সবুজ ঘাসে শিশিরের রাজত্ব এখনো পুরোপুরি তৈরি হয়নি। তবে শীতের আগাম আভাস পাওয়া যাচ্ছে হালকাভাবে, অনুভূত হচ্ছে শীত। আর তীব্রতা না থাকায় শরীরটা এখনো জবুথবু হয়নি। প্রকৃতিতে এখন চলছে শীতকে বরণ করে নেয়ার প্রস্তুতি। ঠিক এমন সময়ে গত ৩০ নভেম্বর ২০১৬(বুধবার) বর্ণালী রঙে সজ্জিত শীতলতার ছোঁয়ায়ঘেরা সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্মৃতির পাতায় যোগ হয়েছে আরেকটি নতুন আনন্দের অধ্যায়। যার নাম ফিচার প্রদর্শনী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতির কথা জিজ্ঞেস করলে তার উত্তর সাধারণত শেষ হতে চায় না। আড্ডা দিয়ে মোদের ক্যাম্পাস জীবনের প্রতিটি পদচারণা যেন মস্তিষ্কের স্মৃতির এক একটি বড় বড় জায়গা দখল করে থাকে। আনন্দ, দুঃখ, সফলতা, ব্যর্থতা, মানবতা, শিক্ষা, স্বপ্ন, বাস্তবতা সবকিছুরই স্বল্প সময়ে বৃহৎ পরিবেশনার এই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটাকে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্রের ক্যাম্পাস ফিচার পাতায় জুড়ে দিতে পটু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের লেখনীয় বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত সে সকল ফিচারের সমাহারে মন মাতাতে গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি(গবিসাস)-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত হল এই ফিচার প্রদর্শনী।
সকালেই রঙের ঝলকানিতে চকমকে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা এসেই যেন ভেসে গেল উৎসবের উৎসাহে। কেননা ক্যাম্পাসের উৎসবের আমেজ যেন ঈদের আনন্দের চেয়ে কম কিছু নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিক ও অন্যান্য শিক্ষার্থীদের লেখা বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত ও বাছাইকৃত অর্ধশতাধিক ফিচার জড় করে প্রদর্শিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের এ-ব্লকের এজ লাউঞ্জ গ্যালারিতে(ঊফমব খড়ঁহমব এধষষবৎু)।
দুপুর ১টায় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মীর মুর্তজা আলী, সহ- রেজিস্ট্রার আবু মোহাম্মদ মোকাম্মেলসহ বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক এবং প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. দেলোয়ার হোসেন ফিতা কেটে প্রদর্শনীটির উদ্বোধন করেন।
দিনব্যাপী এ প্রদর্শনীতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সেলফিবাজদের ঘোরাঘুরি ছাড়াও শিক্ষার্থী মো. তরিকুল ইসলাম ঝড়া, আবির হাসান, মুন্না ও জনির পরিবেশনায় গানের আসরে মেতে ওঠে সবাই।
ক্যাম্পাসের আনন্দঘন মুহূর্তগুলোর টুকরো টুকরো ছবি, অনুষ্ঠান আর জাতীয় দিবসগুলোর চেতনা, নবীনদের ভাবনা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন ও বিভিন্ন পর্যায়ের পারফরম্যান্সগুলো একত্রিত করে প্রকাশিত ফিচারগুলোকে একসঙ্গে উপস্থাপন করায় সাধুবাদ জানান অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রত্যেকে।
“বিশ্ববিদ্যালয় একটি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। এই সর্বোচ্চ আসনের শিক্ষাকেন্দ্রে আমাদের সবধরনের শিক্ষণীয় কাজের অনুশীলন করা উচিৎ যাতে নিজেদের গড়ে নিতে পারি। কেননা আমাদের প্রত্যেকের উন্নতি মানে দেশেরও উন্নতি। সাথে সাথে নৈতিক উন্নতির জন্য সংস্কৃতি নামক খুঁটিটাও প্রয়োজন। জাতীয় পত্রিকার ফিচারে বিশেষত সাংস্কৃতিক কর্মকা-গুলোই তুলে ধরা হয়। আজকের আয়োজন থেকেই আমরা জানতে পারছি আমরা সাংস্কৃতিক পদযাত্রায় কতটা পথ এগিয়েছি।” কথাগুলো বলছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল ফিজিক্স এন্ড বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী পুষ্পেন চক্রবর্তী।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন- “সংস্কৃতিকে উজ্জীবিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব। গণ বিশ্ববিদ্যালয় সেদিক থেকে অনেক এগিয়ে। তার প্রমাণ আজকের এ প্রদর্শনী।”
দেশের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ প্রতিটি ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক আন্দোলনের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। স্বাধীনতা রক্ষা বা পূর্ণরূপে গণতন্ত্রের চর্চার খাতিরেই আমাদেরকে সাংস্কৃতিক হতে হবে তা আমরা আগেই শিখেছি। আর গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তারই স্বার্থক চর্চার প্রতিফলনের প্রমাণস্বরূপ এই ফিচার প্রদর্শনী। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের চলমান সকল সাংস্কৃতিক কার্যক্রমকে সামনে রেখেই এগিয়ে যাবে বলে আশা ব্যক্ত করে অনুষ্ঠানটির আয়োজক কমিটি দেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম ও একমাত্র সাংবাদিক সংগঠন গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি(গবিসাস)।
ষ মাসুদ আজীম, মিষ্টি রহমান
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন