খেলাফত প্রাপ্তি : চাঁদ থেকে পূর্ণিমা শাইখুল আরব ওয়াল আজম, কুতুবুল আলম হযরত মাওলানা শাহ সুলতান আহমদ নানুপুরী (রহ.) থেকে বিশেষভাবে ইজাজত লাভ করেন। তাছাড়া তিনি কাতারের সম্মানিত শায়েখ ইউসুফ রেফায়ী থেকে এবং বাংলাদের আল্লামা আহমদ শফী (রাহ.) এর থেকেও খেলাফত লাভ করেন। হজরত শাহ সুলতান আহমদ নানুপুরী (রহ.)-এর প্রতি ছিল হজরতের অঘাধ ভক্তি-শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। হজরত চলতে ফিরতে তাঁর শায়খের আদর্শকে গভীরভাবে অনুসরণ করতেন।
আধ্যাত্মিক সাধনায় অনন্য উচ্চতায় : জ্ঞান-গভীরতা, তাকওয়া, আত্মশুদ্ধি, আধ্যাত্মিক সাধনা, মানবসেবা, অন্তর্দৃষ্টি ছিল তাঁর অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। তাঁর ইলম, ব্যক্তিত্ব ও চারিত্রিক প্রভাবে বহু মানুষের জীবন ধারায় পরিবর্তন এসেছে। দ্বীনি শিক্ষার বিস্তার ও আত্মশুদ্ধীর ময়দানে তাঁর সফলতা ছিল আকাশচুম্বী। জিকির-ইবাদতে আধ্যাত্মিক মুজাহাদা ও দুনিয়ার প্রতি নির্মোহতায় অভ্যস্ত ছিলেন। জীবনব্যাপী সুন্নতের পূর্ণ পাবন্দীর ব্যাপারে আল্লামা শাহ জমিরুদ্দীন নানুপুরী (রহ.)-এর মত যত্নশীলতা এ যুগে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তাঁর সুন্নাহসম্মত আমল দেখে পূর্ববর্তী আকাবিরদের স্মৃতি তাজা হতো। আমলের আগ্রহ তৈরি হতো। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়েও সুন্নতে রাসুলের অনুসন্ধান ও পালন, সমাজের বুকে সুন্নাতের প্রচার প্রসার এবং সাধারণ সুন্নতকেও আমলের ক্ষেত্রে সমান গুরুত্ব দেওয়া ছিল তাঁর স্বভাবজাত। তাজকিয়ায়ে নফসের ক্ষেত্রে তিনি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। পথভোলা মানুষকে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে আনার তরে আজীবন অক্লান্ত মেহনত করেছেন। অত্যন্ত হেকমতের সাথে শিরক ও বিদয়াতি কাজ থেকে মানুষকে ফিরিয়ে এনেছেন। তিনি রাসুল (সা.)-এর সুন্নতকে বাস্তব জীবনে আমলের সাথে প্রয়োগ করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করতেন। দেশের শীর্ষস্থানীয় উলামাগণের মধ্যে অনেকেই তার সাথে ইসলাহী সম্পর্ক রেখেছেন। বিজ্ঞ হাদিস বিশারদ, ফিকাহবিদ ও ওয়ায়েজগণ। সরকারী প্রশাসনিক লেভেলের অনেক আইনবিদ, মন্ত্রী, এমপি, ডি. সি. এস. পি, জর্জসহ উচ্চপদস্থ ব্যক্তি বর্গ তাঁর হাতে মুরিদ হন। মুসলিম উম্মাহর এমন দরদী রাহবার ফিরবে না আর পৃথিবীতে। আজ তিনি নেই, চলে গেছেন না ফেরার দেশে। রেখে গেছেন নূরাণী জীবনের মধুমাখা মুতিতুল্য পথনির্দেশনা ও স্মৃতিভান্ডার। যা আমাদের জন্য হয়ে থাকবে সারাজীবন চলার পথ ও পাথেয়।
বিনয়দীপ্ত স্বভাব : আমাদের নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায় তিনি এসেছেন বেশ কয়েকবার। আল্লামা শাহ জমির উদ্দিন নানুপুরী (রহ.)-এর সাথে আমার আব্বার (আলহাজ¦ ফজলুল হক) ইসলাহী সম্পর্ক ছিল। সেই সুবাদে তিনি আমাদের বাড়িতে এসেছেন। তাকে খবু কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। তিনি ছিলেন বিনয়ী প্রকৃতির মানুষ। বিনয় এখন মানুষের মাঝে খুঁজে পাওয়া বিরল। অথচ বিনয় হচ্ছে আমাদের ইসলাম ধর্মের গুপ্তধন। এই ধন হৃদয়ের সিন্দুকে যতনে পোষেণ এমন মানুষ কোনো কালেই সংখ্যায় বেশি হয় না। আল্লামা শাহ জমিরউদ্দীন নানুপুরী (রহ.) কে যারা দেখেছেন, এমনকি যে যত বেশি দেখেছেন, তিনি ততটাই জোর দিয়ে বলবেন, বিনয়ে তিনি ছিলেন তাঁর কালের শ্রেষ্ঠ মনীষী। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর তরে বিনয়ী হয়, আল্লাহ তাআলা তাঁকে উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেন। নানুপুর হুজুর সেই উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। সমকালীন উলামায়ে কেরামের দৃষ্টিতে তাঁর আমল-আখলাক ও বুযুর্গী ছিল অনেক উচ্চে। আল্লাহর এই ওলির জীবনব্যাপী ছিল বিনয়ের দীপ্তি। তার পরিচিত ভক্তদের দেখা বিনয়ের ঘটনাবলী যদি একত্র করা হয় তাহলে একখানা বৃহদাকার গ্রন্থ তৈরি হবে সন্দেহ নেই। একবার চট্টগ্রামের এক পার্বত্য এলাকায় তাঁর বয়ান শুনে একই সাথে ৪২জন উপজাতি ইসলাম গ্রহণ করেন। এটা হচ্ছে তার সুমহান চরিত্রের নমুনা।
পরলোক গমন : এই মহান মনীষী ২০১১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী। পহেলা রবিউল আওয়াল। শনিবার দিবাগত রাতে এশার নামায আদায়ের পর মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে পরলোক গমন করেন। ইন্তেকালের খবর মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে পুরো দেশে। দেশ-বিদেশে থাকা ভক্তবৃন্দরা তাঁকে হারিয়ে বিয়োগ-ব্যথায় ব্যথিত হয়ে পড়েন।
আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদাউসের উঁচু মাকাম দান করুন। উত্তরসুরীগণ তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে দ্বীনের বহুমুখী খেদমত করার তাওফিক দান করুন।
লেখক : ভাইস প্রিন্সিপাল, মদিনা মাদরাসা। শ্রীরামপুর বাজার, রায়পুরা, নরসিংদী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন