তীব্র শীতের কারণে মানুষের পাশাপাশি বিপর্যয়ে পড়েছে ঢাকা চিড়িয়াখানার প্রাণিকুল। বনের পশুদের মতো দৌড়ঝাঁপ করে শীত তাড়ানোর উপায় নেই বলে শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছে খাঁচাবন্দি প্রাণীগুলো। এ অবস্থায় শীতের প্রকোপ থেকে পশুদের রক্ষা করতে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের খাঁচার ভেতরে দেওয়া চট (বস্তা) ও খড়ের ব্যবস্থায় কিছুটা রক্ষা পাচ্ছে পশুপাখি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানায় বন্যপ্রাণীগুলোর এ অবস্থা দেখা যায়।
আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, গতকাল ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার তা ছিল ১৪ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সরেজমিন চিড়িয়াখানায় দেখা যায়, প্রতিটি খাঁচার ভেতরে পশুপাখিগুলো জড়ো-সড়ো হয়ে বসে আছে। খাঁচায় শীতে কাতর হয়ে শুয়ে আছে বাঘ। বানরসহ অন্যান্য প্রাণী চুপিসারে বসে আছে। এরই মধ্যে দর্শনার্থীদের উত্ত্যক্তে বিরক্ত হচ্ছে প্রাণীগুলো।
চিড়িয়াখানার অধিকাংশ পাখিকে দেখা যায়, শরীরের লোম ফুলিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। তৃণভোজী প্রাণীগুলোর বেশিরভাগ ঠাণ্ডার কারণে ঠায় দাঁড়িয়ে কিংবা বসে রয়েছে। অন্য সময় চিড়িয়াখানায় সবসময় এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্তে দৌড়োদৌড়ি করা হরিণগুলোও শান্ত হয়ে আছে। তারা একে অপরের গায়ের সঙ্গে গা লাগিয়ে নিজেদের শরীর গরম রাখার চেষ্টা করছিল।
এমনকি শীতের কারণে জলে থাকা জলহস্তীকেও দেখা গেছে ডাঙ্গায় অলস সময় কাটাতে। মেজাজি সিংহ চুপচাপ খাঁচার ভেতর পাকা ঘরে বসে ছিল। পানির বদলে কুমিরগুলো ডাঙ্গায় শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে। সাপগুলো কুণ্ডলী পাকিয়ে একে অপরের শরীরের সঙ্গে লেপ্টে রয়েছে। প্রাণীদের খাদ্য সরবরাহ বিষয়ে কিউরেটর বলেন, প্রয়োজনমতো খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। সব প্রাণী সুস্থ আছে।
এদিকে শীতে প্রাণীগুলোর চাঞ্চল্যতা না থাকায় ঘুরতে আশা দর্শনার্থীরাও কিছুটা হতাশ। পরিবারের সদস্য নিয়ে চিড়িয়াখানা ঘুরতে আসা বশির আহমেদ বলেন, চিড়িয়াখানায় আর আগের নেই। অনেক আগে যখন একবার এসেছিলাম, তখন যে পশুপাখি ছিল তার কিছুই নেই, যা আছে তারও অবস্থা করুণ। এই প্রাণীরা যেন শীতে কষ্ট না পায়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। রাজধানীর শনিরআখড়া থেকে চিড়িয়াখানায় আসা এক দর্শনার্থী বলেন, শীতের তীব্রতায় বেশিরভাগ প্রাণী খাঁচার ভেতর শুয়ে আছে। আগের মতো মজা পাচ্ছি না।
শীতে চিড়িয়াখানার প্রাণীদের জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে চিড়িয়াখানার কিউরেটর মো. মজিবুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, শীতের কষ্ট লাঘবের জন্য তৃণভোজী প্রাণীর থাকার জায়গায় খড় বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। মাংসাশী প্রাণীদের মাংসের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি খাঁচায় চট দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে যেন বাতাস না ঢোকে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে প্রাণীগুলোকে সুরক্ষা দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
উল্লেখ্য, ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় এ প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে ১১ প্রজাতির ৩৫টি মাংসাশী প্রাণী, বৃহৎ প্রাণী (তৃণভোজ) ১৮ প্রজাতির ৩৩২টি, ক্ষুদ্র স্তন্যপায়ী ও সরীসৃপ ২৫ প্রজাতির ২৫৭টি, পাখি ৫৮ প্রজাতির ১ হাজার ২২৯টি এবং অ্যাকুরিয়াম ফিশ ২৬ প্রজাতির ৯৩৯টি রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন