শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বিএনপির আন্দোলনে নতুন ধারা

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেয়া, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্তাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূলের উর্ধ্বগতির প্রতিবাদ, নেতাকর্মীদের হত্যা, হামলা, মামলা, গুম, গ্রেফতারের প্রতিবাদে একগুচ্ছ ধারাবাহিক কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করছে বিএনপি। এসব কর্মসূচিতে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সমমনা ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও সংগঠনও। প্রতিটি কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন সচেতন ও সাধারণ মানুষ। কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও হয়ে উঠেছেন উজ্জীবিত। যদিও কর্মসূচির চাওয়া, ধরণ নিয়ে আছে নানা আলোচনা। তবে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে কর্মসূচি নির্ধারণে তৃণমূলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেন এবং পৃথকভাবে কথা বলে পরামর্শও নেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এসময় সমাবেশ, মহাসমাবেশ, লংমার্চ, রোড মার্চ, অবস্থান, ঘেরাও, হরতাল, অবরোধের মতো নানামুখী কর্মসূচির পরামর্শ দেন তারা। সমমনা দল ও জোটগুলোর সঙ্গেও চলছে কর্মসূচি নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক। একই সঙ্গে রাজপথে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, অবস্থান, পদযাত্রার মতো কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নেতাকর্মীদের অভিমত, চলমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণায় চমক দেখিয়েছে রাজপথের প্রধান বিরোধী দলটি। হরতাল, অবরোধ, ভাঙচুরের বিপরীতে শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ, অবস্থান, পদযাত্রার মতো কর্মসূচি মাধ্যমে সচেতন মহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে বিএনপি। এসব কর্মসূচিতে তাৎক্ষণিক কোন প্রভাব না পড়লেও দীর্ঘ মেয়াদে সরকারবিরোধী আন্দোলনকে টেনে নিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন নীতিনির্ধারক নেতারা। শান্তিপূর্ণ, নিয়মতান্ত্রিক ধারাবাহিক আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পতন ঘটাতে চান তারা।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভূমিধ্বস পরাজয়ের পর সংগঠন পুনর্গঠনে মনোযোগ দেয় বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় ও প্রত্যক্ষ তত্ত¡াবধানে ঢেলে সাজানো হয় বিএনপির বিভাগীয়, জেলা এবং অঙ্গসংগঠনের কমিটিগুলো। দীর্ঘদিন ধরে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষে গত বছরের ৩১ জুলাই থেকে লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে কর্মসূচি নিয়ে নামে বিএনপি। ওই কর্মসূচিতে পুলিশের গুলিতে ভোলায় দুইজন নেতা নিহত হয়। এরপর ২২ আগস্ট থেকে ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, থানা-পৌর, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। এসব কর্মসূচিতে ব্যাপক সাড়া পেয়ে অক্টোবর থেকে বিভাগীয় গণসমাবেশ করে দলটি। এসব কর্মসূচিতে নানারকম বাধা-প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে পায়ে হেটে, নদী সাতরিয়ে, রিক্সা-ভ্যান, সাইকেল, নৌকায় করে বিএনপির গণসমাবেশ লাখো মানুষ অংশ নেয়। যা ওইসময় রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক সাড়া ফেলে। পথে পথে বাধা, হামলা, মামলা, গ্রেফতারের পরও প্রতিটি কর্মসূচিই শান্তিপূর্ণভাবে সফল করায় নানা মহলে প্রশংসাও কুড়িয়েছে দলটি। তারা বলছেন, নানারকম উস্কানি-উত্তেজনার পরেও সহিংসতা এড়িয়ে বিএনপি যেভাবে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছে তাতে আন্দোলনের নতুন ধারার সূচনা করেছে দলটি।

বিভাগীয় গণসমাবেশের পর ঢাকার গণসমাবেশ থেকে দশ দফার ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। প্রথম কর্মসূচি হিসেবে ঢাকায় ৩০ ডিসেম্বর এবং ঢাকার বাইরে ২৪ ডিসেম্বর গণমিছিল হয়। এরপর ১১ জানুয়ারি ঢাকাসহ সারা দেশে বিভাগীয় শহরে গণঅবস্থান এবং ১৬ জানুয়ারি দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। চতুর্থ কর্মসূচি হিসেবে ২৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবসে দেশব্যাপী জেলা ও মহানগরে সমাবেশ করে। ওইদিন আবারও ৪ ফেব্রæয়ারি বিভাগীয় সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। একই সঙ্গে গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকার ৪টি এলাকায় ৪ দিনের পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এসব কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালনের আহŸান জানিয়েছেন তিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, এই পদযাত্রা হবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারসহ ১০ দফা দাবিতে। সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এই কর্মসূচি হবে। আমরা আশা করবো, সকলে এতে সহযোগিতা করবেন এবং জনগণ স্বত:স্ফূর্তভাবে এই কর্মসূচিতে অংশ গ্রহন করবে। তিনি জানান, এই কর্মসূচি মহানগর বিএনপির। এটা অন্যান্য দলকেও বলব যে, তারা অংশগ্রহন করতে চাইলে যুগপৎভাবে করবেন।

শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, গত ২২ আগস্ট থেকে গণতন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য আমরা যে কর্মসূচি শুরু করেছি, এই কর্মসূচিতে আমাদের ১৫ জন নেতাকর্মীর প্রাণ দিয়েছেন। এই ভয়াবহ অগণতান্ত্রিক, একনায়কতন্ত্র সরকার টিকে থাকার জন্য তারা অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশের গুলিতে ও আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের নির্যাতনে প্রায় ১৫ জন ভাই মৃত্যুবরণ করেছেন। তারা বীরের মত, তারা কেউ পিছনে পালাতে গিয়ে শহীদ হননি; সামনে দাঁড়িয়ে বুক পেতে দিয়ে তারা চলে গেছে। আমাদের নেতা কর্মীদের উজ্জীবিত করেছে, আরও ত্যাগ স্বীকার করার জন্য আমাদের সহকর্মীরা শপথ গ্রহণ করেছে। যতই নির্যাতন আসুক, যতই নিপীড়ন আসুক, আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই ভয়াবহ দানবকে পরাজিত করব।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে বিদায় করা হবে। আমরা এই পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে সকল প্রকার আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। আগামীদিনেও সরকার বিদায় হওয়া পর্যন্ত আমরা শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিকভাবে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করে এই সরকারকে বিদায় করবো।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ধারাবাহিকভাবে এখন কর্মসূচির পর কর্মসূচি আসবে। সেই কর্মসূচি হবে একদফার সুষ্ঠু ও অবাধ একটি নির্বাচনের জন্য। সেই নির্বাচনের পূর্ব শর্ত শেখ হাসিনার পদত্যাগ। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে কখনও এদেশের মানুষ সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না।

তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রস্তুতি বিএনপির প্রয়োজন নেই। শেখ হাসিনার পতনই হলো বিএনপির নির্বাচনের প্রস্তুতির ৯৯ ভাগ। এ একটা কাজ করতে পারলে বাংলাদেশের জনগণ ভোটকেন্দ্রে যাবেন। আর যাই হোকে নৌকায় ভোট দেবেন না।

গয়েশ্বর বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল গণতন্ত্র। কিন্তু স্বাধীন দেশে আমরা গণতন্ত্র হারিয়ে ফেলেছি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে প্রয়োজন অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন। আর সুষ্ঠু নির্বাচনে দরকার নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার। এ লক্ষ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা আন্দোলনে রয়েছি। বিরোধী দলগুলোসহ জনগণ সেই আন্দোলনে শরিক হয়েছে। হয় আমরা মরব, না হয় দাবি আদায় করব।

নতুন কর্মসূচি প্রসঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দেশব্যাপী আওয়ামী সন্ত্রাস, সরকারের দমনপীড়ন-নির্যাতন, বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি, বিদ্যুৎ-গ্যাস ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য কমানোসহ ১০ দফা দাবিতে আগামী ৪ ফেব্রæয়ারি আমরা ঢাকাসহ সারা দেশে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করছি।

সরকারের পতন আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কতগুলো বিভ্রান্তি আমি দূর করতে চাই। এ রকম না যে আপনি আজকে বললেন, কালই একটা অভ্যুত্থান হয়ে গেল। আন্দোলনও গড়ে তুলতে হয়। আন্দোলনকে ধীরে ধীরে তার পরিণতিতে নিজের জায়গায় নিতে হয়। সেটা হয়ত এক দিনে হয় না। তখন কী রকম হয় কর্মসূচির, রিপিটেশন হয়। আজকে যে কর্মসূচি করি, হয়ত ১০ দিন পরে একই কর্মসূচি থাকে। কিন্তু সেই কর্মসূচিতে আজকের চাইতে বেশি দৃঢ়তা, আরও বেশি লড়াকু মনোভাব থাকে।

মান্না আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমাদের কর্মসূচি চলবে। ৪ তারিখ আবারও কর্মসূচি ঘোষণা করব। ওই যে বলেছি, এই দিনকে নিয়ে যাব সেই দিনের কাছে, যেদিন আমাদের বিজয়ের দিন। আমি মনে করি, এই বছর সরকারের পতন হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
salman ২৭ জানুয়ারি, ২০২৩, ৩:১৮ এএম says : 0
Hasena k Kabu korte ai muhurte sobchaite boro Ostroo HORTAL. Taka nai, Jinish potrer dam akash chowa, Dollar songkot. Lagatar Hortal delay hasena Poray Jaby kono sondeho na
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন