মানুষ সামাজিক জীব। সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এই স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রে কারো কোনো মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হবে না এটাও কাম্য। কিন্তু এটা কাম্য হলে কী হবে? অনেক সময় এই কাম্য বাস্তবে অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। তখন যে অধিক শক্তিশালী হয়, তার মধ্যে অপেক্ষাকৃত দুর্বলের মানবিক অধিকার হরণের জন্য উন্মত্ততা জেগে ওঠে। অথচ বাস্তব সত্য এই যে, মানুষ ব্যক্তিগতভাবে যেমন কারো অধীনতা মেনে নিতে চায় না, একাধিক মানুষের সমন্বয়ে গঠিত কোনো স¤প্রদায় বা জাতিও চায় না অন্য কোনো স¤প্রদায় বা জাতির অধীনতা মেনে নিতে। ইতিহাস সচেতন ব্যক্তিমাত্রেই জানেন, আজ আমরা বাংলাদেশ নামের যে স্বাধীন রাষ্ট্রের গর্বিত নাগরিক, সে বাংলাদেশকে ছলে-বলে কৌশলে দখল করে নিয়েছিল সাত সমুদ্র তের নদীর ওপার থেকে আসা সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ব্রিটেন। তারা বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলাহকে পরাজিত করে এ দেশে ইংরেজ রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে রাজবল্লভ, রায়দুর্লভ, উর্মীচাঁদ, জগতশেঠ প্রমুখ নবাব দরবারের হিন্দু অমাত্যদের সঙ্গে গোপন যোগাযোগ স্থাপন করার পর নবাব সিরাজউদ্দৌলাহর প্রধান সেনাপতি মীর জাফরকেও হাত করে নবাবের সিংহাসনে তাকে বসানোর লোভ দেখিয়ে। মীর জাফরেরও একটা লুলুপ দৃষ্টি ছিল সিংহাসনের প্রতি। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মকর্তা ও কিছু সংখ্যক এদেশীয় সহযোগীদের এ প্রস্তাব পেয়ে মীর জাফর তো মহাখুশি। তাদের কথা মতো যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণে মীর জাফর রাজি হয়ে গেলেন।
এই প্রস্তাব মোতাবেকই পলাশীর রণক্ষেত্রে ইংরেজদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালাতে মহাসুযোগ আসার পরও মীর জাফর আক্রমণ চালানো থেকে বিরত থাকেন। শুধু তাই নয়, নবাবের প্রধান সেনাপতি হুমকি দেন, তাঁর পরামর্শ মোতাবেক না চললে যুদ্ধের ফলাফলের জন্য প্রধান সেনাপতিকে দায়ী করা যাবে না। অগত্যা নবাব প্রধান সেনাপতির কথা মতো ইংরেজদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানো থেকে বিরত থাকেন।
এরপর পলাশী যুদ্ধের ফলাফল যা হওয়ার তাই হলো। এক পর্যায়ে নবাব বাহিনীর সৈন্যরা যখন তাদের তাঁবুতে বিশ্রামরত, তখন ইংরেজদের আকস্মিক আক্রমণে তারা ছিন্নভিন্ন হয়ে যে যেদিকে পারে পালাতে শুরু করল। এমনকি স্বয়ং নবাবও নিজেকে সম্পূর্ণ নিঃসঙ্গ দেখতে পেয়ে এক পর্যায়ে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে প্রাণ বাঁচাতে বাধ্য হলেন। ইচ্ছা রইল সম্পূর্ণ সৈন্য বাহিনী সুসংগঠিত করে তিনি পুনরায় ইংরেজদের হাত থেকে বাংলার স্বাধীনতা পুনরুদ্ধ করবেন। নবাবের সে স্বপ্ন আর কখনও সফল হয়নি।
এদিকে মীর জাফর তার বিশ্বাঘাতকতার এনাম স্বরূপ নবাবের সিংহাসনে বসেছিলেন। কিন্তু সিংহাসনে বসেই তিনি টের পেয়ে গিয়েছিলেন, তাঁর হাতে কোনো ক্ষমতা নেই। সকল ক্ষমতা চলে গেছে ইংরেজদের এবং নবাব দরবারের হিন্দু অমাত্যদের হাতে। ফলে ১৭৫৭ সাল থেকেই এদেশে ইংরেজদের রাজত্ব শুরু হয়ে যায়। বাংলা-বিহার-উড়িষ্যাড় পরে উপমহাদেশের সকল অঞ্চলে ইংরেজ শাসনে চলে যায়।
পলাশীতে নবাব সিরাজউদ্দৌলাহর পরাজয়ের মাধ্যমে এদেশে ইংরেজদের যে রাজত্ব শুরু হয়, তা এ দেশের মুসলমানরা একদিনের জন্যও মেনে নেয়নি। বিভিন্ন সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে তারা ইংরেজদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে দেয়। এসব সংগ্রামের মধ্যে ছিল: মজনু শাহের নেতৃত্বে ফকির আন্দোলন, তিতুমীরের সংগ্রাম উত্তর-পশ্চিম ভারতের সৈয়দ আহমদ বেরলভীর জেহাদ আন্দোলন, মহীশূরের টিপু সুলতানের স্বাধীনতা সংগ্রাম, বাংলাদেশের হাজী শরীয়তুল্লাহ-দুদু মিয়া প্রমুখের ফরায়েজী আন্দোলন, ত্রিপুরা, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন স্থানের কৃষক আন্দোলন। কিন্তু একে একে এসব আন্দোলনের সবগুলোই ব্যর্থ হয় প্রতিবেশী হিন্দুদের বিরোধিতা ও অস্ত্র শক্তির কারণে। পলাশী যুদ্ধের অত্যল্পকাল পরে ১৭৯৩ সালে আগেকার ভূমি ব্যবস্থার পরিবর্তন করে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নামের যে নতুন ভ‚মিব্যবস্থা প্রবর্তিত হয় তার ফলে মুলমান জমিদারীর সিংহভাগ চলে যায় হিন্দু জমিদারদের হাতে। শুধু জমিদারী নয়, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা-সংস্কৃতি প্রভৃতি সকল ক্ষেত্র ইংরেজ শাসকরা হিন্দুদের হাতে তুলে দেয়ায় মুসলমানরা এক নিঃস্ব জনগোষ্ঠিতে পরিণত হয়। যে মুসলমানদের ইতঃপূর্বে কাউকে দরিদ্র হিসেবে কল্পনা করা সম্ভব হতো না, তাদের পক্ষে কোনোমতে সচ্ছল হওয়াও অসম্ভব হয়ে ওঠে। এভাবে উপমহাদেশের মুসলমানরা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হলে মুসলিম নেতারা মুসলমানদের সম্পূর্ণ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে সাময়িকভাবে হলেও ইংরেজদের সঙ্গে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে তাদের প্রবর্তিত শিক্ষাব্যবস্থায় মুসলমানদের শিক্ষিত করে তুলতে ব্রতী হন।
এ ব্যাপারে উত্তর ভারতের স্যার সৈয়দ আহমদ খান এবং বাংলার নবাব আবদুল লতিফের নাম বিশেষভাবে উল্লেখের দাবি রাখে। স্যার সৈয়দ আহমদ খান আলীগড়ে মুসলমানদের জন্য একটা উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরবর্তীকালে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। অপরপক্ষে নবাব আবদুল লতিফ অনেক চেষ্টা-তদবির করে কলকাতায় ইংরেজদের প্রতিষ্ঠিত উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিন্দু কলেজের দ্বার মুসলমান শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার লক্ষ্যে হিন্দু কলেজকে প্রেসিডেন্সি কলেজে রূপান্তরিত করেন।
ইংরেজ সরকারের সঙ্গে মুসলমানদের সহযোগিতা বৃদ্ধির আরেকটি ঘটনা ছিল ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ। প্রধানত প্রশাসনিক কাজের সুবিধার্থে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যাকে বিভক্ত করে ঢাকাকে রাজধানীসহ পূর্ববঙ্গ ও আসাম নামের একটি নতুন প্রদেশ সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু এতে পূর্ব বাংলার কলিকাতা প্রবাসী জমিদাররা পূর্বেবঙ্গে অবস্থিত তাদের জমিদারীর ওপর প্রভাব হ্রাস পাবে, এই আশঙ্কা করে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে বিরাট আন্দোলন শুরু করে দেয়। তারা বাংলাকে বঙ্গমাতা বলে অভিহিত করে বঙ্গভঙ্গের ফলে বঙ্গমাতার অঙ্গচ্ছেদ হয়েছে বলে ঘোষণা দেয়। পলাশী থেকে এ পর্যন্ত যে হিন্দুরা ইংরেজদের পক্ষে সহযোগিতা দিয়ে এসেছে তাদের এ অদ্ভুত ভূমিকা ইংরেজদের ভীত করে তোলে। তারা বঙ্গভঙ্গ রদ ঘোষণা করে পুরাতন মিত্রদের খুশি করে।
এদিকে সহযোগিতা যুগের আরেক মুসলিম নেতা নবাব সলিমুল্লাহ সরকারের প্রতি অত্যন্ত রুষ্ট হন। ইংরেজ সরকার তাকে খুশি করার জন্য তার অন্যতম দাবি ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রæতি দেয়। এতে কলিকাতা প্রবাসী হিন্দু জমিদাররা অত্যন্ত রুষ্ট হন। তারা যে যুক্তি অথবা কুযুক্তি দেন, তা হলো পূর্ব বাংলার অধিকাংশ মানুষ অশিক্ষিত মুসলমান কৃষক, তাদের শিক্ষার জন্য ঢাকায় কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন নেই। তাদের বিরোধিতার কারণে এই ঘোষণার অনেক পরে, ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার যাত্রা শুরু করে। তবে এরপরও কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আগের মতোই পূর্ববঙ্গের সকল স্কুল-কলেজের অনুমোদনের অধিকারী থাকে। এর থেকে মুক্তি পায় পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ১৯৪৭ সালে।
এতক্ষণ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার বিষয়ে আলোচনার পর এখন আসি আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের অতীত ও বর্তমানের কথায়। সমগ্র উপমহাদেশে ইংরেজদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার কথা আগেই বলেছি। এ কথাও আমরা আগেও বলেছি, বাংলা থেকে শুরু হলেও ইংরেজ রাজত্ব সমগ্র উপমহাদেশেই বিস্তার লাভ করে কালক্রমে। ১৭৫৭ সালে শুরু হওয়া এ ইংরেজ রাজত্ব চলে দীর্ঘ ১৯০ বছর অর্থাৎ ১৯৪৭ পর্যন্ত। উপমহাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু স¤প্রদায়ের পক্ষে স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব দেয় ভরতীয় জাতীয় কংগ্রেস। উপমহাদেশের হিন্দু-মুসলিম সংগঠন বলে দাবি করলেও প্রধানত তারা হিন্দু স¤প্রদায়ের স্বার্থই দেখত। ফলে মুসলিম নেতৃবৃন্দ মুসলমানদের জন্য পৃথক রাজনৈতিক সংগঠনের কথা চিন্তা করতে বাধ্য হন। ১৯০৫ সালে ঢাকায় যে মুসলিম শিক্ষা সম্মেলনের আয়োজন করেন নবাব সলিমুল্লাহ, তাতে ভারত বর্ষের মুসলিম নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ জানান। তিনি সেখানে মুসলিম নেতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহকেও আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু জিন্নাহ সাহেব সে আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন এই যুক্তিতে যে, এতে ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনকে সক্রিয় করতে জাতীয় কংগ্রেসের কাজের সমস্যা হবে। তাদের এমন কিছু করা উচিত নয় যাতে কংগ্রেসের স্বাধীনতা আন্দোলনের কাজের অসুবিধা হয়।
মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ মনেপ্রাণে ভারতবর্ষের হিন্দু-মুসলিম উভয় স¤প্রদায়ের সম্মিলিত স্বাধীনতা চাইতেন বলে একপর্যায়ে তিনি হিন্দু-মুসলিম মিলনের অগ্রদূত হিসেবে সুখ্যাতি লাভ করেন। কিন্তু বাস্তবতা বড় কঠিন ব্যাপার। যিনি হিন্দু-মুসলিম মিলনের অগ্রদূত হিসেবে সারা ভারতে সুখ্যাতি লাভ করেছিলেন, সেই মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ কঠিন বাস্তবতা বিবেচনায় কংগ্রেসের বিরোধিতা করে উপমহাদেশের মুসলমানদের মুক্তি সংগ্রামের অগ্রদূত হিসেবে কায়েদে আজম নামে অভিহিত হন। তিনি পরবর্তীকালে শুধু নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন নি, ১৯৪০ সালে মুসলিম লীগের ঐতিহাসিক লাহোর অধিবেশনে ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাসমূহে একাধিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব গ্রহণ করেন, যার প্রতিটি ইউনিটই হবে স্বতন্ত্র, স্বাধীন ও সার্বভৌম। এই প্রস্তাব উত্থাপন করেন মুসলিম বাংলার সেকালের অপ্রতিদ্ব›দ্বী নেতা শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, যিনি ছিলেন নবাব সলিমুল্লাহর অন্যতম জুনিয়র সহকর্মী।
ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবে উল্লেখিত রাষ্ট্রের নাম কী হবে তার কোনো উল্লেখ না থাকলেও সকল হিন্দু সংবাদপত্রে খবরটি প্রকাশিত হয় পাকিস্তান প্রস্তাব গৃহীত বলে।
মুসলিম লীগ লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে যে আন্দোলন গড়ে তোলে সে আন্দোলনকে পাকিস্তান আন্দোলন বলে অভিহিত করেন এর নেতৃবৃন্দ এবং ঐ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের দুই মুসলিম অঞ্চলকে নিয়ে গঠিত রাষ্ট্রের নাম পাকিস্তানই রেখে দেন।
দেড় হাজার মাইলের অধিক দূরত্বে অবস্থিত ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন দুটি অঞ্চল নিয়ে একটি রাষ্ট্র গঠনের নজির ইতিহাসে নেই বললেই চলে। তাও যে এত দীর্ঘ দিন ধরে চলেছিল তার মূলে ছিল উভয় অঞ্চলের ধর্মীয় আদর্শিক ঐক্য-চেতনা। কিন্তু পাকিস্তানের এই আদর্শিক ঐক্য চেতনা দুই অঞ্চলের মাধ্যমে ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতার কারণে বাস্তবে সফল হয়নি। এর কারণ ছিল দূরবর্তিতা এবং উভয় অঞ্চলের জনগণের ভাষাগত বিচিত্রতা।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর দেখা যায়, সমগ্র পাকিস্তানের অধিকাংশ জনগোষ্ঠি বাস করেন পূর্ববঙ্গে এবং তাদের মাতৃভাষা বাংলা, কিন্তু নতুন রাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে উর্দুভাষীদের সংখ্যা বিপুল হওয়ার কারণে রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয় না। আগের ইংরেজ সরকারের ধারাবাহিকতায় ইংরেজির সঙ্গে শুধু উর্দু ব্যবহার শুরু হয়। এর প্রতিবাদে গড়ে ওঠে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন। এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলা পাকিস্তানের অধিকাংশ জনগোষ্ঠির মাতৃভাষা হলেও রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার দাবি উপেক্ষিত হয়। এ কারণে শুরু হয় ভাষা আন্দোলন। যারা এ আন্দোলনের সূচনা করেন তারা সবাই ছিলেন পাকিস্তান আন্দোলনের কর্মী ও সমর্থন। কিন্তু এতদসত্তে¡ও ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন দেড় হাজার মাইলের অধিক দূরে বিভক্ত দুটি ভূখন্ড নিয়ে এক রাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত এক থাকতে পারেনি পাকিস্তান রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় নেত্বতের অদূরদর্শিতা এবং পূর্ববঙ্গের প্রতি দীর্ঘদিন ধরে অবিচার চালিয়ে যাওয়ার কারণে।
এ কারণে প্রথমে পূর্ববঙ্গে স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন, পরে স্বাধিকার চেতনা প্রবল হয়ে ওঠে। জনগণের স্বাধিকার চেতনা পাকিস্তান বাহিনী ১৯৭১ সালে ধ্বংস করে দেয়ার চেষ্টা চালালে স্বাধীনতাকামী জনগণ জীবনপণ করে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে নয় মাসের মধ্যে বাঙালি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। এই বাংলাদেশকে সর্বতোভাবে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলাই এখন আমাদের পবিত্র দায়িত্ব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন