শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বিএনপি কার্যালয় দেখে হতবিহ্বল নেতারা

খুলে দেয়া হয়েছে তালা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষের পর গত ৭ ডিসেম্বর বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তল্লাশি চালায় পুলিশ। সেখান থেকে দলের ৩ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। ওইদিন এবং পরের দিন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কার্যালয়ে প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। তিনি অভিযোগ করেছিলেন বিএনপি কার্যালয় পুলিশ ভেঙেচুরে তছনছ করে দিয়েছে। ৪ দিন পর গতকাল রোববার বেলা সোয়া ১টার সময় খুলে দেয়া হয় নয়াপল্টন কার্যালয়। দলের দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সৈয়দ এমরান সালে প্রিন্স কার্যালয়ে প্রবেশ করে বলেন, পুলিশের তাণ্ডব লীলা দেখে আমরা দেখে হতভম্ব, আমরা হতবিহ্বল। এসময় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে সাংবাদিকরাও ঢোকেন ওই কার্যালয়ে। দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি কক্ষের দরজা ভাঙা, আসবাবপত্র তছনছ করা, টেবিলে গ্লাস ভেঙে পড়ে আছে, আলমারি ভেঙে কাগজপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে, সিসিটিভি ক্যামেরাগুলোও ভাঙা।
প্রিন্স সাংবাদিকদের বলেন, এই অফিসে ঢুকে আজকে (গতকাল) এটা মনে হয়েছে, সারা দেশকে সরকার যেরকমভাবে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে, সেই রকমই বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসও লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। দলীয় কার্যালয়ে পুলিশের অভিযানের নিন্দা জানিয়ে প্রিন্স বলেন, একটা স্বাধীন, সভ্য দেশে একটা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক বিরোধী দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর তো বটেই, চেয়ারপারসনের কার্যালয়, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কার্যালয়, মহাসচিবের কক্ষসহ সব কিছু লণ্ডভণ্ড করে দেওয়া হয়েছে। এই লণ্ডভণ্ড কাজের সাথে যারা জড়িত ছিল, তাদেরকে দোষী সাব্যস্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার আমরা দাবি জানাচ্ছি।

কাকে দায়ী করছেন- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরা সরকারকে দায়ী করছি। তারা ব্যর্থ-অযোগ্য, গণআন্দোলনের ভয়ে ভীত হয়ে আমাদের আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য, ১০ ডিসেম্বরের ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশকে নস্যাৎ করার জন্য তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে। বিএনপি নেতারা তাদের চেয়ারপারসনের দপ্তর, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দপ্তর, মহাসচিবের কক্ষ, কেন্দ্রীয় দপ্তর, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, শ্রমিক দল, জাসাস, ছাত্রদলসহ সহযোগী সংগঠনগুলোর তছনছ কক্ষ সাংবাদিকদের দেখান।

প্রিন্স বলেন, “আমরা একটি দপ্তরে গিয়েও কম্পিউটার-সিপিইউ, স্ক্যানার আমরা পাইনি। এমনকি আমাদের দলের কেন্দ্রীয় যে হিসাব বিভাগ আছে, সেই হিসাব বিভাগের কম্পিউটার, সিপিইউ নাই। সেখানে টেবিলের ড্রয়ারগুলো ভাঙা। সেখানে আমাদের দলের সদস্যদের চাঁদা রক্ষিত ছিল এবং ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশ উপলক্ষে আমাদের খরচের টাকা রক্ষিত ছিল। অঙ্গসংগঠনের দপ্তরগুলোতে যে হিসাব বিভাগ আছে, সেগুলো তছনছ করে ফেলেছে। আমাদের যে ব্রিফিং রুম আছে যেখানে দলের নেতা-কর্মীদের সাথে স্কাইপে মিটিং করতেন, সেই স্কাইপে করার যেসব সরঞ্জাম, এলইডি মেশিন, সিপিওর যন্ত্রপাতি কিছুই আমরা পাইনি। আলমারিগুলোর তালা ভাঙা। আমাদের ছয় তলায় যে পাঠাগার রয়েছে, সেটাও তারা তছনছ করেছে, সেখানের চাঁদার রশিদ ও চাঁদার টাকা কোনো কিছুই পাচ্ছি না।

কী পরিমাণ অর্থ খোয়া গেছে- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটার তালিকা আমরা করব। এরপর আপনাদের জানাব। আনুমানিক তো কিছু বলা যায় না। আপনারা নিজেরা স্বচক্ষে দেখলেন। আমরা আমাদের অঙ্গসংগঠনের প্রত্যেকটা দপ্তরকে পরামর্শ দিয়েছি, তারা তাদের কোন কোন জিনিস খোয়া গেছে, সেটার একটা তালিকা করার জন্য।

প্রিন্স ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই ভবনের নিচ তলায় প্রবেশপথে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের যে মুর‌্যাল রয়েছে, সেটা কাচ দিয়ে ঘেরা ছিল, সেটার ওপর তারা তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে, গ্লাস ভেঙে ফেলেছে। এটার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের নেই। একই সাথে এই ভবনে উপরের আমাদের স্টাফদের যে আবাসস্থল সেই আবাসস্থলও আমরা পরিদর্শন করেছি। সেগুলো তারা ভাংচুর করেছে।

পুলিশ সেদিন বিএনপি অফিসে অভিযানের পরিকল্পনা নিয়েই এসেছিল দাবি করে তিনি বলেন, তারা এই কেন্দ্রীয় অফিসে নাটক সাজিয়েছে, নিজেরা বোমা রেখে এসে বোমা উদ্ধারের নামে নাটক সাজিয়ে এই অফিসকে সিল করে দিয়েছিল। দুপুরে সারা অফিস বিএনপি নেতারা ঘুরে দেখার পর তা পরিচ্ছন্ন করতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের আনা হয়।

প্রিন্সের সঙ্গে ছিলেন সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কামরুল ইসলাম সজল, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী, মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদারসহ আইনজীবীরা।
প্রিন্স অবিলম্বে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, শ্মাসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ফজলুল হক মিলন, মোস্তাক মিয়া, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, এবিএম মোশাররফ হোসেন, মনির হোসেন, খন্দকার আবু আশফাকসহ গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের মুক্তি দাবি করেন। সেই সঙ্গে গত ৮ ডিসেম্বর থেকে নিখোঁজ থাকা ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম মোসাব্বিরকে জনসমক্ষে হাজির করার দাবিও জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
Saiful Islam ১২ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:৪৮ এএম says : 0
বিএনপি অফিস থেকে প্রচুর, চাল, ডাল, মিনারেল ওয়াটার, এবং খিচুরি উদ্ধার করা হয়েছে, এটা কিসের লক্ষ্মণ জাতি জানতে চায়।
Total Reply(0)
Md Islam Uddin ১২ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:৪৮ এএম says : 0
১৫ বছর খালেদা জিয়া ক্ষমতার বাহিরে তারপরও তার ছায়ার সঙ্গে শেখ হাসিনাকে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। হ্যাঁ এটাই বাস্তবতা, এটাই খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা
Total Reply(0)
শওকত আকবর ১২ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:৩৫ এএম says : 0
হায়রে এসব কি???
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন