শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

প্রশ্ন: রবিউল আওয়ালের ফজিলত ও আমল কি?

| প্রকাশের সময় : ৫ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

উত্তর: “তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকাল দিবস কামনা করে, তাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের জীবনে রয়েছে উত্তম আদর্শ।” (সূরা আল-আহযাব: ২১)

রবিউল আউয়াল হলো ইসলামি বর্ষপঞ্জির তৃতীয় মাস। এটি অন্যান্য মাস থেকে বেশি গুরুত্ব বহন করে। কারণ ইসলামের নবি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই মাসে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং এই মাসেই তিনি ইন্তেকাল করেন।

এই জন্যে মুসলমানদের কাছে এই মাসের গুরুত্ব ও মহাত্ব বেশ। কেননা সকল ফজিলত, রহমত, দুনিয়া ও আখিরাতের বরকত এবং নবুয়াত, ইমামতি, কুরআন ও শরীয়ত নাজিল হয়েছে হজরত মুহাম্মদ সা. -এর নূরানী অস্তিত্বের কারণে। নবীজি জন্মগ্রহণের দরূণ যেমন এই মাসের ফজিলত বেড়েছে অনুরূপ ফজিলত বেড়েছে সোমবার দিনেরও। হাদিস শরীফে এসেছেÑ

আবূ কাতাদা আনসারি রাযি. থেকে বর্ণিত, ‘সোমবারের রোজা প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনÑ “এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি, আর এই দিনেই আমাকে রাসুল হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে (কিংবা তিনি বলেছেন) এই দিনেই আমার ওপর (প্রথম) ওহি নাজিল করা হয়েছে”।’ (মুসলিম: ১১৬২, আবু দাউদ: ২৪২৬)

এই মাসের আগমনে মুমিনদের অন্তরে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালোবাসা তাজা হয়। তাই রবিউল আওয়াল মাসকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে হরেক রকমের সভা-সমাবেশ। হ্যাঁ, আল্লাহর বড় ধরনের কোনো নেয়ামতের স্মরণে এমন আনন্দ-ফুর্তি কোনো খারাপ জিনিস নয়। এমতাবস্থায় এগুলো যদি শরীয়তের গণ্ডির ভিতরে হয় তাহলে বরং আরও প্রশংসনীয়। হ্যাঁ, নবীজির সিরাত আলোচনা করা একটি বড় ইবাদত।

এমনকি এটি ঈমানের অংশও বটে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম, শৈশব, নবি হিসেবে প্রেরণ, দাওয়াত, জিহাদ, ইবাদত, আখলাক-চরিত্র, নীতি-নৈতিকতা, তাকওয়া-তহারত, দয়া-ভালোবাসা, রাগ-ক্রোধ, হাসি, উঠা-বসা, হাঁটা, ঘুম-জাগরণসহ যাবতীয় চালচলন ইত্যাদি মুসলিম উম্মাহর সমিপে পেশ করা।

এগুলো সামনে রেখে আলোচনা সভার অয়োজন করা অবশ্যই ভালো এবং প্রশংসনীয় কাজ। রবিউল আওয়াল মাসে ইসলাম বিরোধী সভায় মেতে না ওঠে এগুলো করা যেতে পারে। উপরোল্লিখিত মুসলিম শরিফে বর্ণিত বিশুদ্ধ এই হাদিসের আলোকে জানা যায়, প্রিয় নবির জন্মদিনে উম্মতের করণীয় কী? এই দিনে উম্মতের করণীয় হলো, রোজা রাখা। তাঁর প্রতি অধিক পরিমাণে দরূদ ও সালাম প্রেরণ করা।

অন্য হাদিসে নবীজি বলেন, ‘সোমবার ও বৃহস্পতিবার বান্দার আমলনামা আল্লাহর দরবারে উপস্থাপন করা হয়। সুতরাং রোজা অবস্থায় আমার আমলনামা উপস্থাপন করা হোক, এটা আমি পছন্দ করি।’ (তিরমিজী: ৭৪৭)

তাই নবীজি সা. -এর জন্মের দিনে নফল রোজা রাখা প্রকৃত নবিপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ। গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, নবীজির জন্মের ঘটনার চেয়েও তাঁর সর্বব্যাপ্ত জীবনাদর্শ আমাদের জন্য বেশি প্রয়োজন। জন্মের বিষয়টি একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত। কিন্তু তাঁর সিরাত বা জীবনাদর্শ সব যুগের, সব মানুষের জন্য। বিশ^মানবতার মুক্তির জন্য।


আর নবিপ্রেমের প্রথম শর্ত হলো নবির আনুগত্যতা। বাস্তব জীবনে এর প্রতিফলন না ঘটলে নবিপ্রেমের দাবি অর্থহীন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছেÑ “তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকাল দিবস কামনা করে, তাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের জীবনে রয়েছে উত্তম আদর্শ।” (সূরা আল-আহযাব: ২১)

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলের জীবনে নবি কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ ও শিক্ষাগুলো প্রয়োগ করার তাওফিক দান করুন এবং এর দ্বারা প্রকৃত প্রেমিক হিসেবে গড়ে তুলুন। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

উত্তর দিচ্ছেন: নাজমুল হাসান সাকিব, ইসলামি আইন গবেষণা বিভাগ, আল মারকাজুল ইসলামী (অগও) বাংলাদেশ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন