সেক্ষেত্রে একই কুরআনের নির্দেশনা মোতাবেক ‘ওসিয়ত আইন’ বা দান-হেবা আইন কাজে লাগিয়ে, সে মোতাবেক দাদা-নানাকে নিজ জীবদ্দশাতেই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে; (আল-কুরআন : সূরা নিসা : আয়াত নং ৮ ও সূরা বাকারা : আয়াত নং ১৮০ ইত্যাদি অনুসারে)। নতুবা এ যুগের স্বার্থপর মুসলমানরা সংশ্লিষ্ট এতিম-অসহায় ভাতিজা-ভাতিজী ও ভাগিনা-ভাগিনীদের একদিকে বঞ্চিতই রাখবে, অপরদিকে শরীয়া আইনের তথা ধর্মের দোহাই দিয়ে সবটুকু ত্যাজ্য সম্পদ নিজেরাই কুক্ষিগত করবে; যা বর্তমানে অহরহ হচ্ছে। এমনকি শরীয়া আইন মোতাবেক প্রাপ্য জীবিত বোন-ভাগিনাদের ন্যায্য অংশও প্রদান করছে না বা যথাযথ ন্যায্য-অংশ বুঝিয়ে দিচ্ছে না! এটি বাস্তবতা নয় কি?
৫. ইসলামী শরীয়তেরই ‘দান-হেবা আইনে’ একজন সম্পদের মালিকের বেলায় বলা হয়েছে, তিনি জীবদ্দশায় তাঁর সম্পদের নিরঙ্কুশ মালিক বিধায় তিনি নিজ বিবেচনা মোতাবেক তা যেখানে ইচ্ছা, যাকে ইচ্ছা, যতটুকু ইচ্ছা আপন-পর বা কল্যাণকাজ মসজিদ-মাদরাসা বা সমাজ সেবার প্রয়োজনে দিতে পারেন। (সহজ সম্পত্তি বন্টন বিদ্যা : মুফতী মোঃ আব্দুল্লাহ্, পৃ. ১১৮-১১৯, ব. হা. ফাতাওয়া আলমগীরী ও খোলাসাতুল ফাতাওয়া ইত্যাদি; বাতিল প্রতিরোধ লাইব্রেরী, সং: ডিসেম্বর-১৯৯৯খ্রি)। অবশ্য এক্ষেত্রে একটি ‘মুস্তাহাব’ স্তরের (নৈতিকতা পর্যায়ের) (ফাতাওয়া ও গবেষণা সমগ্র-২ : মুফতী মোঃ আব্দুল্লাহ্, ভূমিকা অংশ- ৩৬-৩৭ পৃ., সং : সেপ্টেম্বর-২০২১খ্রি)। আইন হল, সন্তানদের দান-হেবার ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়েকে সমান হারে প্রদান করা চাই; ‘ফারাইয আইন’ মোতাবেক ছেলেকে মেয়ের ডাবল বা দ্বিগুণ হারে নয়।(১.সহজ সম্পত্তি বন্টন বিদ্যা : মুফতী মোঃ আব্দুল্লাহ্, পৃ. ১২০-১২১, ব. হা. ফাতাওয়া আলমগীরী ও খোলাসাতুল ফাতাওয়া ইত্যাদি; বাতিল প্রতিরোধ লাইব্রেরী, সং: ডিসেম্বর-১৯৯৯খ্রি.। ২. রাদ্দুল মুহতার ও দুররুল মুখতার, অধ্যায় : হেবা, পৃ. ৭০৭, খ. ৪, এইচ. এম. সাঈদ এডুকেশনাল প্রেস, করাচী, তা. বি.)।
সুতরাং যারা সমান অংশের দাবী করেন বা ন্যায্যতার যুক্তি পেশ করেন, তাঁরা ‘ফারাইয আইন’ ও মৃত্যুর অপেক্ষা না করে জীবদ্দশায় দান-হেবার আইন অনুযায়ী আমল করতে পারেন; ‘ফারাইয আইন’ এর সমালোচনা করতে যাবেন কেন? কেননা ‘ফারাইয আইন’তো মৃত্যুর পরের বিষয় এবং দান-হেবা’র আইন নিজ জীবদ্দশার সঙ্গে সম্পৃক্ত।
৬. উক্ত দান-হেবা বা ‘ফারাইয’ অধ্যায়ে আরো আলেচিত হয়েছে যে, কোন সন্তান সম্পদের মালিককে তথা পিতা-মাতাকে অসহনীয় কষ্ট বা নির্যাতন করেছে; অথবা একটি সন্তান ছেলে হোক বা মেয়ে অসহায়, শিক্ষা-দীক্ষা বঞ্চিত বা বিকলাঙ্গ ও প্রতিবন্ধী; কিংবা একটি সন্তান মারাত্মক সন্ত্রাসী ও মদ-জুয়ায় আসক্ত বিধায় বাবা-মা প্রবলভাবে মনে মনে শঙ্কিত যে, সে তাঁদের কষ্টার্জিত ও রেখে যাওয়া ত্যাজ্য সম্পদ হারামকাজে ব্যবহার করবে; যার পাপের ভাগ তাঁদেরকেও বহন করতে হবে। এসব ক্ষেত্রে তাঁরা জীবদ্দশায় কাউকে কমবেশি যেমন দান-হেবা করে যেতে পারেন; একইভাবে কাউকে একেবারে বঞ্চিতও করতে পারেন। (‘নৈতিকতাকেন্দ্রিক’ বিবেচনা ও ‘আইনগত’ বিবেচনার পার্থক্য এবং গবেষণা ও বিধান উপস্থাপনে এতদুভয়ের পার্থক্য-জ্ঞান সামনে থাকা কত বেশি জরুরী ও গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝার জন্য ‘ফাতওয়া ও গবেষণা সমগ্র-১ ও ২, গ্রন্থ দু’টির ভূমিকাংশ দেখা যেতে পারে)।
৭. আমি যদি একজন মুফতী হই বা শরীয়া আইনবিশেষজ্ঞ হই, একজন ইসলামী স্কলার বা বক্তা বা ইমাম-খতীব হই এবং ওয়ায-খোৎবা বা গণমাধ্যমের উপস্থাপক হই; সেক্ষেত্রে আমাকে তো উক্ত সব রকমের আইন ও ব্যাখ্যা বিষয়ে বিজ্ঞ ও ওয়াকিফহাল হওয়া আবশ্যক। অন্যথায় এক-তরফা বা একমুখী বক্তব্য ও একমুখী আইনবিধান উপস্থাপন করে, আমি জনগণ ও মুসলিম সমাজকে বিভ্রান্তির দিকে ঠেলে দেব! যা ইদানিং অহরহ ঘটছে। বিষয়টির অনুসন্ধানে অধম এমন অসংখ্য বিভ্রান্তিকর ওয়ায, বক্তব্য, ফাতওয়া এবং ইমাম-খতীব, আলেম, মুফতির মুখোমুখী হয়েছি এবং তাঁদের বক্তব্য শোনার দূর্ভাগ্য আমার হয়েছে। কারো নাম বা তালিকা পেশ করে, এ গবেষণাকে বিতর্কের মুখোমুখি করা সমীচীন হবে না। তা ছাড়া, আলোচ্য অনুসন্ধানের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়গুলো যেহেতু হর-হামেশা আমাদের সকলেরই সামনে সংঘটিত হচ্ছে, সে কারণে তার বাস্তব পরিসংখ্যান উল্লেখেরও প্রয়োজন পড়ে না।
তা হলে কী করণীয়?
৮. উক্তরূপ এমন সঙ্গত প্রশ্নের জবাব হচ্ছে, উপরে আলোচিত কোন দাদা-নানা আপনার কাছে এলে বা স্মরণাপন্ন হলে, আপনি তাঁকে বলে দিন :
এতিম-অসহায়দের ক্ষেত্রে : (ক). মৃত্যু পর্যন্ত অপেক্ষা করতে যাবেন না এবং এ যুগে ছেলে-মেয়েদের সততা-ন্যায়-নিষ্ঠতার উপর ভরসা না করে বরং নিজেই এতিম-অসহায়দের এবং যারা মৃত্যুর পরে ওয়ারিস হবে না; তাদের জন্য যতটুকু যা সম্ভব দান-হেবা করে দিয়ে যান; কেবল মৌখিকভাবে নয় বরং দলীলপত্র ও রেজিস্ট্রি করে দিয়ে যান; এবং এখানেই ক্ষ্যান্ত হবেন না বরং তারা যেন আপনার মৃত্যুর পরে তা বুঝে পেতে পারে, দখলে যেতে পারে; তারও নিশ্চয়তা বিধান করে যান।
বিধবা স্ত্রী ও কন্যা সন্তানদের ক্ষেত্রে : (খ). কারো পুত্র সন্তান নেই, সম্ভাব্য বিধবা স্ত্রী ও এক বা একাধিক কন্যা সন্তান রয়েছে এবং তাঁর অঢেল সম্পদ না হয়ে বরং সীমীত ও চলনসই কিছু সম্পদ রয়েছে, উদাহরণত একটি মাত্র বসবাসের ফ্লাটের মালিক এবং অপর এমন কিছু সম্পদ রয়েছে, যা দ্বারা তাঁর স্ত্রী ও কন্যারা তাঁর মৃত্যুর পর অন্যের কাছে হাত না পেতে কোন মতে মান-সম্ভ্রম নিয়ে বেঁচে থেকে কালাতিপাত করতে পারবে। এমন কেউ আপনার স্মরণাপন্ন হলে, আপনি তাঁকে এমন নির্দেশনা দিতে পারেন না যে, “না, অন্যদের বঞ্চিত করে স্ত্রী-কন্যাদের নামে লিখে দিতে যাবেন না”। কেননা আপনার এমন নির্দেশনাদান মানেই সার্বিক বিবেচনা না করে, শরীয়া আইনের বিধি মোতাবেক একটা সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আপনি ওই লোকটিকে এবং তাঁর ভবিষ্য বিধবা স্ত্রী-কন্যাদের বিপদের মুখে ঠেলে দিলেন! তার কারণ, কয়দিন পর যখন লোকটি মারা যাবে, তাঁর ভাই-ভাতিজারা সেই একটি মাত্র ফ্লাট বা সীমীত জীবনোপকরণ বা প্লটের বা সামান্য জমির ভাগ দাবী করবে এবং এদেরকে বিপদের মুখে ঠেলে দিতে সামান্যতমও কুণ্ঠা বোধ করবে না। কেননা এমনটাই বাস্তবতা। অবশ্য কারো যদি অঢেল ও বিভিন্ন প্রকার সম্পদ থাকে, তা হলে সেটি হল ভিন্ন কথা।
একাধিক স্ত্রী-সন্তানদের ক্ষেত্রে : (গ). কারো যদি একাধিক স্ত্রী থাকে এবং দু’পক্ষেরই কমবেশী ছেলে-মেয়ে থাকে এবং তিনি প্রবল বা কমবেশী আশঙ্কাজনক অবস্থায় আপনার স্মরণাপন্ন হয়ে মাসআলা-বিধান জানতে চান, আপনি তাঁকে ‘ফারাইয আইন’ এর প্রসঙ্গ টেনে এমন পরামর্শ বা নির্দেশনা দিতে যাবেন না যে, “না, আগে থেকে ভাগ-বন্টনের প্রয়োজন নেই; আপনি মারা গেলে তারা তো এমনিতেই কুরআনের বন্টন মতে অংশ পেয়ে যাবে”। কেননা আপনার এমন নির্দেশনাদান মানেই দুই সতিন ও তাদের সন্তানদের ভবিষ্যতে ঝগড়া-বিবাদ ও মারামারি, হানাহানির দিকে ঠেলে দেওয়ার নামান্তর।
তার কারণ, এ যুগের বাস্তবতা ও পরিবর্তিত পরিস্থিতি হচ্ছে, লোকটির মৃত্যুর পর তারা অবশ্যই কোন না কোন ক্ষেত্রে যেমন বাড়ী বন্টন বা দোকান বন্টন বা পেনশন বন্টন বা পুকুর বন্টন বা গাছ-বৃক্ষ ও অস্থাবর সম্পদ বন্টনে কমবেশী বিবাদ-বিতর্কে জড়াবেই; যার কারণ হবে আপনার অদূরর্শী ফাতওয়া বা একমুখী মাসআলা; (দিয়ানত) এবং ‘নৈতিকতা’ পর্যায়ের কোন নফল-মুস্তাহাব রক্ষার্থে অর্থাৎ আপনি অধিক সওয়াবের পথ দেখাতে গিয়ে, উত্তম ও অধিক উত্তম বোঝাতে গিয়ে তাদেরকে ভবিষ্যত ঝগড়া-বিবাদ, হানাহানি তথা হারাম কাজের দিকে ঠেলে দিলেন।
সুতরাং নিরেট ইবাদত প্রকৃতির বিষয়াদিতে জনগণকে অধিক তাকওয়া, অধিক উত্তম বা নফল-মুস্তাহাব-সুন্নাত উপস্থাপনে যেভাবে ওয়ায পেশ করা হয়, সেভাবে (মোয়ামালাহ) লেনদেন বা জাগতিক ব্যবসায়-বাণিজ্য ও স্বার্থ-সম্পদের বেলায় জনগণকে এমন ওয়ায পেশ করা যাবে না, যাতে তারা নফল-মুস্তাহাব পালন করতে গিয়ে হারাম ঝগড়া-বিবাদে বা মারামারি-হানাহানিতে জড়িয়ে পড়তে পারে।
সেক্ষেত্রেও অবস্থা যদি এমন হয় যে, ‘ফারাইয’ তথা মৃত্যুর পরের শরীয়া মোতাবেক সাধারণ বন্টন পর্যন্ত বিষয়টিকে দীর্ঘায়িত করা হলে এবং তাদের ভবিষ্যত সময়কাল পর্যন্ত তা ছেড়ে যাওয়া হলে, তারা নিজেরা বিবাদে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে; কিংবা তারা বিবাদে লিপ্ত না হলেও, মেয়েদের তথা নিজ বোনদের ন্যায্য প্রাপ্য অংশ যথাযথভাবে দেবে না। তা হলে এমতাবস্থায়ও একজন পিতা বা একজন মাতা হিসাবে আপনার নৈতিক দায়িত্ব বর্তাবে, আপনি জীবদ্দশায়ই শান্তি-শৃঙ্খলার স্বার্থে, নিজ সন্তানদেরকে সম্ভাব্য পারস্পারিক বিবাদ থেকে বাঁচাতে এবং মেয়েদের পাওনা’র নিশ্চয়তা বিধানকল্পে, কে কতটুকু ও কোন্ অংশ পাবে? বাসা-বাড়ি-দোকানপাট, পুকুর ও নাল জমি বা কৃষি জমির কে কোন্ অংশ পাবে? যারা শহরের প্লট-ফ্লাটের অংশ নেবে বা পাবে তাদেরকে মূল্যমান বিবেচনায় আনুপাতিক হারে অপরদিকে কম দেয়া হবে Ñএমন একটা ন্যায্য বিবেচনাবোধ সামনে রেখে, ওসিয়ত আইন বা হেবা আইন মোতাবেকÑ বিষয়টিকে ঝামেলামুক্ত ও নিষ্কণ্টক করে রেখে যেতে হবে। আর এটাই হবে, এ যুগের পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঠিক ফাতওয়া বা শরীয়তসম্মত সহীহ নির্দেশনা।
পুণ্যের অবয়বে পাপের বিস্তৃতি:এখানে একটি প্রশ্ন জাগে যে, ইসলাম ধর্মেরই তো নির্দেশনা হচ্ছে যৌথ পরিবার তথা বাবা-মা, ভাই-বোন সবাই মিলেমিশে একসঙ্গে থাকা বা বসবাস করা ভালো বা কাম্য? তার জবাব হচ্ছে, বিষয়টি সত্য ও সঠিক। যথাসাধ্য পরিবারের সকলে মিলেমিশে অবস্থান করা, একে-অন্যের সাহায্য-সহযোগিতা করা এবং একে-অন্যের বিপদে এগিয়ে আসা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়গুলোও বিবেচনায় রাখতে হবে যে :
১. এমন মিলেমিশে থাকা বা সহাবস্থান কি ফরয-ওয়াজিব পর্যায়ের নির্দেশ? নাকি একান্তই ‘নৈতিকতা’ পর্যায়ের ‘উত্তম’ ও ‘অনুত্তম’ স্তরের নির্দেশনা? তার জবাব হচ্ছে, তা একান্তই উত্তম-অনুত্তম পর্যায়ের একটি বিধান; ফরয-ওয়াজিব নয়।
২. শরীয়তের নির্দেশনা মোতাবেক একে-অন্যের প্রাপ্য বা ন্যায্য হক বুঝিয়ে দেয়া বা প্রত্যার্পন করার বিষয়টি কি ‘নৈতিকতা’ পর্যায়ের ‘নফল’ বা ‘উত্তম-অনুত্তম’ স্তরের বিধান, নাকি ফরয বিধান? তার জবাব হচ্ছে, তা অবশ্যই ফরয স্তরের বিধান। তা হলে কি আপনি একটি নফলের উপর আমল করতে গিয়ে ফরয বিধানটি এড়িয়ে যাবেন? এবং ঐক্য-সংহতি বা মিলেমিশে থাকার কথা বলে, অন্যদের প্রাপ্য হক আটকে রাখবেন?
৩. মিলেমিশে থাকা বা যৌথ পরিবারে সকলের অবস্থান ভালো; কিন্তু সেটি তখন ভালো বলা যাবে যখন পরিবারের সব সদস্য একে-অন্যকে আপন ভেবে ভাই-বোন প্রমুখ সকলের সুখ-দুঃখ শেয়ার করবে, প্রয়োজনীয় ব্যয়ভার বহন করবে। বাস্তব অবস্থা যদি এমন হয় যে, বড় যারা আছেন বা উপার্জনক্ষম যারা আছেন, তাঁরা কেবল নিজ স্ত্রী-পুত্রের ব্যায়ভার বহন করছেন এবং নিজের চাকুরি বা আয়-উপার্জন দ্বারা নিজের নামে বা নিজের মত করে জাগা-জমি-সম্পদ করে নিচ্ছেন; কিন্তু যৌথ পরিবারের অপরাপর সদস্য ভাই-বোনের ব্যাপারে বিধি মোতাবেক অর্পিত কোন দায়িত্ব পালন করছেন না! তা হলে সেক্ষেত্রে এভাবে যৌথ থাকার বা রাখার স্বর্থকতা কোথায়? অথচ যৌথ সম্পদ বা জাগা-জমি ইত্যাদি বন্টন করে দিলে, তাতে ওই আয়-উপার্জনহীন বোনটি বাভাইটি কমবেশি ভাগে যা পায়, তা দিয়ে সচ্ছলভাবে চলার মত একটা উপায়-সম্বল খুঁজে বের করার, কিছু একটা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারতো!
৪. সবচেয়ে বড় কথা হল, শরীয়ত যে মিলেমিশে থাকার কথা বলেছে, তার অর্থ কি এমনটি যে, পিতা-মাতা সূত্রে বা দাদা সূত্রে বা নানা সূত্রে প্রাপ্য বা প্রাপ্ত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ভাগ করা যাবে না? সব কিছু যৌথ থাকতে হবে এবং যুগ যুগ ধরে এভাবে চলবে? না। যৌথভাবে থাকা বা মিলেমিশে থাকা বিষয়টি কি যার যার প্রাপ্য-হক বন্টন বা বুঝিয়ে দানের পরিপন্থী? মোটেও না। সুতরাং ‘মিলেমিশে থাকা’র দোহাই দিয়ে অন্য পাওনাদারদের হক আটকে রাখার কোন যুক্তি ও বৈধতা থাকতে পারে না। বরং ভাগ-বন্টন করে দিয়ে প্রত্যেকের ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে এবং সবাই অন্যের মনের দুঃখ-বেদনা ও অভিশাপ মুক্ত হয়ে, তারপর মিলেমিশে ও ঐক্য-একতা ধরে রেখে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে বসবাস করলে; সেটি হবে প্রকৃত নির্ভেজালঐক্য, ভালোবাসা ও পারিবারিক কাঙ্খিত ও সঠিক বন্ধন।
মোটকথা অপরিণামদর্শী সমাজ-সংসার ও ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ এর আড়ালে ‘নাফ্স’ ও শয়তান আমাদের মাঝে ‘পুণ্যের সাইনবোর্ডে পাপের বিস্তার’ ঘটিয়ে যাচ্ছে!
লেখক : মুফতী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বায়তুল মোকাররম, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন