এ যেন জনসমুদ্র। যেদিকে চোখ যায় শুধু মানুষ আর মানুষ। যাত্রাবাড়ি থেকে কমলাপুর মূল মহাসড়ক, আশপাশের অলিগলি কোথাও তিল ধরণের ঠাঁই ছিল না। লাখ লাখ মানুষ! সেই ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের হেফাজতের সমাবেশের মতো জনসমুদ্র দেখলো রাজধানী ঢাকার মানুষ। যানবাহন বন্ধ অথচ মানুষ পায়ে হেঁটেই সমাবেশ স্থলে হাজির হয়েছেন। আইন-শৃংখলা বাহিনীর কড়া প্রহরার মধ্যেই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মোড়ে মোড়ে লাঠি নিয়ে প্রহরাকে থোরাইকেয়ার করে বিএনপির মহাসমাবেশে জনতা হাজির হন। রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের পূর্ব-উত্তর কোনায় গোলাপবাগে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ দেশের রাজনীতিতে নতুন বার্তা দিয়ে গেল। সমাবেশে থেকেই সংসদ বিলুপ্ত করা, সংসদ ভেঙে দেয়া, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনসহ ১০ দফা দাবি ঘোষণা করেছে দলটি। এই দাবি আদায়ে আগামী ২৪ ডিসেম্বর থেকে কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামছে বিএনপি। এসব দাবির প্রতি ইতোমধ্যে সমর্থন জানিয়েছে ২০ দলীয় জোটের শরিকসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। এসকল দলের অংশগ্রহণে ২৪ ডিসেম্বর থেকেই শুরু হবে ১০ দফা দাবি আদায়ে যুগপৎ আন্দোলন। এর আগে ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গণসমাবেশে আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে যতটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল ততটাই শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ করেছে রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি তাদের বিভাগীয় পর্যায়ের দশম সমাবেশ।
ঢাকার গণসমাবেশ নিয়ে মাসখানিক আগে থেকে উত্তেজনা, বাকযুদ্ধ, নানা নাটকীয়তা, সংঘাত-সংঘর্ষ, গুলি, হামলা, মামলা-গ্রেফতার, আহত-নিহত সবই হয়েছে। চারদিন আগে থেকেই বন্ধ বিএনপির দলীয় কার্যালয়, নেতাকর্মীরা জমায়েত হলেই দেয়া হয়েছে ধাওয়া, গ্রেফতার হয়েছেন শত শত। এমন পরিস্থিতিতে আশঙ্কা ছিল বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ নিয়ে। নয়াপল্টন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, মিরপুর বাংলা কলেজ, কমলাপুর স্টেডিয়ামসহ বেশকিছু ভেন্যু নিয়ে আলোচনার পর মাত্র একদিন আগে গত শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে অনুমতি পায় বিএনপি। অনুমতি পাওয়ার এক ঘণ্টা পর থেকেই সমাবেশস্থলে জড়ো হতে থাকেন দলটির নেতাকর্মীরা। সন্ধ্যা নামার আগেই লোকারণ্য হয়ে উঠে পুরো মাঠ। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে তুলেন তারা। শীত উপেক্ষা করে রাতভর সেই মাঠেই অবস্থান নিয়েছিলেন হাজার হাজার নেতাকর্মী। ভোর রাত থেকে ফের শুরু হয় সমাবেশমুখী নেতাকর্মীদের মিছিল-স্রোত। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলো থেকে নেতাকর্মীরা আসতে থাকেন গোলাপবাগ মাঠে। নেতাকর্মী, সমর্থক, সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে সকাল ৮টার দিকেই সমাবেশস্থল গোলাপবাগ মাঠ ছাড়িয়ে মানিকনগর বিশ্বরোডের একদিকে সায়েদাবাদ জনপদের মোড়, যাত্রাবাড়ী, অন্যদিকে টিটিপাড়া হয়ে মুগদা, বৌদ্ধ মন্দির, বাসাবো, দক্ষিণ কমলাপুর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। সমাবেশের মাঠ ও সড়কে জায়গা না পেয়ে হাজার হাজার মানুষ অবস্থান নেয় গোলাপবাগকে কেন্দ্র করে আশপাশের যত অলিগলি ছিল সবগুলোতেই। এরপরও সময় যতই গড়িয়েছে ততই বেড়েছে মানুষের উপস্থিতি, বেড়েছে সমাবেশের আকারও। বেলা ১১টার পর যারা এসেছেন তাদের অনেকেই সমাবেশস্থলের কাছে পর্যন্ত যেতে পারেননি। তারপরও বিভিন্ন জেলা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে তারা যুক্ত হয়েছেন গণসমাবেশে। এসময় তারা- ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’, ‘আমার নেত্রী আমার মা, জেলে থাকতে পারে না’, ‘তারেক রহমান বীরের বেশে, আসবে ফিরে বাংলাদেশে’, ‘অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ চাই, করতে হবে’, ‘চোর চোর ভোট চোর, শেখ হাসিনা ভোট চোর’, ‘হামলা করে আন্দোলন, দমন করা যাবে না’, মামলা করে আন্দোলন, দমন করা যাবে না’, সহ নানা মুহূর্মুহূ স্লোগানে গগণবিদারী আওয়াজ তুলে প্রকম্পিত করে তুলেন গোটা এলাকা।
পথে পথে বাধা: অন্যান্য বিভাগীয় সমাবেশের মতো ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশেও পথে পথে হামলা, বাধা, তল্লাশি চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সমাবেশে আসা বিএনপি নেতাকর্মীরা। তারা অভিযোগ করে বলেন, ঢাকায় প্রবেশের পথে পুলিশ চেকপোস্টে নেতাকর্মীদের তল্লাশি চালায়। পকেট, ফেসবুক, হোয়াটঅ্যাপ, ম্যাসেঞ্জার চেক করা হয়েছে। বিএনপির কোন ছবি, পোস্ট, কিংবা বিএনপি সম্পর্কিত কোন কিছু পেলেই তাকে আটক বা মারধর করা হয়েছে। নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আবদুর রহমান জানান, ঢাকায় আসার পথে ছাত্রলীগ-যুবলীগ আমাদের উপর হামলা করেছে। আমরা অনেক ত্যাগ শিকার করে নোয়াখালী থেকে এসেছি। এখানে এসে আমাদের এক আত্মীয়র বাসায় উঠেছি। আজ (গতকাল) সকালে অনেক কষ্ট করে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে আসতে হয়েছে। চেকিংয়ের নামে পকেট হাতিয়েছে, মোবাইলে পাসওয়ার্ড খুলে হোয়াটসঅ্যাপ-ম্যাসেঞ্জার দেখাতে হয়েছে। এমন চেকিং পয়েন্ট অনেকগুলো পার হতে হয়েছে। নোয়াখালীর ৫০ থেকে ৬০ জন ঢাকা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গ্রেফতার হয়েছেন বলেও জানান তিনি।
শুধু তল্লাশিই নয়, সমাবেশের দিনে গতকাল রাজধানীসহ আশপাশের জেলাগুলোতে কোন গণপরিবহন চলাচল করেনি। রাজধানী থেকে কোন বাস ছেড়ে যায়নি, আসেনি কোন বাসও। এমনি রাজধানীতেও দিনভর কোন গণপরিবহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। এতে ভোগান্তিতে পরেন সাধারণ মানুষ ও সমাবেশমুখী বিএনপি নেতাকর্মীরা। তাদের অনেকেই পায়ে হেটে, সিএনজি, মোটরসাইকেল, রিক্সাসহ নানা মাধ্যমে গোলাপবাগ মাঠে উপস্থিত হন।
নরসিংদীর পলাশ থেকে আসা আবদুস সালাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, সকাল বেলা অনেক কষ্ট করে তিনি রাজধানীর সমাবেশ স্থলে এসেছেন। রাস্তায় গাড়ি না থাকার কারণে পায়ে হেঁটে, রিকশায় করে এবং পরবর্তীতে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর আসেন ট্রেনে করে। রাস্তায় পুলিশ ও ছাত্রলীগের বাধার মুখে পড়ে তাকে কষ্ট করতে হয়েছে। পলাশ থেকে তিনি ৩ হাজার টাকা খরচ করে রাজধানীর গণসমাবেশ স্থলে এসে পৌঁছেছেন। শুধুমাত্র বিএনপিকে ভালোবাসেন বলেই তার এই কষ্ট করা। পথে পথে বাধার মুখে তাকে টাকা দিতে হয়েছে। সাথে প্রায় ২০০ জন কর্মী ছিলেন অনেকেই এখানে আসতে পারেন নি। সাথের কয়েকজনকে মারধরও করেছে ছাত্রলীগের কর্মীরা।
ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া থেকে গণসমাবেশে আসেন ষাটোর্ধ্ব মোজাম্মেল হকও। ঢাকায় সমাবেশে যোগ দিতে গিয়ে তিনি নানামুখী বিড়ম্বনায় পড়েন বলে জানিয়েছিলেন। তিনি জানান, ৫ বার গাড়ি বদলে এবং পুলিশি হয়রানি মোকাবেলা করে তিনি সমাবেশস্থলে উপস্থিত হয়েছেন।
বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জ থেকে এসেছিলেন রেনু বেগম নামে ষাটোর্ধ্ব এক মহিলা। তিনি সমাবেশস্থলে আসার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, এর আগে নয়টি সমাবেশে যেমন বিপাকে পড়েছিলাম এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি প্রধানমন্ত্রীর ফাঁসি দাবি করেন।
অসুস্থ স্ত্রীকে হাসপাতালে রেখে সমাবেশে আসেন লালমনিরহাটের ৫৮ বছর বয়সী মাজহারুল ইসলাম। তারপরও কেন আসলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজ পুরো দেশই অসুস্থ। দেশকে সুস্থ করতে এখানে এসেছি। ছেলে ও ছেলের বৌকে বলে এসেছি মায়ের খেয়াল রেখো, আমি দেশের খেয়াল রাখতে যাচ্ছি।
অন্যদিকে গফরগাঁও থেকে আব্দুল করিমসহ ৩০ জন শুক্রবার রাতে ট্রেনে করে এসেছিলেন কমলাপুরে। তারা জানান, চাচা থাকায় আমরা বাড়তি একটা সাহস পাই। তিনি যত ঝড়ই আসুক না কেন সবাইকে একতাবদ্ধ রাখেন।
সিলেটের হবিগঞ্জ থেকে পঞ্চাশোর্ধ ইয়াসিন মাতবর কিভাবে আসলেন সেই অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বলেন, বিভিন্ন কৌশলে আসতে হয়েছে। মোড়ে মোড় সন্ত্রাসী, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, পুলিশ। বহু বছর ধরে দল করায় এ ধরনের অভিজ্ঞতা আছে।
নারায়ণগঞ্জের ১৪ নাম্বার ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শওকত হোসেন বলেন, ঢাকা থেকে এক কাছে নারায়নগঞ্জ। কিন্তু এতো ভোগান্তি। তারপরও আল্লাহর রহমতে পৌঁছাতে পেরেছি। এখন লক্ষ্য সরকারের পতন।
শত বাধা, বিপত্তি উপেক্ষা করে ঢাকার গণসমাবেশে উপস্থিত হওয়ার জন্য নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান অতিথি ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ সাড়ে ৪’শ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যাতে ঢাকার সমাবেশ করতে না পারি, জনগণের উপস্থিতি কম হয়। কিন্তু আপনারা প্রমাণ করেছেন কোন নেতার জন্য নয়, জনগণের মুক্তির জন্য, জনগণের এই সমাবেশ সফল করার জন্য কোন ষড়যন্ত্র, বাধা, প্রতিবন্ধকতা মেনে নেননি। সকাল বাধা উপেক্ষা করে জনস্রোতে মিলিত হয়েছেন।
তিনি বলেন, দিনের ভোট রাতে ডাকাতি করে যারা ক্ষমতায় তারা জনগণকে ভয় পায়, জনগণের ভয়ে ভীত। এই ভয়ের কারণে তারা আমাদের সমাবেশ করতে দেয় না। নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। আগের সমাবেশগুলোতেও গাড়ি-নৌপথ সব বন্ধ করেছে। কিন্তু মানুষ সাতরিয়ে, পায়ে হেটে, সাইকেল চালিয়ে সমাবেশে যোগ দিয়ে, সরকারের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, সমাবেশ আমাদের সাংবিধানিক, মৌলিক অধিকার। এই সরকার যেহেতু ফ্যাসিস্ট, ভোট ডাকাতির সরকার। এজন্য তারা গণতন্ত্র বুঝে না। এর আগে তারা বাকশাল করে গণতন্ত্র হত্যা করেছিল। গত ১৪ বছরেও গণতন্ত্র হরণ করে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছে। কারণ তারা ভোট, মানুষের ভোটাধিকারকে ভয় পায়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভাংচুর ও তাণ্ডব চালিয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে গত ৭ ডিসেম্বর যেভাবে আক্রমণ করা হয়েছে, তছনছ করা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনীও এমন করেনি।
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমাদের এটা (সমাবেশ) যদি খেলা হয়, তাহলে সিরিজের শেষ খেলা আজ (গতকাল)। আমরা ৯টি খেলায় জয়লাভ করেছি, আজকের খেলায়ও জয়লাভ করলাম। কারণ আমাদের এই সমাবেশ ভণ্ডুল করার জন্য শেখ হাসিনা এবং তার পুলিশ বাহিনী এমন কোন চেষ্টা নেই যা করেনি। প্রতিটি সমাবেশে সরকার হরতাল করেছে, যানবাহন বন্ধ করেছে।
গয়েশ্বর বলেন, পল্টনে যদি আমাদেরকে জনসভা করতে দেয়, তাহলে নাকি জনগণের দুর্ভোগ হবে। অথচ দেখা গেল পল্টনের রাস্তা দিয়ে মানুষ চলে না, যানবাহন চলে না, মার্কেট-দোকানপাট বন্ধ। এই দুর্ভোগ কে তৈরি করলো? শেখ হাসিনা।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এই সরকার হলো ভোটচোর। সারাদেশে একই সুর, শেখ হাসিনা ভোটচোর। এছাড়া তিনি খিচুরি চোর। বিএনপি অফিসে পুলিশ পাঠিয়েছে, অনেক কিছু নিয়েছে। পানি পেয়েছে, খিচুরিও নাকি পেয়েছে ২০০ প্যাকেট। এই খিচুরিও চুরি করে নিয়ে গেছে। বাপে বলেছিলো, তোমাদেরকে আমরা ভাতে মারবো, তোমাদেরকে আমরা পানিতে মারবো। এখন জনগনকে ভাতে, পানিতে, গুম করে, গুলি করে মারতে চায়।
তিনি বলেন, দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে দেশটাকে একটা অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। বাংলাদেশের রিজার্ভ শর্ট, এলসি প্রায় বন্ধ। আমদানি-রফতানি জাহান্নামে যাচ্ছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ‘কোন গুজবে কান দেবেন না’, ‘টাকার অভাব নেই’-তিন মাসের রিজার্ভ আছে। আমরা বিশ্বাস করি পাঁচ বছরের রিজার্ভ আছে; সেটা শেখ হাসিনার চাচাতো ভাইয়ের কাছে, ফুফাতো ভাইয়ের কাছে, আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আছে।
বিএনপি অফিসে ককটেল পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপি অফিসে বোমা পাইছে, বিএনপি অফিসে বোমাতো পাননি। কাঁধে করে নিয়ে আসছে। ওই ছবি আবার ভাইরাল হয়েছে। বিএনপি সাতটা এরই মধ্যে ফাটিয়েছে, কোথায় জানেন? সাতটা বোমা সংসদে মারা হয়েছে। একটার নাম গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, আরেকটার নাম রুমিন ফারহানা, আরেকটা অস্ট্রেলিয়া থেকে পাঠিয়েছে বোমা হারুন। এর চেয়ে তাজা বোমা হাসিনা আমাদের হাতে কিছু ছিলো না। আমরা পথ দেখালাম এখন আপনারা সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। সংসদ বিলুপ্ত করেন। তরপর নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। আর বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে যেটা বসে আছে, আপনি কেটে পড়েন। বঙ্গভবনে যিনি আছেন মহামান্য প্রেসিডেন্ট আমি আশা করি আপনি পার্লামেন্ট বাতিল করে, এই সরকার বিলুপ্ত ঘোষণা করে বিশিষ্টজনদের মধ্য থেকে একটি সরকার ঘোষণা দেবেন। আর সেই সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচন করবো। মানেন ভালো, না মানেন আমরা আমাদেরটা আদায় করে নিবো।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, এই সরকার মিথ্যা মামলা, হামলা, গুম, খুন, হুমকী-ধামকী দিয়ে এদেশের মানুষকে অবনত করে রাখতে চায়। কিন্তু ইতিহাসের শিক্ষা প্রমাণ করেছে পৃথিবীর কোথাও কোনো স্বৈরাচারী সরকার জোর করে ক্ষমতায় থাকতে পারে না। আজকে জনগণ প্রমাণ করেছে বিএনপি অফিসের সামনে নিরীহ মানুষকে গুলি করে হত্যা করে, বিএনপি অফিস লুটপাট করে মানুষকে দমিয়ে রাখা যায়নি।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ বলেছিলো ‘আমার ভোট আমি দিব, যাকে খুশি তাকে দিব’। কারণ তারা তখন ক্ষমতার জন্য লালায়িত হয়ে গিয়েছিলো। আজকে তারা ক্ষমতা জোর করে ধরে রেখে তারা সেই স্লোগান দেয় না। তারা এখন স্লোগান দেয় আমার ভোট আমি দিবো দিনের ভোট রাতে দিবো। সারা দুনিয়ার মানুষ বলেছে আওয়ামী লীগ দিনের ভোট রাতে দেয়। আমরা এর পরিবর্তন চাই। আমরা এর পরিবর্তনের জন্য সংগ্রাম করছি। আমরা রাজপথে আছি রাজপথে থাকবো।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমাবেশ করতে এসেছে। তারা জীবন দিয়ে দেশ রক্ষা করবে। বিএনপি সমাবেশ করেছে আর সরকার হরতাল পালন করছে। ঢাকার গণসমাবেশ থেকে একটাই শপথ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। এছাড়া বাংলাদেশে কোন নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, সরকার কথায় কথায় সংবিধানের দোহাই দেয়। খালেদা জিয়া-তারেক রহমানকে অন্যায়ভাবে শাস্তি দেয়া হচ্ছে, এটা কোন সংবিধানে আছে? আজকে বাংলাদেশের মানুষ পরিষ্কারভাবে রায় দিয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আমরা ১০টা মিটিং করেছি, ঢাকায় শেষ মিটিং। এ মিটিংকে আমরা বলবো ওয়ার্ম ওয়ার্ক। তারপর শুরু হবে রাজপথের সংগ্রাম, শেষ যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে আমরা জয়লাভ করবো। তিনি বলেন, গত ৭ ডিসেম্বর আমাদের ওপর প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা যে হামলা করেছে, তা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হামলার চেয়ে কম কিছু নয়। ক্ষমতা বেশিদিন থাকবে না। ইতিহাস পড়েন, শিক্ষা নেন। মানুষ ক্ষেপে গেছে। যত বাধাই দেন, যতই গুলি করেন, মানুষের কাছে সেটা কিছুই নয়। যার কারণে কাল (গত শুক্রবার) অনুমতি পাওয়ার পরপর এ মাঠ কানায় কানায় ভরে গেছে।
কর্মসূচি ঘোষণা:
সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফার ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এসব দাবি আদায়ে আগামী ২৪ ডিসেম্বর থেকে যুগপৎ আন্দোলন শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ওইদিন ঢাকাসহ সব মহানগর ও জেলা সদরে গণমিছিল অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়াও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ গ্রেপ্তার সব নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি এবং কর্মী হত্যার প্রতিবাদে ১৩ ডিসেম্বর রাজধানীসহ সারা দেশে বিএনপি এককভাবে গণবিক্ষোভ করবে বলে ঘোষণা দেন ড. মোশাররফ। এর বাইরে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও মহান বিজয় দিবস বিএনপি এককভাবে পালন করবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, ভাইস চেয়ারম্যান- আব্দুল্লাহ আল নোমান, বরকত উল্লাহ বুলু, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা- ব্যারিস্টার নারি উদ্দিন অসীম, কর্ণেল (অব.) জয়নাল আবেদিন, মীর সরাফত আলী সপু, শিরিন সুলতানা, আবুল কালাম সিদ্দিকী, লুৎফর রহমান কাজল, রুমিন ফারহানা, মো. মোশাররফ হোসেন, গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েল, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিমসহ ঢাকা মহানগর ও ঢাকা বিভাগের নির্বাহী কমিটির নেতৃবৃন্দ।
আহমেদ আজম খান, কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জয়নাল আবেদীন, রুমিন ফারহানা, মোশাররফ হোসেন, উকিল আবদুস সাত্তার, আমিনুল ইসলাম, জাহিদুর রহমান, জিএম সিরাজ, আবদুস সালাম আজাদ, নাসির উদ্দিন অসীম, সালাহউদ্দিন আহমেদ, কায়সার কামাল, মীর সরফত আলী সপু, শিরিন সুলতানা, আবুল কালাম আজাদ, বেনজীর আহমেদ টিপু, দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন, ডা. রফিকুল ইসলাম, মীর নেওয়াজ আলী, নজরুল ইসলাম আজাদ, কাজী আবুল বাশার, আশরাফ উদ্দিন বকুল, হুমায়ুন কবির খান, সাইফুল আলম নিরব, তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন, ওমর ফারুক শাফিন, আকরামুল হাসান, হাবিবুর রশিদ হাবিব বক্তব্য রাখেন।
মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুবদলের মামুন হাসান, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, তাঁতি দলের কাজী মনিরুজ্জামান, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, উলামা দলের মাওলানা আবুল হোসেন, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবনসহ বিভিন্ন জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতারা বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, শাহজাহান ওমর, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, মিজানুর রহমান মিনু, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, আব্দুল কুদ্দুস, লুতফর রহমান আজাদ, জয়নুল আবদিন ফারুক, ভিপি জয়নাল আবেদীন, তাজমেরী এস ইসলাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, এস এম ফজলুল হক, শাহজাদা মিয়া,মজিবুর রহমান সারোয়ার, হাবিব উন নবী খান সোহেলসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন