সরকার বিরোধী আন্দোলনের সময়ে নাশকতা মামলার আসামী
বরিশাল ব্যুরো : এবার বরিশাল সিটি করপোরেশনের বিএনপি-জামায়াতপন্থী কাউন্সিলরদের ব্যাপারেও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে। ২০১৩-এর জুনে বরিশালসহ দেশের ৪টি সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে সরকারী দলের প্রার্থীদের ভরাডুবির পরে অন্য মহানগরগুলোর নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরগণ যথেষ্ট বিপদে থাকলেও এতদিন এ নগরীর জনপ্রতিনিধিরা কিছুটা স্বস্তিতে ছিলেন। যদিও এর নগর প্রশাসনের সময়ে সরকারী বরাদ্দ প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হয়েছে। নগরীর উন্নয়ন প্রকল্পগুলো মুখ থুবড়ে পড়ারও উপক্রম। নগর ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বকেয়া পড়েছে পাঁচ মাস। এরই মধ্যে পদ নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন ১১ কাউন্সিলর।
এর পরে মেয়রকে নিয়েও টানাহেঁচড়া শুরু হলে আশ্চর্যের কিছু থাকবে না বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। ২০১৪ ও ২০১৫-এর সরকার বিরোধী আন্দোলনের ঘটনায় দায়ের করা নাশকতার মামলায় মহানগরীর ১১ কাউন্সিলরদের প্রায় প্রত্যেকেই একাধিক মামলার আসামী। ফলে বিএনপি-জামায়াতপন্থী এ ১১ কাউন্সিলরের পদ নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।
২০১৪-এর একতরফা নির্বাচনে দলীয় কর্মসূচী অনুযায়ী বিরোধিতা করতে গিয়ে ১১জন কাউন্সিলর একাধিক মামলার আসামী হয়েছেন। যার প্রায় প্রত্যেকটি মামলার বাদীই পুলিশ। বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৩০ সাধারণ কাউন্সিলর ও দশ সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সলিরের প্রায় ৩০ জনই সরকার বিরোধী শিবিরের। দায়েরকৃত ঐসব মামলায় ইতোমধ্যে ৪ কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দেয়া হয়েছে। তদন্তাধীন অন্য মামলাগুলোরও খুব শিগগিরিই চার্জশীট প্রদান করা হবে বলে জানা গেছে।
ফলে নিয়মানুযায়ী এ ১১ কাউন্সিলরকে সাময়িক বরখাস্তসহ তাদের বিরুদ্ধে কি ধরনের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তা তদারকি করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব অভিতাভ সরকার গত সপ্তাহেই বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে সব খোঁজ খবর করে গেছেন। তার দেয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিএনপি-জামায়াতপন্থী এ ১১ কাউন্সিলরের ভাগ্য নির্ধারণ হবে বলে জানা গেছে।
বরিশাল নগর ভবনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, যুগ্ম সচিব অমিতাভ সরকার গত সপ্তাহের শেষে বিভিন্ন মামলার আসামী-কাউন্সিলরদের সঙ্গে কথা বলে মামলার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেন। তিনি অন্য সূত্রগুলো থেকেও বিষয়গুলো নিয়ে খোঁজ খবর করেছেন বলে জানা গেছে। সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নগর ভবনে সরেজমিনে এসে ১১কাউন্সিলের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত নাশকতার মামলাগুলোর ব্যাপারে খোঁজ খবর নেন। তিনি ফিরে এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিলে তার ভিত্তিতে বিধি অনুযায়ী মন্ত্রণালয় পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে পারে বলেও জানান তিনি। ২০১৪ ও ২০১৫-এর রাজনৈতিক সহিংসতার সময়ে বিভিন্ন কথিত নাশকতার মামলার আসামীদের মধ্যে মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়া উদ্দিন সিকদার, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র শরীফ তাসলিমা কালাম পলি, ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ আকবর হোসেন, ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. সেলিম, ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হারুন অর রশিদ, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মীর জাহিদুল কবির, ২৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহীদুল ইসলাম, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফিরোজ আহম্মেদ, ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন হাওলাদার, সংরক্ষিত কাউন্সিলর সেলিনা পারভীন, এবং মহানগর জামায়াত নেতা ১৪ নম্বর ওয়ার্র্ড কাউন্সিলর সালাউদ্দিন মাসুম রয়েছেন।
ইতোমধ্যে বরিশাল সিটি করপোরেশনের এক নম্বর প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর শহিদুল্লাহ কবিরের বাসা থেকে কথিত অস্ত্র উদ্ধার এবং এ সংক্রান্ত র্যাব-এর দায়ের করা মামলার চার্জশীট দাখিলের পরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাকে সাসপেন্ড করে। পরবর্তীতে তিনি উচ্চ আদালতে আবেদন পেশ করায় মামলাটির কার্যক্রম ৬মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। ফলে তিনি পূর্ব পদে পুনর্বহাল হয়েছেন।
সিটি করপোরেশন আইনের ৬০ নং ধারার ১২ এর (১) উপধারা অনুযায়ী ‘কোন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলায় অভিযোগপত্র আদালত গ্রহণ করলে সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরকে বরখাস্ত করবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়’।
তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ‘২০১৩-এর জুনে দেশের ৪টি সিটি করপোরেশনে বিএনপি প্রার্থীরা বিজয়ী হবার পরে খুলনা, রাজশাহী ও সিলেটের মেয়র এবং একাধিক কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে নানা বিরূপ পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এতদিন বরিশাল সেক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় পেলেও এখন সরকারের কোন কোন মহল হয়ত নতুন করে কিছু ভাবছে। আগামী কয়েক মাসে যার অনেক কিছই দৃশ্যমান হতে পারে বলেও মনে করছে মহলটি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন