শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিনোদন প্রতিদিন

অনেক অভিনয়শিল্পী শেষ জীবনে কেন অর্থসঙ্কটে পড়েন?

রিয়েল তন্ময় | প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশে অভিনয় জগতের অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রীকে শেষ বয়সে এসে সরকারি তহবিল থেকে অনুদান নিতে দেখা যায়। অর্থের অভাবে অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী ঠিকমতো চিকিৎসার ব্যয় চালাতে না পারার কারণে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হোন। অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠান। আবার অনেকেই লোকলজ্জার ভয়ে তাদের অর্থ সংকটের কথা বলেন না। আত্মীয় কিংবা কোন শুভাকাক্সক্ষীর প্রচেষ্টায় তাদের অর্থ সংকটের কথা মিডিয়ায় আসলে জনগণ যেমন তাদের অর্থ সংকটের কথা জানতে পারেন, তেমনি সরকারের তহবিল থেকে অনুদানও জুটে। শেষ বয়সে অভিনয় শিল্পীরা কেন অর্থ সংকটে পড়েন, তা অনেকের মনেই প্রশ্ন রয়েছে। অনেকেই এটিকে শিল্পীদের বেহিসাবি জীবন ব্যবস্থার ফল বলে মনে করেন। মিডিয়া সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করেন, একজন অভিনয় শিল্পী তার ক্যারিয়ারের শুরুতে প্রচুর অর্থ-স¤পদ অর্জন করেন। তার ব্যয়ের পরিমানও তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি থাকে। এভাবে অর্থ উপার্জন আর ব্যয়ের পার্থক্য কম থাকায় শেষ পর্যন্ত অর্থ স¤পদ ভবিষ্যতের জন্য ধরে রাখা একজন শিল্পীর জন্য খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়াও দেখা যায়, নিকটজনের বিভিন্ন আবদার থেকে শুরু করে বিভিন্ন মানুষের চাহিদা তারা ক্যারিয়ারের শুরুতে পূরণ করেন। মানুষের ধারণা, একজন নায়ক কিংবা অভিনয়শিল্পী প্রচুর অর্থ আয় করেন। এজন্য অনেক শিল্পী অত্যাধিক ব্যয় করেন। এভাবে চলতে চলতে দেখা যায়, ভবিষ্যতের জন্য তাদের কোন সঞ্চয় থাকেনা কিংবা চাইলেও তারা সেটি করতে পারেন না। নাট্যকার সংঘের সাধারন স¤পাদক নাট্যকার ও অভিনেতা আহসান আলমগীর বলেন, একজন সরকারি কিংবা বেসরকারি চাকরিজীবী কিংবা ব্যবসায়ী তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় যেমন তার পেশার পিছনে ব্যয় করেন, তেমনি একজন শিল্পীও তার জীবনের স্বর্ণালী সময় ব্যয় করেন শিল্প সাধনার পেছনে। এখন সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য শেষ বয়সে পেনশনের ব্যবস্থা আছে। বেসরকারি চাকরিজীবীর জন্য অবসরে যাওয়ার সময় একই রকম পেনশনের ব্যবস্থা আছে। একজন ব্যবসায়ী প্রচুর ধন স¤পদ অর্জন করেন। কিন্তু শিল্পীরা বরাবরই অর্থবিমুখ। স¤পদ এর প্রতি তাদের এক ধরনের উদাসীনতা থাকে। মানুষ শিল্পীদের সম্মান করে এই সম্মানের লোভেই তারা তৃপ্ত থাকে। কিন্তু যখন শেষ বয়সে তার উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যায় তখন সে ভুলগুলো বুঝতে শুরু করে। এ ব্যাপারে শিল্পীদের করনীয় স¤পর্কে আহসান আলমগীর বলেন, শিল্পীদের দুটো পথ আছে, প্রথমত যখন ভালো উপার্জন করেন তখন অর্থ নষ্ট না করে সঞ্চয়ের ব্যাপারে মনোযোগী হওয়া। দ্বিতীয় পথ হচ্ছে, এখন অনেকগুলো সংগঠন তৈরি হয়েছে, সাংগঠনিকভাবে যদি শিল্পীরা ফান্ড তৈরীর উদ্যোগ নেয় এবং সেখান থেকে শিল্পীদের শেষ বয়সে পেনশনের ব্যবস্থা করা যায়। তাহলে সমস্যার অনেকটুকু সমাধান হবে বলে আমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, একটা কথা আছে, যেখানে গুণীর কদর করা হয় না, সেখানে গুণীর জন্ম হয় না। আমাদের সমাজ এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে শিল্পীদের ব্যবহার করা হয়। কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করা হয় না। শিল্পীদের জাতীয় পুরস্কার দেয়া হলেও আজীবন কোন সম্মানীর ব্যবস্থা থাকে না। শিল্পীরা সারা পৃথিবীতে তাদের শিল্পকর্ম দিয়েই দেশের ঐতিহ্যকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরে। এই হিসাবে শিল্পীরা হচ্ছে একটি দেশের সাংস্কৃতিক যোদ্ধা। সরকার যদি সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য পেনশনের ব্যবস্থা রাখতে পারে, তাহলে সংস্কৃতি যোদ্ধাদের জন্য পেনশনের ব্যবস্থা রাখা উচিত বলে আমি মনে করি। অভিনেতা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমরা যারা মিডিয়াতে কাজ করি তারা আসলে দিনশেষে অর্থের চেয়ে সম্মানটা বেশি চাই। সরকারি চাকরি করলে মানুষ পেনশন, মিডিয়ার সাথে জড়িত ব্যক্তিরা শেষ বয়সে কিছুই পায় না। দুঃস্থ হয়ে পড়লে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে চিকিৎসার অনুদান পায়। এটা নিয়ে আমি একাধিকবার প্রতিবাদ করেছি বা করব যতদিন বেঁচে আছি ততদিন। আরো একটা নতুন ধারা যোগ হয়েছে, যে যার চ্যানেলের শিল্পীদের সম্মানিত করা শুরু করেছে। নিজের ঘরে নিজেই শ্রেষ্ঠ ঘোষণা করছে। আমাদের দেশের সম্মাননা এখন এমন হয়ে পড়েছে যে তথাকথিত ব্যবসায়ীদের সম্মাননা দিতে নিয়ে আসা হয় বিদেশ থেকে অর্ধ উলঙ্গ নায়িকাদের। অথচ তাদের সম্মাননা নেওয়ার কথা দেশের বিজনেস আইডলদের কাছ থেকে। এগুলো কি ইঙ্গিত করে? আমি এর তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাই। নাট্যজনেরা বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একজন নায়ক যখন ত্রিশোর্ধ্ব বা চল্লিশোর্ধ্ব হয়ে পড়েন তখন তার ক্যারিয়ার পড়ে যায়। পরিচালকরা দেখা যায়, নতুন কোন শিল্পীকে জায়গা করে দেন। অভিজ্ঞ শিল্পীরা একরকম অভিনয় জগৎ থেকে ছিটকে পড়েন। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যেসকল চল্লিশোর্ধ্ব অভিনয়শিল্পী কাজ করছেন তাদের সংখ্যা খুবই কম। এর বেশির ভাগ অংশই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। যেসব অভিনয়শিল্পী কর্মহীন হয়ে পড়েন তারা নতুন কোন কাজের ক্ষেত্র তারা তৈরি করতে পারেন না। লোক লজ্জার ভয়ে অনেকে কোন কাজের জন্য কারও কাছে আবদারও করতে পারেন না। ফলে ব্যাংক ব্যালেন্সে যে সামান্য টাকা থাকে তার উপরই তাদের নির্ভর করতে হয়। এভাবে একজন অভিনয়শিল্পী শেষ জীবনে অর্থ সংকটের দিকে যেতে থাকেন। এছাড়াও আরও একটি বড় কারণ হচ্ছে, অভিনয়শিল্পীদের একটি বিরাট অংশ উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনে অভ্যস্ত। এতে তাদের আয়করা অর্থের বিরাট একটি অংশ একরকম অপচয় হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Nasir Ali ২৬ নভেম্বর, ২০২২, ৫:৪৫ এএম says : 0
সিদ্দিক সাহেব এজন্যই চেতনা ব্যবসায় নামছেন। জোকাররা যদি রাজনীতিতে আসে তখন সমাজের জন্য ক্ষতিকর হয়
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন