বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতে ইহ ও পারলৌকিক কল্যাণ কামনা

৫৬তম বিশ্ব ইজতেমার সমাপ্তি

মো. হেদায়েত উল্লাহ, টঙ্গী থেকে | প্রকাশের সময় : ২৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর হেফাজত, হেদায়েত, মাগফিরাত, নাজাত এবং ইহ ও পারলৌকিক কল্যাণ কামনা করে গতকাল রোববার দুপুরে দিল্লীর মাওলানা সা’দ কান্দলভি অনুসারীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হলো তাবলীগ জামাত আয়োজিত দুই পর্বের ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমা। দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা সা’দের বড় ছেলে মাওলানা ইউছুফ বিন সা’দ কান্দলভি। দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে শুরু হয় বহুলকাঙ্খিত আখেরি মোনাজাত। শেষ হয় দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে। দীর্ঘ ৩০ মিনিটের আখেরি মোনাজাতে শরীক হয়েছেন দেশ-বিদেশের লাখো লাখো ধর্মপ্রাণ মানুষ। এসময় লাখো মানুষের গভীর ভাবাবেগপূর্ণ কন্ঠে ‘আমীন, আল্ল­াহম্মা আমীন’ ধ্বনিতে তুরাগ তীরসহ আশপাশের কয়েক বর্গকিলোমিটার এলাকার আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে মহামহিম আল্লাহর দরবারে নিজ নিজ গুনাহ মাফের জন্য কায়মনো বাক্যে ফরিয়াদ জানান।

দক্ষিণে উত্তরা হাউজবিল্ডিং, উত্তরে চেরাগ আলী মার্কেট, পূর্বে টঙ্গী বিসিক শিল্প নগরী ও পশ্চিমে কামারপাড়াসহ আশপাশের কয়েক বর্গকিলোমিটার এলাকা বিস্তৃত বিশাল জনসমুদ্র থেকে বারবার ‘আমীন, আল্লাহুম্মা আমীন’ ধ্বনি উঠে। দেশ-বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লীর সাথে আখেরী মোনাজাতে শরীক হয়েছেন মন্ত্রীপরিষদের সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, পদস্থ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাসহ দলমত নির্বেশেষে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ।

গত ১৩ জানুয়ারি শুক্রবার মাওলানা যোবায়ের অনুসারীদের অংশগ্রহণে ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হয়ে ১৫ জানুয়ারী আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়। চার দিন বিরতির পর ২০ জানুয়ারি শুক্রবার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়ে গতকাল রোববার পূনরায় আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে এবারের বিশ্ব ইজতেমার সমাপ্তি ঘটে। এবারের বিশ^ ইজতেমায় প্রথম ও দ্বিতীয় উভয় পর্বে রেকর্ড সংখ্যক মুসল্লীর সমাগম ঘটেছে। দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের পূর্ব পর্যন্ত ৫৬তম এই বিশ্ব ইজতেমার দুই পর্বে সর্বমোট ১২ জন মুসল্লী বার্ধক্যজনিত, হৃদরোগ ও অন্যান্য কারণে ইন্তেকাল করেন।

দুপুর ১২টা ১৫ মিনিট থেকে শুরু করে ১২টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত ৩০ মিনিট স্থায়ী আবেগঘন আখেরি মোনাজাতে আমীর-ফকির, ধনী-গরীব ও নেতা-কর্মী নির্বিশেষে সকল শ্রেণী-পেশা-গোষ্ঠীর মানুষ পরওয়ারদেগার আল্ল­াহর দরবারে দু’হাত তুলে নিজ নিজ কৃতকর্মের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। মোনাজাতে মাওলানা ইউছুফ বিন সা’দ কান্দলভি প্রথম ১১ মিনিট পবিত্র কোরআনে বর্ণিত দোয়ার আয়াতগুলো উচ্চারণ করেন। শেষ ১৯ মিনিট উর্দু ভাষায় দোয়া করেন।

৫৬তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের শেষ দিন রোববার ভোর থেকেই আখেরি মোনাজাতে শামিল হতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা রাজধানী ঢাকা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলো থেকে ট্রেন, বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, জীপ, কার এবং নৌকাসহ নানা ধরনের যানবাহনে এবং দলে দলে পায়ে হেঁটে ইজতেমা ময়দানে পৌঁছেন। এছাড়া ভোর থেকেই ইজতেমা ময়দানের দক্ষিণে খিলক্ষেত, বিশ্বরোড থেকে এবং উত্তরে গাজীপুর চৌরাস্তা, পশ্চিমে কামারপাড়া থেকে আশুলিয়া ধৌড় ও পূর্বে পূবাইল পর্যন্ত রিকসাসহ সকল ধরনের যান চলাচল বন্ধ রাখার ফলে সকাল থেকেই দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে ইজতেমা অভিমুখে ছুটতে থাকে মুসল্ল­ীদের কাফেলা। এতে তুরাগ তীরকে কেন্দ্র করে কয়েক বর্গকিলোমিটার জুড়ে ধর্মপ্রাণ মানুষের বিশাল মানব বলয় সৃষ্টি হয়। মোনাজাত শুরুর আগেই সকাল ১০টার মধ্যে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় তুরাগ তীরের পুরো ইজতেমাস্থল ও চারপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা।

সমাপনী দিনের বয়ান : গতকাল রোববার বাদ ফজর দিল্লীর মাওলানা মোরসালিনের বয়ানের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমার তৃতীয় দিন শুরু হয়। তাৎক্ষণিকভাবে মাওলানা মোরসালিনের বয়ান বাংলায় তরজমা করছেন বাংলাদেশের মাওলানা আশরাফুল। বয়ানের পর নাস্তার বিরতি দিয়ে ৯টা থেকে মাওলানা মোশাররফ দাওয়াতের পদ্ধতি বিষয়ে তালিমি বয়ান করেন। সাড়ে ৯টা থেকে শুরু হয় মাওলানা ইউছুফ বিন সা’দ কান্দলভির হেদায়েতি বয়ান। মোনাজাতপূর্ব হেদায়েতি বয়ানে দিল্ল­ীর মাওলানা ইউছুফ বিন সা’দ কান্দলভি সমবেত মুসল্ল­ীদের উদ্দেশ্যে বলেন, দাওয়াতের মেহনত কোন নতুন কিছু নয়। এই মেহনত আল্ল­াহর প্রিয়বান্দা নবী-রাসুল থেকে শুরু করে সাহাবায়েকেরাম আজমায়ীনগণ করে গেছেন। তিনি বলেন, অপর ভাইয়ের কাছে দিনের দাওয়াত পৌঁছাতে হবে হেকমত ও ধৈর্য্যর সাথে। অপর ভাইয়ের নিকট দাওয়াত পৌঁছানোর আগে তার হালত (অবস্থা) জানতে হবে। তাকে বুঝিয়ে দিনের পথে আনতে হবে। মাওলানা ইউছুফ তার হেদায়াতি বয়ানে আরো বলেন, যে সমাজ, জাতি বা রাষ্ট্র আলেমদের কদর যত বেশি করবে সে জাতি বা সমাজ তত বেশি সঠিক পথে পরিচালিত হবে। জ্ঞান আহরণের জন্যে আমাদেরকে আলেমদের মুখাপেক্ষী হতে হবে। তিনি বলেন, আল্ল­াহর রাস্তায় বের হওয়ার জন্য যারা জামাতবন্দি হয়েছেন তাদেরকে দু’ধরনের মেহনত করতে হবে। প্রথমত দিনের বেলা দাওয়াত করে মানুষকে মসজিদমুখি করতে হবে। দ্বিতীয়ত রাতের বেলায় চেখের পানি ফেলে আল্ল­াহর কাছে দোয়া করতে হবে। এ দু’ধরনের মেহনত না হলে কাজ পরিপূর্ণ হবে না। তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যেকটি কাজ হতে হবে আল্ল­াহকে রাজি খুশি করার উদ্দেশ্যে। তিনি আরো বলেন, আমরা আল্ল­াহর হুকুম ও নবী করীম (সঃ) তরিকা থেকে সরে গিয়েছি বলেই নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি।

ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা : এবারের ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। সাতস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ১০ হাজারের অধিক পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি রয়েছে ৩ হাজার সাদা পোশাকি গোয়েন্দা পুলিশ। আকাশে হেলিকপ্টার, নৌ-পথে স্পীড বোটে সতর্ক টহল ও নজরদারি। আকাশ ও নৌ-পথের পাশাপাশি সড়ক পথগুলোতে খালি চোখ ছাড়াও ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে বাইনোকুলার ও ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা এবং ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমে মুসল্লীসহ সকলের চলার পথ ও কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এসব কার্যক্রম শহীদ আহসান উল্লাহ স্টেডিয়ামে অস্থায়ীভাবে স্থাপিত প্রধান নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে মনিটরিং করা হয়েছে।

মোনাজাতে মহিলাদের অংশগ্রহণ : আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার মহিলা মুসল্লীও ইজতেমা ময়দানের আশেপাশের সড়কে, বিভিন্ন মিল-কারখানা, বাসা-বাড়িতে ও বিভিন্ন দালানের ছাদে বসে আখেরী মোনাজাতে অংশ নিতে দেখা গেছে।

যে কারণে দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা : বিশ্ব তাবলীগ জামাতের মুরুব্বীগণ জানান, দেশ-বিদেশে তাবলীগের দাওয়াত পৌঁছে যাওয়ায় পর্যায়ক্রমে ইজতেমায় শরীক হওয়া মুসল্লীদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে টঙ্গী তুরাগ তীরের ১৬০ একরের বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে স্থান সংকুলান হচ্ছিলো না। ২০১০ সালের বিশ^ ইজতেমায় রেকর্ড সংখ্যক আগত মুসল্লীদের মাঠে অবস্থান ও যাতায়াতে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তাই বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীদের অসুবিধা ও দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে ২০১১ সাল থেকে দুই পর্বে ইজতেমা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিলো। সেই থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিদেশি মুসল্লীদের পাশাপাশি দেশের অর্ধেক জেলা অর্থাৎ ৩২/৩৩ জেলার মুসল্লীগণ প্রথম পর্বে এবং বাকি অর্ধেক জেলার মুসল্লীগণ দ্বিতীয় পর্বে অংশ নিতেন। ২০১৮ সালে দিল্লীর মাওলানা সা’দ কান্দলভির একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে দেশ-বিদেশের আলেম ওলামাসহ তাবলীগ অনুসারি ধর্মপ্রাণ মুসল্লীদের মধ্যে মতবিরোধ ও এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে অনাকাঙ্খিত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনার পর সরকারের মধ্যস্থতায় মাওলানা যোবায়ের ও মাওলানা সা’দ অনুসারীরা পৃথকভাবে দুই পর্বে বিশ^ ইজতেমার আয়োজন করে আসছেন।

তাশকিল কামরা : ইজতেমা ময়দানের উত্তর পশ্চিম প্রান্তে করা হয়েছে বিদেশ মেহমানদের অবস্থানের জন্য টিনশেডের বিশেষ ক্যাম্প। তার পাশেই নির্মাণ করা হয়েছে তাশকিলের কামরা। ময়দানের খিত্তাগুলো থেকে বিভিন্ন মেয়াদে চিল্লায় নাম লেখানো ধর্মপ্রাণ মুসল্লীদের জামাতবন্দি করে তাশকিলের কামরায় জায়গা করে দেয়া হয়েছে। আখেরী মোনাজাত শেষে এসব মুসল্লীগণ জামাতবন্দি হয়ে তাবলীগের মুরুব্বীদের দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী দ্বীনের দাওয়াতী মেহনতের উদ্দেশ্যে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়বেন। এসব জামাতবন্দিদের মধ্যে ৪০ দিন, ৩ মাস, ৬ মাস, ১ বছর ও আজীবন চিল্লাধারী মুসল্লীগণ রয়েছেন। তারা বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা শহর এবং প্রত্যন্তর অঞ্চলে দাওয়াতি কাজ করবেন।

বিশ্ব ইজতেমায় ট্যুরিস্ট পুলিশের দেশীয় পর্যটনের প্রচারণা : বিশ্ব ইজতেমায় আগত বিদেশি মুসল্লিদের বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মীয় স্থানসহ দেশীয় পর্যটনের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে বিশেষ প্রচারণা চালিয়েছে বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট পুলিশ। এবারই প্রথম ট্যুরিস্ট পুলিশকে বিশ্ব ইজতেমায় আসা বিদেশি মেহমানদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত করা হয়। পর্যটন শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয় রিলিজিয়াস ট্যুরিজমকে। এটাকে বিশেষ আগ্রহের পর্যটনও বলা হয়, যা সাধারণত নির্দিষ্ট ধর্মীয় বিশ্বাসের অনুসারীদের সঙ্গে সম্পর্কিত। এই পর্যটকরা সাধারণত পবিত্র স্থান হিসাবে বিবেচিত জায়গাগুলো পরিদর্শন করেন।

এ বিষয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত আইজি হাবিবুর রহমান জানান, ইজতেমায় বাংলাদেশের রিলিজিয়াস ট্যুরিজমের প্রচারের জন্য সার্বিক সহযোগিতা করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। এছাড়াও পুলিশের অন্যান্য ইউনিটের সাথে সমন্বয় করে বিদেশি মুসল্লিদের সার্বিক নিরাপত্তা ও বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সেবা দেওয়া হয়েছে। বিদেশি মেহমানদের পাসপোর্ট হারানো, মোবাইল হারানো, সিম কার্ড প্রাপ্তি এবং চিকিৎসা সেবায় সহায়তা করা হয়েছে।

ইজতেমা শেষে বিদেশি মেহমানরা বাংলাদেশের কোথাও চিল্লায় যেতে চাইলে বা বাংলাদেশের কোনো ধর্মীয় ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমন করতে চাইলে ট্যুরিস্ট পুলিশ সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নিয়েছে। বিদেশি মুসল্লিরা যাতে ট্যুরিস্ট পুলিশের সহায়তা পেতে পারে সে জন্য তাদের ট্যুরিস্ট পুলিশের হটলাইন নম্বর (০১৩২০-২২২২২২, ০১৮৮৭-৮৭৮৭৮৭) সম্বলিত কার্ড সরবরাহের পাশাপাশি তাদের বাংলাদেশের ইসলামিক স্থাপনা ও হেরিটেজ সংক্রান্ত তথ্য প্রদান করা হয়েছে।

তিন ক্রিকেট তারকার মোনাজাতে অংশগ্রহণ : ইজতেমা ময়দানে আখেরি মোনাজাতে উপস্থিত হয়েছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটার জাভেদ ওমর বেলিন, সোহরাওয়ার্দী শুভ, শাহাদাত হোসেন রাজীব ও ইলিয়াস সানিসহ অনেকে। মুফতি ওসামার জামাতের সঙ্গী হিসেবে বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে এসেছেন এই তারকা ক্রিকেটাররা।

টাইগারদের সাবেক ওপেনার জাভেদ ওমর বেলিন জানান, প্রায় সবসময়ই তাবলিগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকি। ইজতেমার ময়দানটা একটা ব্যতিক্রমী জায়গা। এখানে কেউ বেফাঁস কথা বলতে পারবেন না। মানুষের প্রতি বিনয়ী হওয়ার এক জীবনমুখী শিক্ষা এখানে পাওয়া যায়। বরাবরই চেষ্টা করছি, তাবলিগে লম্বা সময় দেয়ার। আমার জন্য দোয়া করবেন।

সোহরাওয়ার্দী শুভ ইনকিলাবকে বলেন, ২০০৯ থেকে তাবলিগে যুক্ত হই। তখন থেকেই মুফতি ওসামা তাবলিগের বিভিন্ন প্রোগ্রামে নিয়ে এসেছেন। আমার পেছনে মেহনত করেছেন। উত্তম কথা দিয়ে আহŸান করেছেন।
শাহাদাত হোসেন রাজীব বলেন, এসে অনেক ভালো লাগছে। বিশেষ করে এখানকার পরিবেশ, মানুষের আন্তরিক সম্পর্ক, সহমর্মিতা সব মিলিয়ে দারুণ অভিজ্ঞতা। ইসলাম হচ্ছে একটি বাস্তব শিক্ষা। এখান থেকে শিক্ষা নিলেই জীবন আরও সুন্দর হবে।

মুফতি উসামা ইসলাম বলেন, সোহরাওয়ার্দী শুভ, শাহাদাত হোসেন রাজীব, ইলিয়াস সানিসহ অনেকেই পূর্ণ সময় দিচ্ছেন। তাদের সঙ্গে দাওয়াতের মেহনতের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করছি। পাশাপাশি তারাও ইজতেমায় এসে বেশ উচ্ছ¡সিত। আল্লাহ তাদের কোরবানিকে কবুল করুন।
ট্রেনে মুসল্লীদের প্রচন্ড ভিড় : আখেরি মোনাজাত শেষে টঙ্গী রেলওয়ে জংশন থেকে চলাচলকারী সকল ট্রেনে মুসল্লীদের প্রচন্ড ভিড় দেখা গেছে। মুসল্লীরা ট্রেনের ভিতরে জায়গা না পেয়ে মই বেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাঁদে উঠে গাদাগাদি করে নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে দেখা যায়।

দুই পর্বে মোট ১৩ জন মুসল্লীর মৃত্যু : শীত, বার্ধক্যজনিত ও হৃদরোগসহ অন্যান্য কারণে ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমার দুই পর্বে মোট ১৩ জন মুসল্লী ইজতেমা ময়দানে মৃত্যুবরণ করেন। ১৩ জানুয়ারি থেকে ১৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ইজতেমার প্রথম পর্বে ৮ জন মুসল্লী মারা যান। তারা হলেন, ঢাকার বংশালের মৃত ছমির উদ্দিনের ছেলে আনিসুর রহমান (৭১), খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থানার মলমলিয়া গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে মুফাজ্জল হোসেন খান (৭০), চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানা সদরের আব্দুর রশিদের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক (৭০), নরসিংদী জেলার মনোহরদী থানার মাসিমপুর গ্রামের রহমতুল্লাহর ছেলে হাবিবুর রহমান হাবি (৭০), সিলেটের জৈন্তাপুরের নুরুল হক (৬৩), ঢাকার কেরানীগঞ্জের হাবিবুল্লাহ হবি (৬৮), গাজীপুরের ভুরুলিয়ার আবু তৈয়ব ওরফে আবু তালেব (৯০) ও ঢাকার মুন্সীগঞ্জ শ্রীনগরের আক্কাস আলী শিকদার (৫০) মৃত্যুবরণ করেন।

২০ জানুয়ারি থেকে ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় ও শেষ পর্বে ৫ জন মুসল্লী মারা গেছেন। তারা হলেন, ঢাকার কদমতলী থানার পূর্ব জুরাইন এলাকায় মুসল্লি আব্দুল জব্বারের ছেলে আব্দুল হান্নান (৪৫), রাজধানীর গুলিস্তানের বঙ্গবাজার এলাকার ব্যবসায়ী বোরহান (৪৮), শুক্রবার সন্ধ্যায় গাইবান্ধার শুকুর মন্ডলের ছেলে আব্দুল হামিদ মন্ডল (৫৫) ও ঢাকার সাভারের বাসিন্দা আব্দুল আলীমের ছেলে মফিজুল ইসলাম (৫৪)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন