থিতি সামলাতে হবে। কারণ সংবিধানের বিধান অনুযায়ী ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এমন প্রেক্ষাপটে মহিলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এবার নতুন মুখ আসছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা।
ওই নেতার সঙ্গে গত মঙ্গলবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দেখা করতে যান মহিলা লীগের দুই নেত্রী। আলাপের মাঝখানে সেই নেতা তাদের বলেন, ‘তোমাদের (মহিলা আওয়ামী লীগের) নতুন নেতৃত্ব আসছে। পুরনো দু’জন থাকছেন না। সুযোগ আছে, তোমরা তো ত্যাগী, নেত্রীর (শেখ হাসিনা) সঙ্গে দেখা করে তোমাদের চাওয়ার কথা বলো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গত ১৫ নভেম্বর গণভবনে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন।
মহিলা আওয়ামী লীগের এবারের সম্মেলন সফল করতে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রস্তুত করা হচ্ছে মঞ্চ। সংগঠনের বর্তমান সভাপতি সাফিয়া খাতুনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দলীয় সূত্র মতে, বর্তমানে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি রয়েছে। বর্তমান কমিটির মধ্যে থেকে সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাফিয়া খাতুন, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম, সহ-সভাপতি আসমা জেরিন ঝুমু, শিরীন নাঈম পুনম ও আজিজা খানম কেয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিরিন রুকসানা, মীনা মালেক, জান্নাত আরা হেনরী, সাংগঠনিক সম্পাদক আনারকলি পুতুল, সুলতানা রাজিয়া পান্না, নাসরীন সুলতানা, ঝর্ণা বাড়ৈ, ইসমত আরা হ্যাপী, দপ্তর সম্পাদক রোজিনা নাসরিন রোজীও শীর্ষ দুই পদের জন্য চেষ্টা তদবির করছেন।
জানতে চাইলে সংগঠনের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, সম্মেলনের ভালো প্রস্তুতি চলছে। আমাদের আগামীর নেতৃত্ব নির্ভর করছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর। তিনি যাকে নেতৃত্ব দেবেন সেই পাবেন। তিনি যে নেতৃত্ব দেবেন সেই নেতৃত্ব নিয়ে আমরা আগামী পথ চলব।
আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারাও মহিলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরিবর্তন চান। সচিবালয়ে তদবির বাণিজ্য নেতাদের বাদ দিয়ে বিতর্কমুক্ত পরিচ্ছন্ন নতুন নেতৃত্ব আনতে হবে। দলের একাধিক নেতা বলেন, গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন একটা রুটিন মাফিক কাজ। সংগঠন ভালোভাবে চালাতে পারলে কাউকে আবার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমান মহিলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীলরা গ্রুপিংয়ে ব্যস্ত। সংগঠনকে তারা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের রূপ দিয়েছে। সংগঠনের পদ-পদবী ব্যবহার করে সারাক্ষণ সচিবালয়ে তদবিরে ব্যস্ত থাকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন