শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

হজ ব্যবস্থাপনায় সৌদি সরকারের কাছে ৭ দফা সুপারিশ

বিশ্বময় ইসলামের জাগরণ

| প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আহমদুল ইসলাম চৌধুরী : বিগত প্রায় শত বছর থেকে হজ ব্যবস্থাপনা সৌদি আরবের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। নানান অনুকূল-প্রতিকূলতার পর বাদশা ফাহাদ হজযাত্রীর কল্যাণে বিশাল অবদান রেখে গেছেন। নতুনভাবে সাজিয়ে দিয়ে গেছেন পবিত্র মদিনাকে। পবিত্র মক্কায় মসজিদুল হারাম সম্প্রসারণসহ হজযাত্রীর কল্যাণে বহুবিধ অবদান স্মরণযোগ্য। বাদশা ফাহাদ বিন আবদুল আজিজই নিজেকে দু’হারামের খাদেম তথা খাদেমুল হারামাইনিস শরীফাইন ঘোষণা দিয়ে ছিলেন। এ মহান বাদশাকে আল্লাহ তাআলা জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন। (আমিন)।
বর্তমান মহামান্য বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজও হজযাত্রীর প্রতি আন্তরিক তাতে কোন ইতস্ততা থাকতে পারে না। তারপরেও সুন্দর ব্যবস্থাপনার মধ্যে ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকাটা স্বাভাবিক। দেশের অনেক হজযাত্রী ও হজ এজেন্সী নানান অভিযোগের কথা জানিয়েছে। তারই প্রেক্ষিতে হজযাত্রীগণের কল্যাণে মহামান্য বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজ বরাবরে ৭ দফা সুপারিশ পেশ করলাম।
(১) হজযাত্রীর কর্তনকৃত ২০% কোটা ছেড়ে দেয়া : মসজিদুল হারাম বড় ধরনের সংস্কারের লক্ষ্যে প্রতি দেশে হজযাত্রীর কোটা ২০% কমিয়ে দেয়া হয়েছে। গত ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের হজের আগেই মসজিদুল হারামের মূল কাঠামো পুনঃনির্মাণের কাজ সমাপ্ত হয়ে গেছে। এখন শুধু সাজানোর কাজ বাকি। কাজেই অতি সত্বর এ ২০% কর্তনকৃত কোটা ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা করা হউক। যেহেতু বাংলাদেশসহ অনেক দেশের বহু হজযাত্রী এ কারণে হজে যেতে পারছেন না।
(২) হজ ও ওমরাকারীর ওপর ট্যাক্স প্রত্যাহার করা : বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের বরাতে জানা যায় যে, একাধিকবার হজ ওমরা করতে গেলে আপনাদেরকে ট্যাক্স দিতে হবে। এটা একটি বড় ধরনের ভুল সিদ্ধান্ত। উম্মে হাতুল মুমেনীনগণ (রাসূল (স.)-এর বিবি) প্রতিকূল যোগাযোগের কারণে ১৩ মঞ্জিলে থেমে পবিত্র মদিনা থেকে এসে একাধিকবার হজ পালন করেছেন। মহান সাহাবা ও তাবেঈনগণের মধ্যে এমন সংখ্যা কম নয় যারা বহু দূর থেকে পায়ে হেঁটে, উটে চড়ে এসে অনেকবার হজ পালন করেছেন। টাকার প্রয়োজন হলে মুসলিম বিশ্ব থেকে নেয়া যাবে। আমাদের বাংলাদেশ সরকারও উভয় হারামের প্রয়োজনে কোটি কোটি রিয়াল দিতে মনে হয় ইতস্তত করবেন না। ট্যাক্সের মাধ্যমে একাধিকবার হজ ওমরাকারীকে ঠেকাতে চান তাহলে বিষয়টি স্ব-স্ব দেশে ছেড়ে দেয়া উত্তম হবে। তারাই কোটা মত হজ ওমরাকারী প্রেরণ করবে। কিন্তু হজ ওমরাকারী থেকে ট্যাক্স নেয়া কোন মতেই গ্রহণযোগ্য হবে না।
(৩) হজ টার্মিনাল জরুরি সংস্কার করা : বর্তমান হজ টার্মিনাল হজযাত্রীর জন্য একটি চরম প্রতিকূল অবস্থানের জায়গা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হজযাত্রীরা দ্বিতল বিশিষ্ট টার্মিনাল ভবনে ঢুকে কড়া এসিতে কনকনে ঠা-ার মধ্যে পড়ে। যাত্রী অনুপাতে চেয়ার সংখ্যা কম, কম টয়লেট সংখ্যাও। বিদেশ থেকে এসে হাজীরা টয়লেটে গিয়ে লাইন ধরতে হয়। ইমিগ্রেশনের পর মূল ভবন থেকে যখন হাজীরা বাইরের চত্বরে আসে তখন ৩৭/৩৮ থেকে ৪৩/৪৪ ডিগ্রি তাপমাত্রায় দগ্ধ হতে শুরু করে। বাংলাদেশ থেকে লাখের অধিক হাজী চরম প্রতিকূল অবস্থার স্বীকার হয়। এখানে একাধিক ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হয় বাসে ওঠার জন্য। হজ টার্মিনালের এ বিশাল চত্বরে বসার ব্যবস্থা অপ্রতুল। টয়লেটগুলোও মানসম্পন্ন নয়। হজের পর দেশে ফিরতে ৭/৮ ঘণ্টা আগে হজ টার্মিনালে রিপোর্ট করতে হয়। তখন ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হাজিরা আবারও বাস থেকে নেমে প্রচ- গরমের মধ্যে প্রতিকূল অবস্থায় পড়ে। বাংলাদেশসহ অনেক দেশের হাজীরা অনভ্যস্ত বিধায় গরমে ছটফট করতে থাকেন। অবস্থাভেদে অনেক দূরত্বে ইমিগ্রেশনের দিকে যেতে ট্রলি পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। ইমিগ্রেশনের দূরত্ব অধিক হওয়ায় মান সম্পন্ন টার্মিনালের মত বেল্ট না থাকায় দেশে ফিরবার সময়ও টার্মিনাল ভবনে যাত্রী অনুপাতে আসন স্বল্পতা এবং এতে কনকনে ঠা-ার মধ্যেও হজযাত্রীগণকে ফ্লোরে বসতে বাধ্য করা, টয়লেট স্বল্পতাও উল্লেখযোগ্য। আগামী হজের আগে জরুরি ভিত্তিতে উক্ত সমস্যাগুলো সমাধান করা প্রয়োজন।
(৪) পুরাতন বাস প্রত্যাহার করা: হজযাত্রী পরিবহনে এখনও বহু পুরাতন বাস ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ভারত পাকিস্তানসহ গরিব দেশগুলোর ক্ষেত্রে। এ সমস্ত বাসগুলো হাজীগণের জন্য মেরামত করে চালু করলেও তা যথাযথ হয় না। ফলে এসির প্রতিকূলতা নিয়ে হাজীগণকে ভুগতে হয়। অর্থাৎ এসি যথাযথভাবে কাজ করে না। সিটগুলো আরামদায়ক নয়। সামনের সিটে হাঁটু লাগে, বাঁকা হয়ে বসতে হয়। অনেক বাসে সিটের উপরে কিছু রাখা যায় না। বৃষ্টি পড়লে বাসের ভেতর পানি পড়ে। ৮/১০ ঘণ্টার যাত্রায় হাজীগণের জন্য এসব বাস খুবই যন্ত্রণাদায়ক।
(৫) হজযাত্রীকে আবদুল্লাহ হেরেমে যেতে বাধ্য করা : মিসফলায় বাংলাদেশী হাজীসহ প্রায় লক্ষাধিক হাজী থাকেন। তার ওপর কুদাই, কাকিয়া, নাক্কাসা, রুসাইফা ইত্যাদি এলাকাতে অবস্থান করা লক্ষ লক্ষ হাজী মিসফলা হয়ে কাবা শরীফের দিকে আসেন নামাজ পড়তে, তাওয়াফ করতে। কিন্তু পুলিশ এ দিকে কড়া ব্যারিকেড দিয়ে প্রায় এক কিলোমিটারের কাছাকাছি দূরত্বে ওয়াক্তে ওয়াক্তে নামাজ পড়তে আবদুল্লাহ হেরেমে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। এটা অমানবিক। আল্লাহপাকের মেহমানগণের প্রতি অবিচার। আপনার মহান ভ্রাতা বাদশা ফাহাদ কর্তৃক সম্প্রসারিত হেরেম পরিকল্পিতও যথাযথ। সেই মতে আপনি দক্ষিণ দিকে তথা মিসফলার দিকে মসজিদুল হারাম সম্প্রসারিত করুন। সাতটি টাওয়ারের সমন্বয়ে ক্লক টাওয়ার এবং জবলে আবু কুরাইশে নির্মিত প্রাসাদগুলো জরুরি ভিত্তিতে ভেঙ্গে ফেলে পবিত্র কাবার দক্ষিণ পশ্চিম, দক্ষিণ এবং দক্ষিণ পূর্ব তথা ফাহাদ হেরেম থেকে সা’ফা পর্যন্ত মসজিদুল হারাম সম্প্রসারণ করুন। এতে আরও কয়েক লক্ষ লোক একসাথে নামাজ পড়তে পারবে। পবিত্র কাবার চতুর্পার্শ্বে একই সমান্তরালে মসজিদুল হারাম সম্প্রসারণ হওয়া প্রয়োজন। এখানে রাজ প্রাসাদ এবং তারকামানের হোটেলের গুরুত্ব না হওয়া চাই। মসজিদুল হারামের চতুর্পার্শ্বে পবিত্র মসজিদে নববীর মত থাকতে হবে বিশাল আকারের চত্বর। এরপর হবে হোটেলাদি রাজ প্রাসাদ ইত্যাদি। জবলে আবু কুরাইশের ওপর নির্মিত ৫/৭টি রাজপ্রাসাদ আরও উত্তরে পাহাড়ের ওপর নিয়ে যাওয়াই সঙ্গত। (৬) দুই হারামের জন্য সেবকবাহনী গঠন করা : পবিত্র দুই হারামের হজ ওমরাকারী ও যেয়ারতকারীগণকে শৃঙ্খলায় রাখার জন্য এটি সেবক তথা খাদেম বাহিনী গঠন করা প্রয়োজন। এসব খাদেমগণের থাকবে বিশেষ পোশাকও প্রশিক্ষণ। এরাই উভয় হেরেমসহ মিনা, আরাফাহ, মুজদালেফায় হজকে নিয়ন্ত্রণ করবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাজীরা অবুঝ। এবাদতের উদ্দেশ্যে যেখানে সেখানে বসে যায়। হজ ওমরাকারীর ওপর শক্তি প্রয়োগের কোন প্রয়োজন নেই। পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী এনে নিয়ন্ত্রণ করা মানায় না। অতএব এখানে নিরাপত্তা বাহিনীর কোন প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন খাদেম বাহিনীর। (৭) মোয়াল্লেম নিয়ন্ত্রণ করা : ৯ যিলহজ আরাফাতে শুধুমাত্র একটা দিন অবস্থান করতে হয় বিধায় আপনার নিয়োগপ্রাপ্ত সৌদি মোয়াল্লেম গণের মধ্যে অনেকেই এসি, ফ্যান কোন কিছুর ব্যবস্থা করে না। এতে হাজীরা প্রচ- গরমে দগ্ধ হতে থাকে। যেখানে কম করে হলেও ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকে, সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাজীরা এসি, ফ্যানবিহীন ৮/১০ ঘণ্টা গরমে দগ্ধ হতে থাকে যা অমানবিক। আপনার হজ মন্ত্রণালয় (ওজারাতুল হজ) আপনার নিয়োগপ্রাপ্তগণ যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে কি না এ নিয়ে আপনার পক্ষ থেকে বিশেষ গোয়েন্দা বাহিনীর নিয়োজিত থাকা চাই, যাতে যাবতীয় অনিয়মও আপনার নজরে আসে। আপনার হজ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন দেশের হজ এজেন্সিগুলোর সাথে যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা তথা ঘর ঠিক করা মোয়াল্লেম এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়া সব কিছু রমজানের আগেই সম্পন্ন হওয়া দরকার। এদিকে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হতে যাচ্ছে কিন্তু এ দেশের শত শত এজেন্সি রমজানের পরে ঈদেও পবিত্র মক্কায় থেকে যেতে হচ্ছে যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ না হওয়ায়। এতেও আপনি মহামান্য বাদশার হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। আপনার মহান পিতার আমল থেকে আপনারা পবিত্র দুই হারামের মেহমানগণকে সেবা দিয়ে আসছেন। বিশ্বের অনেক দেশে অশান্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। আমরা মনেপ্রাণে কামনা করি আল্লাহপাক যাতে এ পবিত্র অঞ্চলে সুন্দর পরিবেশ বিরাজমান রাখে। আপনি এবং আপনার অবর্তমানে আপনার সন্তানেরা সুন্দর, শান্ত পরিবেশে আল্লাহর মেহমানগণের খেদমতে নিয়োজিত থাকুন এ কামনাই করছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন