প্রসঙ্গ/টার্গেট পয়েন্ট/ভূমিকা : গভীর মনোযোগের সঙ্গে একটা নির্মম বাস্তবতা পরিলক্ষিত হচ্ছে, ইসলামী স্কলার নামে আমরা যারা মুফতী/মুহাদ্দিস/মুফাস্সির বা ইমাম, খতীব ও বিভিন্ন গণ-মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের বিধি-বিধান ও করণীয়-বর্জনীয় বিষয়াদি উপস্থাপন করছি; তাতে আমরা অনেকেই সংশ্লিষ্ট নিয়ম-নীতি, শরীয়তের বহুমুখী বিবেচনাবোধকে উপেক্ষা করে এবং শরীয়া আইন ও আইন গবেষণা’র ‘উসূল’ (নীতিমালা) এর প্রতি লক্ষ না করে বা না জেনে একমুখী বক্তব্য পেশ করে যাচ্ছি। যার ফলে সমাজে ও ধর্মপ্রিয় জনগণের মাঝে বিভিন্ন বিভ্রান্তি যেমন ছড়াচ্ছে, একই সঙ্গে তাঁরা শরীয়তের বিধি-বিধান সম্পর্কে সংশয়ে নিমজ্জিত হচ্ছেন। সে-কারণে উদাহরণত, কেবল সম্পত্তি বন্টনের একটি বিষয় সামনে রেখে আমাদের সকলের বিভ্রান্তি নিরসনে নতুন গবেষণা’র এ প্রয়াস।
Context/Target Point/Introduction: A brutal reality is being observed with keen attention, In the name of Islamic scholars, we who are muftis/muhaddis/mufassir or imams, khatibs and various mass media are presenting the rules and dos and don’ts of Islam; In that, many of us have been presenting one-sided statements without paying attention to or knowing the ‘usul’ (principles) of Sharia law and law research, ignoring the multi-faceted consideration of Sharia law. As a result, various confusions are spreading in the society and among the religious people, at the same time; they are immersed in doubts about the rules of Shariat. For example, this new research is an attempt to solve the confusion of all of us by keeping only one issue of property distribution in front.
মূল শব্দ : সম্পত্তি, বন্টন,ফারাইয, ওসিয়ত, হেবা, মুফতী, আইন।
গবেষণা পদ্ধতি : বিশ্লেষণমূলক, বাস্তব অনুসন্ধান ও গবেষণামূলক।
বিধান উপস্থাপনে পার্থক্য: ১. সেকাল ও এ কালের দীনী মূল্যবোধ ও তাকওয়া-বিধানের পার্থক্যের দরুন বিধান উপস্থাপনেও পার্থক্য করা চাই। (কাওয়াইদুল ফিকহি : মুফতী আমীমুল ইহসান র.,পৃ. ১১৩, আশরাফী বুক ডিপো, ইউ. পি ভারত)। সাহাবাকিরাম এর দীন ও তাকওয়া এবং রক্ত-সম্পর্ক বা বংশ-সম্পর্ক তথা ভাতৃত্ববোধ বলি বা স্বজন-আপনজনদের হক আদায় যা-ই বলি, Ñএসব এত অধিক মাত্রায় বিদ্যমান ছিল যে, সাহাবাগণ একে-অন্যের জ্ঞাতি-গোষ্ঠির না হওয়া সত্তে¦ও, যার খাবারের ব্যবস্থা ছিল না সামর্থবানগণ তার বা তাদের খাবারের ব্যবস্থা করেছেন; যার থাকার মত বাসস্থান ছিল না, নিজের জমি বা বাড়ির অর্ধেক তেমন দীনী ভাইকে প্রদান করেছেন; যার স্ত্রী ছিল না, নিজের স্ত্রীদের একজনকে তালাক দিয়ে বিবাহের মাধ্যমে দীনী ভাইকে প্রদান করে তাঁর প্রয়োজন পূরণ করেছেন, ইত্যাদি। (আল-কুরআন, সূরা হাশর, আয়াত নং ৯ ও তার ব্যাখ্যা এবং অসংখ্য হাদীস ঘটনা, যা আলেমগণের জানা)। এসব মানবিকতা ও সহমর্মিতা কি এ যুগে আমাদের সমাজের মুসলমানদের মধ্যে আছে? সাধারণ মুসলমান বাদ দিলাম, ধর্মকর্ম পালন করেন এমন মুসলমানদের মধ্যে আছে? যারা আলেম-উলামা, পীর-বুযুর্গ, ইমাম-খতীব, দাঈ-ওয়ায়েযীন এর মধ্যে আছে? ভাইয়ে-ভাইয়ে, ভাইয়ে-বোনে, বা চাচা-ভাতিজা বা মামা-ভাগিনার মধ্যে আছে? ব্যতিক্রম বা হাজারে ২/১জন পাওয়া গেলেও, এমন ব্যতিক্রম দ্বারা তো সমাজ-সংসার চলে না, বৃহৎ জনগোষ্ঠির প্রয়োজনে ব্যতিক্রম কিছু দ্বারা আইনও প্রণয়ন করা চলে না। (‘ব্যতিক্রম’ ব্যতিক্রমই বটে’/ ‘ব্যতিক্রম’ গণনায় ধর্তব্য হয় না” অন্যভাবে বলা যায়, ‘ব্যাপক সমস্যায় ব্যতিক্রমী কিছু দ্বারা দলীল পেশ করা যায় না”, ইত্যাদিও আলেমগণের জানা)।
২. ন্যায়-অন্যায় বোধ এর পার্থক্য বিষয়টি তো প্রিয়নবী স. সে যুগের মানুষগুলোকে শিক্ষা দিয়েছেন, সেটি হল ভিন্ন কথা এবং পরের কথা। কিন্তু তাদের জাহেলিয়া যুগের বে-ঈমান ও দূরাচার লোকগুলোর মাঝে নিজ বংশের প্রতি, স্বজনদের প্রতি, জ্ঞাতি-গোষ্ঠির প্রতি যে টান বা একতা ছিল; যে কারণে নিজেদের ভাই-বেরাদর বা গোত্র-বংশের লোকজনের জন্য প্রাণ বিসর্জন দিতেও তারা পিছপা হত না এবং যুগ যুগ ধরে নিজের স্বজন বা লোকজনের পক্ষে যুদ্ধ পর্যন্ত চালিয়ে যেত। (বিষয়টি ‘ইসলামের ইতিহাস’ ও ‘আদি-অন্ত ইতিহাস’ এর সব গ্রন্থেই আলোচিত হয়েছে)। তা কি এ যুগের মুসলমনরা করে? অন্যের জন্য বা বংশের লোকজনের জন্য তো দূরের কথা খোদ আপন ভাই-বেরাদরের জন্য বা এদের কারো বিপদ-আপদে কি আমরা সেভাবে এগিয়ে যাই?
৩. আপন ভাই-বোন বা ভাতিজা-ভাতিজী বা বোন-ভগ্নিপতিদের হাজারো সংখ্যক বনী-আদম এমন পাবেন, যারা অনাহারে, অর্ধাহারে বা রুজী-রোজগারহীনভাবে কালাতিপাত করছে; আমরা কয়জন তাদের সাহায্যে এগিয়ে যাই? অথচ এদেরই কেউ জীবন-যুদ্ধে সীমাহীন চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে যখন এক সময় কিছুটা সহায়-সম্পদের মালিক হয়ে আকস্মিক বা স্বাভাবিকভাবেই মৃত্যুবরণ করে এবং একজন স্বামী সন্তানহীনভাবে কেবল তার স্ত্রীকে রেখে মারা যায়; অথবা একজন ভাই কেবল কন্যা সন্তান রেখে মারা যায়; কিংবা একজন বোন কেবল অসহায় স্বামী বা ২/১জন কন্যা সন্তান রেখে মারা যায়; তখন আমরা শরীয়তের তথা ধর্মের দোহাই দিয়ে, তাদের ত্যাজ্য সম্পদে ভাগ বসাতে যাই! কিন্তু এ কথা আদৌ ভাবি না যে, এই ভাই বা বোনটাই এবং সন্তানরা যখন অর্ধাহারে বা অনাহারে দিন কাটিয়ে ছিল; দু’মুঠো ভাতের আয়োজনে দ্বারে দ্বারে ঘুরেছিল, দু’একশত টাকা ঋণ-কর্জের জন্য একই ভাই-ভাতিজা বা চাচা-জেঠা-মামা ও মামাতো ভাইয়ের কাছে ধর্ণা দিয়েছিল, তখন তারা কেউ এর সাহায্যে এগিয়ে আসেনি বা আসছে না। এ যুগে এটাই বাস্তবতা, যা সকলের জানা।
৪. স্থান-কাল-পাত্রের বিবেচনায় পূর্বাপরের উক্তরূপ বাস্তবতা মহান আল্লাহ্ এবং তাঁরই নির্দেশনায় শরীয়ত প্রবর্তক মহানবী স. এর সামনেও, অবশ্যই ছিল বিধায় শরীয়া আইনের বহুবিধ ভারসাম্যপূর্ণ ব্যাখ্যায় তেমন সুযোগও রাখা হয়েছে। উদাহরণত, একজন দাদা বা নানা যখন দেখতে পেলেন যে, তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর এক ছেলে এতিম নাতি-নাতনী রেখে বা একজন নানার জীবদ্দশায় তাঁর মেয়ে অসহায় নাতি-নাতনী রেখে মারা গেছে; অথচ পবিত্র কুরআনের নির্দেশনা মোতাবেক এসব নাতি-নাতনী ভবিষ্যতে দাদা-নানা’র ত্যাজ্য সম্পদে ‘ফারাইয আইন’ মোতাবেক মালিক হবে না; (আল-কুরআন : সূরা নিসা : আয়াত নং ৭, ১১, ১২, ১৭৬ ইত্যাদি অনুসারে)। সেক্ষেত্রে একই কুরআনের নির্দেশনা মোতাবেক ‘ওসিয়ত আইন’ বা দান-হেবা আইন কাজে লাগিয়ে, সে মোতাবেক দাদা-নানাকে নিজ জীবদ্দশাতেই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে; (আল-কুরআন : সূরা নিসা : আয়াত নং ৮ ও সূরা বাকারা : আয়াত নং ১৮০ ইত্যাদি অনুসারে)। (চলবে)
মুফতী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বায়তুল মোকাররম, ঢাকা- ১০০০।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন