বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ঢাবির হলে ছাত্রলীগের রাতভর সংঘর্ষ, আহত ৯

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলের দক্ষিণ ভবনে (এক্সটেনশন বিল্ডিং) ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১০ জন ছাত্রলীগ নেতা আহত ও বেশ কয়েকটি রুমে ব্যাপক ভাঙচুর হয় বলে জানা গেছে।

গত সোমবার দিনগত রাত সাড়ে ১২ টা থেকে ঘটনার সূত্রপাত হয়ে চলে ভোর পর্যন্ত। এ ঘটনায় একপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, অন্যপক্ষে কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের অনুসারীরা জড়িত ছিলেন।

এই ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারীদের মধ্যে নয়জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে আছেন- জিওগ্রাফি বিভাগের ইমামুল হাসান, এপ্লাইড ম্যাথের মাহমুদুল হাসান, পারভেজ, রিদওয়ানুর, মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের কল্লল, কাউসার, সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের শাহেদ প্রমুখ। এরমধ্যে চারজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মুর্তজা মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাকীরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হলে ফিরেছেন। এদের মধ্যে ইমামুল হোসেন নামে একজন গুরুতর আহত বলে জানা যায়।

হল সূত্রে জানা যায়, তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী সাব্বির অনিক নামের এক কর্মীকে ৫০০৬ নং রুম থেকে বের করে সেটিতে তালা লাগিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ওই হলের সভাপতি নাঈম ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসিব মুক্তর গ্রুপ। পরে সৈকতের নেতা-কর্মীরা তালা ভেঙে রুমে প্রবেশ করে। এ কথা শুনে হল সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নাঈম এবং মুক্তের অনুসারীরা সৈকতের অনুসারীদের মারধর করে ওই কক্ষ থেকে বের করে দেয়। এসময় ১০১৫, ৫০০৬, ৩০১০, ৪০০১, ২০০৪, ৪০১০, ৩০১৪, ২০০৯, ৩০০৮, ২০১৮, ৪০১৮, ৩০০৭ কক্ষগুলোতে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা এবং ভাংচুর করা হয়। এতে সৈকতের প্রায় ৯ জনের মতো আহত হয়েছে। হামলাকারীরা ৫০০৬ নং কক্ষে অবস্থান করা সাব্বির অনিকের মোবাইল ফোন ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এদিকে, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনানের অনুসারী ও ফজলুল হক হল ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাঈম অভিযোগ করেন, ফজলুল হক হলের দক্ষিণ ভবনে সিট সংক্রান্ত কারণে রাত সাড়ে ১২ টার দিকে দুই গ্রুপের মধ্যে ঝামেলা হয়। আমি আমার রুমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের ১০ থেকে ১২ জন সভাপতি সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে রাতের খাবারের আয়োজন করি। খাওয়া শেষে সবাই রুমে অবস্থান করছিলাম। এমতবস্থায় রাত দেড়টার দিকে ৮ থেকে ১০ জন অতর্কিতভাবে দেশিও অস্ত্রসহ আমার রুমে হামলা করে। হামলা করে দ্রুতই পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তৎক্ষনাৎ তাদেরকে হাতেনাতে ধরে ফেলি এবং তারা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈকতের অনুসারী।

হল সভাপতি নাইমের ভাষ্যমতে হামলাকারীরা হলেন, হল ছাত্রলীগের গ্রন্থণা ও প্রকাশনা উপসম্পাদক শাওন চৌধুরী, দপ্তর উপসম্পাদক জিহাদুল ইসলাম, সমাজসেবা সম্পাদক আসাদুল্লাহ আসাদ ও উপ অর্থবিষয়ক সম্পাদক আল-কাওসারসহ আরো অনেকে। তারা সবাই শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী।

নাইম বলেন, এরা সবাই আমার সাথে রাজনীতি করতো। হল কমিটিতে পদায়নের ক্ষেত্রে হয়তো কাউকে নিজেদের প্রত্যাশিত পদে পদায়ন করতে পারিনি। তাই আমার প্রতি তাদের একটা ক্ষোভ ছিল। যে কারণে আমার উপর এই গুপ্ত হামলা।

এদিকে পাল্টা বক্তব্য দেন প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, হল ছাত্রলীগের সভাপতির রুমে হামলা হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈকতের অনুসারীদের উপর হামলা চালায় কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের অনুসারীরা। এতে তানভীর হাসান সৈকতের অন্তত ১০ জন অনুসারী আহত হয়।

শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, মূলত আমার সাথে রাজনীতি যারা করে তারাই মাইর খেয়েছে। তাদের তিনজনকে মাথা পাঠানো হয়েছে আর ৫ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হলে পাঠানো হয়েছে। এখানে আমার সাথে রাজনীতি করা কেউ যদি দোষী হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর যদি শুধু আমার সাথে রাজনীতি করার কারণে তাদেরকে মাইর খেতে হয় তাহলে সেটারও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সার্বিক ব্যাপারে হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. শাহ মো. মাসুম বলেন, ঘটনার ব্যাপারে আমরা অবহিত হয়েছি। হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। সভা থেকে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিবো।

আমদানি-রফতানিতে বিপর্যয়
চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজরে সংখ্যা কমছে ব্যস্ততা নেই বেসরকারি ডিপোতে নেতিবাচক ধারায় রাজস্ব আহরণ
রফিকুল ইসলাম সেলিম
বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য। চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ আসা কমছে। কমেছে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংও। দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরকে ঘিরে আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী যানবাহনের জটও নেই। বেসরকারি ডিপোগুলোতেও নেই তেমন ব্যস্ততা। তাতে রাজস্ব আহরণে টান পড়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টম হাউস ও বেসরকারি ডিপোগুলোর তথ্য বলছে ডিসেম্বরের তুলনায় গেল জানুয়ারিতে আমদানি-রফতানি আরও কমেছে।

বৈশি^ক অর্থনৈতিক মন্দা সেই সাথে দেশে অব্যাহত ডলার সঙ্কটের কারণে বৈদেশিক বাণিজ্যে এ মহামন্দা অবস্থা নেমে এসেছে। পবিত্র মাহে রমজান সামনে রেখে ভোগ্যপণ্য আমদানি কিছুটা বাড়লেও শিল্পের কাঁচামাল, ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ও যন্ত্রপাতি আমদানি একেবারেই কমে গেছে। বিদেশি ক্রেতাদের অর্ডার না থাকায় কমেছে তৈরি পোশাক কারখানার কাঁচামাল আমদানি। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে দেশে শিল্প উৎপাদনে ধস নামবে। তাতে বাড়বে বেকারত্ব। নতুন কর্মসংস্থানের পথ আরও সঙ্কুচিত হয়ে যাবে। আমদানি নির্ভর ভোগ্যপণ্যের দাম সাধারণের নাগালের বাইরে চলে যাবে।

প্রতিবছর রমজানের কয়েক মাস আগে থেকে বন্দরে ব্যস্ততা বেড়ে যায়। ভোগ্যপণ্যবাহী জাহাজ বন্দর জেটিতে ভিড়ার জন্য দিনের পর দিন বহির্নোঙরে অপেক্ষা করে। রীতিমত জট পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় বন্দর ইয়ার্ড, জেটি ও বেসরকারি ডিপোগুলোতে। কিন্তু এবারের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। বন্দরের একাধিক জেটি নিয়মিত খালি থাকছে। বহির্নোঙরে আসা জাহাজ কোন অপেক্ষা ছাড়াই জেটিতে ভিড়তে পারছে। বন্দর ইয়ার্ডেও নেই কন্টেইনারের চাপ। একই দৃশ্য চট্টগ্রামের ১৯টি বেসরকারি ডিপোতেও। ডিপোগুলোর সামনে পণ্যবাহী ভারী যানবাহনের জটলা নেই। বন্দরকে ঘিরেও নেই যানবাহনের জট।

দেশে রিজার্ভে টান পড়ায় গত অক্টোবর থেকে আমদানি কমতে থাকে। সরকারি তরফে, উচ্চবিলাসী এবং কম প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে বাধা-নিষেধ আরোপ করা হয়। এরপর থেকেই আমদানি বাণিজ্যে নেতিবাচক ধারা শুরু হয়। ডলার সঙ্কট আরও প্রকট হওয়ায় অব্যাহতভাবে কমতে থাকে এলসি খোলার হার। আর এর প্রভাব পড়ে সার্বিক আমদানিতে। রফতানিখাতেও মন্দা চলছে। বৈশি^ক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে আমেরিকা, ইউরোপের দেশগুলোতে চলছে কৃচ্ছতা সাধন। ওইসব দেশে বাংলাদেশি পোশাক রফতানি একেবারেই কমে গেছে। রফতানি কমে যাওয়ায় তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামাল আমদানিও হ্রাস পেয়েছে।

আমদানি-রফতানিতে মহামন্দার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। বন্দরে জাহাজ ও কন্টেইনার আসার হার ক্রমাগতভাবে কমছে। বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, জানুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে মোট ৩৪৩টি জাহাজ ভিড়েছে। আগের বছরের একই মাসে এ সংখ্যা ছিল ৩৫৮টি। ডিসেম্বরে ৩৬৮ ও নভেম্বরে ভেড়ে ৩৭৩টি জাহাজ। বিগত তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংও কমেছে। জানুয়ারিতে দুই লাখ ২১ হাজার ৮৫৬ টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। যা আগের বছরের এ সময়ের তুলনায় কম। ২০২১ সালের নভেম্বরে দুই লাখ ৪৬ হাজার ৮৪৮ টিইইউএস হ্যান্ডলিং হলেও গত ডিসেম্বরে হয়েছে দুই লাখ ৩৯ হাজার ৩৮৮ টিইইউএস।

আমদানি-রফতানি কমে যাওয়ায় কয়েক মাস ধরে বন্দর ইয়ার্ডে ধারণক্ষমতার চেয়ে কম কন্টেইনার জমছে। বন্দর ইয়ার্ডের ধারণক্ষমতা ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউএস। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সেখানে ৩১ হাজার ৮৪৭ টিইইউএস কন্টেইনার ছিল। জেটি খালি থাকায় বহির্নোঙরে অপেক্ষায় থাকছে না জাহাজ। বন্দরের ব্যস্ততা কমে যাওয়ায় শ্রমিকদের আয়-রোজগার কমে গেছে। আমদানি-রফতানি সংশ্লিষ্ট শিপিং, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, পরিবহন খাতেও মন্দা চলছে। আয় কমে যাওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা অনিয়মিত হয়ে পড়ছে।

আয়-রোজগার কমেছে বেসরকারি ডিপো মালিকদেরও। চট্টগ্রামের ১৯টি বেসরকারি ডিপো দিয়ে প্রায় ৯৮ শতাংশ রফতানি পণ্য জাহাজিকরণ হয়। ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্য ডিপো থেকে খালাস নেওয়া বাধ্যতামূলক। ডিপোগুলোতে অব্যাহতভাবে কমছে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং। জানুয়ারি মাসে বেসরকারি ডিপোতে ৫৬ হাজার ৯৯৫ টিইইউএস রফতানি পণ্য, ১৩ হাজার ৭৩৭ টিইইউএস আমদানি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। আর খালি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৪০ হাজার ৩৫ টিইইউএস। আগের বছর একই মাসে ৬৭ হাজার ১৪৭ টিইইউএস রফতানি, ২৩ হাজার ১৬৭ টিইইউএস আমদানি এবং ৩৩ হাজার ২৫২ টিইইউএস খালি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়।

আমদানি-রফতানিতে বিপর্যয়ের ফলে কাস্টম হাউসে আমদানি পণ্য খালাসের বিল অব এন্ট্রি (বিইএল) দাখিলের সংখ্যা কমছে। কাস্টম হাউসের রাজস্ব আহরণেও বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। জানুয়ারি মাসে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ৪.৩৮ শতাংশ কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থ বছরের জানুয়ারি মাসে চার হাজার ৯৬২.১৪ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করা হয়। আর গেল জানুয়ারিতে রাজস্ব আদায় হয়েছে চার হাজার ৭৪৪.৬১ কোটি টাকা। জানুয়ারি মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৮.৬৭ শতাংশ কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। চলতি অর্থ বছরের শুরু থেকে রাজস্ব আহরণে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হলেও ডিসেম্বর থেকে তা নেতিবাচক ধারায় নেমে আসে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে অর্থ বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হবে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন