টঙ্গীর তুরাগ তীরে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেয়া লাখো মুসল্লির ইবাদত-বন্দেগী, জিকির-আজকার, দেশি-বিদেশি তাবলীগ মুরুব্বিদের বয়ান ও বিভিন্ন মেয়াদে চিল্লায় নাম লেখানোর জন্য তাশকীলের মধ্যদিয়ে গতকাল শনিবার দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত হয়েছে। আজ রোববার দুপুরের আগে দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে এবারের দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমা। প্রথম দিনের ন্যায় গতকালও প্রতি ওয়াক্ত নামাজ শেষে কালেমা, নামাজ ও দাওয়াতে তাবলীগের ফজিলত নিয়ে বিস্তারিত বয়ান করা হয়।
গতকাল বাদ ফজর ভারতের মাওলানা ইয়াকুব হিন্দি ভাষায় বয়ান করেন। তাৎক্ষণিকভাবে তা বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা মনির বিন ইউসুফ। বাদ জোহর বয়ান করেন মাওলানা ওমর তুর্কি। বাদ আসর বয়ান করেন মাওলানা ইলিয়াস বিন সাদ ও বাংলায় তরজমা করেন মুফতি ওসামা ইসলাম। বাদ মাগরিব বয়ান করেন মাওলানা আব্দুস সাত্তার নিজামুদ্দিন, বাংলায় তরজমা করেন মুফতি জিয়া বিন কাসিম।
বয়ানে বলা হয়, ইজতেমা ওয়ালাদের কাজ হলো পরিপূর্ণভাবে দ্বীনের দাওয়াতের কাজ করা। নবী করিম (সা.) দাওয়াতের মেহনতের জন্য মদিনা মনোয়ারা ছেড়ে হিজরত করেছিলেন। তারপর আবার নিজ এলাকায় এসে দাওয়াতের কাজ জিন্দা করেছিলেন। নবী করিম (স.) যেভাবে মেহনতের মাধ্যমে দ্বীনকে জিন্দা করেছিলেন। আমরাও ইজতেমা থেকে শিক্ষা নিয়ে দ্বীনের কাজে বেরিয়ে যাবো, যাতে দ্বীনকে দুনিয়ার বুকে জিন্দা রাখা যায়। দাওয়াতের মাধ্যমে ইমানওয়ালা জিন্দেগি, আমলওয়ালা জিন্দেগি এবং সত্য ও সুন্দর জিন্দেগি বানাতে হবে।
বয়ানে আরো বলা হয়, যারা সমাজে দাওয়াতের কাজ করবে দাওয়াত গ্রহণকারী যত নেক আমল করবেন তা থেকে ওই দাওয়াত দেয়া বান্দাও সমপরিমাণ সওয়াব পাবেন। আল্লাহর বড়ত্বের কথা বলাই নবী-রাসুলদের কাজ। আমাদের কাজ। তিনি বলেন, আল্লাহ সর্বজ্ঞানী। আল্লাহতায়ালা সবকিছুর উপরে ক্ষমতা রাখেন। পুরো দুনিয়ায় কোথায় কি আছে, তা আল্লাহতায়ালা জানেন।
আখেরাতের জিন্দেগি হলো চিরস্থায়ী জিন্দেগি। অবশ্যই প্রত্যেক মানুষকে আখেরাতের জিন্দেগিতে যেতে হবে। এতে কোনো রকমের সন্দেহ নেই। তিনি বলেন, আমাদের দুই চোখে যা কিছু দেখি আর না দেখি আল্লাহ ছাড়া সবই মাখলুক। আর মাখলুক কিছুই করতে পারে না আল্লাহর হুকুম ছাড়া। আল্লাহ সবকিছু করতে পারেন মাখলুক ছাড়া। একমাত্র হুজুর (সা.) এর বাতানো তরিকায় দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি ও কামিয়াবী।
দ্বিতীয় পর্বে বিদেশি মুসল্লিদের অংশগ্রহণ : করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে এ বছর স্বাভাবিকভাবেই বিদেশি মেহমানের সংখ্যা অন্যবারের তুলনায় বেশি। আর দু’বছরের বিরতির পর এ বছরের ইজতেমা নিয়ে খুশি বিদেশি মেহমানরা। বিদেশিদের সহযোগিতার জন্য সার্বক্ষণিক তাদের পাশে থাকছেন বাংলাদেশিরা। দ্বিতীয় পর্বে শনিবার পর্যন্ত সৌদি আরব, ভারত, পাকিস্তান, কাতার, জর্ডান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ ৬১টি দেশের প্রায় ৭৭২৫জন বিদেশি মেহমান ময়দানে অবস্থান নিয়েছেন। অনেকেই এখনো পথে রয়েছেন। তারা আখেরি মোনাজাতের আগেই ময়দানে আসবেন বলে জানিয়েছেন ইজতেমার গণমাধ্যম বিষয়ক সমন্বয়কারী মো. সায়েম।
ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে ৫ মুসল্লির মৃত্যু : বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৫টার দিকে ইজতেমা ময়দানে বরগুনার আব্দুল আলীর ছেলে মফিজুল ইসলাম বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান। শুক্রবার দিবাগত রাতে ঢাকার কদমতলী থানার পূর্ব জুরাইন এলাকার আব্দুল জব্বারের ছেলে আব্দুল হান্নান, রাজধানীর গুলিস্তানের বঙ্গবাজার এলাকার ব্যবসায়ী বোরহান, গাইবান্ধার শুকুর মÐলের ছেলে আব্দুল হামিদ মÐল ও ঢাকার সাভারের বাসিন্দা আব্দুল আলীমের ছেলে মফিজুল ইসলাম মারা গেছেন।
যান চলাচল বন্ধ থাকবে যেসব সড়কে : আজ রোববার ১০টা থেকে ১২টার মধ্যে দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত হওয়ার কথা রয়েছে। আখেরি মোনাজাত উপলক্ষ্যে গাজীপুর ট্রাফিকব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম। এ উপলক্ষ্যে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। মোনাজাত উপলক্ষ্যে বেশ কয়েকটি বিশেষ বাস, ট্রেন ও মেট্রোট্রেন চলাচল করবে।
তিনি আরো বলেন, আখেরি মোনাজাতে অংশ নেওয়া ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের যাতায়াত সুগম করার জন্য শনিবার রাত ১২টার পর থেকে টঙ্গী-কামারপাড়া রোড, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে গাজীপুরের ভোগরা বাইপাস পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া ময়মনসিংহ ও গাজীপুরগামী যানবাহন গাবতলী দিয়ে কোনাবাড়ি হয়ে এবং ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী যানবাহনগুলোকে ভোগরা বাইপাস দিয়ে ৩০০ ফিট রাস্তা ব্যবহার করে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
যৌতুকবিহীন বিয়ে : টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিনে বাদ আছর আয়োজন করা হয়েছে যৌতুকবিহীন বিয়ে। ভারতের মাওলানা সা’দ কান্ধলভীর ছোট ছেলে মাওলানা ইলিয়াস বিন সা’দ কান্ধলভী বিয়ে পরিচালনা করেন। এদিন সকাল থেকেই বর-কনের নাম তালিকাভ‚ক্তি শুরু হয়। বিয়ের আগ পর্যন্ত চলে ওই তালিকাভ‚ক্তির কাজ। বর ও কণের স্বজনদের উপস্থিতে ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ি বিয়ে সম্পন্ন করা হয়। বিয়ের পর মঞ্চের সামনে ও আশে-পাশে থাকা মুসল্লীদের মধ্যে খেজুর ছুড়ে দেয়া হয়।
আজ রোববার বাদ ফজর বয়ান করবেন মাওলানা মুরসালিন, হেদায়তী বয়ান করবেন ভারতের মাওলানা ইউসুফ বিন সা’দ কান্ধলভি, তার বাংলায় তরজমা করবেন মাওলানা জিয়া বিন কাসিম। এরপর আখেরি মোনাজাতও পরিচালনা করবেন মাওলানা ইউসুফ বিন কান্ধলভি। আজ দুপুরের আগেই আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটবে ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন