পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদ-নদী বিধৌত মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার চরাঞ্চলে বোরো ধান আবাদে ব্যস্ত সময় যপার করছেন কৃষকরা। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বোরো ধানের চারা রোপণ করতে দেখা যাচ্ছে কৃষকদের।
বোরো ধান রোপণের জন্য কাদা-পানিযুক্ত জমি প্রস্তত করে শীতের মধ্যেই ধান চাষে সকাল-সন্ধ্যা পরিশ্রম করছেন উপজেলার চর এলাকার চাষিরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিবচরের আড়িয়াল খাঁ ও পদ্মাবেষ্টিত চর এলাকার মধ্যে বন্দরখোলা, সন্যাসীর চর, মাদবরেরচর, চরজানাজাত, কাঁঠালবাড়ী, শিরুয়াইল, নিলখী, দত্তপাড়া, বহেরাতলা এলাকার নদীর তীরবর্তী চর এলাকায় ব্যপক হারে চাষ হয় বোরো ধান।
স্থানীয় কৃষকরা প্রতি বছরই অন্যান্য ফসলের সঙ্গে প্রাধান্য দিয়ে বোরো ধানের আবাদ করে থাকেন। চলতি মৌসুমেও চর এলাকার ফসলি জমিতে ব্যপক হারে বোরোর আবাদ করা হচ্ছে।
এদিকে বাজারে বিক্রির পাশাপাশি বছরের চালের জোগানও অনেকে নিজ জমিতে ফলানো ধান থেকে করে থাকেন। আর এ কারণেই ধান চাষে তাদের আগ্রহ বেশি বলে জানান কৃষকরা।
চাষিরা জানান, বোরো আবাদের জন্য পদ্মা, আড়িয়াল নদীর চরাঞ্চল ছাড়াও উপজেলার মৃত অন্যান্য নদ-নদীর তীরে উপযুক্ত মাটি আছে। এ কারণে প্রতি বছরই এসব এলাকায় বোরো ধান ভালো জন্মে। এসব স্থানে কৃষি জমি পানিযুক্ত থাকায় বোরো ধান ভালোভাবে চাষ করা যায়।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ হাজার ৯৭০ হেক্টর। ধান চাষে উপজেলার কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে সরকারিভাবে প্রণোদনা, উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে কৃষকদের। এছাড়া ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত কৃষকদের সব বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।
উপজেলা কৃষি অফিস আরও জানায়, উপজেলার চরজানাজাত, কাঁঠালবাড়ি, মাদবরেরচর, বন্দরখোলা, সন্যাসীরচরসহ আশপাশের এলাকাতে ফসলের মাঠ এখন বোরো ধানের দখলে। কৃষকরা জমি পরিস্কার, জৈব সার দেওয়া এবং সেচের জন্য মাটি কেটে ড্রেন নির্মাণ করছেন। এসব জমিতে প্রতি বছর বোরো ধানের আবাদ বেশ ভালো হয়ে থাকে।
স্থানীয় কৃষক মো. ফারুক বলেন, বাজারে বিক্রির পাশাপাশি সারাবছর নিজেদের খাবারের বিষয়টি মাথায় রেখে এ বছর বোরোর আবাদ বাড়িয়েছি। তবে ধান উৎপাদনে খরচ বেড়েছে। বাজারে সঠিক মূল্য পেলে কৃষকরা ভালো থাকবেন।
চরজানাজাতের ইউনিয়নের একাধিক কৃষক জানান, গত বছর বাজারে ডিজেল তেল ও কীটনাশক ওষুধের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় এবং ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছিলাম। তাই লোকসান কাটিয়ে ওঠার আশা নিয়ে এবারও বোরো ধানের আবাদ শুরু করেছি। শ্রমিক দিয়ে কাজ করাচ্ছি। গত কয়েকদিন ধরে ধান রোপণের কাজ চলছে।
বহেরাতলা এলাকার বোরো চাষি মো. রাকিব জানান, আমরা প্রতি বছরই ধানের চাষ করি। তবে দিন দিন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। আর সে অনুযায়ী ধানের দাম পাওয়া যাচ্ছে না।
শিবচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, শিবচরের নদ-নদী তীরবর্তী এলাকার চাষিরা এখন বোরো ধান লাগাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আমরা আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতিসহ সব ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি। চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো ফলন আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন