বান্দারবনের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সীমান্তের তুমব্রুর শুন্যরেখা এলাকায় দুটি বিবদমান রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে প্রায় দশ ঘণ্টা ধরে প্রচণ্ড গোলাগুলি ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং অনেক হতাহতের খবর অয়াওয়া গেছে।
বুধবার (১৮-জানুয়ারি) খুব সকাল ৬ টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত উভয় গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়।
একটি অসমর্থিত সুত্রে জানা যায়, উভয় পক্ষের গোলাগুলিতে সন্ত্রাসীসহ প্রায় ১০ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে শতাধিক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু। সকাল থেকে থেমে থেমে গোলাগুলির ঘটনা ঘটলেও বিকেল ৪টার অব্যবহিত পরেই শুন্যরেখায় অবস্থিত ক্যাম্পটিতে আগুন ধরিয়ে দেয় সন্ত্রাসীরা। চারিদিকে আগুনের লেলিহান শিখা চোখে পড়ে। আশে পাশের মানুষের মাঝে চাপা আতংক বিরাজ করে।
সুত্রে আরও জানা যায়, বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তের কোনারপাড়া নোম্যান্স ল্যান্ডের আশ্রয় শিবিরে গত ৩ মাস যাবত মিয়ানমারের সশস্ত্র গ্রুপ আরসা প্রধানসহ দুই শতাধিক ক্যাডার ভারি অস্ত্রসহ অবস্থান করছিল। তারা সেখানে ইয়াবা, আইস, স্বর্ণসহ বিভিন্ন মাদক জমা রেখে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ক্যাম্পে পাঠাত বলে জানা যায়। গত কয়েক মাস পুর্বে র্যাব ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে গেলে আরসা সন্ত্রাসীরা কক্সবাজারে দায়িত্বরত ডিজিএফআইর এক কর্মকর্তাকে হত্যা করে। বেপরোয়াও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীগোষ্টী ঐ ক্যাম্পটিকে তাদের আশ্রয়স্থল ও অভয়ারণ্য হিসেবে বেছে নিয়েছে বলেও জানা যায়।
সুত্রে জানা যায়, মিয়ানমারের জিরো লাইনের ওই ক্যাম্পের মধ্যে মরকজ নাম দিয়ে নিচে বাংকার খনন করেছিল আরসা ক্যাডাররা। বুধবার সেই বাংকার থেকে গুলি চালালে কয়েকজন আরএসও ক্যাডার এবং ওই ক্যাম্পে আশ্রিত বহু রোহিঙ্গা গুলিবিদ্ধ হয়। আহতদের আশে পাশে বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অসমর্থিত সুত্রে জানা যায়, ঘটনাস্থলে অর্থাৎ কোনারপাড়া ক্যাম্পেই মারা যায় অন্তত ১০ রোহিঙ্গা। গুলিবিদ্ধ আহত হয়েছে শতাধিক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু।
বিষয়টি স্বীকার করে বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে শূন্যরেখায় মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি চলছে। সীমান্তে তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করারও চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
তুমব্রু সীমান্তের গনমাধ্যমের এক কর্মী বলেন, খুব সকালে মানুষ জন যার যার কাজে বের হওয়ার মুহুর্তে মুর্হু মুর্হু গোলাগুলির শব্দে তুমব্রুর মিয়ানমার সীমান্ত হঠাৎ কেঁপে ওঠে। প্রথমে মনে করেছিলাম মিয়ানমারের ছোড়া মর্টারশেল হয়তো বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে পড়েছে। কিন্তু পরে নিশ্চিত হয়েছি, শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা শিবিরে দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি চলছে।
ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন- গত কাল ভোর থেকে বাংলাদেশ মিয়ানমার শূন্যরেখায় অবস্থিত রোহিঙ্গা শিবিরে গোলাগুলি চলছিল। বিকেলে ওই ক্যাম্পটিতে আগুন ধরিয়ে দেয় সন্ত্রাসীরা। এতে জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যায় কোনারপাড়ার ওই শিবিরটি। অনেকে হতাহতে খবর শুনেছি। এলাকায় চাপা আতংক বিরাজ করছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন