বিশ্ব জগতের সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা, লালনকারী ও পালনকারী হলেন মহান আল্লাহ। তাঁর মহত্ব ঘোষনা, শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষনা হলো তাকবীর, আর তাকবীর হলো আল্লাহু আকবার অর্থ্যাৎ আল্লাহ সবচাইতে বড়। আল্লাহ এমন এক স্বত্ত্বা যাঁর সমকক্ষ কেউ নাই, তিনিই অতুলনীয়, তাঁর সাদৃশ্য বা অনুরূপ কেউই নাই। এক কথায় স্বত্ত্ব¡া, স্বকীয়তা, গুণ, কর্ম ও ক্ষমতায় তাঁর সমপর্যায়ের কেউই নাই, তিনি লা শরীক। দৃশ্য ও অদৃশ্য জগতের সব কিছুই তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন। প্রতাপশালী ও প্রভাবশালী ক্ষমতাধরদের ক্ষমতা, মহাশক্তিমানদের সর্বোচ্চ শক্তিমত্তা, বিশ্বের শক্তিশালী বীর বাহাদুরদের বাহাদুরী, মহাজ্ঞানীদের জ্ঞানের সর্বোচ্চ ও সর্বশেষ সীমা, প্রযুক্তির সর্বোচ্চ উন্নতি, এসবই মহান প্রভুর নুন্যতম অনুগ্রহ ও ক্ষুদ্রতম দান। তিনি এগুলো দিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, দেশ ও জাতিকে অন্য সকলের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে থাকেন। ইহলৌকিক বিবেচনায় এসব পর্যায়ে উপনীত হওয়া গর্বের, অহংকারের, শ্রেষ্ঠত্বের। পৃথিবীর বুকে তাই অবিশ্বাসী লোকেরা এসব কিছু নিয়ে অতি গর্ব করে, অন্যদের তুচ্ছ ও হেয় মনে করে নিজেদের উৎকৃষ্ট অন্যদের নিকৃষ্ট মনে করে। তারা তাদের অজ্ঞতার ভাবনায় ভর করে কখনো কখনো নিজেদেরকে এমন পর্যায়ে উপনীত করে এবং অনুচিত ভাবনায় নিজেদেরকে এমন পর্যায়ে ভাবতে শুরু করে যেন, তারাই সব কিছুর নিয়ন্তা, ক্ষমতা কেবল তাদের, মানুষ বাঁচবে মরবে কেবল তাদের ইচ্ছায়, অনুকুল্যে ও অনুগ্রহে। অথচ তাদের এ চিন্তা চেতনা অনর্থক, ক্ষণকালীন আত্মবিস্মৃতির নামান্তর। তাদের এসব ভাবনা একেবারেই অনুচিত। এসব ভাবনা চিন্তা চেতন পাপ। এসব ভাবনা ধ্বংসলীলার জন্ম দেয়, পৃথিবীর চলমান শান্তি স্থিতিশীলতা নষ্ট করে, মানুষকে অমানুষ বানায়।
পৃথিবীর মানুষ কখনোই সর্বশ্রেষ্ঠ নয়। মানুষের জীবনে জয় আছে, পরাজয় আছে, ক্ষয় আছে, ভয় আছে, লয় আছে। শ্রেষ্ঠতো কেবল সেই স্বত্ত্বা যার জীবনে কখনোই এসব ঘাটতি নেই। যিনি সর্ববিধ গুণে গুনান্বিত, সকল ক্ষমতায় পরিপূর্ণ। মানুষ কেবল মহান প্রভুর অনুগ্রহ ও দয়ায় বেঁচে থাকে। তাই মানবজাতির প্রতি মহান রবের নির্দেশনা, তোমরা আমার শ্রেষ্ঠত্ব ও কৃতজ্ঞতা ঘোষনা করো। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেন, ‘তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব। আর তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও এবং অকৃতজ্ঞ হয়োনা।’ (সুরা বাকারাহ: আয়াত: ১৫২)। ‘আর আপনার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন। (সুরা মুদ্দাসসির: আয়াত: ০৩)। তিনি আরো বলেন, বলুন, ‘তোমরা ‘আল্লাহ্’ নামে ডাক বা ‘রহমান’ নামে ডাক, তোমরা যে নামেই ডাক সকল সুন্দর নামই তো তাঁর। আর আপনি সালাতে স্বর খুব উচ্চ করবেন না আবার খুব ক্ষীণও করবেন না; বরং এ দুয়ের মধ্যপথ অবলম্বন করুন। বলুন। ‘প্রশংসা আল্লাহরই যিনি কোন সন্তান গ্রহণ করেননি , তাঁর সার্বভৌমত্বে কোন অংশীদার নেই এবং দুর্দশাগ্রস্ততা থেকে বাঁচতে তাঁর অভিভাবকের প্রয়োজন নেই । আর আপনি সসম্ভ্রমে তাঁর মাহাত্ম্য তথা তাকবীর ঘোষণা করুন।’(সুরা বনি ইসরাইল: আয়াত: ১১০, ১১১)। তিনি আরো বলেন, ‘এজন্যে যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্, তিনিই সত্য এবং তারা তাঁর পরিবর্তে যাকে ডাকে তা তো অসত্য। আর নিশ্চয় আল্লাহ্, তিনিই সমুচ্চো, সুমহান।’ (সুরা হজ: আয়াত: ৬২)। অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘আর তিনি সুউচ্চ সুমহান।’ (সুরা বাকারাহ: আয়াত: ২৫৫)। তিনি আরও বলেন, ‘তিনি গায়েব ও প্রকাশ্যের জ্ঞানী, মহান, সর্বোচ্চ।’ (সুরা রা‘দ: আয়াত: ৯)।
তাকবীর তথা আল্লাহু আকবার। এটি ইসলামি পরিভাষা। প্রতিটি মুসলমানের কাছে সবচেয়ে প্রিয় উদ্দিপনামূলক শব্দ এটি। শিশুকাল থেকে শুরু করে অতি বৃদ্ধকালেও শব্দটির নিত্য ব্যবহার বেশ লক্ষ্যনীয়। জন্মের পর মুসলিম শিশুর ডান কানে ‘আযান’ ও বাম কানে ‘ইকামাত’ দেয়া হয়, যাতে বরাবরই ‘আল্লাহু আকবার’ তাকবীরের শ্রেষ্ঠতম শব্দ দিয়ে আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষনা করা হয়, আবার এও স্বীকার করা হয় যে, প্রতিটি মানবশিশু আল্লাহর দেয়া আমানত। শৈশবে প্রায় মুসলিম পরিবারে লোকজন শিশুকে প্রথম শব্দটি আল্লাহ এরপর আব্বা, দাদা শেখাতে আনন্দবোধ করেন। পৃথিবীতে জন্ম নেয়া সকল শিশুর মনে ফিতরাত তথা মহান প্রভুর পরিচিতির মাধ্যমে মুলতঃ আল্লাহরই বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ পায়। হাদিসে এসেছে, ‘আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যক সন্তানই ইসলামী ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে থাকে। অতঃপর তার মাতা-পিতা তাকে ইয়াহুদী, নাসারা অথবা অগ্নিপূজক বানিয়ে ফেলে। যেরূপে চতুষ্পদ জন্তু পূর্ণাঙ্গ জন্তুই জন্ম দিয়ে থাকে, এতে তোমরা কোন বাচ্চার কানকাটা দেখতে পাও কি? এরপর তিনি (রাসুলুল্লাহাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিলাওয়াত করলেনঃ আল্লাহর ফিতরাত, যার উপর তিনি মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি রহস্যে কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরল প্রতিষ্ঠিত দীন।’(সুরা রূম: আয়াত: ৩০)। ( সহীহ বুখারী: হাদিস ১৩৫৮, সহীহ মুসলিম: হাদিস ২৬৫৮)।
তাকবীর তথা ‘আল্লাহু আকবার’ এর আমল বা প্রয়োগ মুসলিম জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রসমুহ হলো:
১. প্রাত্যহিক সালাতে তাকবীর: দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের আজানে ৩০ বার, ইকামাতে ৩০ বার ফরজ সালাত সমুহে মোট ৯৪ বার তাকবীর বলা হয়। এ তাকবীরগুলো সালাতের বাহিরে আযানে সুউচ্চ আওয়াজে আর ইকামাত ও ১৭ রাকাত ফরজ সালাতে স্বাভাবিক আওয়াজে সুন্দরতম উপায়ে আল্লাহর মহিমা প্রকাশ করা হয়। উল্লেখ্য যে ফরয, সুন্নাত, স্বাভাবিক নফল সালাতে ৪৫৭ বার তাকবির উচ্চারিত হয়।
২. নতুন চাঁদ দেখে তাকবীর বলা: আরবি মাস চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক আরবি মাসের নতুন চাঁদ উদিত হবার পর তাকবির উল্লেখ করা দোয়া পড়া সুন্নাত। রাসুল (সা.), সাহাবায়ে কেরাম এ আমল করতেন। হাদিসে এসেছে, ‘আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) যখন নতুন চাঁদ দেখতেন তখন বলতেন ‘আল্লাহু আকবার’ হে আল্লাহ! এ চাঁদকে ঈমান ও নিরাপত্তা, শান্তি ও ইসলাম এবং যে জিনিসটি আপনি পছন্দ করেন ও সন্তুষ্ট হোন সেটার তাওফিকের সঙ্গে উদিত করুন। আমার ও তোমার প্রভু আল্লাহ। (সুনানে দারিমি, হাদিস : ১৬৯৭)।
৩. জিলহজ্বে তাকবীর: জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশকে তাকবীরের আমল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাসুল (সা.) জিলহজ্ব মাসে বেশি বেশি তাকবিরের বলার ফজিলত বর্ণনা করেছেন। হাদিসে এমর্মে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘এ ১০ দিন নেক আমল করার চেয়ে আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় ও মহান কোনো আমল নেই। তাই তোমরা এ সময় তাহলিল তথা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, তাকবির তথা, ‘আল্লাহু আকবার’ ও তাহমিদ তথা ‘আলহামদ’ বেশি বেশি করে পাঠ করো। ’ (বায়হাকি, শুআবুল ঈমান, হাদিস নং: ৩৪৭৪)। আইয়ামে তাশরীক তথা জিলহজ্বের ৯ তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত তাকবীর পড়া ওয়াজিব। এ প্রসঙ্গে হাদিস বর্ণিত হয়েছে, ‘হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ৯ তারিখ আরাফার দিন ফজর থেকে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত তাকবীর তাশরিক পড়তেন।’ ( ইবনে আবী শাইবা ৫৬৭৭,বায়হাকি ৬৫০০)। তাকবীরে তাশরীক হলো, ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ। অর্থ্যাৎ আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান ৷ আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং আল্লাহ মহান৷ আল্লাহ মহান এবং সকল প্রশংসা আল্লাহরই জন্য৷ (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা: ৫৬৯৬ , তাবারানী শরীফ : ৯৫৩৮)।
৪. তাকবীর পবিত্র হজ্বের অন্যতম আমল: পবিত্র হজ্বে হাজিগণ আল্লাহু আকবার তাকবীর ধ্বনিতে জামরায় শয়তানকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করেন। হাজ্বিগণ মিনা থেকে আরাফাতে গমনাগমনে, এছাড়াও হজ্বের গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলীতে তাকবীর উচ্চারণ করেন। ইবনু উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি মিনার নিকটবর্তী জামরাকে (ছোট জামরা) সাতটি কংকর মারতেন এবং প্রত্যেকটি কংকর নিক্ষেপের সাথে তাকবীর (আল্লাহু আকবার) পাঠ করতেন। তারপর সামনে এগিয়ে কিবলামুখী হয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে দুই হাত তুলে দু‘আ করেন। অতঃপর জামরাহ উসতায় (মধ্যবর্তী জামরা) পাথর নিক্ষেপ করে বাম দিকে এগিয়ে যান এবং সেখানে কিবলামুখী হয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে দুই হাত তুলে দু‘আ করেন। তারপর উপত্যকা হতে জামরা আকাবায় (বড় জামরা) পাথর নিক্ষেপ করেন, কিন্তু সেখানে (দুয়ার জন্য) না থেমে ফিরে আসেন। অতঃপর বলেন, এভাবেই নাবী (সা.)-কে একাজগুলি সম্পাদন করতে দেখেছি। (সহীহ বুখারী: হাদিস: ১৭৫২)।
৫. ঈদ উৎসবে তাকবীর: ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা এর রাত থেকে ঈদের সালাত পর্যন্ত বেশি বেশি তাকবীর বলা, এ বিষয়ে কোরআন ও হাদিসে নির্দেশনা রয়েছে। তাই সকল মুসাল্লি এ আমল করে থাকেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেন, ‘তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন সে জন্য তোমরা আল্লাহ্র মহিমা তথা তাকবীর ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সুরা বাকারাহ: আয়াত: ১৮৫)। পবিত্র ঈদের দুরাকাত সালাতে ৬ বার তাকবীর বলা ওয়াজিব।
৬. সফরকালীন গাড়ি বা বাহনে আরোহনের সময় তাকবীর বলা সুন্নাত: রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন কোন বাহনে আরোহন করে সফর শুরু করতেন তখন তিনি তাকবীর বলতেন। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বাহনে আরোহন করে আলহামদুলিল্লাহ পড়তেন। এরপর তিনি বলতেন, সুবহানাল্লাজি ছাখখারা লানা হাজা ওয়ামা কুন্না লাহু মুকরিনীন, ওয়া ইন্না ইলা রাব্বিনা লামুনকালীবুন। এরপর তিনি বলতেন, আলহামদুলিল্লাহ,আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, তারপর বলতেন, সুবহানাকা ইন্নি যলামতু নাফসি ফাগফির লি ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরয যুনুবা ইল্লা আনতা। (সুনানে আবু দাউদ: ২৬০২)।
৭. উচু স্থানে আরোহনের সময় তাকবীর: নিচ থেকে উঁচু স্থানে আরোহনের সময় তাকবীর বলা সুন্নাত। এটি রাসুল (সা.) এর নিত্য আমল। হাদিসে এসেছে, জাবের (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘আমরা (সফরে) যখন উঁচু জায়গায় চড়তাম তখন ‘আল্লাহু আকবার’ বলতাম এবং নীচু জায়গায় নামতাম, তখন ‘সুবহানাল্লাহ’ বলতাম। (সহীহ বুখারি:২৯৯৩, সুনানে আহমদ: ১৪১৫৮)।
৮. পশু যবেহের সময় তাকবীর বলা: হালাল পশু যবেহ করার সময় বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলা মুস্তাহাব, তাসমিয়া ও তাকবীর বিহীন যবেহকৃত পশু বা প্রাণির গোশত ভক্ষন করা হারাম। এ সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, যার উপর আল্লাহর নাম (বিসমিল্লাহ) উচ্চারণ করা হয়েছে তা থেকে তোমরা আহার কর। (সুরা আনআম: আয়াত: ১১৮)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি শিং ওয়ালা ভেড়া যবেহ করলেন, তখন বিসমিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার বললেন। (সুনানে দারেমী : হাদিস: ১৯৮৮)।
৯. অগ্নিকান্ডের দুর্ঘটনায় বেশি করে তাকবীর বলা: আগুন আল্লাহর সৃষ্ট মাখলুক, এটি আল্লাহর হুকুমে জ্বালিয়ে দেয়। অগ্নিকান্ড জনিত দুর্ঘটনায় জীবন ও সম্পদ বাঁচানোর জন্য তাকবীরের আমল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নবী (সা.)বলেন, যখন তোমরা অগ্নিকান্ডের প্রজ্বলন দেখবে, তখন তোমরা তাকবীর বলো, কেননা তাকবীর অগ্নিকান্ড নিভিয়ে দেয়। (আল মাকাসিদুল হাসানাহ: আল্লামা সাখাবী, ১/৮৬)।
১০. সালাতুল জানাযায় তাকবীর: মৃতব্যক্তির জন্য দোয়া হিসেবে সালাতুল জানাযা পড়া হয়, উক্ত সালাতের মধ্যে ৪ (চার) বার তাকবীর বলতে হয়। উক্ত তাকবীর বলা ফরজ।
১১. চন্দ্র ও সুর্যগ্রহণকালে তাকবীর বলা: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চন্দ্র ও সুর্যগ্রহণকালে ইবাদাতে মশগুল থাকতেন। বেশি বেশি তাকবীর বলতেন।
১২. জিহাদের ময়দানে তাকবীরের বজ্র আওয়াজ: রাসুলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবিগণ যখন জিহাদের ময়দানে অবতরণ করতেন, শত্রুদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতেন, বিজয় ছিনিয়ে আনতেন, তখন সমস্বরে বজ্র আওয়াজে ‘আল্লাহু আকবার’ তাকবীর বলতেন। পরবর্তীকালে মুসলিম বিজেতাগণও জিহাদ অভিযান পরিচালনার পূর্বে, ময়দানে ও বিজয়ী হয়ে ফেরার পথে তাকবীর ধ্বণিতে আকাশ জমিন মুখরিত করে তুলতেন।
পরিশেষে, মহান আল্লাহ আমাদেরকে জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাকবীরের উদ্দীপণার মাধ্যমে ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ লাভের তাওফিক দান করুন।
লেখক: মোঃ আবদুল গনী শিব্বীর, মুহাদ্দিস, নোয়াখালী কারামাতিয়া কামিল মাদরাসা, সোনাপুর, সদর, নোয়াখালী
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন