সেন্সর বোর্ডে দীর্ঘ ৪ বছরের বেশি সময় আটকে থাকা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমা মুক্তির অনুমতি পেয়েছে। শর্ত সাপেক্ষে সিনেমাটি মুক্তির অনুমতি দিয়েছে বোর্ডের আপিল কমিটি। মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে সভাপতি ও সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যানকে আহ্বায়ক করে গঠিত সাত সদস্যের সেন্সর আপিল কমিটিতে সংসদ সদস্য ও অভিনয়শিল্পী সুবর্ণা মুস্তাফা, সাবেক অতিরিক্ত সচিব নূরুল করিম, অভিনেত্রী সুচরিতা ও প্রেসক্লাবের সাধারণ স¤পাদক শ্যামল দত্ত সদস্য হিসেবে এবং সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান সদস্যসচিব হিসেবে ছিলেন। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ঘটা ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলাকে উপজীব্য করে নির্মিত সিনেমাটি নিয়ে আপিল বোর্ডের শুনানি হয় গত শনিবার। এদিন সিনেমার নির্মাতা-প্রযোজকের বক্তব্য শোনেন আপিল কমিটির সদস্যরা, তার আলোকে সিনেমাটি নিয়ে মতামত দেন যে, এটির মুক্তিতে কোনো বাধা নেই। সাংবাদিকদের শ্যামল দত্ত জানান, আমরা ছবিটি ছেড়ে দিয়েছি মুক্তির জন্য। শর্ত সাপেক্ষে এর মুক্তিতে বাধা নেই। শর্তটি হলো, ছবির শুরুতে একটি ডিসক্লেইমার দিতে হবে। যেখানে লেখা থাকবে- এটি হলি আর্টিজান সংশ্লিষ্ট কোনও ঘটনা অবলম্বনে নয়। এ বিষয়ে পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী জানান, এখন পর্যন্ত আমরা লিখিত এমন কিছু পাইনি। যেহেতু জানতে পেরেছি, আপিল বোর্ডের সম্মানিত সদস্য বলেছেন, ‘শনিবার বিকেল’ ছবিটি প্রদর্শনে এখন আর কোনো বাধা নেই। তাদের এ সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আপিল বোর্ড সদস্যদের বিচক্ষণতাকে সম্মান জানাই। একই সঙ্গে ফিল্ম অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশের (ফ্যাব) যেসব বন্ধুবান্ধব ও সহকর্মীরা মিলে আন্দোলন করেছেন, তাঁদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। এখন আমরা দ্রুত ছবিটি মুক্তি দেব। ডিসক্লেইমার দেয়া প্রসঙ্গে ফারুকী বলেন, এখনো চিঠি পাইনি। চিঠি পাওয়া মাত্রই আমরা সে বিষয়ে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমাটি সেন্সর বোর্ডে জমা দেয়া হয়। ৯ জানুয়ারি সিনেমাটির প্রদর্শনী হয়। তখন সেন্সর ছাড়পত্র পায়নি। পরিচালকের মতে, ‘শনিবার বিকেল’ আটকানোর প্রক্রিয়ায় বহু নিয়মবহির্ভূত ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, আমরা যখন সিনেমাটি শুট করতে যাই, তখন তথ্য মন্ত্রণালয়ে চিত্রনাট্য জমা দিয়ে বিদেশি শিল্পী ও কলাকুশলী আনার জন্য আবেদন করি। তখন তথ্যমন্ত্রী ছিলেন হাসানুল হক ইনু। তথ্য মন্ত্রণালয় ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন দপ্তর সেই স্ক্রিপ্ট পড়ে আমাদের অনুমোদন দেয়। শুধু অনুমোদনই নয়, দপ্তরের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা আমাদের ফোন করে উৎসাহও দেন। সেই চিত্রনাট্য থেকেই ছবিটি বানিয়ে আমরা সেন্সর বোর্ডে জমা দিয়েছি। সেন্সর বোর্ড সদস্যরা ছবিটি দেখে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ইন্টারভিউ দিয়ে বললেন, ছবিটি ভালো হয়েছে। বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছবি, দ্রুত সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। তারপর যেটা ঘটল, সেটা অভাবনীয়। ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশের অনলাইনে একযোগে কিছু রাজনীতি করা মানুষের লিংকে দাবি করা হলো ‘শনিবার বিকেল' নিষিদ্ধ করতে হবে। যাঁরা এটা করলেন, তাঁরা কেউই সিনেমাটা দেখেননি। উল্লেখ্য, ‘শনিবার বিকেল’ একটি সিঙ্গেল শট সিনেমা। এর কারিগরি বিভাগে কাজ করেছেন চিত্রগ্রাহক আজিজ জাম্বাকিয়েভের নেতৃত্বে রাশিয়া থেকে আগত একটি সুদক্ষ দল। চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেছেন আব্দুল আজিজ, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং আনা কাচকো। অভিনয় করেছেন ফিলিস্তিনের অভিনেতা ইয়াদ হুরানি, ইউরোপের এলি পুসো, সেলিনা ব্ল্যাক, বাংলাদেশের নুসরাত ইমরোজ তিশা, জাহিদ হাসান, মামুনুর রশীদ এবং ভারতের অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়সহ অনেকে। সিনেমাটি বাংলাদেশ, ভারত ও জার্মানির যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন