আজ মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে বিজয়ের ৫২তম বর্ষ শুরু। মহাকালের হিসাবে এটা অতি স্বল্প সময়। কিন্তু ব্যক্তি বা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দীর্ঘ সময়। এই সময়ের মধ্যে স্বাধীনতার আকাক্সক্ষার অধিকাংশই পূরণ হয়নি। স্বাধীনতার আকাক্সক্ষার অন্যতম হচ্ছে-গণতন্ত্র, বাক স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক মুক্তি, ন্যায়বিচার ও সাম্য। এসব পাওয়ার আশায় দেশের জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ধনী, গরিব, নারী, পুরুষ নির্বিশেষ সকলেই জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করতে পারেনি, তারাও নানাভাবে সাহায্য করেছে। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বিজয় অর্জিত হয়েছে ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১-এ। সে বিজয়ের পর এতদিন অতিবাহিত হলেও বীর মুক্তিযোদ্ধারের সঠিক তালিকা প্রণীত হয়নি। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা ভুয়া মুকিযোদ্ধাদের দাপটে কোন ঠাসা! গণতন্ত্র ও বাক স্বাধীনতাও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। স্বাধীনতালাভের পর অনেক সময় কেটেছে সামরিক শাসনে। আর বাকি সময়ে চলেছে মেকি গণতন্ত্র। আর বর্তমান সরকারের সময়ে কর্তৃত্ববাদী গণতন্ত্র, হাইব্রিড গণতন্ত্র ইত্যাদি অখ্যাতি অর্জিত হয়েছে। গণতন্ত্র না থাকলে বাক স্বাধীনতাও থাকে না। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা সূচক-২০২২ মতে, ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৬২তম, স্কোর ৩৬.৬৩ (২০২১ সালে ছিল ১৫২তম ও ২০২০ সালে ছিল ১৫১তম)। প্রক্সির্যাকের ‘ইন্টারনেট ফ্রিডম এরাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড’ শীর্ষক রিপোর্ট-২০২২ মতে, বেশি বাধাপ্রাপ্ত ইন্টারনেট সম্পন্ন দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ চতুর্থ। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ব্যাপক অপপ্রয়োগের কারণে প্রায় সকলেই সেলফ সেন্সরশিপে যেতে বাধ্য হয়েছে। যারা সাহস করে সত্য কথা বলছে, তারা নির্যাতিত হচ্ছে। সুশাসনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্টের ‘রুল অব ল ইনডেক্সে-২০২২’ মতে, বিশ্বের ১৪০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১২৭তম। ন্যায় বিচার প্রাপ্তির আকাক্সক্ষাও পূরণ হয়নি। বর্তমানে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৪২ লাখ, যার অধিকাংশ বহু পুরনো। কমনওয়েলথ হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভের প্রতিবেদন-২০২২ মতে, বিচারাধীন বন্দির সংখ্যায় বাংলাদেশ এশিয়ার মধ্যে শীর্ষে আর বিশ্বে পঞ্চম। টিআই এর করাপশন পারসেপশন ইনডেক্স-২০২১ মতে, বিশ্বে বাংলাদেশ ১৪৭তম, স্কোর-২৬ (উচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ)। গুম-খুনের রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র র্যাব ও তার ৭ কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। জাতিসংঘও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি তদন্ত করছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে আন্দোলনরত দলগুলোর উপর চলছে নজিরবিহীন হামলা, মামলা, গ্রেফতার। তাতে নিহত-আহত হয়েছে অনেক। স¤প্রতি এসব ব্যাপক বেড়েছে। বিএনপির সব বিভাগীয় মহাসমাবেশের সময় পরিবহন ও ইন্টারনেট বন্ধ, ব্যাপক তল্লাশি ও গ্রেফতার করা হয়েছে। গত ৭ ডিসেম্বর ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির প্রধান কার্যালয়ে পুলিশ নজিরবিহীন কাÐ ঘটিয়েছে এবং বহু নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। দেশি-বিদেশি ১২টি মানবাধিকার সংস্থা এক যৌথ বিবৃতিতে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করতে সরকারের প্রতি আহŸান জানিয়েছে। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে দেওয়ার জন্য অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও আহŸান জানিয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিকও বলেছেন, মানুষকে সমাবেশের অধিকার দেয়া অত্যন্ত জরুরি। তবুও সরকারি দলের লোকরা বিএনপির সমাবেশ বন্ধ করার লক্ষ্যে সারাদেশে ব্যাপক মহড়া দিয়েছে। এতে দেশে চরম ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাপক হানাহানি বাধারও উপক্রম হয়েছে। এ অবস্থায় যেটুকু গণতন্ত্র আছে, তাও চরম হুমকীর মুখে পড়েছে!
মহান স্বাধীনতার পর থেকে জনসংখ্যা বেড়েছে আড়াইগুণ। তবুও ধারাবাহিকভাবে উন্নতি হতে হতে হলে এলডিসি থেকে নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে কয়েক বছর আগে। ইতোমধ্যে মধ্য আয়ের দেশ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। সরকারি তথ্য মতে, বর্তমানে জিডিপির পরিমাণ ৪৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ও গড় মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ২৮২৪ মার্কিন ডলার হয়েছে। অবশ্য, দেশি-বিদেশি ঋণের পরিমাণও বিপুল। মাথাপিছু গড় ঋণের পরিমাণ প্রায় এক লাখ টাকা হয়েছে। দেশের উন্নতিতে কৃষি, ক্ষুদ্রঋণ, প্রবাসী আয় ও গার্মেন্টের অবদান বেশি। এফএও’র চলতি ও গত বছরের তথ্য মতে, বৈশ্বিক মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বাদু পানিতে তৃতীয়, চাষে তৃতীয়, ইলিশে প্রথম ও সমুদ্রে শীর্ষ ২৫টি দেশের মধ্যে ২৫তম, চায়ে-১০ম, পেয়ারা ও আমে-৮ম, কাঁঠালে-২য়, আলুতে-৬ষ্ঠ, সবজিতে-৩য়, পাটে-২য়, ধানে-৩য়। অন্যদিকে, মাংস উৎপাদনেও প্রায় স্বয়ংসম্পন্ন হয়েছে। ধান উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য এলেও হেক্টর প্রতি উৎপাদন অনেক কম। বর্তমানে হেক্টর প্রতি চাল উৎপাদন বাংলাদেশে-২.৭৪ টন, জাপানে ৫ টন, চীনে ৬.৫ টন, ভিয়েতনামে ৫.৮৪ টন। অন্য ফসলেরও উৎপাদনহার নি¤œ হাইব্রিড ব্যবহার না করায়। কৃষি খাতের দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে, কৃষি এখনো সেকেলেই রয়েছে। তাই উৎপাদন ব্যয় অত্যধিক। সর্বোপরি চাল ও গম আমদানি করতে হয় বছরে ৫০-৬০ লাখ মে.টনের মতো। এছাড়া, খাদ্য পণ্যের বাকিগুলোর অধিকাংশই আমদানি করতে হয়। অপরদিকে, বিশ্বে বাংলাদেশ প্রবাসী আয়ে ৭ম, ফ্রিল্যান্সিং আয়ে ৭ম, গার্মেন্ট রফতানিতে ২য় (মোট রফতানির ৮২%), ওষুধ রফতানিতে এলডিসিভুক্ত দেশের মধ্যে ১ম। বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা প্রায় পাঁচগুণ বেড়েছে। তবে সঞ্চালন ও সরবরাহ ব্যবস্থা বৃদ্ধি না করায় চাহিদা মাফিক বিদ্যুৎ বিতরণ হচ্ছে না। তাই প্ল্যান্ট বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে। এতে এ পর্যন্ত ৯৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। অন্যদিকে, গ্যাস অনুসন্ধানের দিকে গুরুত্ব না দেওয়ায় গ্যাসের মজুদ প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। বিপুল পরিমাণে আবিষ্কৃত কয়লাও উত্তোলন করা হয়নি। ফলে জ্বালানি সংকট তীব্র হয়েছে। সব ধরনের দূষণ সর্বোচ্চ হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের সা¤প্রতিক তথ্য মতে, বায়ু দূষণের কারণে বাংলাদেশে বছরে ৮৪ হাজার মানুষ মারা যায় এবং নানা ব্যাধিতে আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপক। দুর্বিষহ যানজটের কারণে বছরে জিডিপির ৩-৪% আর্থিক ক্ষতি হয়। পরিবেশ রক্ষার জন্য ২৫% বনাঞ্চল থাকতে হয়। কিন্তু দেশে আছে ৭-৮%। যোগাযোগ ও পরিবহন খাত অপ্রতুল। বহু নদী-খাল-বিল বিলুপ্ত হয়েছে। যা আছে তাও প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। নারীর শিক্ষা ও ক্ষমতায়ন বেড়েছে। কিন্তু নারী নির্যাতন ব্যাপকতর হয়েছে। ডিজিটাল ব্যবহার অনেক বেড়েছে। প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বৃহৎ শিল্পের অধিকাংশ বন্ধ হয়ে গেছে। শিল্প-সাহিত্যের উন্নতি আশানুরূপ নয়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চরম সংকট চলছে।
যা’হোক, দেশের উন্নতি যা হয়েছে, তার ভাগীদার হয়নি সাধারণ মানুষ। ফলে তারা যে তিমিরে ছিল সেখানেই রয়েছে। উপরন্তু করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পণ্যমূল্য আকাশচুম্বি হওয়ায় মধ্যবিত্তরা নি¤œবিত্ত আর নি¤œবিত্তরা নিঃস্ব হয়েছে। উপরন্তু দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এফএও’র ‘দ্য স্টেট অফ ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড নিউট্রিশন ইন দ্য ওয়ার্ল্ড- ২০২২’ শীর্ষক প্রতিবেদন মতে, ২০২০ সালে পুষ্টিকর খাবার থেকে বঞ্চিত মানুষের হার বাংলাদেশে ৭৩.৫% (বৈশ্বিক গড় হার ৪২%)। বর্তমানে এ হার আরো বেড়েছে। গেøাবাল হাঙ্গার ইনডেক্স-২০২২ অনুযায়ী, বিশ্বের ১২১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৮৪তম, স্কোর ১৯.৬ (আগের বছর ছিল ৭৬তম)। গত অক্টোবর প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য মতে, বাংলাদেশে এখনো দারিদ্র্য দূরীকরণের হার সমজাতীয় দেশগুলোর চেয়ে অনেক শ্লথ। কিছুদিন আগে সানেম জানিয়েছে, দেশে দারিদ্রের হার বেড়ে ৪২% হয়েছে। বর্তমানে সেটা প্রায় ৫০% হয়েছে। সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি। অপরদিকে, কিছু মানুষ অবাধে লুটপাট করে রাতারাতি ধনী হয়েছে। ফলে আয় বৈষম্য সর্বাধিক হয়েছে। প্যারিস স্কুল অব ইকোনমিকসের বৈশ্বিক অসমতা প্রতিবেদন-২০২২ মতে, ২০২১ সালে বাংলাদেশের শীর্ষ ১% ধনীদের নিট আয়ের পরিমাণ জাতীয় আয়ের ১৬.২% ও সম্পদের পরিমাণ মোট জাতীয় সম্পদের ২৪.৬%, আর নিচের সারির ৫০% মানুষের আয়ের অনুপাত জাতীয় আয়ের ১৭.১% ও সম্পদের পরিমাণ মোট জাতীয় সম্পদের ৪.৮%। অর্থাৎ বাংলাদেশে দৃষ্টিকটুভাবে বৈষম্য বেড়েছে। গত ৭ সেপ্টেম্বর খবরে প্রকাশ, বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে এক কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এমন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৮ হাজার ৪৫৭টিতে, যা স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে ছিল ৫টি। আন্তর্জাতিক একটি সংস্থার মতে, অতি ধনী বৃদ্ধির দিক দিয়ে বাংলাদেশ পরপর কয়েক বছর বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। দেশের এই নব্য ধনীদের সম্পদের বেশিরভাগই অবৈধভাবে উপার্জিত। তবুও তারাই দেশের কর্ণধার সব ক্ষেত্রে। অর্থও পাচার করছে তারা। ২০১৬ সালে থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে তিন লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে।
মহান বিজয়ের দীর্ঘকালেও সাম্যতার আকাক্সক্ষা পূরণ হয়নি। সমাজে এখনো আশরাফ আর আতরাফ বিদ্যমান আছে। নারী-পুরুষের বৈষম্যও ব্যাপক।বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ‘গেøাবাল জেন্ডার গ্যাপ’-২০২২ মতে, বিশ্বের ১৪৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৭১তম (গতবছর ছিল ৬৫তম ও তার আগের বছর ছিল ৫০তম), স্কোর দশমিক ৭১৪। বেকারত্ব অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাও ব্যাপক। গত ২৭ জুলাই প্রকাশিত ‘সানেম’ ও ‘অ্যাকশন এইড, বাংলাদেশ’ এ যৌথ’ গবেষণা প্রতিবেদন মতে, দেশের বেকার ৭৮% শিক্ষিত তরুণ, দরিদ্র পরিবারের শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে এই হার ৮৯%। ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ গত ১৯ সেপ্টেম্বর বলেছেন, প্রাথমিকে ঝরে পড়ার পর ষষ্ঠ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তির হার ৬০%। দশম শ্রেণি পর্যন্ত তা ২৫-৩০ শতাংশে দাঁড়ায়। আর দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত আসতে পারে মাত্র ১০-১২% শিক্ষার্থী। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান নিয়েও রয়েছে সংশয়। ২০৩০ সাল পর্যন্ত শিক্ষার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, ২০২২ সালের অর্ধেক সময় চলে গেলেও কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক পিছিয়ে আছে দেশ। শিক্ষা ব্যয় অত্যধিক। দারিদ্র, বেকারত্ব ও বাল্য বিবাহের হার সর্বাধিক (প্রায় ৬০%) হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার মাত্রাতিরিক্ত হয়েছে। ইউনেস্কোর গেøাবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট-২০২২ মতে, বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে মোট খরচের ৭১% বহন করে শিক্ষার্থীদের পরিবার। যা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ। গত দশকে বাংলাদেশ সরকার জিডিপির ২.৫% এর কম খরচ করেছে শিক্ষা খাতে, যা জাতি সংঘের সুপারিশ করা ৪% সীমার অনেক নিচে।স¤প্রতি শিক্ষা খাতে সরকারি ব্যয় আরো কমেছে। কারিগরি শিক্ষার হার মাত্র ৮-৯%। তারও মান খারাপ। তাই দক্ষ লোকের ঘাটতি প্রকট! বিআইডিএস’র প্রতিবেদন-২০২২ মতে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে অদক্ষতা সর্বাধিক,তাই উৎপাদনশীলতা সবচেয়ে কম। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক পরটুলান্স ইনস্টিটিউটের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সক্ষমতা সূচক-২০২২ মতে, বিশ্বের ১৩১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৮৮তম, স্কোর ৪২.৭৪। স্বাস্থ্য খাতে সরকারি ব্যয় জিডিপির প্রায় ২%। গত ৩০ আগস্ট খবরে প্রকাশ, বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার জন্য মোট যে ব্যয় হয় তার প্রায় ৭০% নাগরিকদের নিজস্ব। এটা সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। দেশে স্বাস্থ্যসেবার মান নি¤œ হওয়ায় গড়ে বছরে পাঁচ লাখ মানুষ বিদেশে চিকিৎসা করায়। এতে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাস্থ্য ব্যয় মেটাতে গিয়ে বছরে ৬৪ লাখ মানুষ দরিদ্র হচ্ছে। দেশে আবাসন সংকট ও দুর্ঘটনার হার ব্যাপক।
বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে যখন ক্ষমতায় আসে, তখন ডলারের দর ছিল ৬৯ টাকা। এখন তা ১০৬ টাকার বেশি। গত অর্থ বছরে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবুল বারকাত গত ২৩ নভেম্বর বলেছেন, বাংলাদেশের পাঁচটি মেগা প্রকল্পের ঋণ শোধ করা শুরু হবে ২০২৭ সালে। টাকা ছাপিয়েও এই ঋণ শোধ করা যাবে না। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মইনুল ইসলাম গত ১১ আগস্ট বলেছেন, এখন প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। টিআইবি গত ৫ ডিসেম্বর বলেছে, ব্যাংকিং খাতকে খাদের কিনারে ঠেলে দিয়েছে ভুয়া ঋণ। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে হাইকোর্ট গত ২৮ নভেম্বর বলেছেন, সব ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে- আমরা কি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখব? এটা কি হয়?
প্রকৃত গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা, আয় বৈষম্য ও বেকারত্ব দূর, সমতা সৃষ্টি এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠাই হোক এবারের বিজয় দিবসের শপথ।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন