এবারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ ও সমালোচনা করছেন। ইতোমধ্যে চিত্রনায়িকা অঞ্জনা এ নিয়ে সমালোচনা করেছেন। এবার তার সঙ্গে সমালোচনায় যুক্ত হলেন চিত্রনায়িকা নূতন। তার ফেসবুকে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাসের শুরুতেই কটাক্ষ করে লিখেন, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে টিকটক ক্যাটাগরি নাই? টিকটক আর ফেসবুক ফলোয়ার ক্যাটাগরি রাখার আবেদন করছি। পাশাপাশি ভাইরাল ক্যাটাগরি রাখলে মন্দ হয় না! জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার নিয়ে এমন লেখা লিখতে হবে তা স্বপ্নেও ভাবিনি। এ দেশে নায়িকা হওয়া এখন আমার জন্য পাপ মনে হয়। মাঝে মাঝে আমার বাবার প্রতি আমার খুব রাগ হয়। আমি সাউথের মেয়ে ছিলাম, বাবার জন্ম সেখানেই। ফুপু সাউথের নায়িকা ছিলেন, সেখানে থাকলে আমিও নায়িকা হতাম যদি ভাগ্যে থাকত। তাই ভালো ছিল। বড় তারকা না হলেও অসম্মানিত বা লজ্জিত তারকা হতাম না- এ ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত। চেহারা আর নাচ দিয়ে কিছু না কিছু করতে পারতামই। চলচ্চিত্র পুরস্কার নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করায় নায়িকা অঞ্জনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে নূতন বলেন, অঞ্জনাকে ধন্যবাদ। আজীবন সম্মাননা বলতে যে, এই দেশে কিছু আছে, তা ভুলেই গিয়েছিলাম। ‘ওরা ১১জন’ মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র। আমি সেই চলচ্চিত্রের ক্ষুদ্র একজন অভিনেত্রী হওয়া সত্ত্বেও যে আজীবন সম্মাননা পেতে অনেক কিছু করা লাগে তা আমার জানা নাই। আরো যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয় তাও আমার অজানা। তাই ৫০ বছরের চলচ্চিত্র জীবনে তা আর জানতে চাই না। যদিও আজীবন সম্মাননা আমার কাছে বিশাল কিছু না। এর চেয়ে বড় পুরস্কার আমি বহুবার পেয়েছি মানুষের কাছ থেকে এবং আমি বিশ্বাস করি, মৃত্যু পরবর্তী সময়েও আমি কিছু মানুষের কাছ থেকে আজীবন সম্মাননা পেয়ে যাব; সে কাজ আমি করেছি। নূতন লিখেন, আমি নিজেকে আজীবন সম্মাননার যোগ্য মনে করছি না। তবে অঞ্জনার সুরে উচ্চারণ করছি সুচরিতার নাম। সেও কি যোগ্য না? সুচরিতার যোগ্যতা মাপার মাপকাঠি নির্বাচকদের হয়নি, হবেও না। আমি না হয় অভিনেত্রী না। দয়া করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারকে তেল দিয়ে তৈলাক্ত করবেন না। তাহলে হাত পিছলে পড়ে যাবে; যা আর ঘর পর্যন্ত নেওয়া যাবে না। নূতন লিখেন, একসময় এই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার জন্য বছরের পর বছর কাজ করতাম। তারপর অনেক ত্যাগ, পরিশ্রম, ভালোবাসা, চেনা-জানা এবং দক্ষতা দিয়ে তা পেতে হতো। পাওয়ার পরে কত আলোচনা কত আয়োজন। আর এখন তা যাকে তাকে অন্য পুরস্কারের মতো পুরস্কর দেয়া হয়। নূতন লিখেন, একটা সিনেমা করেও যে কেউ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেতে পারেন; তা নিয়ে আমি দ্বিমত করছি না বা যারা পেয়েছেন তারা অবশ্যই যোগ্য। তবে যারা দিচ্ছেন তারা? এমন যেন না হয়, যাকে পুরস্কার দেয়া হচ্ছে, সেই লজ্জিত হচ্ছেনÑ এটা ভেবে, কেন এই পুরস্কার পেলাম? তাহলে দুঃজনক। এই দেশে সম্মাননাকেও সম্মানহানীর মুখোমুখি হতে হয়। নূতন লিখেন, আমাদের ৭০/৮০/৯০ দশকের চলচ্চিত্র অভিনেতা-অভিনেত্রীদের জন্য বাংলা চলচ্চিত্র এখন অনেকাংশে অভিশাপ। কাঞ্চন-ডলি জহুরসহ যারাই এবার পুরস্কৃত হচ্ছেন সবার জন্য শুভকামনা-ভালোবাসা। কাঞ্চন আর ডলি শতভাগ যোগ্য। আমি ভয়ে আছি অন্য কারণে যে, হুট করে আবার টিকটক বা ফেসবুকের নায়ক-নায়িকা বা ৫টা সিনেমা করে ৩টা পুরস্কার পাওয়া নায়ক-নায়িকা এসে যদি বলে, আপনি আর আমি সমান সমান। আমিও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি, আপনিও পেয়েছেন। সে কথার উত্তর আমি কি দিয়ে দেব!
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন