২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছে উল্লেখ করে একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক প্রফেসর ড. মইনুল ইসলাম বলেছেন, এর কোন প্রয়োজন ছিল না। এমনিতেই আওয়ামী লীগ বিজয়ী হত। এর ফলে গণতন্ত্র লাইনচ্যুত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের মীর্জা আহম্মেদ ইস্পাহানি লাইব্রেরিতে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ উদ্বোধন এবং কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ১৯৮১ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডক্টরেট করে দেশে ফেরার পর থেকেই পত্র পত্রিকায় নিয়মিত লিখছি। এখন পর্যন্ত তার ১৭টি বই ও গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। যা সত্য তা বলার চেষ্টা করি। এ সত্য কাউকে খুশি করার জন্য নয়, কারো বিরুদ্ধেও নয়। এজন্য সাহস ও সততা লাগে। এর জন্য অনেক মানুষ আমাকে পছন্দ করেন, সেটা জানি। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী আমাকে পদক দিয়ে সম্মানিত করেছেন।
কিন্তু যখন ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের শেষে নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছে বলে আমি খবর পেয়েছি, আমিই প্রথম প্রতিবাদ করি দৈনিক আজাদী ও দৈনিক সমকালে লিখে। তখন আমি নিজেও নৌকায় আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছি। এর কোন প্রয়োজন ছিল না। এমনিতেই আওয়ামী লীগ ভোটে বিজয়ের পথে ছিল। কিন্তু এর পরে বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন লাইনচ্যুত হয়ে গেছে। গণতন্ত্রের বড় ধরনের সঙ্কট উপস্থিত হয়েছে। আমার কলামগুলোতে এসব কথাগুলো আমি বলেছি। আমার লেখায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক বাস্তবতা আমি খোলামেলা আলোচনা করি।
প্রফেসর মইনুল ইসলাম বলেন, অনেক সময় প্রধানমন্ত্রী নিজেও এগুলো পছন্দ করেন না। যেমন ২০২২ সালের শুরুতে যখন পত্রিকায় লিখে বললাম যে, বাংলাদেশ একটা বড় ধরনের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কটের দিকে এগিয়ে চলেছে। এটা বাংলাদেশে প্রথম আমি বলেছি। তিনি আমাকে ‘অর্বাচীন’ বলে গালমন্দ করলেন। পরে ডয়েচ ভেলের একটা টক শোতে আমি বললাম, তিনি আমাকে বলতে পারেন। তার হাত থেকে আমি একুশে পদক নিয়েছি। আমি জানি, তিনি আমার লেখার একজন নিয়মিত পাঠক।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু থেকে যখন বিশ্ব ব্যাংক সরে গেল, তখন বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদদের মধ্যে আমি প্রথম বলেছিলাম নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করতে। এটা একটা বিরাট পরিবর্তন এনেছে আমাদের। চট্টগ্রাম অঞ্চলের কর্ণফুলী টানেল কিছুদিনের মধ্যে খুলে দেওয়া হবে। এটা এ অঞ্চলের অর্থনীতির যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি মইনুল ইসলাম বলেন, কিছু পাবার আশায় আমি লিখি না। আমি তদবিরও করি না। কখনো কোনো কিছুর জন্য তদবির করিনি। আমি জানি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদের জন্য আমার নাম দু’বার গিয়েছিল। ২০০৯ ও ২০১১ সালে দুবার ভিসি পদে আমার নাম প্রস্তাব করেন মরহুম এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। কিন্তু যারা তদবির করেন, তারা আমরা নাম কেটে দিয়ে নিজেদের নাম বসিয়েছে। এতে আমার কোনো দুঃখ নেই। বাকি জীবন এভাবেই লিখে যেতে চান বলে জানান অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি তপন চক্রবর্তী ও সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম, বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উল আলম, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক নজরুল ইসলাম ও গ্রন্থাগার সম্পাদক মিন্টু চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।
আলোচনা পর্ব শেষে প্রেস ক্লাবের মীর্জা আহম্মেদ ইস্পাহানি লাইব্রেরিতে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ উদ্বোধন করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে রচিত ২৫০ বই নিয়ে সাজানো হয়েছে কর্নারটি।
গত ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত গুণীজন, কৃতী সাংবাদিক এবং মেধাবী শিক্ষার্থী সম্মাননা অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকার কারণে অনুষ্ঠানে খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলামের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেস ক্লাবের সম্মাননা স্মারক এবং পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। একই সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ে ২৬ জনসহ ৬৫ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন