শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

কিশোর অপরাধ রুখতে ‘ফ্যামেলি গাইড’

আতিকুর রহমান নগরী | প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

সকল মানবসন্তানই সুশিক্ষা আর সভ্যতা পাবার অধিকার নিয়েই পৃথিবীর বুকে পদার্পন করে থাকে। জন্মের পর থেকে একটি নির্দিষ্ট বয়সসীমা পযন্ত থাকে শিশু ধরে নেয়া হয়। শিশু থাকাবস্থায় তার দোষ-গুণ কেউ গননা করে না। তার হাস্যজ্বল নুরানি চেহারা দেখে সবাই তাকে আদর করে কোলে টেনে নেয়। স্নেহের চাদরে তাকে হর-হামেশা আবৃত করে রাখে। তবে কোন বয়সের মানবসন্তানকে শিশু বলে তা আমাদের অনেকের হয়ত জানা নেই। জাতী সংঘের শিশু আইন অনুযায়ী শূন্য থেকে আঠারো বছর পর্যন্ত সব মানবসন্তানকে শিশু বলা হয়। আমাদের সমাজও সে অনুযায়ী বলে থাকে। এব্যাপারে ইসলামি শরিয়তের ভাষ্য হচ্ছে ‘ইযা বালাগুন নিকাহ’ অর্থাৎ যখন সে বিবাহের বয়সে উপণিত হবে। বিয়ের বয়সে পৌছার আগমুহুর্ত পর্যন্ত সব মানবসন্তানকে শিশু বলা যায়। এখন প্রশ্ন হতে পারে বিয়ের বয়স কখন? এ প্রশ্নের সহজ উত্তর যখন সে সাবালক হবে। কোন বয়সসীমায় পৌছলে তাকে সাবালক বলা যেতে পারে। এক্ষেত্রে অনেক মতপার্থক্য রয়েছে। তবে চৌদ্দ বছরের সকল ছেলে সন্তানই সাবালক হিসেবে পরিগণিত হবে।
জ্ঞানই আলো। শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। এসব শ্লোগান সবার জানা। তবে কোন ধরণের শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড হতে পারে তা খোদ জাতির কাছেই অস্পষ্ট। তবুও জাতি থেমে নেই। তাদের কচিমনা সন্তানদের শিক্ষিত জনশক্তিতে পরিণত করার মানসে ছয় বছর বয়সে একটি ছেলেকে প্রথমে তার পিতামাতা প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের জন্য প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি করে থাকেন। তবে হাল যামানায় ইংলিশ মিডিয়াম আর কিন্ডারগার্টেন স্কুলে এ বয়সের আগেও ভর্তি করা হয়ে থাকে। অনেকের মতে শিক্ষা নয়, সুশিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। আর এ সুশিক্ষার অভাবেই জাতি আজ অন্ধকারে নিমজ্জিত। যাই হোক, আমি এই ছোট্র পরিসরে শিক্ষা নিয়ে আলোকপাত করে সময় নষ্ট করবো না।

রাজনীতি। রাজার মত নীতি। রাজ্য পরিচালনার নীতি। মোটকথা রাজা-মহারাজার মত দেমাগ, চিন্তা-চেতনা সমৃদ্ধ একটি সাবজেক্টের নাম রাজনীতি। রাজনীতি জনতার ভাগ্যের চাকা ঘুরানোর মেশিন। উন্নয়নের জোয়ারে রাজ্য ভাসিয়ে দেয়ার মাস্টারপ্লানের আরেক নাম রাজনীতি। এসব আমার মনের কথা। ক্ষুদ্র জ্ঞানের চিন্তার ফসল এসব কথা। কাউকে বলবোনা একাত্ততা ঘোষণা করার কথা। আমাদের দেশ সোনার বাংলাদেশ। স্বপ্নের বীজবপনের জন্য আমাদের দেশের মাঠিই সবচে’ উর্বর। এখানে অনেক জ্ঞানী-গুনিরা জন্মেছেন। শুয়ে আছেন বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা। তারাই ছিলেন সঠিক দেশপ্রেমিক। সুনাগরিক হিসেবে তারাই হলেন জাতির জন্য মডেল। আসল রাজনীতি আর নকল রাজনীতি একসাথে মিশে একাকার হয়ে গেছে। সঠিক রাজনীতিবিদরা উদাও হয়ে গেছেন। দেশপ্রেমের দৃষ্ঠান্ত কায়েমের জন্য কেউ আর রাজনীতি করেন না। স্বচ্ছ আর পরিচ্ছন্ন রাজনীতির মাইকিং করে লোক জমানো ছাড়া স্বচ্ছতা খুঁজে পাওয়া দায়। অপরাধীদের অভয়াণ্যে পরিণত হতে চলেছে রাজনৈতিক দলগুলো। এতে কিশোররা জড়িত না হওয়াটা মঙ্গলজনক দিক। দলের বড় ভাইদের বড় বড় কথায় গলে যাচ্ছে ছোট্রমনা কিশোরদের হৃদয়। যোগ দিচ্ছে তারা রাজনীতিতে। পড়ালেখা ছেড়ে আড্ডাবাজীতে বেশ পটু হয়ে উঠছে। পাড়া-মহল্লার সবগুলি অলিগলি তাদের পদভারে মুখরিত হচ্ছে। বেমালুম নিদ্রায় নাক ডাকাচ্ছেন অভিভাবকরা। ফ্যামেলি গাইডের অভাবে কচিমনা কিশোররা ধংস করে দিচ্ছে তাদের সুন্দর জীবন। রাজনীতি ছাড়া আরো অনেক কারণ আছে যা কিশোর অপরাধের সূত্রপাত ঘটায়।

কিশোর অপরাধ ও তার কারণ ঃ একটি শিশু নিরপরাধ এবং মাসুম বেশে জন্মগ্রহণ করে। তার মধ্যে থাকে লক্ষ আশা। শিশুকে সুমানুষ হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব পরিবার,সমাজ এবং রাষ্ট্রের। পরিবারই শিশুর শিক্ষার মুখ্য ভূমিকা পালন করে। আমাদের মনে রাখতে হবে আজকের শিশু-কিশোররা আগামী দিনের সম্পদ। তাকে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগ দিতে হবে। উন্নত বিশ্বে শিশুদের কল্যাণ ও বিকাশের জন্য নানা রকম পরিচর্যার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে অশিক্ষা ও দারিদ্র্যের কারণে অধিকাংশ শিশুরই উপযুক্ত কোনো পরিচর্যা করা হয় না। সমাজে সুষ্ঠু জীবনযাপন করার অধিকার প্রতিটি শিশুরই আছে। কেউ অপরাধী হয়ে জন্মায় না, পারিপাশ্বর্কি পরিবেশে তাকে অপরাধী করে তোলে। একটি আদর্শ সমাজ গঠন করতে হলে সমাজের মানুষগুলোকে আগে আদর্শবান হতে হবে। নচেৎ সুন্দর ও সুষ্ঠু সমাজ গঠন করা সম্ভব নয়। সামাজিক আচরণকে কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার লক্ষ্যে সমাজের ব্যক্তিবর্গ সামাজিক আদর্শ গঠন করে থাকেন। প্রতিটি সমাজে আমরা দেখতে পাই, কিছু লোক আছে যারা সমাজের এসব আদর্শ ও মূল্যবোধকে মেনে চলে এবং কিছু লোক আছে যারা সেগুলোকে লঙ্ঘন করে। এসব ব্যক্তিবর্গ সমাজের শান্তি ও ঐক্যকে ব্যাহত করে এবং এদের বলা হয় অপরাধী। যখন অল্পবয়সী শিশু-কিশোররা এসব সামাজিক আদর্শকে লঙ্ঘন করে এবং অপরাধীর মতো আচরণ করে তখন তাদের কিশোর আদালতের অধীনে বিচার করা হয়। এসব শিশু-কিশোরদের বলা হয় কিশোর অপধারী।

বাংলাদেশে ৭-১৬ বছর বয়সী শিশুদের কিশোর বলা হয়। এই কিশোররা যখন অপরাধমূলক কাজে জড়িত হয় তখন তাদের কিশোর অপরাধী হিসেবে গণ্য করা হয়। যখন তাদের সমাজ বিরোধী কার্যকলাপ খুব স্বল্পমাত্রা হতে মারাত্মক আকার ধারণ করে, তখন অনেক সময় তাদের খবমধষ পৎরসরহধষ ধপঃ. এর অধীনে বিচার করা হয়। বিভিন্ন সমাজ বিজ্ঞানী ভিন্ন ভিন্নভাবে কিশোর অপরাধের সংজ্ঞা দিয়েছেন-

(১) সমাজ বিজ্ঞানী সালমানের মতে, ‘কিশোর অপরাধ বলতে অপ্রাপ্ত বয়স্ক জনগোষ্ঠীর ওপর পরিবার ও সমাজের নিয়ন্ত্রণহীনতা বুঝায়।’
(২) সমাজ বিজ্ঞানী বিসলারের মতে, ‘কিশোর অপরাধ হচ্ছে প্রচলিত সামাজিক নিয়মকানুনের ওপর অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোরদের অবৈধ হস্তক্ষেপ।’
উপরোক্ত সংজ্ঞা থেকে আমরা ধরে নিতে পারি যে, অপ্রাপ্ত বয়স্কদের দ্বারা সংঘটিত সমাজ ও আইন বিরোধী এবং রীতিনীতি ও মূল্যবোধের পরিপন্থি কার্যকলাপই হচ্ছে কিশোর অপরাধ। (চলবে)

লেখকঃ প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন