বর্তমানে মহিলারা দাওয়াতী কাজ করা কেন প্রয়োজন: বর্তমানে মহিলারা দাওয়াতী কার্যক্রম করা বেশি জরুরি ও প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী আমেরিকায় অন্য যে কোন শ্রেণির তুলনায় মেয়েদের ইসলাম গ্রহণের সংখ্যা বেশি। কানাডা, ইংল্যান্ড ও আরও অনেক জায়গার ক্ষেত্রে এই কথা বলা যায়। ডমিনিকান রিপাবলিকে আল-জুমুয়াহ ম্যাগাজিন কর্তৃক পরিচালিত এক সার্ভেতে দেখা গেছে যে স্থানীয়দের মাঝে যারা ইসলাম গ্রহন করেছে তাদের ৭৫%ই হচ্ছে মেয়ে। সারা বিশে^ ক্রমবর্ধমান মুসলিমদের এ সময়ে নারীরা যেভাবে ইসলামের প্রতি ধাবিত হচ্ছে তা টিকিয়ে রাখা ও জোরদার করার জন্য মুসলিম নারীগণ এগিয়ে আসাই সময়ের দাবি। কারণ নারীরা নারীদের মাঝে কাজ করা সহজ একজন পুরুষের তুলনায়। যেমনÑ
ক. ইসলাম নারী ও পুরুষের অবাধ মেলামেশা নিষেধ করে ও পর্দাপ্রথা মেনে চলতে আদেশ করে, তাই সমাজের মেয়েদের মাঝে যোগ্যতা সম্পন্ন মেয়েরা দাওয়াতী কাজ করবে।
খ. মেয়েদের কিছু ব্যক্তিগত বিষয় আছে যা তারা পুরুষদের কাছে প্রকাশ করতে সংকোচবোধ করে। তারা সেসব বিষয় নিয়ে শুধুমাত্র অন্য মেয়েদের সাথে কথা বলতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে। এক্ষেত্রে মহিলা দায়ী যদি থাকে তবে তা সহজে সমাধান করা যাবে।
গ. মেয়েরা সহজেই অন্য মেয়েদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে, যা ছেলেরা পারে না। মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে অন্য মেয়েদের কথা, কাজ ও আচরণের দ্বারা বেশি প্রভাবিত হয়। মেয়েদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের খুঁটিনাটি ও সমস্যা চিহ্নিত করতে মেয়েরাই বেশি উপযুক্ত। সে হিসেবে তারা দাওয়াত দেবে। যা পুরুষের ক্ষেত্রে কষ্টসাধ্য হবে।
ঘ. মেয়েরা বেশি ভালো বুঝতে পারে কোন দিকে মেয়েদের দাওয়াতী কাজের প্রয়োজনীয়তা বেশি। তারাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দাওয়াতী কাজ পরিচালনা করতে সক্ষম কারণ তারা এই ক্ষেত্র সম্পর্কে তুলনামূলক বেশি পরিচিত।
ঙ. ব্যক্তিগত দাওয়াতী কাজ বা জামাতবদ্ধ দাওয়াতী কাজ সবস্থানে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা মেয়েদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
চ. বহু মুসলিম মেয়ের দিকনির্দেশনা ও শিক্ষার প্রয়োজন কিন্তু তাদের এই সেবা দিতে পারে এমন পুরুষের অভাব রয়েছে। তাই যোগ্যতা সম্পন্ন মেয়েদের এই কাজটা করা উচিত।
ছ. ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রয়োজন বেশি। তারা গর্ভধারণ করে, সন্তান জন্ম দেয় ও প্রতিপালন করে। বাবার চেয়ে মায়ের সাথে সন্তানদের বন্ধন বেশি দৃঢ় হয়। মেয়েরা সন্তানদের সাথে ঘরে থাকে আর তাই তারা যেভাবে চায় সন্তানরা সেভাবেই বড় হয়। যদি তাদের মাঝে দাওয়াতী কাজ পরিচালনা করা হয় তাহলে অনেক বেশি কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যাবে।
জ. মেয়েরা তাদের স্বামীদের ওপর বিরাট প্রভাব ফেলতে পারে। যদি তাদের ঈমান ও চরিত্র দৃঢ় হয় তাহলে তারা তাদের স্বামীদেরও দৃঢ়তা অর্জনে খুব ভালো সাহায্য করতে পারে।
ঝ. মেয়েদের অনেক রকম বৈশিষ্ট আছে। মেয়েরা অন্তরে যা বিশ্বাস করে তা দৃঢ়ভাবে প্রকাশের সহজাত ক্ষমতা রাখে। মেয়েরা সাধারণত কথা ও আবেগের ক্ষেত্রেও বেশি শক্তিশালী হয়। এটি প্রয়োগ করে সহজে কাজ করা যায়য়।
ঞ. মেয়েরা মাঝে মাঝে ইচ্ছাশক্তি ও দিকনির্দেশনার অভাব বোধ করে। তাই তাদের শক্তি ও প্রেরণা অর্জনে অন্য মেয়েদের সাহায্য প্রয়োজন।
নারীদের দাওয়াতী কাজের ক্ষেত্র
একজন দায়ী সে কখনো অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয় না। বরং দায়ীর দ্বারা সমাজ এবং অন্যান্য ব্যক্তি প্রভাবিত হয়। পৃথিবীর সব মানুষই কারো না করো দ্বারা প্রভাবিত। এ দৃষ্টিতে পৃথিবীর মানুষ দু’ শ্রেণিতে বিভক্ত। এক. দায়ী. দুই. দাওয়াত গ্রহণ কারী। আপনি হয়তো দাওয়াত দেবেন না হয় দাওয়াত গ্রহণ করবেন। যদি দাওয়াত না দেন তবে আপনাকে সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে, জেনে বা না জেনে, বুঝে বা না বুঝে আপনি অন্যের দাওয়াতে আক্রান্ত হবেনই। তবে আপনাকে দায়ী হওয়াই বাঞ্চনীয়। একজন দায়ী যেখানে থাকবেন, যে সময়ে অবস্থান করবেন সে স্থান বা সেই সময়েই তার দাওয়াতের স্থান বা সময়।
ঘর : নারী যখন ঘরে থাকবেন তখন সে ঘরকে ইসলাম ও রাসূল (সা.)-এর সুন্নাহ দ্বারা সাজিয়ে দেবেন। তার সন্তান ও স্বামীকে দ্বীনের ওপর পরিচালিত করার পূর্ণ প্রয়াস চালাবেন। ঘরে তালীম, তাযকিয়ার ব্যবস্থা করবেন। এবং অন্যান্য দায়িত্ব পূর্ণভাবে আদায় করবেন। কোন মেহমান আসলে তার অনুপম চরিত্র মাধুর্য দ্বারা, আখলাক দ্বারা অতিথীকে প্রভাবিত করে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। সামাজে এমন প্রভাব বিস্তার করবে আশপাশের নারীরা যেন তার কাছে ছুটে আসে দ্বীন শেখার জন্য। অর্থাৎ ঘরকে এমন পরিবেশ তৈরি করবে যেন ঘরটিই একটি দ্বীন প্রচার কেন্দ্রে পরিণত হয়। হযরত আয়েশা (রাযি.)-এর কাছে বড় বড় সাহাবা (রাযি.) ছুটে আসতেন।
বাইর : নারী যখন কোন প্রয়োজনে বইরে যাবে, হাসপাতাল, বাজার ইত্যাদি, তখন সেখানে সে দ্বীনের প্রচার করতে পারে। সারাসরি দাওয়াতের মাধ্যমে অথবা নিজের পর্দা ও আখলাকের মাধ্যমে। প্রতিবেশী ও দুস্থদের সাদাকা, সদুপদেশ ও সঠিক দিকনির্দেশনা দেয়ার মাধ্যমেও হতে পারে তার দাওয়াত।
দাওয়াতী কাজের জন্য বইরে যাওয়া
যদি প্রয়োজন হয় তবে মহিলাদের জন্য দাওয়াতী কাজে বা দ্বীন শিক্ষার উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে। রাসূল (সা.)-এর সময়েও মহিলা সাহাবীগণ বের হতেন। যুদ্ধের সফরেও যেতেন। তবে মহিলাদের জন্য শর্ত হলো : পর্দার সমস্যা যেন না হয়, সাথে অন্য ফরয যেন না ছুটে এবং স্বামী বা মাহরাম ছাড়া একাকী সফর করা নারীদের জন্য বৈধ নয়। ৪৮ মাইল (৭৭ কিলোমিটার) বা তার বেশি দূরত্বে সফর করতে চাইলে মাহরাম লাগবে।
হযরত ইবনে ওমর (রাযি.) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মাহরামকে সঙ্গে না নিয়ে কোন নারী তিন দিন দূরত্বের পথে সফর করবে না। (সহীহ বুখারী : হাদীস ১০৮৬; সহীহ মুসলিম : হাদীস ১৩৩৮)
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে নারী আল্লাহ এবং আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে, তার জন্য নিজের বাবা, ছেলে, স্বামী, ভাই বা অন্য কোন মাহরামকে সঙ্গে না নিয়ে তিন দিন বা ততোধিক দূরত্বের পথ সফর করা বৈধ নয়। (সহীহ মুসলিম : হাদীস ১৩৪০)
আমাদের সঠিকভাবে দাওয়াতী কাজ করে আল্লাহর মহান হুকুম পালন করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
লেখক:পরিচালক, ইসলাহ বাংলাদেশ
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন