আওয়ামী লীগের ২২ তম জাতীয় সম্মেলন আগামী শনিবার। ইতোমধ্য সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। এবারের সম্মেলনে ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয় তুলে ধরা হবে। এই বিষয়টি সামনে রেখেই সম্মেলনের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়’।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার যোগ্য ১০ জন নেতা রয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক, পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের ভেন্যু রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, সভাপতি আমাদের অপরিহার্য। আমাদের যিনি সভাপতি আছেন, তিনি আমাদের ঐক্যের প্রতীক। তিনি এখানে অপরিহার্য। কাউন্সিলরদের মধ্যে একজনও খুঁজে পাওয়া যাবে না যে তাকে সমর্থন করবে না। কাজেই এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। তবে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হতে অনেকেরই ইচ্ছা থাকতে পারে। আওয়ামী লীগ একটা গণতান্ত্রিক দল। আমার জানা মতে অন্তত ১০ জন আছেন যারা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। কাজেই কে হবেন সাধারণ সম্পাদক তা নেত্রীর ইচ্ছা এবং কাউন্সিলরদের মতামতের ওপর নির্ভর করছে। সবকিছুর প্রতিফলন হবে দ্বিতীয় অধিবেশনে। কাউন্সিল দুপুর ৩টার পর যে অধিবেশন বসবে সেখানে কাউন্সিলরদের মতামত নিয়ে এই সিদ্ধান্ত হবে। কাজেই আমি এই মুহূর্তে কারো নাম বলতে পারছি না বলে মন্তব্য করেন তিনি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, শুনেন, এই মুহূর্তে আমি কোনো প্রেডিকশনে যেতে চাই না। এই সময়ে আমি এটা করতে পারি না।তাহলে কাউন্সিলরদের চিন্তাভাবনাকে অবমাননা করা হবে। কাউন্সিলররাই হায়েস্ট ফোরাম, তারাই নেতা নির্বাচনে মূল শক্তি। কাজেই এ নিয়ে আমি এই মুহূর্তে কিছু বলতে চাই না। তিনি বলেন, আমরা আগেই বলে দিয়েছি, এবারের সম্মেলনে যে কমিটি হবে, এখানে তেমন একটা পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম। আমরা পরবর্তী সম্মেলন (জাতীয়) নির্বাচনের পর আগামও করতে পারি। সেরকম চিন্তাও আছে। তখন একটা মেজর রিশাফল হয়তো হবে। কিন্তু আপাতত আমরা বড় ধরনের কোনো পরিবর্তনের ব্যাপারে ভাবছি না। তবে কাউন্সিলরদের অভিমতের সবকিছু নির্ভর করবে। আগামী সরকার পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রন্তুত। ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা একটা সুশৃঙ্খল, সুসংগঠিত, ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ গড়ে তুলতে চাই। আগামী নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্তুত। আগামী সরকার পরিচালনার জন্য আমরা প্রস্তুত।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, কার্যনির্বাহী সদস্য সানজিদা খানম প্রমুখ।
আগামীকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের পর কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে আসার পর আধঘণ্টা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হবে। এরপর শোক প্রাস্তাব উত্থাপন করবেন দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।
সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ওবায়দুল কাদের। স্বাগত বক্তব্য দেবেন অভ্যর্থনা কমিটির আহবায়ক শেখ ফজলুল করিম সেলিম। শেখ হাসিনার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষ হবে। এবারের জাতীয় সম্মেলনে সারাদেশ থেকে প্রায় ৭ হাজার কাউন্সিলর এবং লক্ষাধিক নেতা-কর্মী অংশ নেবেন।
পরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শুরু হবে কাউন্সিল অধিবেশন। এই অধিবেশনে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হবে। দলের নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে ১১টি উপকমিটি কাজ করছে। প্রথা অনুযায়ী সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা ও সদস্য সচিব সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সম্মেলনের এই কর্মযজ্ঞ সফল করতে রাত-দিন পরিশ্রম করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। দফায় দফায় বৈঠক, দাওয়াতপত্র বিতরণ, গঠনতন্ত্র সংযোজন, বিয়োজন, ঘোষণাপত্র পরিমার্জন, মঞ্চ সাজসজ্জাসহ আনুষঙ্গিক সব কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
সম্মেলনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, এবারের সম্মেলন সাদামাটা হলেও নেতা-কর্মী কমবে না। সম্মেলনে নেতা-কর্মীদের ঢল নামবে। দেশের মানুষ কষ্টে আছে ভেবেই এবার সম্মেলনে সাজসজ্জা করা হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশের মানুষকে নিয়ে ভাবেন। দেশের মানুষের কথা ভেবেই এবারের সম্মেলনে সাদামাটা করা হচ্ছে।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পদ্মা সেতুর ওপরে নৌকার আদলে তৈরি ৮০ ফুট দৈর্ঘ্য ৪৪ ফুট প্রস্থের মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। মূল মঞ্চের উচ্চতা হবে ৭ ফুট। সাংস্কৃতিক পর্বের জন্য তৈরি হচ্ছে আলাদা মঞ্চ। মূলমঞ্চে চার লেয়ারে চেয়ার সাজানো হবে। প্রথমে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বসবেন। দ্বিতীয়টিতে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সিনিয়র নেতা ও সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, বাকি দু’টোতে কেন্দ্রীয় নেতারা। মোট ১২০টি চেয়ার রাখা হবে।
আওয়ামী লীগের মঞ্চ ও সাজসজ্জা উপকমিটির সদস্য সচিব ও দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, পদ্মা সেতুর ওপরে নৌকা আদলে তৈরি ৮০ ফুট বনাম ৪৪ ফুট মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। মূল মঞ্চের উচ্চতা হবে ৭ ফুট। মূলমঞ্চে চার ভাগে চেয়ার সাজানো হবে। এ ছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণ এলিডি মনিটর থাকবে, যেখানে সম্মেলনের কার্যক্রম দেখা যাবে।
বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে কিছুটা কৃচ্ছতা সাধনের লক্ষে সম্মেলনে সাদামাটা আয়োজনের জন্য এ বছর বিদেশিদের দাওয়াত করা হচ্ছে না। তবে সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ১৪ দল, জাতীয় পার্টি, বিএনপিসহ নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলকে দাওয়াত করবে আওয়ামী লীগ।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের বেশির ভাগই দুই দিনব্যাপী হয়েছে। এবার তা এক দিনে নামিয়ে আনা হয়েছে খরচ কমাতে। ২০১৯ সালে সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০ ও ২১ ডিসেম্বর। সর্বশেষ সম্মেলনের বাজেট ছিল ৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এবারের সম্মেলনের জন্য বাজেট ৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা অনুমোদন করেছে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি।
##
মন্তব্য করুন