সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শিক্ষাঙ্গন

স্বপ্নের ট্যুরর সারথীরা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময়ে দেশে কিংবা বিদেশে শিক্ষা সফরে যান। কখনো মাতৃভূমির অপার রূপের মহিমা দেখতে বেরিয়ে পড়েন দলবল নিয়ে। অনার্স জীবনে এমন ট্যুর হরহামেশা প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভাগ্যে জুটলেও ব্যতিক্রম ছিল পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বরিশাল ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে।
দেখতে দেখতে প্রায় ১০টি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা শিক্ষাজীবন শেষ করে ফেলেছেন। ইন কান্ট্রি ট্যুর যেন হয়ে গেলো এই ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের কাছে স্বপ্নের মতো। অবশেষে এই ক্যাম্পাসের ডক্টর অফ ভেটেরিনারি মেডিসিন (ডিভিএম) ডিগ্রির ১১ ৩ম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা প্রথমবারের মতো সেই স্বপ্নের ট্যুর সম্প্রতি শেষ করে ক্যাম্পাসে ফিরেছেন শিক্ষার্থীরা। স্বপ্নের এই সব সারথীরা তাদের স্বপ্নের ট্যুর নিয়ে জানিয়েছেন তাদের নিজ নিজ মতামত। সাথে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি এন্ড পাবলিক হেলথ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড এ কে এম মোস্তফা আনোয়ার এবং ফিজিওলজি এন্ড ফার্মাকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা মিল্টন তালুকদার।
১০ নভেম্বর বরিশাল লঞ্চঘাট থেকে সি ট্র্যাকে চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরুর মাধ্যেমে ১০ দিনের এই শিক্ষা সফরের শুভ সুচনা হয়। ডিভিএম ১১তম ব্যাচের ছাত্রী আনিকা অনি বলেন, “বাবুগঞ্জের ক্যাম্পাস থেকে ভোর বেলা বরিশাল লঞ্চঘাটের উদ্দেশ্যে যাত্রা, সেখান থেকে লঞ্চে করে লক্ষ্মীপুর, তারপর বাস যোগে বান্দরবন। লঞ্চে আড্ডা আর সেলফিবাজি, ক্লান্ত দেহে বাসে ঘুম এভাবেই চলে গেলাম বান্দরবন। জীবনে প্রথম এত বড় জার্নি, দেহে ক্লান্তির ছাপ আসলেও মনে ক্লান্তি কখনই আসেনি, একবারও না। পরের দিন চাঁন্দের গাড়ির সামনের সিটে বসে এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি, প্রচ- পা ব্যাথা নিয়েও চিম্বুক, নীলাচল আর নীলগিরিতে পদচিহ্ন একে দিলাম”
বান্দরবনের অপার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে শিক্ষার্থীদের গন্তব্য হয় বিশ্বের সর্ব বৃহৎ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। কক্সবাজারে পৌঁছে লাফালাফি, মাতামাতি ছিল সীমাহীন। সমুদ্রের গর্জন, বীচে ফুটবল খেলা, বন্ধুদের সাথে মজা মাস্তি, কেনাকাটা কোন কিছুই বাদ যায়নি। দল বেধে সমুদ্রস্নান ও নতুন মাত্রা দিয়েছে তাদের এই সফরে। পরের দিন পরবর্তী গন্তব্য বাংলাদেশের দারুচিনি দ্বীপে। সেন্টমার্টিনের অপরূপ সৌন্দর্যেকে হাতের কাছে পাওয়ার লোভে অনেকে বিনিদ্র রজনী পার করেছেন।  
সেন্টমার্টিন রাত্রিযাপন করে পরের দিন শিক্ষার্থীরা রওয়ানা দেন চট্টগ্রামের দিকে। চট্টগ্রামের খুলশীতে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুটা সময় ঘুরে বেড়াতে গিয়ে আতিথেয়তায় মুগ্ধ হন তারা।
রাত্রে চট্টগ্রাম থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে আবারো যাত্রা শুরু। এবার যানবাহন ঝক ঝকা ঝক ট্রেন। ঝক ঝকা ঝক ট্রেন চলেছে রাত দুপুরে ঐ, ট্রেন চলেছে ট্রেন চলেছে ট্রেনের বাড়ি কই? কবি শামসুর রাহমানের এই কবিতা ছোটবেলায় প্রত্যেকে পড়লেও অনেকের জীবনে ১ম ট্রেন জার্নি ছিল এটা।
 জীবনের ১ম ট্রেন জার্নির অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে ছাত্রী সাবরিনা মিতু বলেন, “এক কথায় অসাধারণ, স্কুল কলেজ ভার্সিটি সব নিজ এলাকায়, মা-বাবার বাধ্যবাধকতার মধ্যে সব সময়। স্বাধীনতা যে কত প্রশান্তি তা আমার থেকে কেউ বুঝেনি। পাহাড়-নদী-সাগর আর মেঘ ছুঁয়ে দেখার আনন্দ জীবনে ভোলার নয়।”
সাদনান বাপিল বলেন, ‘আসাধারণ! ক্যাম্পাস ছাড়ার আগে অনেক জল্পনা-কল্পনা। ট্যুর আসলেই হবে কি হবে না। যখন বাসে উঠলাম বিশ্বাসই হচ্ছিল না ট্যুরে যাচ্ছি। জীবনের সেরা ১০টা দিন কাটাইলাম। বাসে গলা ছেড়ে গান রাতে ১টা পর্যন্ত সি বিচে চন্দ্রস্নান। চাঁন্দের গাড়িতে গলা ফাটিয়ে চিৎকার। জাফলং বিছানাকান্দিতে গোসল, গান। নির্ঘাত ক্যাম্পাস ছাড়ার সময় চোখ অশ্রুসিক্ত হবে এ দিনগুলোর কথা মনে করে। জার্নির ক্লান্তি ছিল ঠিকই কিন্তু তা ক্ষণস্থায়ী। আনন্দটাই বেশি করেছি। সব ক্লান্তি সাগরের ঢেউয়ে, প্রকৃতির যৌবনে ভেসে গেছে। পাশাপাশি ছোটখাটো রোমান্স তো ছিলই। ১০ দিন কাটার পরও আমরা বলছিলাম স্যার ট্যুর আরও ১০ দিন বাড়ান! বেঁচে থাকুক স্মৃতিরা অমর হয়ে। জীবন্ত হয়ে থাকুক এই মধুর স্মৃতিগুলো’
ষ মো. মুস্তাফিজুর রহমান পাপ্পু

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন