সরকারি তহবিলের সুষ্ঠু ও যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে সব রকম অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানোর (কাটের) জন্য ফের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ দ্রæত করুন। খরচ কাট করেন। তবে খরচ বন্ধ করা যাবে না। একান্ত প্রয়োজনীয় ব্যয় করতেই হবে।
গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এমন নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এর আগে একাধিকবার এমন নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সšে§লন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠক সভাপতিত্ব করেন তিনি। বৈঠক শেষে ব্রিফিং এসব তথ্য জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। একই সঙ্গে একনেক বৈঠকে হাওরে উড়াল সড়ক নির্মাণসহ ১১টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়া শেষ মুহুর্তে এসে সংশোধন করা হয়েছে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্প। এ প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়েছে সরকার। একইসঙ্গে খরচও বাড়ছে ৩১৫ কোটি টাকা।
একনেক সভায় পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান; সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের; কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক; তথ্য ও স¤প্রচার মন্ত্রী মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ; স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম; শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি; শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন; বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি; মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা অংশ নেন। সভায় পরিকল্পনা সচিব সত্যজিৎ কর্মকার, ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য এমদাদউল্লাহ মিয়া, আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মহিউদ্দিন, আর্থ সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য নাসিমা বেগম এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড.শাহনাজ আরেফিন উপস্থিত ছিলেন। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, প্রকল্পের কাজ দ্রæত করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে কাজের মান বাড়ান এবং খরচ কমান। কিন্তু খরচ বন্ধ করবেন না। এছাড়া উৎপাদন বাড়াতে হবে। যে যেখানে যেভাবে আছেন তাদের কাজে লাগিয়ে উৎপাদন বাড়াতে হবে। তিনি জানান, আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে একনেকে পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইভিএম প্রকল্প আমাদের একনেকের তালিকায় ছিল না। অবস্থায় একনেক বৈঠকে টেবিলে উপস্থাপনের কোন সিদ্ধান্ত আমাদের ছিল না। আমরা চাই নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই বিষয়টি নিস্পত্তি করা হবে। এই প্রকল্পের অনুমোদন প্রক্রিয়া চলমান আছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন ইভিএম আগামী জাতীয় নির্বাচনে কতটা আসনে ব্যবহার করা হবে বা প্রকল্পটি অনুমোদন প্রক্রিয়ার কারণে কোন অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে কিনা সেটি বলতে পারবে নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে পারবো না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একনেক বৈঠকে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জানতে চাননি। আমরাও নিজেদের উদ্যোগে ওনাকে কিছু জানাতে যাইনি। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প আশ্রায়ন নিয়ে একটি মূল্যায়ন করেছে আইএমইডি। যেটি একনেকে উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখানে অনেক ভালো বিষয় উঠে এসেছে।
দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়েছে একনেক বৈঠকে। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, দেশের অর্থনীতি খুব খারাপ নয়। এক্ষেত্রে রিজার্ভ সর্বশেষ গত ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩২ বিলিয়ন ডলার ছিল। সেটি স্থিতিশীল আছে। এছাড়া রফতানি চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এসেছে ২৭ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ২৪ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার। বেড়েছে ২ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া রেমিট্যান্স এসেছে এ অর্থবছর ১০ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছর একই সময়ে এসেছিল ১০ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার। মূল্যস্ফীতি কমেছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো বিশ্ব মন্দার ঢেউ বাংলাদেশে লাগবে না। আমাদের কৃষি ও শিল্পের প্রবৃদ্ধি অনেক ভালো। পরিকল্পনা সচিব সত্যজিৎ কর্মকার বলেন, গত ৬ মাসে একনেক বৈঠকে ১ দশমিক ৩৬ বিরিয়ন ডলালের বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এখন কিছু প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন।
ব্রিফিং এ জানানো হয়, কিশোরগঞ্জ জেলার হওরে উড়াল সড়কসহ অনুমোদন পাওয়া ১১ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১০ হাজার ৬৮৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এরমধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৭ হাজার ৮২৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ২ হাজার ৮৮০ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। একই সঙ্গে কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলা সদর হতে করিমগঞ্জ উপজেলার মচিখালি পর্যন্ত উড়াল সড়ক নির্মাণ প্রকল্প। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৫ হাজার ৬৫১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। আগামী মার্চ মাস থেকে শুরু হয়ে ২০২৮ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করা হবে।
কৃচ্ছ্র সাধনের সময় এমন প্রকল্প নেওয়ার কারণ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা সচিব বলেন, এ প্রকল্পের সব টাকা একবারেই লাগবে না। চলতি অর্থবছর এটির জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ৭৬ লাখ টাকা। এছাড়া আগামী অর্থবছর শুধু ভ‚মি অধিগ্রহণের জন্য প্রয়োজন হবে প্রায় ৫৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে আশা করা যায় সঙ্কট অনেকটাই কেটে যাবে। এদিকে শেষ মুহুর্তে হতে ব্যয় বেড়েছে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহুলেন সড়ক টানেল নির্মাণ প্রকল্পের। এতে ব্যয় বেড়েছে ৩১৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা সচিব বলেন, টানেলের নিরাপত্তা এবং ডলারের দাম বাড়ায় প্রকল্পটি সংশোধন করতে হয়েছে।
একনেকে অনুমোদি অন্য প্রকল্পগুলো হলোÑচট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার শ্রীমাই নদীতে নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এছাড়া বরিশাল জেলার কারখানা বিঘাই এবং পায়রা নদীর ভাঙ্গন হতে শেখ হাসিনা সেনানিবাস এলাকা রক্ষা প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৭৬ কোটি টাকা। ঢাকা জেলার দোহার উপজেলাধীন মাঝিরচর থেকে নারিশাবাজার হয়ে মোকসেদপুর পর্যন্ত পদ্মা নদী ড্রেজিং ও বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৫২৮ কোটি টাকা। বাংলাদেশ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ উপকুলীয় ছোট দ্বীপ এবং নদীর চরের জন্য অভিযোজন উদ্যোগ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। মাতারবাড়ী কয়লা নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা। ইস্টাবলিশমেন্ট অব গেøাবার মেরিটাইম ডিসট্রেস এন্ড সেফটি সিস্টেম এন্ড ইন্টারগ্রেটেড মেরিটাইম নেভিগেশন সিস্টেম প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৯২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। বাংলাদেশে ২৫টি শহরে অন্তরর্ভুক্তিমূলক স্যানিটেশন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ২১০ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ক্লাইমেট চেঞ্জ এ্যাডাপটেড আরবান ডেভলপমেন্ট পেজ-২ খুলনা প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯১ কোটি ২৮ লাখ টাকা। ঘোড়াশাল চতুর্থ ইউনিট রি-পাওয়ারিং প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন