চলচ্চিত্রের বিভিন্ন অঙ্গনে জাতীয় পুরস্কার নিয়ে অনেক শিল্পীর আক্ষেপ রয়ে গেছে। প্রতিবারই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদানের তালিকা প্রকাশ হলে দেখা দেয় নানা বির্তক। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সম্প্রতি জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের চূড়ান্ত তালিকা অনুমোদন দিয়েছে। ২০২১ সালের জন্য দেশীয় চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্তদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। চলচ্চিত্রের নানা শাখায় অবদান রাখার জন্য এ বছর ২৭ ক্যাটাগরিতে ৩৪টি পুরস্কার দেওয়া হবে। চলচ্চিত্রের বিভিন্ন শাখায় কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান করা হয়। এই পুরস্কারের জন্য শিল্পী ও কলাকুশলীদের ব্যাপক আগ্রহ থাকে। কোন সিনেমা, পরিচালক, নায়ক-নায়িকা, অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলী পুরস্কার পাচ্ছেন, এ নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন। এ বছর যৌথভাবে আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন অভিনেত্রী ডলি জহুর ও অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন। চিত্রনায়িকা অঞ্জনা ডলি জহুরের আজীবন সম্মাননা পাওয়া নিয়ে সমালোচনা করেছেন। তার ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, এবারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার- ২০২১ এর কয়েকটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কারের ধরন দেখে সত্যিকার অর্থে দুঃখ লেগেছে। ডলি জহুর আপাকে কেন আজীবন সম্মাননা দিতে হবে, এটা আমার বোধগম্য নয়। নিঃসন্দেহে তিনি (ডলি জহুর) ভালো অভিনেত্রী। কিন্তু তার চেয়েও স্বনামধন্য দাপুটে অভিনেত্রী-চিত্রনায়িকা শবনম আপা, চিত্রনায়ক উজ্জ্বল ভাই, নূতন, সুচরিতা, চিত্রনায়ক ও নৃত্য পরিচালক জাভেদ ভাই। যারা স্বাধীনতার আগে থেকে এখন পর্যন্ত চলচ্চিত্র শিল্পে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। তাদেরকে না দিয়ে কেন ডলি আপাকে দিলো, এটা আসলেই হাস্যকর। তিনি বলেন, ডলি আপা মূলত টেলিভিশন নাট্যশিল্পী। চলচ্চিত্রে তিনি এসেছেন ৮০ দশকের মাঝামাঝি সময়। কিন্তু এর অনেক আগেই শবনম আপা, উজ্বল ভাই, জাভেদ ভাই, সুচরিতা ও নূতন চলচ্চিত্র শিল্পে সুপ্রতিষ্ঠিত। জুরি বোর্ডে এবার যারা ছিলেন, তারা কি বাংলা চলচ্চিত্রের সঠিক ইতিহাস ভুলে গেছেন কিনা, আমি জানি না। ডলি জহুরের পুরস্কার নিয়ে প্রশ্ন তুললেও একই ক্যাটাগরিতে মনোনিত হওয়ায় ইলিয়াস কাঞ্চনকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অঞ্জনা। এদিকে, পুরস্কারপ্রাপ্ত সকল বন্ধু ও সহকর্মীদের অভিনন্দন জানিয়ে নাট্যাভিনেত্রী শাহনাজ খুশি তার ফেসবুকে লিখেছেন, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে বরাবরের মত এবারও আমাদের সহকর্মী-বন্ধু অভিনয় শিল্পীদের জয়জয়কার। শাহনাজ খুশির এমন মন্ত্যব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন চলচ্চিত্রাঙ্গনের অনেকেই। অনেকেই এটাকে শিল্পীদের বিভাজন বলে মনে করছেন। চলচ্চিত্র অভিনেত্রী বিপাশা কবির তার ভেরিফাইড ফেসবুকে মূলধারার চলচ্চিত্রের লোকজনের উদ্দেশ্যে লিখেছেন, আমি অযোগ্য, এমন কোন কাজ কখনো করিনি যে, পুরস্কার পাবো। কিন্তু আপনারা তো যোগ্য, আপনারা কেন চুপ থাকেন? দিন দিন সিনেমা অঙ্গণকে আপনারা কোথায় নিচ্ছেন? জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার নিয়ে কেন নাটকের মানুষরা স্ট্যাটাস দেয়, ‘এবারও নাটকের মানুষের জয়জয়কার’। কেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারকে আপনারা জাতীয় নাটক পুরস্কার বানাচ্ছেন? তিনি লিখেছেন, শুধু শিল্পী সমিতি, পরিচালক সমিতির ইলেকশন করলে হবে? নাকি ফিল্মের দিকেও তাকাবেন। এই অবস্থা চলতে থাকলে ফিল্ম আর ফিল্ম থাকবে না। অভিনয় শিল্পী সংঘের সাধারণ স¤পাদক ও অভিনেতা রওনক হাসান বলেন, জাতীয় চলচিত্র পুরস্কার এবং অনুদান বিতর্ক একটি ধ্রুপদী বিতর্ক ! আমি পেলে নির্বাচন যথাযথ হয়েছে, না পেলে স্বজনপ্রীতি হয়েছে! আমি কয়েকজনকে দেখেছি, প্রতি বছর সরকারি অনুদান বা পুরস্কার নিয়ে তীব্র ভাষায় জ্বালাময়ী লেখা লিখতে। কিন্তু নিজে যখন পায় তখন চুপ থাকে। তার মানে তারটা যথাযথ হয়েছে। নিজেকে আমরা সবসময়ই যোগ্য ভাবি। তার মানে কি, বাকিরা অযোগ্য হয়ে যান না! তিনি বলেন, পুরস্কার বা অনুদানের বিষয়ে শতভাগ স্বচ্ছতা থাকেনা কখনো। এটা সারা পৃথিবী জুড়েই হয়ে থাকে। কিছু কিছু বিষয়ে বিতর্ক থাকবেই এবং এনিয়ে আমরা আলোচনা সমালোচনা করবোই। কিন্তু আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন সমালোচনা, রাগ প্রকাশ করতে গিয়ে আমি যেন আমার সহকর্মীকে অসম্মান করে না বসি। পুরস্কার পেলে তা হাতে নিয়ে আমি যদি গর্বিত হই, তার মানে এই প্রক্রিয়াকে আমি মেনে নেই। তাই পুরস্কার না পেলে তা আমাদের মেনে নেয়া উচিত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন