উত্তর: কোরআনুল কারীমে ধর্ম পালন করতে গিয়ে পারস্পরিক জোড় জবর দস্তিতে লিপ্ত হতে নিষেধ করা হয়েছে। কোরআনের ভাষায় ‘লা ইকরা ফিদ্দিন’ বলা হয়েছে। অর্থাৎ তোমরা ধর্ম পালনে জোড় জবরদস্তি করো না। ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে আমরা নিজের মতকে শতভাগ সত্য মনে করে অন্যের ওপর নিজের মতকে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করি। তখন বেমালুম ভূলে যাই ‘লাকুম দ্বীনুকুম ওয়ালিয়াদ্বীন’ আয়াতের কথা। মাইজভান্ডারী দর্শন ধর্ম বিরোধকে পুরোপুরি নিরুৎসাহিত করে। এখানে উদাহরণ স্বরূপ উল্লেখ্য যে, পবিত্র মসজিদুল হারামে এবং মসজিদে নববীতে সালাত আদায় করার সময় মুসল্লিদেরমধ্যে কিছু বৈচিত্র্যতা লক্ষ্য করা যায় । প্রত্যেকে নিজ নিজ মাজহাব কিংবা আকাবীরদের অনুসরণ করে সালাত আদায় করতে দেখা যায়। এ নিয়ে কেউ কারো সাথে কোনে তর্কে কিংবা সংর্ঘষে লিপ্ত হয় না। একইভাবে মাইজভান্ডারীয়া তরিকার অনুসারীগণ ধর্ম ঝগড়া পরিহার পূর্বক ইবাদত বন্দেগী করে থাকেন। তারা কোথায়ও কোনো বিষয়ে তর্কে লিপ্ত হয় না। যা আমাদের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ন শিক্ষণীয় হতে পারে।
ধর্ম পালনে বৈচিত্র্যরমধ্যে একধরনের সৌন্দর্য্য রয়েছে। আল্লাহতায়ালা ইচ্ছা করলে সকলকে একই জাতি ধর্ম ও নবীর অনুসারী করে দুনিয়াতে পাঠাতে পারতেন। তিনি তা না করে সময় সময়ে বিভিন্ন জাতি ধর্ম ও নবীর অনুসারী করে পাঠিয়েছেন। যেমনটি বণি ইসরাঈলের উম্মতের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। হযরত মূসা (আ:) এর উম্মতদেরকে আল্লাহতায়ালা বারোটি গোত্রে বিভক্ত করেদিয়েছিলেন। তিনি দেখতে চেয়েছেন তাঁর হুকুম পালনে কে সবচেয়ে বেশী সচেষ্ট । মাইজভান্ডারীয়া তরিকার দর্শনই হলো ধর্ম পালনে পারস্পরিক বিবাদে কিংবা তর্কে না জড়ানো। ধর্মীয় বিবাদে না জড়ানো প্রসঙ্গে হযরত আহমাদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (ক:) তাঁর অনুসারীদের এভাবে বলতেন, ‘বাহাস করিও না। আপন হালতে থাকিয়া যাও। তাহারা তোমাদের সাথে মিলিয়া যাইবে।’ হযরত আহমাদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (ক:) এভাবেও বলেছেন, ‘দু’জনে ঝগড়া লেগেছে, তুমি কিছু ছে ড়েহলেও সমাধান করে ফেল। হ্যাঁ, তুমি ৫০ পার্সেন্ট পাও, কিন্তু তুমি ২ পার্সেন্ট ছেড়ে দাও। তুমি ৪৮ পার্সেন্ট নিয়ে সন্তÍুষ্ট হয়ে যাও। তাও বিরোধ বিনাশ হয়ে যাক, বর্তমানে ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে মানুষ নানানভাবে বিভক্ত হয়েপড়েছে। ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে নিজের মতামত মেনে নেয়া না নেয়া কেন্দ্র করে এলাকা ভিত্তিক নানা ধরনের সংর্ঘষের ঘটনা ঘটছে। এ ক্ষেত্রে অন্যের ধর্ম পালনের বিষয়টি নিশ্চিত করার লক্ষে মাইজভান্ডারী দর্শন যথাযথভাবে ইনসাফ করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছে। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে মাইজভান্ডারী দর্শন চর্চাবৃদ্ধি পেলে পারস্পরিক ধর্ম ঝগড়া বা ধর্ম বিরোধ কমে আসবে। মাইজভান্ডারী দর্শন চর্চা মুসলিম উম্মার জন্য এখন সময়ের দাবী।
উত্তর দিচ্ছেন : ফিরোজ আহমাদ, ইসলামিক লেখক ও সূফিতাত্ত্বিকগবেষক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন